সংবাদদাতা-বাপ্পা মণ্ডল
এসপিটি নিউজ, মেদিনীপুর, ১০ ফেব্রুয়ারিঃ সিআইডি এখনও প্রাক্তন আইপিএস অফিসার ভারতী ঘোষের নাগাল পায়নি। কিন্তু তার ঘনিষ্ঠদের কিন্তু একে একে তোলা শুরু হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে দাসপুর থানার ওসি প্রদীপ রথকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ভারতী ঘোষের ফ্ল্যাটের কেয়ারটেকার রাজ মঙ্গল সিংকে। আজ অর্থাৎ শুক্রবার রাতে সিআইডি গ্রেফতার করে আরও দুই পুলিশ আধিকারিককে। যাদের মধ্যে একজন কেশিয়ারি থানার ওসি চিত্ত পাল ও অপরজন হলেন মহিষাদলের সিআই শুভঙ্কর দে।শনিবার তাদের আদালতে তোলে সিআইডি।ধৃত দুই পুলিশ অফিসারকে এদিন ঘাটাল এসিজেএম আদালত ছয়দিনের সিআইডি হেফাজতের নির্দেশ দেয়।
এদিন সিআইডি আর এক পুলিশ অফিসার রাজশেখর পাইনের গ্রামের বাড়িতে তল্লাশি চালায়। সেখানে কি উদ্ধার বা বাজেয়াপ্ত করেছে তা নিয়ে সিআইডি সংবাদ মাধ্যমের কাছে মুখ খোলেনি। ইতিমধ্যে প্রাক্তন আইপিএস অফিসার ভারতী ঘোষ ও তার দেহরক্ষী সুজিত মণ্ডলের বিরুদ্ধে সিআইডি গ্রেফতারি প্রোয়ানা জারি করাইয় অপারেশন ভারতী ঘোষ মামলা নতুন দিকে মোড় নিয়েছে। বিশেষ করে তিনি যখন এক অডিও বার্তায় আবার সিআইডি-কে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বলেছেন-আপনারা আমার কিছুই করতে পারবেন না। আপনাদের সঙ্গে আদালতে দেখা হবে।”
সিআইডি যেভাবে পুলিশের পিছনে লেগেছে তা নিয়ে কিন্তু পুলিশের একাংশ যারপরনাই ক্ষুব্ধ। কিছু বাধ্যবাধক্তার জন্য জন্য মুখে কিংবা প্রকাশ্যে তারা কিছু না বললেও নিজেদের ঘনিষ্ঠ মহলে কিন্তু এ নিয়ে একটা বড় ধরনের ক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করেছে। গোটা ঘটনার পিছনে যে এক বড় ধরনের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা কাজ করছে তা নিয়েও কিন্তু পুলিশ মহলে জল্পনা চলছে।
সিআইডি ও পুলিশ দুটি বিভাগই কিন্তু রাজ্য সরকারের অধীনে। আরও পরিষ্কার করে বলা ভাল রাজ্য পুলিশ প্রশাসনের আওতায়।বর্তমানে উভয়ের মধ্যে এখন সাপে-নেউলে অবস্থা তৈরি হয়েছে।একের পর এক পুলিশ অফিসারদের বাড়িতে যেভাবে সিআইডি নিজেদের দলবল নিয়ে গিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে তা কিন্তু মেনে নিতে পারছে না রাজ্য পুলিশের উচ্চ মহলের একাংশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক উচ্চ পদস্থ পুলিশ আধিকারিক গোটা ঘটনার পিছনে প্রতিহিংসার গন্ধ পাচ্ছেন। ঘনিষ্ঠ মহলে তারা প্রশ্ন তুলেছেন, যেভাবে পুলিশের এক একজন অফিসারকে দুর্নীতির দায়ে প্রকাশ্যে বেআব্রু করা হচ্ছে তাতে এরপর কি আর কেউ পুলিশের উপর আস্থা রাখবে?তাদের আরও প্রশ্ন, কেউই দুর্নীতির উর্দ্ধে নয়। তা সে যত বড় পুলিশ অফিসারই হোন না কেন। কিন্তু তা বলে তার তো একটা নির্দিষ্ট নিয়ম থাকা উচিত। এতজন দুর্নীতি পরায়ন ব্যক্তিকে কি করে এতদিন এক একটা পদে বসিয়ে রাখা হয়েছিল? তখন সিআইডি চুপ করেছিল কেন?
শুক্রবার ভারতী ঘোষ ঘনিষ্ঠ আরও দুই পুলিশ অফিসার কেশিয়ারি থানার ওসি চিত্ত পাল ও মহিষাদলের সিআই শুভঙ্কর দে-কে গ্রেফতার করে সিআইডি।দাসপুরের ব্যবসায়ী চন্দন মাঝির অভিযোগের ভিত্তিতে ঘাটাল আদালত সোনা রেখে টাকা দ্বিগুণ করার জালিয়তি অভিযোগে সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্তে নেমে সিআইডি প্রাক্তন পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ ঘনিষ্ঠ দাসপুরের স্বর্ণ ব্যবসায়ী বিমল ঘোড়ই ও ভারতী ঘোষ এর আবাসনের কেয়ার টেকার রাজ মঙ্গল সিং-কে গ্রেফতার করে। সিআইডি ইতিমধ্যে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে। শনিবার বাকি দুই পুলিশ আধিকারিককেও নিজেদের হেফাজতে নিল সিআইডি।
জানা গেছে, ধৃত দুই পুলিশ আধিকের কাছ থেকে প্রচুর হিসেব বহির্ভূত টাকা উদ্ধার হয়েছে।শুভঙ্কর দে-র কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে ৪০ লক্ষ টাকা ও চিত্ত পালের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে ১৬ লক্ষ টাকা। তারা দু’জনেই এই টাকার সূত্র বলতে পারেনি। সিআইডি তাদের উত্তরে সন্তুষ্ট হয়নি। এর পর তাদের গ্রেফতার করে সিআইডি। তবে গোটা ঘটনা ঘিরে কিন্তু বড় আকার নিতে চলেছে। দানা বাধছে পুলিশের মধ্যে ক্ষোভও।