তারাপীঠে আজ মাতারা’র আবির্ভাব তিথি উৎসব, বিশ্রামমন্দিরে হল মায়ের পুজো

Main দেশ ধর্ম ভ্রমণ রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: অক্টো ২৭, ২০২৩ at ২০:২৫
Reporter: Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ: তারাপীঠে আজ মাতারা’র আবির্ভাব তিথি উৎসব উদযাপিত হল। বহু ভক্তের সমাগমে এই উৎসব ভক্তিরসে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। এদিন মায়ের শিলামূর্তি মূল মন্দির থেকে বিশ্রামমন্দিরে নিয়ে আসা হয়। সেখানেই হয় পুজো-বিধি। পরে মা’কে আবার মূল মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয়।

আজ তারাপীঠে মায়ের আবির্ভাব তিথি উৎসবে মাতারা।

আবির্ভাব তিথি আবির্ভাব তিথি উৎসব সম্পর্কে জানুন

তারাপীঠ মন্দিরে সেবাইত এবং গবেষক ‘তীর্থভূমি তারাপীঠ’ গ্রন্থের লেখক সংবাদ প্রভাকর টাইমস-কে বলেন- “প্রতি বছর আশ্বিন মাসে শুক্লা চতুর্দশী তিথিতে মা মূল মন্দির থেকে বিশ্রামমন্দিরে আসেন। এই দিন এখানে মায়ের পুজো হয়। ১৭০১ সালে ঢেকার রাজা রামজীবন চৌধুরী মহাশ্মশান থেকে শিলা মা-কে নিয়ে এসে এই বিশ্রামমন্দিরে প্রথম স্থাপন করেন। দিনটা ছিল আশ্বিন মাসে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর আগের দিন শুক্লা চতুর্দশী দিন। সেইদিনে মায়ের আবির্ভাব ঘটে। সেই থেকে এই দিনটাকে স্মরণ করে প্রতি বছর মূল মন্দির থেকে শিলা মা’কে নিয়ে এসে এই বিশ্রামমন্দিরে বসানো হয়। মা সাধারণতঃ উত্তরমুখী বসেন।প্রতিদিন এই রীতি চলে। কিন্তু এই দিন ব্যাতিক্রমী হয়ে মা পশ্চিমমুখে বসেন। তার কারণ, পশ্চিমদিকে বড় মা মায়ের বোন মা ময়ুলাক্ষী মা বিরাজ ক্রছেন এবং মহাশ্মশানে মায়ের পাদপদ্মে বিরাজ করছেন। সেখানে বহু সাধক-সাধু থাকেন। তাদেরকে আশীর্বাদ দিতে এবং বোন ময়ুলাক্ষী মায়ের সাথে দেখা করতে মা পশ্চিম মুখে বসেন।”

তারাপীঠ মন্দির ও রাজা রামজীবন চৌধুরী

তারাপীঠ মন্দির নির্মাণ এবং মায়ের শিলা মূর্তি প্রতিষ্ঠার পিছনে জড়িয়ে আছে ঢেকার রাজা রামচৌধুরীর নাম। তারাপীঠের ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে তাঁর নাম। ‘তীর্থভূমি তারাপীঠ’ গ্রন্থের লেখক প্রবোধ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় উল্লেখ করেছেন সেই কথা। তারাপীঠ মন্দির নির্মাণের পিছনে রাজা রামজীবন চৌধুরীর ভূমিকার কথা উল্লেখ করতে লেখক প্রবোধবাবু বলেন- “রাজা রামজীবন ছিলেন ঈশ্বরানুরাগী। রাজ্যপাট চালানোর পাশাপাশি মন্দিরে মন্দিরে উপাসনা করতেন। এর ফলে ঈশ্বর কর্তৃক স্বপ্নাদেশ পেয়ে তিনি বহু দেবমন্দির স্থাপন করেছেন। তিনি জনহিতকর কাজও করতেন। ১৯৬৫ সালে তারাপীঠে এসে মহাশ্মশানে শিমুলতলাতে কয়েকদিন বসে ভাবতন্ময় হয়ে মায়ের ব্রহ্মশিলা, পাদপদ্ম ও চন্দ্রচূড় ভৈরবের কাছে ধ্যানাবিষ্ট একসময় শিমুলতলায় ঘুমিয়ে পড়েন। এই সময় মাতারা তাকে ভক্তজ্ঞানে ভোগপুজো এবং জনমানসে প্রকটিত হবার বাসনায় তারামন্দির ওচন্দ্রচূড় ভৈরবের মন্দির তৈরির স্বপ্নাদেশ দেন। রাজা ঘুম থেকে উঠে মনের ভিতর মন্দির তৈরির বাসনা নিয়ে ঢেকায় ফিরে যান। এরপর পাইক-পেয়াদা নিয়ে ফের তিনি চন্ডীপুর গ্রামে আসেন। সেখানে তিনি তারামায়ের সেবাইত ও স্থানীয় মানুষজনের সাথে কথা বলে মহাশ্মশানের অনতিদূরে জায়গা নির্বাচন করে মায়ের প্রথম তারামন্দির নির্মাণ করবেন বলে স্থির করেন।”

তারাপীঠের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য ১৭০১ সাল

রাজা রামজীবন জীবনের শেষপ্রান্তে এসে ১৬৯৬ সালে বর্তমান মন্দিরের জায়গায় তারামায়ের তৃতীয় মন্দির, চন্দ্রচূড় শিবমন্দির ও তারাসাগর পুকুর, পূর্বসাগর, ছোটপুকুর খননের কাজ শুরু করেন। এই কাজ শেষ করেন ১৭০১ সালে। এই বছরেই তিনি মহাশ্মশানের তন্ত্রসাধক প্রথম আনন্দনাথের সহায়তায় তারাপীঠ মহাশ্মশান থেকে তারামায়ের শিলাময়ী মূর্তি ও চন্দ্রচূড় শিবকে তিনি নিজের তৈরি নব নির্মিত মন্দিরে স্থাপন করেছিলেন। সেদিন ছিল শুক্লা চতুর্দশী তিথি। তাই সেই দিনটিকে স্মরণ করে প্রতি বছর এই দিনটি মাতারার আবির্ভাব তিথি হিসাবে উদযাপন করা হয়ে থাকে। বলেন ‘তীর্থভূমি তারাপীঠ’ গ্রন্থের লেখক প্রবোধ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়।

Published on: অক্টো ২৭, ২০২৩ at ২০:২৫


শেয়ার করুন