টিটিএফ কলকাতায় রাজস্থান রোড-শো: বিশ্বের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ হেরিটেজ দেখার আহ্বান জানালেন বিকাশ পান্ডিয়া ও হিংলাজ দন রত্নু

Main দেশ ভ্রমণ রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: জুলা ১৬, ২০২৩ @ ০১:৩৯
Reporter: Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ১৬ জুলাই: শনিবার বিকেলে কলকাতায় বিশ্ব বঙ্গ মিলন মেলা প্রাঙ্গন হয়ে উঠেছিল যেন একটা ছোট রাজস্থান। রাজস্থানের কৃষ্টি-সংস্কৃতি-ঐতিহ্যকে তুলে ধরেছিলেন রাজস্থানের দুই আধিকারিক। শুরুটা করেছিলেন রাজস্থান পর্যটন বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর বিকাশ পান্ডিয়া। তিনি রাজস্থানের নানা দিক তুলে ধরে ছবির সাহায্যে উপস্থিত দর্শকদের পরিচিত করান। একেবারে শেষ পর্যায়ে নিজের মতো করে রাজস্থানের সেরা দিকগুলিকে খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরেন কলকাতায় রাজস্থান সরকারের একমাত্র প্রতিনিধি তথ্য ও জনসংযোগ বিভাগ ও পর্যটনের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর হিংলাজ দন রত্নু। ডেপুটি ডিরেক্টর তো এক সময় বলেই দিলেন যে আমাদের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর হিংলাজ দন রত্নুর এটা সেরা বছর। সব কৃতিত্ব আমি তাকে দিচ্ছি। এরপর হিংলাজ দন রত্নুকে উদ্দেশ্য করে বলেন- “আমি আশা করি, আপনি নেতৃত্ব দিতে পারেন তারপর আপনি গন্তব্য পরিকল্পনা করতে পারেন।” রোড-শো-এর শেষে টিটিএফ-এর পক্ষ থেকে গোলাপ ফুলের তোড়া দিয়ে রাজস্থানের দুই আধিকারিককে শুভেচ্ছা জানান সান্ড্রিন ক্ল্যারাক।

এদিন প্রথমে ডেপুটি ডিরেক্টর বিকাশ পান্ডিয়া এক সুন্দর উপস্থাপনার মাধ্যমে রোড-শো শুরু করেন। তিনি বলেন- বাংলা আমাদের সাথে আছে। বাংলার সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। বাংলার পর্যটকরা রাজস্থানে সব চেয়ে বেশি ভ্রমণ করে। সোনার কেল্লা তেমনই একটা উদাহরণ। তেমনই একটা যুদ্ধক্ষেত্র হল হলদিঘাটি, মহারাণা প্রতাপের যুদ্ধক্ষেত্র। একটা সময় ছিল যখন এই যুদ্ধক্ষেত্রের স্থানে কোনও পর্যটকের সংখ্যা খুব কমই ছিল। বাংলার পর্যটকরাই এখানে সর্বপ্রথম যাওয়া শুরু করে। এখন রাজস্থানে গন্তব্য স্থানগুলি খুবই উন্নত হয়েছে। পর্যটকদের জন্য একেবারে উপযুক্ত স্থান হল রাজস্থান।”

খেতরি ও মাউন্ট আবু:  এখানে স্বামী বিবেকানন্দ এসেছিলেন। এখন সেখানে রাজস্থান সরকারের পর্যটন বিভাগ সেখানে শব্দ ও আলোর প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেছে।

মাউন্ট আবু, এটি রাজস্থানের একটি হিল স্টেশন। বিবেকানন্দ এখানে যখন ভ্রমণ করেছিলেন তখন সেখানে একটি গুহা দেখেছিলেন। এটি খুবই ভালো গন্তব্য। হেরিটেজের কাজ রয়েছে। মানুষ এই স্থান খুবই পছন্দ করে। এখন মাউন্ট আবুর নতুন পণ্য, বিবেকানন্দের ঐতিহ্যের কাজ। আমরা ওই জায়গার উন্নয়ন করেছি। আমরা আরও উদীয়মান নতুন গন্তব্য তুলে ধরছি।বলেন রাজস্থানের পর্যটন আধিকারিক।

উদয়পুরে সিটি অব লেক- বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা শহর

“চারটি উৎসব রাজস্থানে খুবই পরিচিত। এর মধ্যে রয়েছে ক্যামেল রাইড, ডেজার্ট ফেস্টিভ্যাল। সবুজ রাজস্থান এখন আরও বড় আকারে উঠে আসছে। আপনারা সবাই জানেন যে রাজস্থানে শুধু মরুভূমি আছে।কিন্তু জেনে রাখুন অর্ধেক রাজস্থান কিন্তু সবুজ। আপনারা দেখেছেন ফোর্ট, প্যালেস। নাইট ট্যুরিজম খুবই উন্নত হচ্ছে। উদয়পুরে সিটি অব লেক- বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা শহর, একটি সুপরিচিত বিখ্যাত ট্রাভেল ম্যাগাজিনের বিচারে।”

সব থেকে বেশি হেরিটেজ হোটেল আছে রাজস্থানে।পুরনো প্রসাদ এবং হাভেলিকে হেরিটেজ হোটেলের রূপ দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে জয়পুরের রামবাঘ প্যালেস হোটেল, উদয়পুরের লেক প্যালেস হোটেল। যোধপুরে উমেদভবন প্যালেস। এখানে অবশ্যই আছে হেরিটেজ হোটেল।মেহেরনগড় ফোর্ট, যোধপুর। এগুলি হল হেরিটেজ হাভেলি। বিকানের, রামপুরা- এটা সর্ববৃহৎ ফোর্ট, চিতোরগড় ফোর্ট, সেখানে লিভিং ফোর্ট আছে। আছে কুম্ভলগড় ফোর্ট। জয়শলমীরে সোনার কেল্লা। গোল্ডেন ফোর্ট। বুন্দি, নওয়াল সাগর লেক।বুন্দির পেইণ্টিং বিখ্যাত। শেখাওয়াটি রিজিয়ন। ওপেন আর্ট গ্যালারি।

হেরিটেজ হোটেলের আকর্ষণ

পর্যটকদের জন্য মানসম্পন্ন বাসস্থান এবং রাজকীয় অভিজ্ঞতা, থিম বিবাহের গন্তব্য, ফিল্ম শুটিং জন্য বহিরাগত সেট, জাতিগত রন্ধনসম্পর্কীয় অভিজ্ঞতা, বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতা- সাফারি, ইকো-ট্যুরিজম, হেরিটেজওয়াক, জীবনযাত্রার ঐতিহ্য এবং শিল্পকলা ইত্যাদি।

বিকানেরে গজনির প্যালেস, যেখানে আছে হোটেল। ডিগ প্যালেস ভরতপুর। এখানে আছে কালারফুল ফাউন্টেন। এটি রক্ষনাবেক্ষন করে আর্কিওওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া।আমের ফোর্ট, যেখানে নাইট ট্যুরিজমের অভিজ্ঞতা। এখানে আছে লাইট এন্ড সাউন্ড ব্যবস্থা। আছে অ্যালবার্ট হল। যেখানে সিনেমার শ্যুটিং হয়েছে। সাংস্কৃতিক অনুশঠানও হয়ে থাকে। আছে কুম্ভলগড় ফোর্টের দেওয়াল। ৩৬ কিলোমিটার দীর্ঘ। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ওয়াল।

এখানে আছে ক্যামেল ক্যান্টিঞ্জেন্ট, ক্যামেল কেটু শো, এরা আবার ইন্ডিয়ান প্যারেডেও অংশ নিয়ে থাকে। জৈন টেম্পলে গেয়ার ড্যান্স। আছে উদয়পুরে মেওয়ার ফেস্টিভ্যাল।

ডেজার্ট ফেস্টিভ্যাল। ক্যামেল ফেয়ার। ক্যাম্বেলিয়া ড্যান্স।উদয়পুরে স্যাম বালির টিলা, ঐতিহ্য যা কালের বালির সাথে প্রবাহিত হয়।

রণথম্বোর।সম্প্রতি লেপার্ড সাফারি সেখানে হচ্ছে।

প্যালেস অব হুইলস খুব শীঘ্রই শুরু হতে চলেছে।

রাজস্থানে ফিল্ম শ্যুটিং-এর জন্য বিখ্যাত।

আছে ওয়েডিং ডেস্টিনেশন। উদয়পুরে সিটি প্যালেস। আছে সেখানে জগমমন্দির আইল্যান্ড। মেহরগড় ফোর্ট। মুকুন্দর তাইগার রিজার্ভ, কোটা, রামগড় বিসধারী তাইগার রিজার্ভ- এগুলি সোয়াইমাধোপুর স্যাঞ্চুয়ারির কাছে অবস্থিত। বাঘ এখানে পাঠানো হয় মুকুন্দরা ও রামগড় বিসধারী টাইগার রিজার্ভে। সম্প্রতি রামগড় বিশধারী টাইইগার রিজার্ভে সাফারি শুরু হয়েছে।

পর্যটন বিভাগ সম্প্রতি কিছু পলিসি তুলে ধরেছে। ট্রাভেল ত্রেড মানুষের জন্য। এটা হল রুরাল ট্যুরিজম পলিসি। এর মধ্যে ফার্ম ট্যুরিজম, ফার্ম হাউসেস। একই সঙ্গে ফিল্ম ট্যুরিজম পলিসিও একই সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে।

হিংলাজ দন রত্নুর প্রশংসায় ডেপুটি ডিরেক্টর

একেবারে শেষে ডেপুটি ডিরেক্টর বিকাশ পান্ডিয়া বলেন -এখানে আমাদের কলকাতায় অফিস আছে। আমাদের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর হিংজ দন রত্নুজি। এটা তার সেরা বছর। সব ক্রেডিট তাকে দিতে চাই। আমি আশা করি, আপনি নেতৃত্ব দিতে পারেন তারপর আপনি গন্তব্য পরিকল্পনা করতে পারেন।

এরপর মঞ্চে উঠে হিংলাজ দন রত্নু বলেন- “আমি গত চার বছর ধরে এখানে রাজস্থান সরকারের প্রতিনিধিত্ব করছি। আমার বরিষ্ঠ আধিকারিক যা বলে গেলেন আমি সেটাই সম্মান দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাব। রাজস্থান ও বাংলার মধ্যে যে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। স্বামী বিবেকানন্দের দ্বিতীয় ঘর রাজস্থান। যেখানে খেতরির মহারাজা ও আলোয়ার মহারাজা পরম ভক্ত ছিলেন। স্বামী বিবেকানন্দের মাথায় যে পাগড়ি দেখেন তা রাজস্থানের দেওয়া।

রাজস্থান সত্যজিৎ রায়ের জায়গা, জয়দীপকে অভিনন্দন জানালেন হিংলাজ

একই সঙ্গে রাজস্থান সত্যজিৎ রায়ের জায়গা। যে জায়গাকে তিনি তীর্থস্থান বানিয়েছেন। আমি বাংলার মাটিকে নমস্কার জানাই। একই সঙ্গে তাকেও নমস্কার জানাই যিনি সোনার কেল্লার মতো সিনেমা তৈরি করেছেন। একই সঙ্গে তাকেও সম্মান জানাই যিনি সম্প্রতি ফের নতুন করে জয়শলমীরে ‘দ্য একেন-রুদ্ধশ্বাস রাজস্থান’ বানিয়েছেন। এজন্য এই চলচ্চিত্রের পরিচালক আমার বন্ধু ভাই জয়দীপ মুখার্জিকে অভিনন্দরন জানাই। আমি রাজস্থান সরকারের তরফে যশস্বী মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট সাহেব আমাদের পর্যটনমন্ত্রী বিশভেন্দ্র সিং, পর্যটন সচিব গায়ত্রী রাঠোর এবং আমাদের রাজস্থান পর্যটন বিকাশ নিগমের চেয়ারম্যান ধর্মেন্দ্র রাঠোর, আরটিডিসি-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর বিজয় পাল সিং-এর পক্ষ থেকে এখানে উপস্থিত সকলকে স্বাগত জানাই।

রাজস্থানে দুটো বিখ্যাত তীর্থস্থান

এর আগে বিকাশ পান্ডিয়া সাহেব বলেছেন যে আমি রাজস্থানকে বাংলার দরজায় নিয়ে এসেছি। রাজস্থানে প্রতিদিন একটি ফেস্টিভ্যাল হয়ে থাকে। রাজস্থানের কলা-সাহিত্য-সংস্কৃতি সব হয়। রাজস্থান মহারানা প্রতাপের স্থান রাজস্থান। মিঠে মোড়কের দেশ রাজস্থান। গীত-গানের প্রদেশ রাজস্থান। ধার্মিক পর্যটন সেখানে দারুনভাবে রয়েছে। রাজস্থানে দুটো বিখ্যাত তীর্থস্থান রিয়েছে- এক, খাজা গরিব নওয়াজের দরগা এবং দ্বিতীয়টি হল পুষ্করে ব্রহ্মামন্দির।

বিখ্যাত মানুষদের মাটি রাজস্থান

রাজস্থানের মাটিতে রয়েছে দুর্গাদাস রাঠোর, মহারানা প্রদেশ, পদ্মিনী, মীরাবাঈ, জাম্বুজি, বাবুজি, গোগাজি, রামজির দেশ রাজস্থান। যখন আপনি বিকানের থেকে জয়শলমীর যাবেন্সেই সময় রামদেওড়া পড়বে। যা একতার প্রতীক। রামদেওয়ড়ার নাম শুনলেই বাঙালি আহ্লাদিত হয়ে পড়ে। কারণ, এই জায়গাটি সোনার কেল্লার ছবিতে ছিল।

অতিথি দেব ভব

সব শেষে হিংলাজ দন রত্নু সকলকে আহ্বান জানিয়ে বলেন- আপনারা রাজস্থান আসুন, বিশ্বের বিখ্যাত হেরিটেজ দেখার সৌভাগ্য হবে। রাজস্থানে জয়পুর, যোধপুর, বিকানের,জয়শলমীর, মাউন্ট আবু, উদয়পুর, চিতোর, আজমের, পুষ্কর, ভরতপুর, পোটা, বুন্দি, ঝালর, শেখাওয়াটি। সব জায়গায় আপনি আলাদা স্বাদ পাবেন। যখন কার্গিল যুদ্ধ হয়েছিল তখন সবচেয়ে বেশি শহীদ হয়েছিল রাজস্থানের। রাজস্থানে সেই ভাবনাকে তুলে ধরা হয় যেখানে বলা হয়ে থাকে –‘অতিথি দেব ভব’।

 

Published on: জুলা ১৬, ২০২৩ @ ০১:৩৯


শেয়ার করুন