তারাপীঠে আজ কালীপুজোয় শ্যামামা রূপে তারামায়ের আরাধনা করা হয়

Main দেশ ধর্ম ভ্রমণ রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: নভে ১২, ২০২৩ at ১৯:২৮
Reporter: Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ, তারাপীঠ, ১২ নভেম্বর: তারাপীঠে তারামাকে আজ শ্যামামা রূপে আরাধনা করা হয়। তারাপীঠে কালীপুজোর অমাবস্যার রাতে তারামায়ের পুজো সত্যিই এক অসাধারণ অনুভূতি জাগায় উপস্থিত সকল পুন্যার্থী ও দর্শনার্থী ভক্তদের ভিতর। এদিন মায়ের পুজোয় পালাদার সেবাইত ছাড়াও নাটোরের পুরোহিত মায়ের পুজোয় বসেন।কালীপুজোর পরদিন মন্দিরের সমস্ত পুরোহিত, সেবাইত, পান্ডা, গ্রামবাসী ও ভক্তরা তারাপীঠের উত্তর দিকে কিছুটা দূরে অবস্থিত উদয়পুর ও দেখুড়িয়া গ্রামের কালীমাকে দর্শন করতে যান। এই রীতি বছরের পর চলে আসছে। এমনটাই জানালেন তারাপীঠ মন্দিরের প্রবীণ সেবাইত লেখক ও গবেষক প্রবোধ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়।

কালীপুজোর অমবাস্যার রাত সাধকদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ

কালীপুজোর আগের দিন তারাপীঠ মন্দির দর্শন করার সৌভাগ্য হয়েছিল। একই সঙ্গে মাতারার দর্শন লাভ করেছিলাম। এদিন ভিড় খুবই অল্প ছিল। যদিও আজ তারাপীঠে গতকালের চেয়ে লোকসমাগম বেশি হয়েছে। বহু মানুষ কালীপুজোর রাতে তারাপীঠে মায়ের কাছে পুজো দিতে এসেছেন। কেউ এসেছেন মহাশ্মশানে যজ্ঞ-ক্রিয়াকর্ম করাতে। কালীপুজোর অমবাস্যার রাত সাধকদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এদিন বহু দূরদূরান্ত থেকে বহু সাধক-সাধিকা তারপীঠে আসেন সাধন-ভজন করতে। তবে অনেকের মনের ভিতরেই প্রশ্ন জাগে যে তারাপীঠে তারামায়ের কি কালীপুজোর দিন বিশেষ পুজো করা হয়ে থাকে? আমরাও এই প্রশ্ন করেছিলাম ‘তীর্থভূমি তারাপীঠ’ গ্রন্থের লেখক ও তারাপীঠ মন্দিরের প্রবীণ সেবাইত প্রবোধ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। সংবাদ প্রভাকর টাইমস-কে তিনি এই প্রশ্নের বিস্তারিত জবাব দিয়েছেন।

অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম দশক থেকে বিভিন্নদেবী মুর্তির পুজো পদ্ধতি শুরু

প্রবোধবাবু বলেন- “ চিরাচরিতপ্রথা অনুযায়ী চিন্ময়ী জ্ঞানে মৃন্ময়ী দেবী মূর্তির পূজা উত্তরাধিকার সূত্রে তারাপীঠের স্থায়ী বাসিন্দা ও তারামায়ের সেবাইত পুরোহিত ও পান্ডা সমাজ করেন না। দশ মহাবিদ্যার দ্বিতীয় মহাবিদ্যা তারা। তারাপীঠে তারামায়ের আবির্ভাবের পর থেকেই কালী, দুর্গা, জগদ্ধাত্রী, নীল সরস্বতী ইত্যাদি বিভিন্ন দেবীর সাথে তারামায়ের অভেদ কল্পনা করে সেই সমস্ত দেবীর পুজো তারামায়ের ধ্যানময়ী মূর্তিতে হয়। অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম দশক থেকে ঢেকার রাজা রামজীবনের তৈরি তারামায়ের মন্দির থেকে তারামায়ের উপর বিভিন্নদেবী মুর্তির পুজো দেওয়ার পদ্ধতি শুরু হয়। তখন থেকেই কালীমা রূপে তারা পূজিতা হয়ে আসছেন। সেই প্রথা এখনও চলে আসছে।”

কালীপুজোর দিন শ্যামামা রূপে তারামায়ের বিশেষ আরাধনা করা হয়

বর্তমানে কালীপুজোর দিন মায়ের নিত্য নৈমিত্তিক পূজার্চনা ছাড়া শ্যামামা রূপে তারামায়ের বিশেষ আরাধনা করা হয়। ভোর চারটে নাগাদ মায়ের স্থানাভিষেকের পর তারামাকে অষ্টধাতুর মুখাভরণ, মুণ্ডমালা, মুকুট বিবিধ স্বর্ণ অলঙ্কার ও ফুল্মালা দিয়ে শ্যামামা রূপে ধ্যানময়ী মূর্তিতে সাজানো হয়। এরপর শুরু হয় মঙ্গলারতি। শুরু হয় মায়ের প্রথম পুজো ও নিবেদন করা হয় শীতল ভোগ।অন্য পাঁচটা দিনের মতো শ্যামাপুজোর দিন মায়ের নিত্যপুজো ও মধ্যাহ্নভোগ সংঘটিত করা হয়। সন্ধ্যারতির পুর্বে মাকে শোলা ফুল্মালা ও স্বর্ণ অলোংকার দিয়ে বিশেষভাবে সাজানো হয়। এরপর পালাদার সেবাই ও নাটোরের পুরোহিত মায়ের পুজোর‍্য বসেন।

কালীপুজোর রাতে তারাপীঠ মহাশ্মশান আলোকমালায় সাজিয়ে তোলা হয়। সেই দৃশ্য সত্যিই মনোমুগ্ধকর। শিমুলতলা, পঞ্চমুণ্ডির আসন, বশিষ্ঠ বামদেবের সিদ্ধিলাভের জায়গা ও মায়ের পাদপদ্ম-যা একই জায়গা বলে চিহ্নিত সেখানে এবং বামদেবের সমাধি মন্দিরে হাজার হাজার মায়ের ভক্ত ও গ্রামবাসী মাটির প্রদীপ ধরিয়ে আলোকমালায় সাজিয়ে তোলেন। নিশিপুজোর পরদিন সকালে তারামায়ের সেবাইত, পুরোহিত, পান্ডা ও গ্রামবাসীরা উদয়পুর ও দেখুড়িয়া গ্রামের কালীমাকে দেখতে যান।

Published on: নভে ১২, ২০২৩ at ১৯:২৮


শেয়ার করুন