
Published on: মার্চ ৭, ২০২৫ at ০১:৩২
Reporter: Aniruddha Pal
এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ৬ মার্চ : কোনও স্টেডিয়াম নয়। অতি সাধারণ মানের একটি মাঠ। নেই মাঠ ভর্তি দর্শক। ছিল না অদৃশ্য ক্যামেরার ঝলকানি। সংবাদ মাধ্যমের হুড়োহুড়িও। প্রচারের আড়ালে হয়ে গেল ২২ জন ক্রিকেটারের নিঃশব্দ লড়াই। টুর্নামেন্টটি ছিল শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধীদের ত্রিদলীয় টিটোয়েন্টি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। যেখানে রাদের শারীরিক প্রতিবন্ধকতা হেরে গেল অসাধারণ দক্ষতার কাছে। জয়ী হল শুধু ক্রিকেট। এক প্রাণবন্ত ক্রিকেট। উচ্চ মানের ক্রিকেট। বোলিং-ব্যাটিং –ফিল্ডিং-এ বাংলা আর মহারাষ্ট্রের খেলোয়াড়রা দেখাল তাদের ক্রীড়ানৈপুন্যের কেরামতি। উপস্থিত অতিথিদের মুখে খেলার শেষে শুধুই প্রশংসা। খেলার ফল – ফাইনালে জয়ী বাংলা দল।
ওয়েস্ট বেঙ্গল দিব্যাঙ্গ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন –এর প্রতিষ্ঠাতা ও সচিব অভিজিৎ বিশ্বাস জানান, “এই টুর্নামেন্ট করতে তাদের খুব পরিশ্রম করতে হয়েছে। এতটাই দায়িত্ব নিতে হয়েছে যেন তারা মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন। টুর্নামেন্টে আয়োজক বাংলা ছাড়া বাকি দুটি দল ছিল মহারাষ্ট্র ও বিহার। এদিন ধন্যবাদ জানানোর সময় অভিজিৎ পাঁচজন শুভাকাঙ্খীর প্রতি বিনম্র কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন – এখানে উপস্থিত লিজা গুহ ম্যাডাম আছেন, তিনি না থাকলে এই টুর্নামেন্ট আমি সফল করতে পারতাম না। কখন কোথায় কি করতে হবে, কি লাগবে, খেলোয়াড়দের বিষয়ে কোনও অসুবিধা হচ্ছে কিনা, ভিন রাজ্য থেকে যারা খেলতে আসছে, তাদের কিভাবে পিক-আপ করতে হবে সব দিক তিনি খেয়াল রেখেছেন। তাই ওনার প্রতি আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। এরপর যার কথা না বললেন নয়, তিনি হলেন মহারাষ্ট্র ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন-এর রাজু ভাই। আমরা মহারাষ্ট্রে খেলতে গিয়েছিলাম। তখন রাজু ভাই বলেছিলেন- বাংলায় তোমরা একটা ত্রিদলীয় টুর্নামেন্তের আয়োজন কর। আমি বলেছিলাম, সেতা মার পক্ষে সম্ভব নয়। তিনি আমায় অভয় দিয়ে বলেছিলেন, আমি ট্রফির দায়িত্ব নিচ্ছি, তুমি আয়োজন কর। জয়ী দলকে ১০ হাজার, অন্যান্যদের পাঁচশো, এক হাজার করে দেওয়ার কথা ঘোষনা করেন। ভাবতে পারছেন, ক্রিকেটের প্রতি কতটা ভালনাসা থাকলে তবে এটা করতে পারে। সারা দেশের মধ্যে এমনটা এই প্রথম, যেখানে অন্য রাজ্য থেকে খেলেতে এসে নিজেরাই ট্রফির ব্যবস্থা করছে। টাকা দিচ্ছে। “
এদিন সেই রাজু ভাই বাংলায় খেলতে এসে নিজের অনুভূতি শেয়ার করেন সকলের সঙ্গে। জানিয়ে দেন, এখানে এসে আমাদের খুব ভাল লেগেছে। এদের ব্যবস্থাপনা, আয়োজন আমাদের খুব ভাল লেগেছে। আমি মহারাষ্ট্রের পুনেতে এই ক্রিকেটের জনক স্বর্গীয় অজিত ওয়াদেকর সাহেবের নামে একটী ছোট অ্যাকাদেমি চালাই। সেই অ্যাকাদেমির তরফে ঘোষোণা করছি যে তিন দল- বাংলা, বিহার, মহারাষ্ট্র ১০ হাজার টাকা করে পাবে। চার ম্যাচের চার ম্যান-অব-দ্য ম্যাচ-কে ৫০০ টাকা করে দেওয়া হবে। এছাড়া, বেস্ট ব্যাটার, বেস্ট বোলার , বেস্ট ফিল্ডার এবং ম্যান-অব-দ্য-সিরিজকে এক হাজার টাকা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই টাকা আমি এই মাসের ১৬ তারিখ পাঠিয়ে দেব। বিহারকে পাঠাব তাদের ক্যাপ্টেনের কাছে। একই সঙ্গে জানিয়ে রাখি আগামিবার পুনেতে অনেক বড় মাপের টুর্নামেন্ট করব। আমাদের মহারাষ্ট্র ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশোনের সভাপতি শরৎ পাওয়ান একটা ঘোষোণা করতে বলেছেন যে যারা এরপর মহারাষ্ট্রে খেলতে যাবে তাদের খেলার কিটস, ট্রাভেলিং ব্যাগ, সব এসপিজি কোম্পানির পক্ষ থেকে স্পনসর করা হবে।“
কলকাতায় ব্রিটিশ ডেপুটি হাই কমিশনের পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতের মিডিয়া ও মাস কম্যিউনিকেশন প্রধান অমিত সেনগুপ্ত মহারাষ্ট্র ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকর্তা রাজুজীর উদ্যোগকে সম্মান দিয়ে বলেন- “বাংলা ও মহ্রাষ্ট্রের দিব্যাঙ্গ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন খুব ভাল কাজ করছে। একই সঙ্গে তিনি ফাইনাল ম্যাচের খেলোয়াড়দের ক্রীড়া দক্ষতার প্রশংসা করেন। বলেন- এদের দক্ষতা তো সাধারণ ক্রিকেটারদের থেকেও ভাল। মাত্র ১৫ ওভারে তারা ১৭১ রান তুলেছে। আবার ভাল ফিল্ডিংও করেছে। যা সত্যি প্রশংসার যোগ্য। ব্রিটিশ সরকার সব সময় ক্রিকেটের জন্য কাজ করে চলেছে। গত বছর আমরা এধরনের ক্রিকেটারদের নিয়ে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলাম। এই বছর ইংলায়ন্ড গ্রীষ্মে প্যান ডিজাবিলিটি ক্রিকেটের আয়োজন করতে চলেছে। ভারত থেকেও দল যাচ্ছে। একই সঙ্গে ভারতের মহিলা দলও যাচ্ছে সেখানে। আমি অভিজিৎকে ধন্যবাদ জানব।এখানে আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য। “
এইচ বি টাউন ক্লাবের এক কার্যকর্তা তার নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন- “আজ মাঠে যা দেখলাম তাতে আমি বলছি আমাদের মাঠে-ময়দানে এখনও এত ফিট ছেলে নেই। এতটাই ফিট যে আমি রাজাকে বলছিলাম । ও রঞ্জি লেভেলের আম্পায়ার। আমি যা দেখলাম, তাতে মার মনে হল যে এদের নিয়ে একতা ভাবে টুর্নামেন্ট করা উচিত। লোকাল স্তরে যদি আরও টুর্নামেন্ট করা যায় দেখবেন বেঙ্গলে আরও ভাল ভাল ছেলে বেরিয়ে আসবে। তাতে কি হবে, এই রাজ্যের টিমটা অনেক ভাল হবে।
এদিন ম্যাচে জয়ী হয়েছে বাংলা। নীচে পুরস্কার প্রাপকদের নামের তালিকা দেওয়া হল-
- প্রথম ম্যাচের ম্যান অফ দ্য ম্যাচ – তপন বৈরাগী (পশ্চিমবঙ্গ)
- ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় – রাজীব (বিহার)
- দ্বিতীয় ম্যাচের ম্যান অফ দ্য ম্যাচ – মহেশ শ (পশ্চিমবঙ্গ)
- ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় – সোমনাথ (মহারাষ্ট্র)
- তৃতীয় ম্যাচের ম্যান অফ দ্য ম্যাচ – অভিষেক সুতার (মহারাষ্ট্র)
- ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় – মুদেশর খান (বিহার)
- ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় – মহেশ শ (পশ্চিমবঙ্গ)
- ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় – নিশান্ত (মহারাষ্ট্র)
- সেরা ব্যাটসম্যান – মহেশ শ (পশ্চিমবঙ্গ)
- সেরা বোলার – দেবাশীষ সাধুখান)
- সেরা ফিল্ডার – নয়ন শিন্ডে (মহারাষ্ট্র)
- টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় – মহেশ শ (পশ্চিমবঙ্গ)
Published on: মার্চ ৭, ২০২৫ at ০১:৩২