Published on: ফেব্রু ২৭, ২০২৪ at ১৫:৫২
Bangladesh Bureau Chief: H R Shafiq
এসপিটি নিউজ, ঢাকা, ২৭ ফেব্রুয়ারি: সম্প্রতি বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে সদস্য ড. মো. মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে অস্বাভাবিক সম্পদ অর্জন এবং গোপন রাখার বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) একটি অভিযোগ জমা পড়েছে। সেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শত শত কোটি টাকার সম্পদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বিপুল এই সম্পত্তির মালিকানায় পরিবারের সদস্য ছাড়াও বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের অংশীদার করেছেন।
ড. মো. মতিউর রহমান, ‘সদস্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (শুল্ক ও আবগারী)’ তার অভিযোগের বিষয় মুঠোফোনের প্রতিবেদককে বলেন, আপনি শহরের বড়সড় সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন; সবাই আমার পরিচিত এবং আমাকে ভালো করে জানেন। এ সময় রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থার নাম করে প্রতিবেদককে ভয় দেখানোর চেষ্টা করেন। (যা প্রতিবেদকের কথোপকথনের কল রেকর্ডের সংরক্ষিত রয়েছে)
দুদকের প্রহণ করা অভিযোগ পত্রের একটি কপি আসে প্রতিবেদকের হাতে। যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, বসুন্ধরায় ফ্লাট বাড়ি কর্পোরেট অফিসসহ জেলায় জেলায় শতশতকোটি টাকার সম্পদ।
ওই অভিযোগের বিষয়টি আমলে নিয়ে কলকাতা অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘সংবাদ প্রভাকর টাইমস’র বাংলাদেশ ব্যুরো চিফ হাফিজুর রহমান (শফিক) একটি অনুসন্ধানী সংবাদ প্রচার করেন ঢাকার সকালের সংবাদ নামে স্থানীয় একটি অনলাইনে। রিপোর্ট প্রকাশ করার পর বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের মিডিয়া পাড়ায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে ওই এনবিআর সদস্য মতিউর রহমান নিজের প্রভাব প্রতিপত্তি ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও সংস্থার বরাতে প্রতিবেদককে চাপ দিতে থাকে। এর বাইরে ও ঐ কর্মকর্তার সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধানের পর থেকেই ওই প্রতিবেদক ও তার পরিবার নিয়ে কুরুচিপূর্ণ অপপ্রচার সোশ্যাল মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
দুদুকে জমা হওয়া অভিযোগের সূত্র ধরে সরেজমিনে সংবাদমাধ্যম খোঁজখবর নিয়ে সত্যতা অনুসন্ধান করে গুরুত্ব সহকারে সংবাদ প্রচার করে। প্রতিবেদক ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় প্রতিটি বাড়ি ও স্থাপনার হোল্ডিং নম্বর খুঁজে বের করে।
বসুন্ধরায় ড. মতিউর রহমানের বাড়ি ফ্লাটের যে হোল্ডিং নম্বর দেয়া হয়েছে তা আংশিক সত্যি। তবে অভিযোগ পত্রের বাহিরেও আমরা কিছু ভবন খুঁজে পেয়েছি। যাঁর মালিকানায় যৌথ এবং সতন্ত্রভাবে মতিয়ার রহমান এবং পরিবারের অন্য সদস্যরা রয়েছেন।
কেয়ারটেকার আউয়াল জানান, বসুন্ধরা ডি ব্লকের ৭/এ সড়কের ৫ম তলার ৫০১ নম্বর ফ্লাটের মালিক মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী। তবে এই ফ্লাটটিতে ২৫ হাজার টাকা ভাড়ায় অন্য পরিবার বসবাস করেন।
দুদকের অভিযোগ পত্রে ওই ফ্লাটের অবস্থান ১০ নম্বর সড়কে বলা হয়েছে। অভিযোগ পত্র অনুযায়ী এটি ভুল তথ্য।
দুদকের অভিযোগ পত্রে একই ব্লকের ০১ নম্বর সড়কে মতিউর রহমানের একটি ৭ তলা আলিশান বাড়ির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যেটির সত্যতা মিলেছে আমাদের সরেজমিন অনুসন্ধানে। আধুনিক স্থাপনা বলতে যা বুঝায় তার কোন কমতি নেই ৫১৯ বাড়িটিতে। রাজমহল বলাই যায় এই বাড়িটিকে।
তবে বাড়িটি দেখভালের দায়িত্বে থাকা সগির হোসেন জানান, বাড়িটির মালিক ড.মতিউর রহমান নয়। মতিউর রহমান নিজেও প্রতিবেদককে মুঠোফোনে তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন। তাহলে বাড়ির মালিক কে? সহজ উত্তর ; বাড়িটির মালিক ড. মতিউর রহমানের মেয়ে। তবে দুদকে জমা হওয়া অভিযোগ পত্রে বলা হয়েছে ভবনটির মালিক ড.মো.মতিউর রহমান।
এসময় কেয়ারটেকার সগির নির্মাণাধীন একটি ভবন দেখিয়ে বলেন, ঐ ১২ তলা ভবনটিও আমাদের স্যারের।
সূত্র বলছে, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার আই ব্লকের (৪র্থ এভিনিউ এর প্লট নং ৬৫৭ এ/বি/সি এবং ৭১৬) ৯ ও ১০ সড়কে যৌথ মালিকানায় আধুনিক ভবনটি নির্মাণ করছেন মতিয়ার রহমানের অংশীদার প্রতিষ্ঠান জেসিএক্স ডেভেলপমেন্ট। তবে দূর্নীতি দমন কমিশনে জমা হওয়া অভিযোগ পত্রে নির্মাণাধীন ভবনটির কথা উল্লেখ করা হয়নি।
জেসিএক্স বিজনেস টাওয়ার যেটি বসুন্ধরা আই ব্লকের জাপান স্ট্রিটের ১১৩/এ প্লটে অবস্থিত। আধুনিক এই ভবনটিতে জেসিএক্স ডেভেলপমেন্ট এবং গ্লোবাল সুজ লিমিটেডের কর্পোরেট অফিস রয়েছে । গ্লোবাল সুজের পরিচালক মি. ফারাবি মতিউর রহমানের যৌথ মালিকানা থাকার কথা প্রতিবেদকের কাছে মুঠোফোনে স্বীকার করেছেন।
জেসিএক্সের মালিক তোফাজ্জল হোসেন ফরহাদ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গ্লোবাল সুজ এবং ডেভেলপমেন্ট ব্যবসার অংশীদার মো. মতিউর রহমান।
তিনি বলেন,গ্লোবাল সুজ লিমিটেড একটি জুতা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। উন্নত বিশ্বে প্রতিষ্ঠানটি জুতা, তাবু, ব্যাগ এবং বেল্ট রপ্তানি করে থাকে।
ময়মনসিংহের ভালুক উপজেলার চেচুয়ার মোড়ে অবস্থিত গ্লোবাল সুজ লিমিটেডের ফ্যাক্টরি ইনচার্জ কাইয়ুম জানান, ড. মো.মতিউর রহমান স্যার আমাকে এই প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দিয়েছেন। আমি স্যারের ইউনিয়নের ছেলে।
তিনি আরও বলেন, ফ্যাক্টরিতে শ্রমিক সংখ্যা ২৫০/৩০০ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। মাসে ৩/৪ বার ড.মতিউর রহমান বিদেশি প্রতিনিধিদের নিয়ে আসেন। এছাড়া আমিই সবকিছুর দায়িত্ব আছি।
তিনি বলেন, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (ADB) এর অর্থায়নে ‘স্কিলস ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম’ এ (SEIP) প্রতি বছর ৬’শ প্রশিক্ষণার্থীকে ‘লেদার গুডস ও ফুটওয়্যার শিল্পর বিভিন্ন কারিগরি কোর্সে ট্রেনিং দিয়ে থাকে গ্লোবাল সুজ লিমিটেড।
সূত্র বলছে, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থে নিজের শ্রমিকদেরই লোকদেখানো ট্রেনিং দেয় গ্লোবাল সুজ লিমিটেড।
স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানা যায় , হাবিরবাড়ীতে ওরিয়ন গ্রুপের মালিকানায় থাকা প্রায় ৪’শ একর জমি ভাড়া নিয়ে গ্লোবাল সুজ লিমিটেড কারখানা পরিচালনা করে আসছেন।
তারা বলেন, শুধুমাত্র মো. মতিউরের কারখানায় নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য পাশেই ময়মনসিংহ পল্লিবিদ্যুৎ সমিতি -২ এর একটি উপকেন্দ্র রয়েছে।
নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীরা জানান, ওরিয়ন গ্রুপ এবং গ্লোবাল সুজ যৌথ ভাবে ফ্যাক্টরি এবং জমি দেখাশোনার জন্য তাদের নিয়োগ দিয়েছেন।
অনুসন্ধানের এই পর্যায়ে ড. মো.মতিউর রহমান নানাভাবে বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তিদের মাধ্যমে চরম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করায় আপাতত নিজের এবং পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অনুসন্ধানের সমাপ্তি টানতে হয়েছে। তবে অভিযোগ পত্রের প্রতিটি বিষয় আমরা খোঁজ খবর নিয়ে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করছি শীগ্রই।
*রাজস্ববোর্ড কর্মকর্তা মতিউরের অনুসন্ধানের পর থেকেই প্রতিবেদক ও তার পরিবারের বিরূদ্ধে মানহানিকর অপপ্রচার শুরু:
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে গণমাধ্যম কর্মীদের নিয়ে নানা প্রোপাগান্ডা ছাড়ানোর অভিযোগ উঠেছে জাতীয় রাজস্ববোর্ডের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
বিসিএস (শুল্ক ও আবগারি) ১১তম ব্যাচের কর্মকর্তা ড.মো.মতিউর রহমানের অস্বাভাবিক সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকেই সংশ্লিষ্ট সংবাদকর্মী এবং গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
প্রতিবেদক হাফিজুর রহমান শফিক অভিযোগ জানান, জাতীয় নির্বাচন কমিশনের সার্ভার থেকে বিধিবহির্ভূত ভাবে; জাতীয় রাজস্ববোর্ডের সদস্য (শুল্ক ও আবগারী) ড. মো.মতিউর রহমান, সাইবার এক্সপার্টদের ব্যবহার করে ‘গণমাধ্যম কর্মীদের জাতীয় পরিচয় পত্রের তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ তথ্য সংযুক্ত করে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। যেটি অন্যায় এবং আইনের ভাষায় এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
তিনি আরও বলেন, ফেব্রুয়ারী মাসের ২৪ তারিখে দূর্নীতি দমন কমিশন’র (দুদক) কাছে একটি লিখিত অভিযোগ জমা হয়। যেখানে সারাদেশে তার বিপুল সম্পত্তির কথা উল্লেখ রয়েছে, এই বিষয়ে তার মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছেন।
ঢাকার অন্য একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার সাংবাদিক মো.আহসানউল্লাহ হাসান দাবি করেন, দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ড.মতিউরের বিরুদ্ধে যথাযথ প্রকৃয়া অবলম্বন করে তদন্তকার্য পরিচালনা করলে আরও চমকপ্রদ তথ্য বের হয়ে আসবে।
আব্দুল্লাহ শেখ পেশায় একজন সংবাদকর্মী; কাজ করেন ঢাকার বহুপরিচিত একটি পত্রিকায়। তিনি ড.মো.মতিউর রহমানের সম্পদের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের অপেক্ষায় ছিলেন। এরমধ্যেই গ্রামের বাড়ি থেকে আব্দুল্লাহকে জানান হয়, সামাজিক মাধ্যমে স্ত্রী বোনকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ তথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছে একটি পেইজ থেকে। এমনটাই বলছিলেন পেশায় সাংবাদিক আবদুল্লাহ। তার অভিযোগ, জাতীয় পরিচয় পত্রের ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে ‘এনবিআর’ সদস্য মতিউর।
তিনি দাবি করেন, ড.মো.মতিউর রহমান কত-শত কোটি টাকার মালিক তা তিনি নিজেই জানেনা। আর এই বিপুল সম্পদের বিষয়ে যাঁরাই কলম ধরবে তাদেরকেই নানা ভাবে হয়রানি করার জন্য একটি বিশেষ সিন্ডিকেট কাজ করছে।
এই বিষয়ে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইব্রাহিম খলিলের মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোন ব্যক্তি যদি আয়বহির্ভূত সম্পদের মালিক হয়ে থাকেন তাহলে সঠিক তথ্য দিয়ে তার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশ সংবাদকর্মীর দায়িত্ব। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে মিথ্যা বা ভূয়া তথ্য প্রকাশ ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
Published on: ফেব্রু ২৭, ২০২৪ at ১৫:৫২