বেতন কমার প্রতিবাদে ধরনায় প.ব প্রাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা

Main দেশ রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: জানু ৩০, ২০২৪ at ২১:৫৬

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ৩০ জানুয়ারি: প্রতি মাসে বেতন কম পাওয়ার অভিযোগ করেছেন পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের, প্রাণী চিকিৎসা ও প্রাণী বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষকরা।তাদের অভিযোগ-পশ্চিমবঙ্গের একটাই মাত্র প্রাণী চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের চুড়ান্ত গাফিলতিতে প্রত্যেক মাসে বেতন কম পাচ্ছেন তারা। আর তারই প্রতিবাদে ধরনায় বসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা। এই বিষয়ে অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাদের কোনও জবাব মেলেনি।

ধরনায় বসা অধ্যাপকদের বক্তব্য অনুযায়ী, প্রাণী চিকিৎসা বিজ্ঞানে শিক্ষকতা ও গবেষণার সাথে যুক্ত এই শিক্ষকরা ২০০৭ সাল থেকেই মহামান্য উচ্চ আদালতের নির্দেশে নন প্র্যাকটিসিং ভাতা (NPA) পেয়ে থাকেন যেটি মূল বেসিক পে’র একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং মূল বেসিক পে’র সাথে সেটি যোগ করেই (Basic pay +NPA) মহার্ঘ্য ভাতা  (DA)ও অন্যান্য ভাতার গণনা করা হয়ে থাকে। এমনকি ২০১৯ সালের নতুন অর্থ কমিশনের সুপারিশ মেনেও ঠিক একই ভাবে গত বছরের অক্টোবর মাস পর্যন্তও তাঁরা বেতন পেয়ে এসেছেন। কিন্তু হঠাৎ করে গত বছরের (2023) নভেম্বর মাস থেকে প্রত্যেক মাসে নির্ধারিত বেতনের থেকে কম পেতে শুরু করেন শিক্ষকরা। চলতি বছরের  (২০২৪) জানুয়ারি মাস থেকে মহার্ঘ্যভাতা ছয় (৬%) থেকে বেড়ে দশ শতাংশ (১০%) হওয়ায় এই আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে।

এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে প্রশ্ন করে ধরনায় বসা শিক্ষকরা জানতে পেরেছেন, প্রাণী সম্পদ দফতরের ২০২১ সালের এক নির্দেশিকার পরিপ্রেক্ষিতে নন প্র্যাকটিসিং ভাতাটি মূল বেতনের সাথে যুক্ত না হয়ে শুধুমাত্র আলাদা করে ভাতা হিসেবে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে (Pure allowance) এবং ভবিষ্যতেও এটি আর মূল বেতনের অংশ হিসেবে গণ্য হবে না। বেশিরভাগ শিক্ষকদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিগত দুই বছরেও সঠিকভাবে ও সময়মতো প্রাণী সম্পদ (ARD) দফতরের  সরকারি আদেশনামার সংশোধনের ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়নি এবং কিছু সিনিয়র শিক্ষক অবৈধভাবে নিজেদের বেতন বাড়ানোর জন্য কর্তৃপক্ষকে প্রভাবিত করে এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন।

এখানে উল্লেখ্য, প্রাণী সম্পদ দফতরের অধীনে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন ব্লকে কাজ করা প্রাণী চিকিৎসকরা (VO) কিন্তু মূল বেতনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবেই নন প্র্যাকটিসিং ভাতা (NPA) পান। একই দফতরের অধীনে কাজ করেও এই বেতন বৈষম্য কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তাছাড়া আগাম কোন নির্দেশিকা না দিয়ে এইভাবে বেতন কেটে নেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষক এবং অসন্তুষ্ট। এই বিষয় নিয়ে সোমবার থেকেই বেলগাছিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে লাগাতার আন্দোলনে নেমেছেন তাঁরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং রেজিস্টার এর সঙ্গে বারংবার কথা বলার পরেও তাদের কাছে কোন সদ উত্তর পাওয়া যায়নি । বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে বারবার এ বিষয়ে চিঠি দিয়ে কোন উত্তর এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি বলেও অভিযোগ উঠেছে। ক্ষুব্ধ শিক্ষকদের অভিযোগ- “আজকের দিনেও নতুন করে বেতনের হিসেবের ARD vetting অর্ডার সেটা এখনো পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে এসে পৌঁছয়নি । তাই এ মাসের বেতনের কি হাল হাকিকত তা সবার কাছে অজানা । শিক্ষকদের কথায় ১৯৯৫ সালের পর থেকে যে ক’জন উপাচার্য এসেছেন তার মধ্যে সবথেকে ওকেজো, অকর্মণ্য উপাচার্য এর আগে কখনো তারা দেখেননি। যেখানে NPA এর মত এত বড় একটা প্রেস্টিজিয়াস ইস্যু সেটা কোনভাবে সুরাহা না করে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের যথেচ্ছাচার করছেন। নিজেরা 20000 টাকা করে বেশি বেতন নিয়ে যাচ্ছেন। যার সরকারি কোনো আদেশ নামা নেই। অপর দিকে বিনা কারণে ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট অ্যান্ড স্ট্যাটিউড (Act and Statute) না মেনে যাকে যখন ইচ্ছে পদে বসাচ্ছেন, আবার পদ থেকে অপসারণ করছেন । বিশৃঙ্খলা এবং স্বজন পোষণ এর বাতাবরণ তৈরি করার চেষ্টা করছেন। অপরদিকে যেখানে এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা, গবেষণা এবং সম্প্রসারণের যে মূল দায়িত্ব, সেই শিক্ষার পরিকাঠামো দিনে দিনে তলানিতে পৌঁছেছে।”

ধরনায় বসা শিক্ষকদের আরও অভিযোগ- “স্থায়ী কর্মচারীদের অভাবে প্র্যাকটিক্যাল হচ্ছে না, হোস্টেল গুলোতে ছাত্রদের থাকার অব্যবস্থা , বিভাগ গুলোতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয় না, ক্যাম্পাসে চারিদিকে আগাছায় ভর্তি, সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষ উদাসীন। এছাড়াও শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের বকেয়া ক্যাশ (CAS), পদোন্নতি ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া, পাওনা বেতন সহ সমস্ত কিছু এখন বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। এ বিষয়ে টিচার্স ফোরাম বারবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ফাইনান্স অফিসার, রেজিস্টার এবং সকল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বারবার আলোচনা করেও কিছু লাভ হয়নি। কেবলমাত্র এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের কাজ বেলেগাছিয়াতে ও মোহনপুরে ক্লিনিক্স পরিষেবা বললে ভুল হবে, এটাকে ব্যবসার ক্ষেত্র হিসেবে গড়ে তুলতে চাইছেন। যেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা পরিচালন সমিতির যে নীতি নিয়ম (ভেটেরিনারি কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া)- এর বিরুদ্ধে। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ক্লিনিক সেটা কেবলমাত্র স্নাতক, স্নাতকোত্তর ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাগত জ্ঞান অর্জনের জন্য, সেটাকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সবার সম্মুখে এমন ভাবে তুলে ধরেছেন যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠন-পাঠন তলানিতে পৌঁছে গেলেও ক্লিনিক- টাকে ব্যবসার জায়গায় নিয়ে যেতে তারা সদা সচেষ্ট ।”

বর্তমান পরিস্থিতিতে সমস্যার দ্রুত সমাধান না হলে আগামী সপ্তাহ থেকেই বৃহত্তর আন্দোলনের হুশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষকরা।

Published on: জানু ৩০, ২০২৪ at ২১:৫৬


শেয়ার করুন