আদিবাসীদের জন্য ম্যারাথনঃ প্রতিভা অন্বেষণে কুশল এডুকেশন ফাউন্ডেশন

Main খেলা দেশ রাজ্য
শেয়ার করুন

পুরলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি ম্যারাথনের এক জমজমাট অনুষ্ঠানের আয়োজন

Published on: ফেব্রু ১৬, ২০২৪ at ২৩:৫০

Reporter: Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ, ১৬ ফেব্রুয়ারি, কলকাতা : কাজ অনেকেই করছে কিন্তু এমন অসাধারন কাজ কিন্তু করছে কুশল এডুকেশনাল ফাউন্ডেশন। পুরুলিয়ায় বলা যেতে পারে গোটা জঙ্গলমহলে তারা একপ্রকার সাড়া ফেলে দিয়েছে। আদিবাসীদের মধ্যে তারা আজ খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কিভাবে জঙ্গলমহল ভালো থাকবে, কিভাবে এখানকার ছেলে-মেয়েরা এগিয়ে যাবে, কিভাবে তাদের আয়ের পথ সুগম হবে সেই চিন্তাই করে চলেছেন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান নরেশ আগরওয়াল। আর তাই আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি পুরুলিয়ায় অযোধ্যা পাহারে আদিবাসীদের জন্য ম্যারাথন দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছেন। উদ্দেশ্য, এখান থেকে প্রতিভা খুঁজে তাদের জাতীয় পর্যায়ের জন্য সঠিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। পরবর্তীকালে তাদেরকে আরও উন্নত করা যাতে তারা এশিয়ান গেমস কিংবা অলিম্পিক্সে অংশ নিয়ে ভারতের নাম উজ্জ্বল করতে পারে সেই ব্যাপারে তাদের স্ক্লারশিপের মাধ্যমে সঠিকভাবে গড়ে তোলা। এদিন প্রেস ক্লাবে উপস্থিত ছিলেন বিখ্যাত ফুটবলার জোস র‍্যমিরোজ ব্যারেটো।

কিংবদন্তি অযোধ্যা পাহাড়ে ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হবে যাতে প্রতি কিলোমিটারে জুম্বা, ঢোল, নাগারা, পাঞ্জাবি নাচ, ছৌ নাচ, সাঁওতাল নাচ, লাইভ পেইন্টিং ইত্যাদির মতো বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।

কুশল এডুকেশনাল ফাউন্ডেশনের  ট্রাস্টি কুশল আগরওয়াল জানান, এই অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী, প্রশাসনিক আধিকারিক এবং সামাজিক ক্ষেত্রের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকবেন।

ম্যারাথন শুরু ২৫ ফেব্রুয়ারি

কুশল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান নরেশ আগরওয়ালের পরিচালনায় পুরুলিয়া ম্যারাথন শুরু হবে ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল সাততায়। ত্রিপুরা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অপরেশ কুমার সিং এবং মুম্বইয়ের বিখ্যাত টিভি অভিনেতা রণবিজয় সিংহ এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা পতাকা উড়িয়ে তার সূচনা করবেন। আদিবাসীদের জন্য আয়োজিত এই ম্যারাথন বিভিন্ন সংস্থা এবং পুরুলিয়ার স্থানীয় ক্লাবগুলির কাছ থেকে সম্পূর্ণ সহযোগিতা এবং সমর্থন পাচ্ছে।

আমার মুখ্য উদ্দেশ্য – জঙ্গলমহলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াঃ নরেশ আগরওয়াল

আজ কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলনে এই কথাই জানিয়েছেন নরেশ আগরওয়াল। তিনি বলেছেন-  “আমি বুঝতে পারছি জঙ্গলমহলে অনেক সুযোগ আছে কিন্তু তা অনাবিষ্কৃত আছে। আমি পুরুলিয়াতে অনেক প্রজেক্ট করেছি।  ওখানে একটা ফ্যাক্টরি করেছিলাম। সেখানে আজ চার হাজার লোক কাজ করে খাচ্ছেন। তাছাড়া পুরুলিয়াতে হোটেল করা হয়েছে। আমার মুখ্য উদ্দেশ্য – জঙ্গলমহলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। জঙ্গলমহলে যেমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য রয়েছে সেখানকার আদিবাসী ভাইদের আগে রোজকার ছিল না। তাদের কথা চিন্তা করে কুশল পল্লী বলে একটা রিসর্ট ওখানে করেছি। প্রথমে আমি ১০টা কটেজ নিয়ে চালু করেছিলাম। যাতে ওদের একটা ব্যবস্থা হয়। আজ ২০০ পরিবার কাজ করে খাচ্ছে। এখন ১৫০ টি কেস কুশল পল্লী রিসর্ট। পুরো প্যান ইন্ডিয়াতে একটা নাম করেছে।“

“ আমি আমার আদিবাসী কর্মীভাইদের নিয়ে খেলো অযোধ্যা বলে একটা টুর্নামেন্ট করতাম। আমি বুঝতে পেরেছি যে যেভাবে ওদের অক্সিজেন দেবার ক্যাপাসিটি আছে যদি ওদের খেলাধুলোর সঙ্গে যুক্ত করা যায় তাহলে ভবিষ্যতে আমাদের দেশের নাম উজ্জ্বল করবে। সেই কথা মাথায় রেখেই আমি এই ম্যারাথনের চিন্তাভাবনা করেছিলাম। আমরা দেখেছি, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া সমস্ত জায়গায় আয়োজন করেছি। প্রোমো রানে এত বেশি উতসাহ দেখেছি । এমন অনেক ছেলেমেয়ে আছেন যারা বিনা জুতোতেই পাঁচ থেকে ছয় কিলোমিটার দৌঁড়েছে। হলদিয়াতে যখন আমার প্রোমো ম্যারাথন হয়েছিল তখন সাড়ে চার কিলোমিটার একজন মেয়ে-ছেলে মাত্র ১৩ মিনিটেই সম্পূর্ণ করেছিলেন।“

“সেই চিন্তা করেই আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি পুরুলিয়ায় একটা ম্যারাথনের আয়োজন করেছি। এই ম্যারাথনের পাশাপাশি আমরা একটা ফান রেসও আয়োজন করব। যাতে ১২-১৬ বছর বয়সী ছেলে-মেয়েরা এতে অংশ নিতে পারবে। আমরা তাদের চিহ্নিত করব। চিহ্নিত করে তারা যাতে ভাল কিছু করতে পারে সেই উদ্যোগও আমরা নিচ্ছি। তাদের যাতে এশিয়ান গেমস এবং অলিম্পিক্সে যাতে পাঠাতে পারি সেতাই আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য থাকবে। ব্যারেটো আমাদের উৎসাহ দিয়েছে। “

অযোধ্যা হিল ম্যারাথন সম্ন্বয়কারী প্রশান্ত সাহা বলেন- এটা শুধু পুরুলিয়া নয় গো্টা জঙ্গলমহলে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই উদ্যোগ নিয়েছে আমাদের কুশল এডুকেশন ফাউন্ডেশন। নরেশ আগরওয়াল চেয়ারম্যান। অযোধ্যা পাহাড়ের আশপাশের সমস্ত মানুষ এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। এটা একদিনের ম্যারাথন নয় এটা সারা বছরের উদ্যোগ। তিনটি বিভাগে ভাগ করা হয়েছে এই ম্যারাথনকে। একটি পাঁচ কিমি, দ্বিতীয়টি ১০ কিলোমিটার এবং তৃতীয় বিভাগে রয়েছে ২১ কিলোমিটার ম্যারাথন। ১০ ও ৫ কিমি ম্যারাথনে নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। যারা ভাল করবে তাদের জন্য জাতীয় পর্যায়ে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ প্রিশক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এমনকি, তাদের জন্য বিশেষ স্ক্লারশিপেরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সেরা প্রতিযোগীদের জন্য থাকছে নগদ পুরস্কার। সংবাদ মাধ্যমের কাছে অনুরোধ তারা যেন এই প্রতিভাদের প্রতিভাকে সামনে নিয়ে আসে। তারা যাতে আগামিদিনে জাতীয় গেমসে অংশ নিতে পারে।

সিএবি-র মেডিক্যাল বিভাগের চেয়ারম্যান প্রদীপ কুমার দে

সিএবি-র মেডিক্যাল বিভাগের চেয়ারম্যান প্রদীপ কুমার দে বলেন- আমি ২০২২ সালে পুরুলিয়া গিয়ে নিজের চোখে দেখে এসেছি। কুশল পল্লীতে আদিবাসী লোকজনদের নিয়ে যে কত বড় একটা ইন্ডাস্ট্রি চালাচ্ছেন,  তা নরেশবাবুর সৎ চেষ্টার সুফল।

অভিনেতা দেবরাজ বলেন-  কুশল এডুকেশন ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ দেব। অনেকের প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও তারা আড়ালে রয়ে গেছে। তাদের সহযোগিতা করা দরকার যাতে তারা এগিয়ে যেতে পারে সেটার দিকে নজর দেওয়া দরকার। এরা সেই কাজটা করছে।

“সারা পৃথিবীতে ম্যারাথন দৌড়ের অঙ্গ হিসাবে ব্যবহৃত হয় না ম্যারাথন ছুটে চলা যেটা আমাদের বহুকাল আগে পুরানে উল্লেখ আছে ‘চরৈবেতি’ অর্থাৎ এগিয়ে চলা। ম্যারাথন দৌড়তে দৌড়তে সেই বার্তা দিয়ে দেয়। আমরা শুনলাম কুশল প্লল্লী রিসর্ট আজ কিভাবে আদিবাসী ভাই-বোনদের সামনে যুযোগ করে দিয়েছে। ছোট্ট ছোট্ট পায়ে চলতে চলতে আজ তারা অনেক এগিয়ে গিয়েছে। বলেন অভিনেত্রী বুলবুল।

কালবেলিয়া নৃত্য পরিব্বেশন করবেন বিশ্বখ্যাত নৃত্যশিল্পী পদ্মশ্রী গুলাবো সাপেরা

আয়জক কমিটির পক্ষে অশোক চৌধুরী জানিয়েছেন- “২৫ ফেব্রুয়ারি বিকেল পাঁচটা থেকে কুশলপল্লী রিসর্টে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। যেখানে কালবেলিয়া নৃত্য পরিব্বেশন করবেন বিশ্বখ্যাত নৃত্যশিল্পী পদ্মশ্রী গুলাবো সাপেরা। তিনি রাজস্থান থেকে আসছেন তার দলের ১৫জন শিল্পীকে নিয়ে। প্রথম্বারের মতো জঙ্গলমহল এলাকায় এমন জমকালো অনুশঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। প্ল্যাটফর্মে কাল্বেলিয়া নৃত্যের পরিচয় প্রতিষ্ঠাকারী উপজাতীয় নৃত্যশিল্পী গুলানো সাপেরা ১৬৫টি দেশে পাওরফর্ম করেছেন। এছাড়াও পুরুলিয়া ছৌ নৃত্য এবং মুন্দারি ও সাঁওতালি নৃত্যও প্রকাশিত হবে। সেখানে একজন অন্ধ আদিবাসী তার মনোমুগ্ধকর বাঁশির সুরের মাতিয়ে দেবেন।

যাদের সম্মানিত করা হবে

একজন কলম লেখক এবং উপজাতীয় বিষয় নিয়ে লেখা আয়োজক কমিটির সদস্য সন্দীপ মুরারকা  জানান- ২৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় অযোধ্যা পাহারের কুশলপল্লী রিসর্টে আদিবাসী ইতিহাসে এক সোনালি পাতা যুক্ত হবে। এদিন পদ্মশ্রী পুরস্কার পাওয়া আদিবাসী সম্প্রদায়ের বহু নামকরা আদিবাসী ব্যক্তিত্বকে সম্মান জানানো হবে, যার মধ্যে পুরুলিয়ার ছৌ নৃত্যশিল্পী পদ্মশ্রী প্রয়াত গম্ভীর সিং মুড়া এবং ছৌ মুখোশ নির্মাতা পদ্মশ্রী প্রয়াত নেপাল সূত্রধরের পরিবারের সদস্যদের সম্মান জানানো হবে। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গের পদ্মশ্রী গুরু মা কমলি সোরেন, পদ্মশ্রী কালিপদ সরেন, পদ্মশ্রী ধনীরাম টোটো, পদ্মশ্রী দুখু মাঝি, ত্রিপুরার পদ্মশ্রী বিক্রম বাহাদুর জামাতিয়া, রাজস্থানের পদ্মশ্রী গুলাবো সাপেরা, প্রখ্যাত সাঁওতাল সাহিত্যিক ড. ট্রাজান, পদ্মশ্রী যমুনা টুডু, হো ভাষার লেখক পদ্মশ্রী জানুম সিং সোয় , পরিবেশবিদ পদ্মশ্রী চামি মুর্মু, নয়াদিল্লির বিখ্যাত বাইকার গার্ল কাঞ্চন উগুরসান্ডিকে সম্মান জানানো হবে। সমস্ত সম্মানিত অতিধিকে বিশ্ব বিখ্যাত পুরুলিয়া ছৌ নৃত্যের উদ্যোক্তা গম্ভীর সিং মুড়া-এর চিত্র উপস্থাপনব করা হবে, যাতে বিশ্ব স্ম্রণ করে সেই আদিবাসী পূর্বপুরুষকে যিনি পুরুলিয়া ছৌকে আন্তর্কাতিক স্বীকৃতি দিয়েছিলেন।

Published on: ফেব্রু ১৬, ২০২৪ at ২৩:৫০


শেয়ার করুন