আন্তর্জাতিক নারী দিবসে মনিপাল হসপিটাল, সম্মান দিয়ে বলল- সমাজের গর্ব ওরা যে ‘একাই একশো’

Main দেশ রাজ্য স্বাস্থ্য ও বিজ্ঞান
শেয়ার করুন

আমি খুবই সৌভাগ্যবতী বলছি যে ম্যামের  (ডা. সঞ্চালী তালুকদার) মতো একজন ডাক্তার পেয়েছি-
বাংলাদেশ থেকে আসা সাকী রেজওয়ানাহ্ রজনী
Published on: মার্চ ৮, ২০২৫ at ১২:২২
Reporter: Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ৮ মার্চ: কলকাতা শুধু নয় সারা দেশে বহু উন্নত মানের হাসপাতাল আছে। তারা ভাল পরিষেবাও দিয়ে চলেছে। কিন্তু তাদের মধ্যে অনন্য মনিপাল হসপিটাল। সারা দেশে তাদের ৬০টির মতো হাসপাতাল আছে। আর তাদের লক্ষ্য হল- অসুস্থদের সুস্থ করে তোলার চ্যালেঞ্জ। অন্যরা যখন হাল ছেড়ে দেন যখন মনিপাল তাদের সুস্থ করে তোলার চ্যালেঞ্জ নেয়। সারা ভারতবর্ষে এদের যতগুলি হাসপাতাল আছে সেখানে কর্মরত ডাক্তারদের লক্ষ্যই হচ্ছে তাদের সুস্থ করে পরিবারের মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলা। সারা বছর ধরেই তারা এই কাজ করে চলেছে নীরবে, নিঃশব্দে। আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রাক্কালে গতকাল এক অনব্দ্য প্রয়াস নিতে দেখা গেল মনিপাল হাসপাতালকে।যা দেখে আমরা সকলেই অভিভূত। তারা বিভিন্ন বয়সের নারীদের একত্রিত করেছিল কলকাতার এক বিলাসবহুল হোটেলে। যারা কঠিন অসুখে ভুগছিলেন। যাদের সুস্থ হয়ে ওঠাটা ছিল অলীক ভাবনা। এখানকার ডাক্তাররা চ্যালেঞ্জ নিয়ে সেইসব মহিলাদের নতুন জীবন ফিরিয়ে দিয়ে হয়ে উঠেছেন তাদের কাছে ‘ভগবান’। এটা তারা নিজের মুখে বলেছেন। সেইসব মহিলাদের মনিপাল হাসপাতাল মুকুট পরিয়ে দিল ‘পাওয়ার অব হার্ট’  সম্মান। কারণ, তাদের কথায়, সমাজের গর্ব এই নারীরা যে ‘একাই একশো’।

‘পাওয়ার অব হার্ট’ সম্মানিতদের মুখে ডাক্তারদের ভূয়সী প্রশংসা

বরানগরের ছবি নাগ, আড়িয়াদহের পূর্না ঘোষাল, অর্পিতা কর্মকার, অনিন্দিতা সরকার, দমদমের পঞ্চতপা মিত্র, সাঁতরাগাছির মিতা দাশগুপ্ত, বাংলাদেশের সাকি রেজওয়ানা চৌধুরী, সিন্ধিয়া রিমা গোমস সকলেই এদিন সম্মানিত হলেন মনিপাল হাসপাতালের থেকে। তারাও মনিপাল হাসপাতালের ডাক্তারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেননি। কেউ কেউ তো ডাক্তারদের সেবায় এতটাই সন্তুষ্ট যে তারা বলেই ফেললেন –এই ডাক্তার তাদের কাছে ‘ভগবান’। তারা কিছু মাত্র ভুল বলেননি। কারণ, ভগবান সেই যিনি বিপদের মুখ থেকে রক্ষা করেন। আর ডাক্তার যদি নতুন জীবন দান করেন তাহলে তা কিছু মাত্র ভুল নয়।

মনিপালের হেলথ কেয়ারের অবদান সেই শক্তিকে পূর্ণ বিকশিত করা

এদিন অনুষ্ঠানের শুরুতে কাকলি ম্যাডাম তার নিজের কথা প্রকাশ করতে গিয়ে তুলে ধরেন মূল্যবান বক্তব্য। “আমাদের নারী হওয়ার আগেও কিছু স্ট্রেস থাকে। সেই খান থেকে যদি আমাদের জার্নি শুরু করি । আজকের থিম জানেন- ‘পাওয়ার অফ হার্ট’। বাংলায় করলে আমরা একাই একশো। নিজেই একশো আর একশো জন মিলে তো সহস্র। নারীর যে শক্তি সেই শক্তি যাতে বিকৃত না হয় তার আমাদের হেলথ কেয়ারের অবদান সেই শক্তিকে পূর্ণ বিকশিত করা।

ডাক্তারবাবু আমার ভগবান। আগের জন্মে বোধ হয় ওনার সঙ্গে আমার রিলেশন ছিল-ছবি নাগ

বরানগরের ছবি নাগ নিজের অনুভূতির কথা প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন- আন্তর্জাতিক নারী দিবসে আমাদের মেয়েদের ঘর থেকে বের করে এনে মনিপাল সকলের সামনে বলতে বলিয়েছে , আমরা তো রান্না ঘরে খুন্তি নেড়েই জীবনতা কাটিয়ে দিলাম। আমরাও যে কিছু করতে পারি বলতে পারি এটা মাদের ভীষন অনুপ্রাণিত করে। আমিসবাইকে বলি যে তোমাদের অসুখ-বিসুখ করলে ঘরে বসে থেকো না। ডাক্তারের কাছে যাও। আমার তো বেঁচে ফিরে আসার কথা নয়, কিন্তু ডা. অরিন্দম পান্ডে আমাকে  বাঁচিয়ে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে দিয়েছে। আমার হার্টের ভালভ পালটানো হয়েছে। আমার স্বামী ওপেন হার্ট করতে চায়নি। কারণ, আমার বয়স ৭৩। আমায় ট্যাভার করেছেন। ট্যাভার করে সুস্থ করে দিয়েছেন। ডাক্তারবাবু আমার ভগবান। আগের জন্মে বোধ হয় ওনার সঙ্গে আমার রিলেশন ছিল। উনি আমাকে যেভাবে সাপোর্ট দিয়েছে আমি চিন্তা করতে পারি না। আর মনিপাল হাসপাতালের যা পরিকাঠামো তুলনা হয় না। ছোট ছোট্ট বাচ্চা বাচ্চা নার্সরা মাকে যেভাবে হাসিতে আনন্দে রেখেছে ক’দিন আমি ওদের কথা জীববনভর ভুলব না। ওরা ভীষণ ভাল। “

ডা. সুতনু হাজরার পরামর্শ নিয়ে পুরোপুরি সুস্থ-অর্পিতা কর্মকার

অর্পিতা কর্মকার একজন কর্পোরেট জগতের প্রতিনিধি । নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে গিয়ে বলেন- “আমি কাজের সূত্রে ইউএসএ গিয়েছিলাম। সেইদিন রাত ১১টা৩৫ মিনিটে অফিস থেকে বেরিয়েছিলাম। দীর্ঘ ৩৬ ঘণ্টার প্লেন জার্নি করে কলকাতায় ফিরে আসি। আমার অফিস আমাকে সহায়তা করেছে। আমার কাছে অন্য কোনও চয়েস ছিল না। আমি ডা. সুতানু হাজরার পরামর্শ নিয়েছিলাম। উনি আমার হাউজ ফিজিশিয়ান। আমি ওনার কথা মতোই মনিপাল হাসপাতালে চিকিৎসা করাই। অপারেশন করানো হয়। চার মাস বিশ্রামে ছিলাম। এটা আমার কাছে খুব কঠিন সময় ছিল। এখন আমি যথাযথভাবে ডা. অগ্নিভ দে’র অধীনে ফিজি ও থেরাপি করে এবং ডা. সুতনু হাজরার পরামর্শ নিয়ে পুরোপুরি সুস্থ।

ক্যান্সার জয় করে ফিরে আসা মমতা শর্মা শোনালেন তার লড়াইয়ের গল্প

“আমার নাম মমতা শর্মা। বয়স ৫৮ বছর। সিবিএসই স্কুলে প্রিন্সিপাল হিসাবে কাজ করেছি। ২০২১ সালে কোভিডের জন্য ব্যক্তিগত কারণে আমি ইস্তফা দি। ৩১ অক্টোবর আমি ব্যাথা অনুভব করি। দু-চারদিন চলে। আমি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। ঘরে ছেলে-মেয়েরা ডাক্তারের পরামর্শ নিতে বল। আমার মায়ের স্তন ক্যান্সার ছিল। আমি ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করি। তিনি মনিপাল হাসপাতালে ডাক্তার পুজা ম্যাডামের কাছে যেতে বলেন। ২০২১ সালের ১১ নভেম্বর যখন মাডামের কাছে আসি , তিনি আমাকে পরীক্ষা করেন। বায়োপ্সি করানোর নির্দেশ দেন। ১৩ নভেম্বর বায়ৈপ্সি হয়। ২৮ নভেম্বর রিপোর্ট সাইন হয়। যেখানে আমার স্তন ক্যান্সার ধরা পরে। উনি আমাকে অপারেশন করানোর কথা বলেন। ১৪ ডিসেম্বর ২০২১ য়ামার অপারেশন হয়। ডা. সুবীর বন্দ্যোপাধায়ের কাছে পাঠান। উনি ২০ রেডিয়েশনের কথা বলেন। সেই মতো আমি তা নি। এখন আমি অনেকটাই সুস্থ। ধন্যবাদ মনিপাল হাসপাতাল।“

ডা. জয়দীপ ব্যানার্জী চৌধুরীকে আমার জীবনে ঈশ্বরের পরেই স্থান দিয়েছি -অনিন্দিতা সরকার

অনিন্দিতা সরকার ২০১৬ সালে আমার দুটো হাঁটু অপারেশন হয়। ডা. জয়দীপ ব্যানার্জী চৌধূরীর তত্ত্বাবধানে। হাসপাতালের আতিথেয়তা থেকে শুরু অন্যান্য বিষয়ে আমার কোনও অভিযোগ নেই। আমার খুব ভাল লেগেছে। সবার আগে বলতে চাই- ডা. জেবিসি জয়দীপ ব্যানার্জী চৌধুরী উনি আমার জীবনে ঈশ্বরের পরেই ওনাকে জায়গা দিয়েছি। কারণ, ওনার হাতযশের কারণে জীবনে যে কষ্টগুলো ছিল যার জন্য আমার নাচ,  খেলাধুলো, ম্যারাথনে অংশ নিতাম সেইগুলো সব বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু অপারেশনের পর ওনার অনুমতি নিয়ে আমি আবার আগের জীবনে ফিরে যেতে পেরেছি।

বাংলাদেশ থেকে আসা সাকী রেজওয়ানাহ্ রজনীর গল্প

তবে এদিন সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছে বাংলাদেশ থেকে আসা সাকী রেজওয়ানাহ্ রজনীর গল্প। যার ইউটেরাসে ছ’টা টিউমার ছিল। সেই জায়গা থেকে ইউটেরাস বের করে সাকীর মা হওয়ার ইচ্ছা পূরণ করেছেন মনিপাল হাসপাতালের ডাক্তার সঞ্চিলা তালুকদার। নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে সাকী বলেন- আমার ইউটেরাসে ছ’টা টিউমার হয়েছিল। বাংলাদেশে ডাক্তার দেখিয়েছিলাম। বলা হয়েছিল যে ইউটেরাস ফেলে দিতে হবে। এখন ইউটেরাস ফেলে দিলে তো মা হওয়া সম্ভব নয়। আমি খুবই সৌভাগ্যবতী বলছি যে ম্যামের মতো একজন ডাক্তার পেয়েছি। আমার ইঞ্জেকশানেও ভয় ছিল। ১৫ বছর বয়সে যে ইঞ্জেকশনগুলি দেয় আমি ভয়ে একটাও দিইনি। ম্যামের সাহসের কারণে সব কিছু সম্ভব হয়েছে। ছ’টা টিউমার বের করা এত সহজ নয়। মায়ের পর যতি কাউকে সম্মান দিতে হয় তাহলে আমার এই ম্যাম। মাকে নতুন জীবন দিয়েছে। মা তো জন্ম দিয়ে জীবন দিয়েছে আর ম্যাম আমাকে নতুন জীবন দিয়েছে। ম্যাম আমাকে যতজন ডাক্তারের কাছে পাঠিয়েছে তাদের সকলেই এক বাক্যে বলেছেন সঞ্চিলা তালুকদার ভাল একজন ডাক্তার।“

তবে গোটা অনুষ্ঠানটি এক বিশেষ মাত্রা পেয়েছে এদিন আরজে নীলাঞ্জনের অনবদ্য উপস্থাপনায়। তার ছোট ছোট মন্তব্য আর উপস্থাপনা আন্ত্ররজাতিক নারী দিবসের অনুষ্ঠাকে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিল।

Published on: মার্চ ৮, ২০২৫ at ১২:২২


শেয়ার করুন