আন্তর্জাতিক নারী দিবসে মনিপাল হাসপাতাল : রোগী-ডাক্তারের সেরা মডেল হোক সাকী-সঞ্চিলা

Main দেশ বাংলাদেশ রাজ্য
শেয়ার করুন

“মা তো জন্ম দিয়ে একটা জীবন দিয়েছে। আর ম্যাম আমাকে নতুন জীবন দিয়েছে। আমি খুবই খুবই ভাগ্যবতী যে ম্যামের মতো একজন মানুষ পেয়ে।“
“ম্যাম আমাকে যে ক’জন ডাক্তারের কাছে পাঠিয়েছে সবাই আন্তরিক। সবাই ওইভাবেই দেখেছে। সবার একটাই কথা- সঞ্চিলা তালুকদার ভাল একজন ডাক্তার।“
“আমি ১০০ ভাগ সন্তুষ্ট। ম্যামের প্রতি ও মনিপাল হাসপাতালের প্রতি।“

Published on: মার্চ ৮, ২০২৫ at ২৩:২০

Reporter: Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, কলকাতা, ৮ মার্চ : বাংলাদেশের রাজশাহী থেকে এসেছিলেন উদ্বেগ, সংশয় আর মনের ভিতর জমে থাকা অন্ধকার নিয়ে। আর আজ  তার মন খুশিতে পূর্ণ। কোল আলো করে এসেছে যমজ সন্তান। আজ তিনি একজন মা। এ সবই সম্ভব হয়েছে মনিপাল হাসপাতালের জন্য। বাংলাদেশের সাকী রেজওয়ানাহ্ রজনী মনিপাল হাসপাতালের ডাক্তার সঞ্চিলা তালুকদারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কারণ, তিনি করেছেন সেই অসাধ্যসাধন। সবসময় বলছেন একটি কথা- ম্যামের মতো ডাক্তার হয় না। রোগী-ডাক্তারের এমন সুন্দর বোঝাপড়া আর সম্পর্কের বন্ধন হয়ে উঠুক মজবুত এবং সুন্দর। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে রোগী-ডাক্তারের সেরা মডেল হোক তাই সাকী-সঞ্চিলা।

একজন ডাক্তার কত ভাল হলে রোগী তার এমন প্রশংসা করতে পারে তার উজ্জ্বল নির্দর্শন দেখতে পেলাম আন্তর্জাতিক নারী দিবসে মনিপাল হাসপাতালের বিশেষ অনুষ্ঠানে। যেখানে তারা এমন বেশ কয়েকজন নারীকে উপস্থিত করেছিলেন যারা শারীরিক কঠিন অসুখ কিংবা সমস্যায় পড়ে কষ্ট পাচ্ছিলেন। মনিপাল হাসপাতালের উন্নত চিকিৎসায় তারা ফিরে পেয়েছে নিজেদের স্বাভাবিক জীবন। নারীরা যে একাই একশো সেই কথাকে স্মরণে রেখে মনিপাল হাসপাতল তাদের দিয়েছে ‘পাওয়ার অফ হার্ট’ সম্মান। আর সেই সম্মান পেয়ে অভিভূত বাংলাদেশের রাজশাহীর  সাকী রেজওয়ানাহ্ রজনী । যিনি ইউটেরাসে ছ’টি টিউমার নিয়ে মা হওয়ার ভাবনা ভুলতে বসেছিলেন , কোনওদিন তিনি আর মা হতে পারবেন না – এমনটা যখন তার নিজের বাংলাদেশের পরিচিতরা ধরে নিয়েছে তখন কলকাতায় মনিপাল হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সঞ্চিলা তালুকদার ঘটিয়ে ফেললেন এক অসাধ্যসাধন। ছ’টি টিউমার সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বের করে ফেললেন। ইউটেরাসকে রেখেই। বাংলাদেশের নারী সাকীর মা হওয়ার স্বাদ পূরণ করলেন কলকাতার আর এক নারী ডা. সঞ্চিলা তালুকদার।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের হাত ধরে এই অসম্ভবকেও সম্ভব করে তুলছেন ডাক্তাররা। বিশেষ করে একজন নারীর কঠন সমস্যার সমাধান করে আর এক নারী দিচ্ছেন তাকে মাতৃত্বের স্বাদ পূরণের ইচ্ছা। ভিসা সমস্যার জন্য বাংলাদেশীদের ভারতে আসা এখন অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে, সেকথাও উঠে এসেছে সাকীর বক্তব্যে। একদিন যারা বলেছিল যে সাকী আর কোনওদিন মা হতে পারবে না, এখন তারাই সাকীকে দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছে। বাংলাদেশের বহু মানুষ আশায় বুক বেঁধে রয়েছেন – কবে তারা ভারতে আসবেন। কলকাতায় এসে মনিপাল হাসপাতালের ডাক্তার সঞ্চিলা তালুকদারকে দেখাবেন। কারণ, এই সমস্যা অনেকেরই আছে। তাই তাদের কাছে এখন বড় ভরসার নাম ডা. সঞ্চিলা তালুকদার, যার চিকিৎসা পেতে আগ্রহী বাংলাদেশের অনেকেই ।

সংবাদ প্রভাকর টাইমস-কে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের রাজশাহী থেকে আসা সাকী রেজওয়ানাহ্ রজনী জানালেন তার মাতৃত্বের স্বাদ পূরণের বাস্তব কাহিনি।

সাকি বলেন- “আমি বাংলাদেশের রাজশাহী থেকে এসছি। মনিপাল ব্যাঙ্গালোরে প্রথমে গিয়েছিলাম। পরিবারকে নিয়ে গিয়েছিলাম। তখন কলকাতায় মনিপাল ছিল না। ২০২২ সালে গিয়েছিলাম ব্যাঙ্গালোরে। তারপর সার্চ করতে করতে জানতে পারলাম যে কলকাতায় মনিপাল আসছে। তখন ম্যাডামের খোঁজ পেয়েছিলাম। তারপর ওনার সঙ্গে যোগাযোগ করি। তখন থেকেই পরিচিত ডাক্তার ছিল সঞ্চিলা তালুকদার। ওনার কাছেই আমার ট্রিটমেন্ট শুরু। আমার প্রেগন্যান্সি জার্নিটা পুরোটাই ম্যামের তত্ত্বাবধানে হয়েছে। আজ আমার যমজ সন্তান। এক ছেলে এক মেয়ে। আমাদের বিয়ে হয়েছে নয় নছর। বেবি হয়েছে ২০২৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। এই দিন আমার স্বামীরও জন্মদিন।“

“আমি বাংলাদেশ থেকে একপ্রকার না শুনেই এসেছিলাম। আমাদের দু’জনের এত প্রবলেম যে মা হওয়াটা অনেক কঠিন ছিল আমার জন্য। এমনকী আমার ইউটেরাসে ছ’টা টিউমার ছিল। যেটা বাংলাদেশ থেকে বলেছে যে আমার ইউটেরাস ফেলে দিতে হবে। ইউটেরাস ফেলে দিলে তো মা হওয়া কখনোই সম্ভব না। আমি নিজে খুব সৌভাগ্যবতী বলছি – আমি সঞ্চিলা ম্যামের মতো একজন ডাক্তার পেয়েছি। মানে আমার ইঞ্জেকশানেও ভয় ছিল। এমনকী, ১৫ বছর বয়সে যে ইঞ্জেকশনগুলো দেয় মানে আমি এতই ভিতু যে ঐ ইঞ্জেকশনগুলো একটাও আমি দেয়নি। আমার বাড়িতেও ডাক্তার আছে। তারাও আমার জেদের সাথে পারেনি। না, আমি দেবই না। সবাই মনে করেছে যে পরে তো দেওয়া যায়, তাহলে পরে দেবে। আমার যে শরীরের মধ্যে টিউমারগুলো বড় হয়েছে তখন জানা যায়নি। পরে চিকিৎসা করাতে এসে দেখছি কিরকম অবস্থা। আসলে ম্যামের সাহসের কারণেই সব কিছু সম্ভব হয়েছে। ম্যাম এইভাবে যে দিয়েছে , তখন দেখলে মনে হবে আমি বোধ হয় ম্যামের রিলেটিভ। ওইরকমই হয়ে গেছি।“ বলে চলেন সাকী।

ডাক্তার সঞ্চিলা তালুকদারের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালবাসা প্রকাশ করতে গিয়ে সাকী বলতে থাকেন- “বাংলাদেশে যাওয়ার পরেও ম্যামের সাথে ওই আন্তরিকতা তৈরি হয়ে গেছে। আমি যেভাবে বিরক্ত করেছি, এখনও বোধ হয় বিরক্তি করি। ম্যাসেজ থেকে শুরু করে সব সময় বলি-ম্যাম, এটা হল, সেটা হল। ম্যাম ছাড়া আমার মনে হয় না, এতটা কেউ বুঝতে পারত। ছ’টা টিউমার বের করা এত সহজ ছিল না। এটা ম্যামের কারণেই সম্ভব হয়েছে। ওটিতে যাওয়া থেকে শুরু করে আমার কোল্ড এলার্জি এটা তো ছিলই। সমস্ত কিছু, আমি বলব- মায়ের পর যদি কাউকে সম্মান দিতে হয় তাহলে সে হল এই ম্যাম। আমাকে নতুন জীবন দিয়েছে। মা তো জন্ম দিয়ে একটা জীবন দিয়েছে। আর ম্যাম আমাকে নতুন জীবন দিয়েছে। আমি খুবই খুবই ভাগ্যবতী যে ম্যামের মতো একজন মানুষ পেয়ে।“

“ম্যাম আমাকে যে ক’জন ডাক্তারের কাছে পাঠিয়েছে সবাই আন্তরিক। সবাই ওইভাবেই দেখেছে। সবার একটাই কথা- সঞ্চিলা তালুকদার ভাল একজন ডাক্তার। হ্যাঁ, উনি সত্যি ভাল একজন ডাক্তার। আমার  নামটা সঠিকভাবে উচ্চারণ করে। আমার নামটা যত বড় , কলকাতার সব ডাক্তারদের উচ্চারণ করতে একটু কষ্টই হয়। ম্যাম সেটা সহজেই করতে পারে। আমার মনে হয় ম্যামের মতো যদি ডাক্তার থাকে তাহলে পশ্চিমবঙ্গের চেহারাও বদলে যাবে।“ আবেগতাড়িত হয়ে সাকী বলে ফেলেন।

মনিপাল হাসপাতালের ব্যবস্থা নিয়ে জানতে চাওয়া হলে সাকী বলেন- “কোনও কিছু বলার নেই। কোনও ত্রুটি ওনারা রাখে না। ঘর যিনি পরিষ্কার করেন উনি এসেও জিজ্ঞাসা করেন-  ঘর কি ঠিক মতো পরিষ্কার হয়েছে?  দুই দিন পর পরই। আমি তো এখানে সিজারের পর চারদিন ছিলাম।এখানকার সেবা নিয়ে কোনও কিছুই বলব না। আর খাওয়া দাওয়া তো খুবই ভাল। আমরা এসেছি নয় মাস হয়ে গেছে। এখনো তিন-চার মাস তো আছি। তারপর আবার বাংলাদেশ ফিরে যাব। যেহেতু ভিসার একটু সমস্যা হচ্ছে ভিডিও কলে অনেকে যোগাযোগ করছে ভিডিও কলে ডাক্তারদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে।“

একেবারে শেষে সাকী মনিপাল হাসপাতাল , ডাক্তার সঞ্চিলা তালুকদারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন- “আমার যে ফার্টিলিটি সমস্যা ছিল । আমার বন্ধুবান্ধবরা মনে করত আমার আর বেবি হবে না। আজ তারাও এখন আমাকে দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছে। আমি যে ডাক্তার দেখাচ্ছি সেই ডা. সঞ্চিলা  তালুকদার তো অনন্যা। ম্যামের মতো ডাক্তার হয় না। ওই রকম ডাক্তার হলে না রোগীরাও সুস্থ হয়ে যাবে। আমার তো দুটো অপারেশন ওনার হাত দিয়েই হয়েছে। আমি ১০০ ভাগ সন্তুষ্ট। ম্যামের প্রতি ও মনিপাল হাসপাতালের প্রতি।“

Published on: মার্চ ৮, ২০২৫ at ২৩:২০


শেয়ার করুন