সম্পূর্ণ বিনামূল্যে আটজনের ছানি অপারেশন করল স্পেকট্রা আই ফাউন্ডেশন।
‘এই লেন্সের মাধ্যমে আমরা চাইছি মানুষ চশমাবিহীন জীবনযাপন করুন ছানি অপারেশনের পর।’
এখন সঠিক উপায়ে ছানি কাটা বা রেটিনার চিকিৎসায় স্পেকট্রা আই ফাউন্ডেশন আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে ভরসার কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছে।
সংবাদদাতা- অনিরুদ্ধ পাল ও জয়ন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
Published on: জুলা ২১, ২০১৯ @ ২৩:৪১
এসপিটি নিউজ, মধ্যমগ্রাম, ২১জুলাই: লাইভ অর্থাৎ সরাসরি খেলা কিংবা বিভিন্ন অনুষ্ঠান আমরা দেখে থাকি। কিন্তু প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে এখন চিকিৎসা বিজ্ঞানের কর্মকান্ডও কিন্তু সরাসরি মানুষ দেখতে পাচ্ছে। এর আগে পশ্চিমবঙ্গে সরাসরি ছানি অপারেশন দেখার সুযোগ সাধারণ মানুষের হয়েছে কিনা জানা নেই, তবে আজ রবিবার কলকাতার সন্নিকটস্থ উত্তর শহরতলী মধ্যমগ্রামে স্পেকট্রা আই ফাউন্ডেশন কিন্তু এই অভিনব সুযোগ করে দিয়ে চোখের চিকিৎসায় এক নিঃশব্দ বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলল।
চোখের চিকিৎসায় এ এক অভূতপূর্ব ঘটনা
দেশের বিখ্যাত চক্ষু চিকিৎসার সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক কোম্পানি অ্যাপ্পাস্বামী অ্যাসোসিয়েটস-এর সহযোগিতায় উন্নত প্রযুক্তিতে চোখের ছানি অপারেশনের ব্যবস্থা করেছিল স্পেকট্রা আই ফাউন্ডেশন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের স্বনামধন্য চক্ষু চিকিৎসকরা এদিন সেই ছানি অপারেশন করলেন একেবারে সরাসরি। হাসপাতালের নীচেই এক বড় স্ক্রিনে সকলে সেই অপারেশন একেবারে লাইভ দেখলেন। যা সত্যিই এক অভূতপূর্ব ঘটনা চোখের চিকিৎসার ক্ষেত্রে।স্পেকট্রা আই ফাউন্ডেশনের অন্যতম ডিরেক্টর ডা. অনন্যব্রত দাস জানালেন তাঁরা এখন চোখের চিকিৎসায় উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করছেন। এর মাধ্যমে চোখের চিকিৎসায় সাফল্যও আসতে শুরু করেছে।
লাইভ অপারেশনে যে সমস্ত চিকিৎসকরা ছিলেন
লাইভ অপারেশনে যারা অংশ নিয়েছিলেন তাঁরা হলেন কর্ণাটকের উদিপির প্রসাদ নেত্রালয়ের মেডিক্যাল ডিরেক্টর ডা. কৃষ্ণপ্রসাদ, উড়িষ্যার বেরহামপুরের শঙ্করা আই হসপিটালের মেডিক্যাল ডিরেক্টর ডা. সুদীপ দাস, মুম্বইয়ের কে বি হাজি বাচোয়ালি আই হসপিটালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. সুভীরা জৈন এবং আমাদের রাজ্যের মধ্যে ছিলেন রানাঘাটের চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. প্রদীপ মহন্ত। লাইভ ছানি অপারেশনে আমরা দেখলাম চক্ষু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা কিভাবে এ ধরনের অপারেশন করে থাকেন। চোখের ভিতরে ছানি কেটে বের করে সেখানে পরিষ্কার করে তারপরে কিভাবে নতুন লেন্স স্থাপন করা হয় সেটা এদিনের লাইভ অপারেশনে মানুষ প্রত্যক্ষ করলেন।অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মালদহ বিকেজি আই হাসপাতালের ডিরেক্টর ডা. দেবদাস মুখোপাধ্যায়।
কি কারণে সেরা হয়ে উঠেছে স্পেকট্রা আই ফাউন্ডেশন
চোখের চিকিৎসায় প্রযুক্তি এখন বিরাট ভূমিকা পালন করে। স্পেকট্রা আই ফাউন্ডেশন এই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়েই চোখের চিকিৎসায় সাফল্যের পথে এগিয়ে চলেছে। রেটিনার অস্ত্রোপচারের জন্য পশ্চিমবঙ্গের মানুষ আগে এক সময় দক্ষিণ ভারত ছুটে যেতেন। এখন সঠিক উপায়ে ছানি কাটা বা রেটিনার চিকিৎসায় এই হাসপাতাল আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে ভরসার কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি স্পেকট্রা আই ফাউন্ডেশন অপটিক্যাল কোহেরেন্স টোমোগ্রাফি অ্যাঞ্জিওগ্রাফি ব্যবহার শুরু করেছে। এটি এক ধরনের আলোর রশ্মি। যা প্রয়োগ করে নিখুঁত চোখের রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হয়েছে।চোখের রেটিনাল ভেসেলগুলির সঠিক পর্যালোচনায় এর জুড়ি মেলা ভার।
‘চশমাবিহীন জীবনযাপন করুন ‘
স্পেকট্রা আই ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টর ডা. অনন্যব্রত দাস আজকের অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানাতে গিয়ে বলেন- “ছানি অস্ত্রোপচারের অগ্রিম স্তর। অর্থাৎ চিকিৎসা বিজ্ঞানে এখন অনেক কিছু আসছে। অনেক নতুন জিনিসের আবিষ্কার হচ্ছে। সেরকমই লেন্সের ক্ষেত্রেও নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন হচ্ছে। তার মধ্যে একটি লেন্স আসছে-যার মাধ্যমে রোগী কাছেও দেখতে পাবে, মাঝখানেও দেখতে পাবে আবার দূরেও সমানভাবে দেখতে পাবে। এই লেন্সের মাধ্যমে আমরা চাইছি চশমাবিহীন জীবনযাপন করুন ছানি অপারেশনের পর। এটাই হল আমাদের মূল উদ্দেশ্য। আজ মোট আটজনের ছানি অপারেশন করা হয়েছে তাদের একেবারে বিনা পয়সায়। তারা সকলেই আমাদের উত্তর ২৪ পগনার বাসিন্দা।”
নতুন এই লেন্সের খরচা সামান্য বেশি
উন্নত প্রযুক্তির এই অপারেশনে খরচা কেমন হবে সেই বিষয়ে ডা. অনন্যব্রত দাস জানান-“এই অপারেশন ফেকোর প্রযুক্তিতেই হবে। তবে লেন্সের খরচটা একটু বেশি হবে। সাধারণতঃ ১২-১৫ হাজার টাকার লেন্সে যে অপারেশন আমরা করে থাকি সেটাই যদি এই লেন্স দিয়ে হয়ে যায় দেখা যাবে খরচা একটু বেড়ে গেল। সেক্ষেত্রে লেন্সের খরচা হয়তো ১৮-১৯ হাজার টাকা গিয়ে দাঁড়াবে। এই লেন্স যদি দুটি চোখেই করে নিতে পারে তাহলে সেই মানুষটি বাকি জীবন চশমাবিহীনভাবে কাটাতে পারবে। আমাদের এখানে ডিসিআর অর্থাৎ নেত্রনালীর অপারেশনের জন্য দু’তিন জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন। তারা যেসব অপারেশন করেছে এই বিষয়ে সেক্ষেত্রে সাফল্যের হার কিন্তু ৯২-৯৫ শতাংশ।” “এখানে গ্লুকোমার চিকিৎসাও হয়। গ্লুকোমার জন্য যে সমস্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার সেগুলোও এখানে হয়। সেজন্য পেরিমিটরি দরকার হয়।এখন অনেক বাংলাদেশি রোগী এখানে চিকিৎসা করাতে আসেন।” জানান ডা. দাস।
১৮ বছর আগে পথ চলা শুরু
কলকাতায় উত্তর শহরতলীর মধ্যমগ্রামে আজ থেকে ১৮ বছর আগে ২০০১ সালে পথ চলা শুরু করে স্পেকট্রা আই ফাউন্ডেশন। পাঁচ জন ডিরেক্টর ডা. অনন্যব্রত দাস, ডা. সত্যজিৎ দে, ডা. দেবলীনা ব্রুহ্ম, মানস চ্যাটার্জি ও মুনমুন চৌধুরীকে এবং কয়েকজন চিকিৎসককে নিয়ে যাত্রা শুরু করে তারা। আজ তা এক মহীরূহে পরিণত হয়েছে।সারা দেশে উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আধুনিক চক্ষু চিকিৎসায় এই প্রতিশঠান তাদের ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে চলেছে অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে। ছানি অপারেশন আজ যেভাবে আরও আধুনিক হয়েছে সেটাই এদিন লাইভ করে দেখাল স্পেকট্রা আই ফাউন্ডেশন।
Published on: জুলা ২১, ২০১৯ @ ২৩:৪১