Google আজ Doodle দিয়ে ভারতের প্রথম মহিলা চিকিৎসক কাদম্বিনী গাঙ্গুলীর ১৬০তম জন্মদিবসে শুভেচ্ছা জানাল

দেশ বিদেশ শিক্ষা স্বাস্থ্য ও বিজ্ঞান
শেয়ার করুন

Published on: জুলা ১৮, ২০২১ @ ১৭:১৯
Reporter: Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ: ভারত সহ দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম মহিলা চিকিৎসক কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের ১৬০তম জন্মদিবসে গুগল ডুডল বানিয়ে সম্মান জানাল। ঊনিশ শতকের শেষভাগে তিনি পাশ্চাত্য চিকিৎসায় ডিগ্রি অর্জন করেন এবং আনন্দীবাঈ জোশীর সঙ্গে তিনি হয়ে উঠেছিলেন ভারতের একজন প্রতিষ্ঠিত নারী চিকিৎসক। এই লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য তাঁকে সেইসময় রক্ষণশীল সমাজের সঙ্গে মানসিক লড়াইয়ের কঠিন পরীক্ষাও দিতে হয়েছিল। নানা বাঁধা কাটিয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন একজন সফল চিকিৎসক।

গুগল আজ লিখেছে -“ডা. কাদম্বিনী গাঙ্গুলী শুধুমাত্র একজন প্রথম ভারতীয় মহিলা গ্র্যাজুয়েটই হিলেন না তিনি এই ভারতীয় সীমান্ত এলাকায় একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রথম মহিলা চিকিৎসকও ছিলেন। অতিথি শিল্পী ওদ্রিজা ডুডলটি অঙ্কন করেছেন।

কাদম্বিনীর ছেলেবেলা

বিহারের ভাগলপুরে ১৮৬১ সালের ১৮ই জুলাই জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর মূল বাড়ি ছিল বর্তমান বাংলাদেশের বরিশালের চাঁদশীতে। তাঁর বাবা ব্রাহ্ম সংস্কারক ব্রজকিশোর বসু ছিলেন ভাগলপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক। ব্রজকিশোরবাবু ভাগলপুরে অভয়চরণ মল্লিকের সাথে মহিলাদের অধিকার নিয়ে আন্দোলন করেছিলেন। ১৮৬৩ খ্রিষ্টাব্দে তাঁরা মহিলাদের সংগঠন ভাগলপুর মহিলা সমিতি স্থাপন করেছিলেন। এই ঘটনা ছিল ভারতে প্রথম। দ্বারকানাথ গাঙ্গুলী ও তার বন্ধু কাদম্বিনীর পিসতুতো দাদা মনমোহনের হাত ধরে কাদম্বিনী তার পড়াশোনা আরম্ভ করেন হিন্দু মহিলা বিদ্যালয়ে। এক কালে দ্বারকানাথের পোলিও আক্রান্ত ছেলে সতীশের জ্বরের সময়ে তার মাথা ধুইয়ে তার প্রাণরক্ষা করেছিলেন কাদম্বিনী। এর জন্য তার বুদ্ধিমত্তার প্রশংসাও করেছিলেন তৎকালীন বিখ্যাত ডাক্তার মহেন্দ্র লাল সরকার।

কাদম্বিনীর পড়াশোনা

স্কুলজীবনে পড়াশুনা ছাড়াও অন্যান্য বিষয়ে যথেষ্ট আগ্রহ ছিল কাদম্বিনীর। স্কুলে পড়ার সময়ে তিনি ১৮৭৮ সালে প্রথম মহিলা হিসাবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষায় দ্বিতীয় শ্রেণিতে পাস করেন। তার দ্বারাই প্রভাবিত হয়ে বেথুন কলেজ প্রথম এফ.এ (ফার্স্ট আর্টস) এবং তারপর অন্যান্য স্নাতক শ্রেণি আরম্ভ করে। কাদম্বিনী এবং চন্দ্রমুখী বসু বেথুন কলেজের প্রথম গ্র্যাজুয়েট হয়েছিলেন ১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দে। তারা বি.এ পাস করেছিলেন। তারা ছিলেন ভারতে এবং সমগ্র ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রথম মহিলা গ্র্যাজুয়েট।

হয়ে উঠলেন মহিলা চিকিৎসক

গ্র্যাজুয়েট হবার পর কাদম্বিনী দেবী সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি ডাক্তারি পড়বেন। ১৮৮৩ সালে মেডিকেল কলেজে ঢোকার পরেই তিনি তার শিক্ষক দ্বারকানাথ গাঙ্গুলীকে বিয়ে করেন। দ্বারকানাথ বিখ্যাত সমাজসংস্কারক ও মানবদরদী সাংবাদিক হিসেবে খ্যাত ছিলেন। যখন তিনি বিয়ে করে তখন ৩৯ বছর বয়েসের বিপত্নীক, কাদম্বিনীর বয়স তখন ছিল একুশ। কাদম্বিনী ফাইন্যাল পরীক্ষায় সমস্ত লিখিত বিষয়ে পাস করলেও প্র্যাকটিক্যালে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অকৃতকার্য হন। ১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দে তাকে জিবিএমসি (গ্র্যাজুয়েট অফ বেঙ্গল মেডিক্যাল কলেজ) ডিগ্রি দেওয়া হয়। তিনি ছিলেন প্রথম ভারতীয় মহিলা যিনি পাশ্চাত্য চিকিৎসারীতিতে চিকিৎসা করবার অনুমতি পান। মেডিক্যাল কলেজে পড়ার সময় তিনি সরকারের স্কলারশিপ পান যা ছিল মাসে ২০ টাকা।

কংগ্রেসের অধিবেশনে ছিলেন মহিলা বক্তা

তিনি পাঁচ বছর মেডিক্যাল কলেজে পড়াশোনা করার পর বিলেত যাবার আগে ১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কিছুদিন লেডি ডাফরিন মহিলা হাসপাতালে মাসিক ৩০০ টাকা বেতনে কাজ করেছিলেন। ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে রাজমাতার চিকিৎসার্থে নেপাল যান। ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দে বোম্বে শহরে কংগ্রেসের পঞ্চম অধিবেশনে প্রথম যে ছয় জন নারী প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছিলেন কাদম্বিনী ছিলেন তাদের অন্যতম একজন। পরের বছর তিনি কলকাতার কংগ্রেসের ষষ্ঠ অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন। কাদম্বিনী ছিলেন কংগ্রেসের প্রথম মহিলা বক্তা।

চা বাগানের শ্রমিকদের শোষণের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন

কাদম্বিনী গান্ধীজীর সহকর্মী হেনরি পোলক প্রতিষ্ঠিত ট্রানসভাল ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম সভাপতি এবং ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতায় অনুষ্ঠিত মহিলা সম্মেলনের সদস্য ছিলেন। ১৯১৪ সালে তিনি কলকাতায় সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজের অধিবেশনে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এই অধিবেশন মহাত্মা গান্ধীর সম্মানের জন্য আয়োজন করা হয়েছিল। কাদম্বিনী চা বাগানের শ্রমিকদের শোষণের বিষয়ে অবগত ছিলেন এবং তিনি তার স্বামীর দৃষ্টিভঙ্গি সমর্থন করেন যিনি আসামের চা বাগানের শ্রমিকদের কাজে লাগানোর পদ্ধতির নিন্দা করেছিলেন। কবি কামিনী রায়ের সাথে কাদম্বিনী দেবী ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে বিহার এবং ওড়িশার নারীশ্রমিকদের অবস্থা তদন্তের জন্য সরকার দ্বারা নিযুক্ত হয়েছিলেন।

আমেরিকান ইতিহাসবিদের চোখে কাদম্বিনীদেবী

আট সন্তানের মা হওয়ার কারণে সংসারের জন্যও তাকে বেশ সময় দিতে হতো। তিনি সূচিশিল্পেও নিপুণা ছিলেন। বিখ্যাত আমেরিকান ইতিহাসবিদ ডেভিড কফ লিখেছেন, “গাঙ্গুলির স্ত্রী কাদম্বিনী ছিলেন তাঁর সময়ের সবচেয়ে সফল এবং স্বাধীন ব্রাহ্ম নারী। তৎকালীন বাঙালি সমাজের অন্যান্য ব্রাহ্ম এবং খ্রিস্টান নারীদের চেয়েও তিনি অগ্রবর্তী ছিলেন। সকল বাধার ঊর্ধ্বে উঠে মানুষ হিসেবে নিজেকে জানার তাঁর এই ক্ষমতা তাঁকে সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজে নারীর অধিকার নিয়ে কথা বলা জনগোষ্ঠীর কাছে অনুপ্রেরণার উৎসে পরিণত করে।”

Published on: জুলা ১৮, ২০২১ @ ১৭:১৯


শেয়ার করুন