দিশা এবার গিরিশ পার্কেও, মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতাল হতে চলেছে নিউটাউনে – ডা. দেবাশীষ ভট্টাচার্য

Main দেশ রাজ্য স্বাস্থ্য ও বিজ্ঞান
শেয়ার করুন

পশ্চিমবঙ্গবাসীকে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়াই আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য- ডা. দেবাশীষ ভট্টাচার্য
খুব শীঘ্রই দিশা ১০০টি ‘টেলিকনফ্রনটেশন বা ভিশন সেন্টার চালু করতে চলেছেন শহর ও শহরতলীতে
Published on: মার্চ ৫, ২০২৫ at ১৯:৪৭
Reporter: Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ৫ মার্চ : দিশা চক্ষু হাসপাতাল তাদের ১৯তম শাখার উদ্বোধন করল কলকাতায় গিরিশ পার্কে। মেট্রো স্টেশনের এক নম্বর গেট থেকে বেরোলেই চোখে পড়বে হাসয়াপাতালটি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ উপস্থিত ছিলেন কাশীপুর রামকৃষ্ণ মঠের স্বামী শান্তিপ্রদানন্দ মহারাজ, দিশা চক্ষু হাসপাতালের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডা. দেবাশীষ ভট্টাচার্য ও ডা. আদিত্য  সহ অন্যান্যরা। এদিন গিরিশ পার্কে দিশা চক্ষু হাসপাতালের নতুন শাখার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়ে বড় ঘোষণা করেন কর্ণধার ডা. দেবাশীষ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন-“আগামী ছয় মাসের মধ্যে নিউটাউনে তারা একটি মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতাল উদ্বোধন করতে চলেছেন। যেখানে সব ধরনের পরিষেবা মিলবে। একই সঙ্গে তিনি এদিন আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষোণা করে জানিয়ে দেন যে খুব শীঘ্রই তারা ১০০টি ‘টেলিকনফ্রনটেশন বা ভিশন সেন্টার চালু করতে চলেছেন শহর ও শহরতলীতে। পরবর্তীতে এটি জেলাগুলিতে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। একই সঙ্গে দিশার কর্ণধার ডা. ভট্টাচার্য জানিয়ে দেন- আমাদের আগে পশ্চিমবঙ্গকে দেখতে হবে , এই পশ্চিমবঙ্গেই আমরা নিবেদিত। পশ্চিমবঙ্গবাসীকে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়াই আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য।

নদিয়া, মালদা, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া হবে দিশা চক্ষু হাসপাতাল

এদিন দিশা আই হসপিটলের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর দীর্ঘ সময় নিয়ে চক্ষু চিকিৎসা নিয়ে সবিস্তারে বলেন। তিনি বলেন-  “চিকিৎসার মাধ্যমে সেবা করার সুযোগ পাই মানুষকে। তাদের আশীর্বাদও কুড়োই। এই আশীর্বাদের সূত্র ধরেই আজ মাদের ১৯তম শাখা গিরিশ পার্কে খুললাম। স্বাভাবিকভাবে আমরা ২৭ বছরের প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের শুরু ১৯৯৭সালে। তখন থেকেই আমাদের পথ চলা শুরু হয়েছে। ২০২০ সালে আমরা বলি যে ২০টি হসপিটাল করব। পাঁচ বছরের মধ্যে আমরা সেই কাজ অনেকটাই করে ফেলেছি। অনেক গুলি জেলায় আমরা তা করে ফেলেছি। এখন বাকি রয়েছে নদিয়া, মালদা, বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়া। বড় জেলাগুলির মধ্যে শিলিগুড়িতে আমরা করেছি। আসলে শিলিগুড়িটা দার্জিলিং জেলায়। “

দিশার যেটা মূল উদ্দেশ্য হল, মানুষের কাছে পৌঁছনো – ডা. দেবাশীষ ভট্টাচার্য

“দিশার যেটা মূল উদ্দেশ্য হল- মানুষের যত কাছে পৌঁছনো যায়। চোখের ভাল চিকিৎসা নিয়ে তারা এগোতে পারে। কিন্তু এখন আমাদের কাছে যেটা বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে যে বড় হাসপাতাল্গুলি , এটাও ১০ হাজার স্কয়ার ফুটের হাসপাতাল। অপারেশন থিয়েটার আছে। রেটিনা, লেজারের চিকৎ্সা, কর্নিয়া, ছানির সব কিছুর চিকিৎসার ব্যবস্থা এই গিরিশ পার্কের হাসপাতালে পাওয়া যাবে। কিছু বড় চিকিৎসা, রেটিনার বড় অপারেশনের রোগীদের আমাদের নিউটাউনের হাসপাতালে যেতে হবে। কারণ, এই ব্যবস্থাগুলি আমাদের সব জায়গায় করা সম্ভব নয়।“

‘সরকার শুরু করেছে , এবার আমরাও টেলিকনফ্রনতেশন বা ভিশন সেন্টার শুরু করব’

“এই সূত্র ধরেই বলছি যে আমাদের আগামিদিনে চোখের চিকিৎসার যে ভিশন রয়েছে তা হল টেলিকনফ্রনটেশন , যা ইতিমধ্যে আমাদের সরকারও শুরু করেছে। আমরাও সেটা করব। তার জন্য একটা প্ল্যান করা হচ্ছে। যেখানে একটি যন্ত্র আছে অপটিক্যাল পাওয়ার অফ সোনোগ্রাফি। যেটার মাধ্যমে অনেক কিছুই দেখে ফেলতে পারি। যেখানে একজন অপটোম্যাট্রিক্স যন্ত্রের মাধ্যমে আমাদের চোখের মাধ্যমে – যেখানে যাবতীয় রেটিনার ছবি, কর্নিয়ার ছবি, লেন্সের ছবি সব কিছু দেখে আমাদের ডাক্তাররা মতামত নেবে। এই টেলি কনফ্রনটেশন বা ভিশন সেন্টার আমরা ১০০টা করব। প্রথম দিকে আমরা পাইলট প্রজেক্ট হিসাবে দূরবর্তী জেলায় আমরা এটা করেছিলাম। কিন্তু ওটাকে আমরা ঠিক ভাবে প্রচার করতে পারিনি। হয়তো একট প্রান্তিক জায়াগায় করার জন্য মানুষ এটা বুঝতেও পারেননি যে ওখানে কি হচ্ছে কিংবা কতটা প্রভাব এই চিকিৎসায়।  তাই আমরা প্রথমে শহর আর শহরতলিতে শুরু করব। তারপর এই জিনিস্টা যত পপুলার হবে তখন আমরা গ্রামের দিকে যাব।“ বলেন ডা. ভট্টচার্য।

‘আমাদের পশ্চিমবঙ্গের প্রতিষ্ঠান , পশ্চিমবঙ্গবাসীর ভালবাসা পেয়ে আমরা বড় হয়েছি’

এর আগে উপস্থিত রামকৃষ্ণ মিশোনের মহারাজ তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেছিলেন যে দিশা কি এবার পশ্চিমবনঙ্গের বাইরেও পা রাখবে? মহারাজের সি প্রশ্নের জের টেনে এদিন ডা. দেবাশীষ ভট্টাচার্য বলেন- মহারাজ জানতে চাইছিলেন, আমরা বাইরে যাব কিনা। আমাদের পশ্চিমবঙ্গের প্রতিষ্ঠান , পশ্চিমবঙ্গবাসীর ভালবাসা পেয়ে আমরা বড় হয়েছি। সুতরাং আমাদের আগে পশ্চিমবঙ্গকে দেখতে হবে , এই পশ্চিমবঙ্গেই আমরা নিবেদিত। সুতরাং তাদের সেবা করাটাই এবং তাদের চিকিৎসায় যত রকমের সুবিধা দেওয়া যায় সেটাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।“

লোকজনকে ১০০ কিলোমিটারের বেশি ট্রাভেল করতে না হয়, সার্জিক্যাল ফেসিলিটির জন্য

“আগামিদিনে ১০০টি টেলিকনফ্রনটেশন বা ভিশন সেন্টার চালু করা। এটা আমাদের প্রধান লক্ষ্য। আর সেই সঙ্গে চারটি জেলায় বড় হাসপাতাল। যাতে লোকজনকে ১০০ কিলোমিটারের বেশি ট্রাভেল করতে না হয়, সার্জিক্যাল ফেসিলিটির জন্য। আর কনসালটেশনের জন্য পাঁচ থেকে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে। এটা শেষ হয়ে যাবার পর তখন আমরা বাইরে যাবার বিষয়টি নিশ্চয়ই চেষ্টা করতে পারি। আর বাঙালি ভারতবর্ষ শুধু নয় পৃথিবীর সর্বত্রই আছে। আজ যারা ব্যাঙ্গালোর, পুনে কিংবা গুরগাওতে আছে আমার ভাগ্নে-ভাগ্নি, ভাইপো মিলে আমাদের পরিবারের ৪০জন বাইরে আছে। তার মধ্যে শুধু পাঁচ জন পশ্চিমবঙ্গে থাকে। বাকিরা সব বাইরে আছে। তাদের মতিগতি দেখে আমার মনে হয় না যে তাদের জীবনকালে আর তারা এখানে ফিরেও আসবে। সেখানে কাজের সূত্রে আমাদের বাইরে যেতে হবে। আমাদের বয়স হয়েছে আমরা চলে যাব। তারপর এখানে কারা থাকবেন, জানি না।“ বলেন ডা. ভট্টাচার্য।

তিন একর জমিতে পাঁচ লাখ স্কয়ার ফিট জুড়ে নিউটাউনে মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতাল

এরপরই তিনি একটি বিশেষ ঘোষণা করেন। বলেন- “ বড় খবর একটা দিয়ে রাখি – আমরা ছ’মাসের মধ্যে নিউ টাউনে একটি বিরাট মাল্টি স্পেশালিটি হসপিটাল করতে চলেছি। যেখানে আমরা ৬৫০ বেডের তিন একর জমিতে পাঁচ লাখ স্কয়ার ফিটের জায়গায় একটা মাল্টিস্পেশালিটি – যেখানে কার্ডিয়াক সার্জারি, অর্থোপেডিক সার্জারি, রেডিয়েশন থেরাপি সব কিছু হবে। গ্যাস্ট্রোলজি, ইউরোলজি। এমনকি, টড়ান্সপারেন্সিও হবে। তবে এখুনি প্রথমদিনে তো কিডনি কিংবা লিভার ট্রান্সফার হবে না। এগুলি ধীরে ধীরে হবে। প্রথমদিন থেকেই আমাদের অঙ্কোলজি, অর্থোপেডিক্স, কার্ডিয়াক সার্জারি, প্লাস্টিক সার্জারি, এই সব ফেসিলিটি থাকবে।“

গিরিশ পার্কে যেসব ডাক্তার থাকছেন

ডা. ভট্টাচার্য বলেন- গিরিশ পার্কে এই সেন্টারে কিন্তু খুব ভাল ভাল ডাক্তার আছে। এখানে ডা . সমর কুমার বসাক আসবেন। উনি দিশা চক্ষু হাসপাতালের ডিরেক্টর এবং এখন অল ইন্ডিয়া অপথালমোজিক্যাল সোসাইটির সভাপতি। উনি কর্নিয়া স্পেশালিস্ট। ওর ছাত্র ডা. আদিত্য এখানে বসে আছেন। ও মহারাষ্ট্রের ছেলে। ও আমাদের কাছে ফেলোশিপ শিখতে এসেছিল। ড. বসাকের কাছে।  ১১বছর হয়ে গেল এই পেশায়। আমাদের স্থায়ী ১০৬ জন ফুল টাইম কন্সালটেন্ট আছেন, যারা সবসময় পরিষেবা দিয়ে চলেছেন। আদিত্য তাদের মধ্যে একজন। আদিত্য এখানে অনেকটা জায়গা নিয়েই থাকবেন। আমাদের রেটিনার ডাক্তাররাও এখানে আসবেন। ডা. শুভেন্দু বড়াল, সিনিয়র অপথালমোলজিস্ট, ডা. দীনেশ গুপ্তা, ডা. সুচন্দ্রা শ, ডা. শ্যামশ্রী শীল, রেটিনার ডা. সৌরভ সাঁতরা, বাচ্চাদের চোখ দেখার জন্য ডা. অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়  থাকছেন। এছাড়াও ডা. বাসুপর্না মজুমদার, ডা. সুমন এরা সবাই থাকবেন।

এটা যেহেতু গিরিশ পার্ক মেট্রো স্টেশনের একেবারের দোরগোড়ায় তাই টালিগঞ্জ থেকেও যেমন আসতে অসুবিধা নেই ঠিক তেমনই দমদম থেকেও আসতে অসুবিধা নেই।

দিশা বড় সম্পদ ফিরিয়ে দিচ্ছে, মহৎ আকার ধারন করেছে- স্বামী শান্তিপ্রদানন্দ মহারাজ

এদিন অনুষ্ঠানের শুরুতে উদ্বোধনী ভাষণ দেন কাশিপুর রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের স্বামী শান্তিপ্রদানন্দ মহারাজ। যে আলো জ্বালিয়ে আমরা অনুষ্ঠান শুরু করি এর মাধ্যমে এই বাহ্যিক জগতে অন্ধকার সেটা আসল অন্ধকার নয়। আসল অন্ধকার হচ্ছে আমাদের মনের অন্ধকার। সেই মনের অন্ধকার একমাত্র ঈশ্বরের কৃপা ছাড়া সম্ভব নয়। এই যে দিশা ১৯ নম্বর শাখা এটি। কিন্তু এর আগে চক্ষু চিকিৎসার বড় কাজ করে চলেছেন দিশা হাসপাতালের সকলে।

শান্তিপ্রদানন্দ মহারাজ বলেন- “শাস্ত্রে বলছে- ‘ব্রহ্মদেব ব্রহ্মৈব ভবতি’ তুমি ব্রহ্ম। ব্রহ্ম লাভ করে ব্রহ্ম হয়ে যাও। ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণ তিনি সর্ব ধর্মের সমন্বয় করে একটা জায়গায় গিয়ে পৌঁছলেন, পৌঁছে বলছেন-  অর্থাৎ ঈশ্বর এক। তার সাধনার পথ বহু। তিনি এমন একটা লক্ষ্যে গিয়ে পৌঁছলেন , গিয়ে বললেন- মনুষ্য জীবনের উদ্দেশ্য হল ঈশ্বর লাভ। তার জন্য তিনি বললেন- যত মত তত পথ। এর পর তিনি বলছেন যে মানুষকে মানুষ বোধে নয় ঈশ্বর বোধে যদি সেবা করা যায় তবেই সেটা হবে প্রকৃত ঈশ্বরের সেবা। তাই তিনি বললেন- শিব জ্ঞানে জীব সেবা। অর্থাৎ এই জগতে প্রত্যেকটি মানুষ শিব স্বরূপ। ডাক্তারবাবুরা যখন একজন রোগীর চক্ষু অপারেশন করছেন চেতনার যদি একটু পরিবর্তন হয়ে যায় এই যে একজনের সেবা করার সুযোগ আমি পেয়েছি এই সেবা করে আমি তার চক্ষুটা ফিরিয়ে দিতে পারব। কারণ যে দেখতে পায় না তাকে আবার জগতের আলো দেখাতে পারব। এই চিন্তাভাবনা নিয়ে যদি করা যায় যে ঈশ্বরের সেবা বা ঈশ্বরের পুজা এই বোধে যদি করা যায় তাহলে দেখা যাবে সেই কাজটা ঈশ্বরের পুজো হয়। আমরা জানি যে পুজোর মাধ্যমে আমরা আমাদের জীবকে উন্নতির পথে নিয়ে যেতে পারি।“

“আমরা শাস্ত্রে আজি, মৃত্যুর মধ্য দিয়েই অমৃত্ব আসে। মৃত্য না হলে কোনওদিন মুক্তি হবে না। তাই এই চক্ষু না থাকলে এই জগতটাকে দেখতে পেতাম না। এই জগত সবচেয়ে বড় সম্পদ। যে সম্পদ দিশা আমাদের ফিরিয়ে দিচ্ছে। স্বামীজী বার বার বলছেন- আমরা এগিয়ে যাব। দিশা শুরু করেছিল একটি ছোট বটবৃক্ষ রূপে। একটা বীজ বপন করেছিলেন। আজকে সেই বীজ থেকে অঙ্কুরোদগমন হয়েছে একটি গাছ। সেই গাছ থেকে ডালপালা ছড়িয়ে আছে। মহৎ আকার ধারন করেছে।“

Published on: মার্চ ৫, ২০২৫ at ১৯:৪৭


শেয়ার করুন