দীপাবলী উৎসবের সূচনা কবে হয়েছিল, জানুন এর ইতিহাস

Main দেশ ধর্ম ভ্রমণ রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: নভে ৯, ২০২৩ at ১১:০২
লেখকঃ রসিক গৌরাঙ্গ দাস

এসপিটি বিশেষ প্রতিবেদন: বাংলা তথা ভারতবর্ষে বারো মাসে তেরো পার্বণ। দীপাবলীর উৎসব হল দ্রুত নিজেকে পবিত্র করে তোলা এবং পরস্পরের মধ্যে আনন্দের আদান-প্রদান ও মহামিলনের একটি অন্যতম মাধ্যম। সর্বোপরি এই উৎসব পালনের মধ্য দিয়ে ভগবানের প্রীতি বিধান তথা সেবার বিশেষ সুযোগ লাভ করা যায়। যার ফলে জীবনের পারমার্থিক প্রগতি লাভ করা হয়।

সনাতন ধর্মে যত প্রকার উৎসব আছে তার মধ্যে দীপাবলী অন্যতম। দীপাবলী কথাটির অর্থ দীপশ্রেণী বা দীপের আলি। এই উৎসব দশেরার (বিজয়া দশমীর) ২০ দিন পর উদযাপিত হয়। ত্রেতাযুগে রাবনকে বধ করার পর ভগবান শ্রীরামচন্দ্র যখন অযোধ্যায় প্রত্যাবর্তন করেছিলেন, তখন অযোধ্যাবাসিগণ তাঁকে স্বাগত জানানর জন্য বিশেষ উৎসবের আয়োজন করেছিল। সমগ্র অযোধ্যা নগরীকে আলোকমালায় সজ্জিত করে বিভিন্ন নৃত্যনাট্য ও আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছিল। তারই স্মরণে এই উভসব। আজও বিভিন্ন মন্দিরে, গৃহে, রাজপথে শত শত ঘৃত, তৈলপ্রদীপ, মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে এই উৎসব মহাসমারোহে উদযাপিত হয়। অনেকে আবার দীপাবলী বা দেওয়ালি উদযাপন করেন।

একটি বিশেষ পৌরাণিক ঘটনাকে স্মরণ করে। সেখানে বলা হয়েছে ঐ সময়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নরকাসুর বধ করেছিলেন। নরকাসুর ছিলেন পৃথিবীর পুত্র এবং তিনি ব্রহ্মা ও শিবের বরে এত শক্তিশালী হয়ে উঠেছিলেন যে শুধু পৃথিবী নয়, দেবতাদেরও পরাজিত করে স্বর্গালোকও অধিকার করেছিলেন। শ্রীকৃষ্ণ সত্যভামার সহায়তায় (ওই সময় সত্যভামা শ্রীকৃষ্ণের রথের সারথি হয়েছিলেন) তাকে হত্যা করেন। নরকাসুরের মৃত্যুর পর মাতা ধরিত্রী ওই দিন বিশেষ উৎসব করার জন্য শ্রীকৃষ্ণকে অনুরোধ করেন। এইভাবে নরকাসুরের কবল থেকে পৃথিবী ও স্বর্গলোকের উদ্ধার বিজয়োৎস রূপে দীপাবলীর মাধ্যমে উদযাপিত হয়। এই উৎসব ধনসম্পদের অধিষ্ঠাত্রী দেবী লক্ষীর প্রসন্নতাও বিধান করে। এই বিশেষ দিনটিতে যদি কারো গৃহ অন্ধকার থাকে তাহলে লক্ষী দেবী সেখানে প্রবেশ করেন না। ভক্তেরা লক্ষীদেবীর বিশেষ পূজা করে থাকে যাতে তাদের গৃহ সমৃদ্ধশালী হয়, সকলে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারেন। কৃষ্ণভক্তদের কাছে এই উৎসব অতীব গুরুত্বপূর্ণ।কৃষ্ণভক্তরা শুধু এই বিশেষ দিনটিই নয়, এক মাস ব্যাপী ভগবানের উদ্দেশ্যে দীপদান করে থাকেন। ভাগবতের বর্ণনা অনুসারে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দামবন্ধন লীলাবিলাস ঘটনাটি হয় এই দীপাবলীর সময়।

কৃষ্ণের দামবন্ধন লীলাকে স্মরণ করে এদিন সাড়ম্বরে নানা স্থানে মহোৎসব হয়। কোথাও কোথাও মহামারোহে কার্তিক ব্রত পালন করা হয় এই সময়। বর্তমানে সারা বিশ্বের কৃষ্ণভাবনামৃত প্রসারের ফলে প্রায় সমস্ত দেশের ইস্কন মন্দির সমূহে এই উৎসব মহাসমারোহে প্রতিপালিত হয়।

পদ্মপুরাণে বর্ণনা করা হয়েছে কার্তিক মাসের এই বিশেষ তিথি তথা সারা মাসেই যদি কেউ গগনতলে অর্থাৎ আকাশের নীচে আকাশ প্রদিপ জ্বালায় তাহলে তার সমস্ত কুল পরিত্রাণ লাভ করে হরিধাম প্রাপ্ত হয়। সুস্থ ও সাংস্কৃতিক বিনোদনের মাধ্যমে দীপদান উৎসব উদযাপন সমাজের রুচিপুর্ণ সংযতচর্চা তথা জনসাধারনের যথার্থ কল্যাণ সাধনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।

লেখক পরিচিতিঃ ইসকন মায়াপুরের জনসংযোগ আধিকারিক  

Published on: নভে ৯, ২০২৩ at ১১:০২


শেয়ার করুন