
মুখ্যমন্ত্রীর মঙ্গল কামনায় চাকলায় বাবা লোকনাথের কাছে পুজো দিলেন বারাসতের সাংসদ ডা. কাকলি ঘোষ দস্তিদার
Published on: জুন ৩, ২০২৫ at ২৩:৪৭
Reporter: Aniruddha Pal
এসপিটি নিউজ, চাকলা, ৩ জুন : আজ ত্রিকালদর্শী বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারীর ১৩৫তম তিরোধান দিবস উদযাপিত হয় বাবার জন্মস্থান পুন্যভূমি চাকলাধামে। এদিন এই চাকলাধামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বারসত নিয়ে তাঁর তিন প্রতিনিধি এসেছিলেন। এই তিন প্রতিনিধি হলেন- বারাসত লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ ডা. কাকলি ঘোষ দস্তিদার, রাজ্যের দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু এবং হাবড়া বিধাবসভার বিধায়ক ও প্রাক্তন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তিনজনেই জানিয়েছেন যে তা্রা মুখ্যমন্ত্রীর আদেশ মেনেই চাকলাধামে এসেছেন। এই চাকলাধামের উন্নয়নের জন্য ইতিপূর্বে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর প্রচেষ্টায় প্রভূত উন্নতি সাধন হয়েছে। সেই উন্নয়নের ধারা যাতে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় সেই বিষয়ে আস্বস্ত করতেই এদিন তাঁর বার্তা নিয়ে চাকলাধামে বাবা লোকনাথের চরণে ফুল অর্পণ করেন তারা।
বাবা লোকনাথের চরণে ফুল দিলেন কাকলি ঘোষ দস্তিদার
এদিন চাকলাধামে সবার প্রথমে আসেন বারাসতের সাংসদ ডা. কাকলি ঘোষ দস্তিদার। তিনি এসে সোজা চলে যান বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারীর মন্দিরে। সেখানে গিয়ে তিনি পুজো দেন। এরপর তিনি পুরোহিতের কাছে মুখ্যমন্ত্রীর মঙ্গল কামনায় পুজো দেন। সাংসদ নিজেই জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই বলেছেন আজ চাকলায় আসতে। চাকলা ধামের উন্নয়নে তিনি সবসময় ভাবেন।
মুখ্যমন্ত্রীর পাঠানো পুজোর ডালা মন্দিরের পুরোহিতের হাতে তুলে দেন মন্ত্রী সুজিত বসু
সাংসদ চাকলা ধাম দর্শন করে বেরিয়ে যাওয়ার মুহূর্তেই এখানে প্রবেশ করেন রাজ্যের দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু। এদিন তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাঠানো একটি পুজোর ডালা তুলে দেন মন্দিরের পুরোহিতের হাতে। মন্ত্রী সুজিত বসু এদিন বলেন- “মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে গতকাল কথা হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন যে তুমি চাকলায় যাচ্ছ তো? তিনি নিজে পুজো পাঠিয়েছেন। এখানে মুখ্যমন্ত্রী এসেছেন। আমি জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলছিলাম। তখন বলছিলাম যে এখানে মুখ্যমন্ত্রী যখন উদ্বোধন করেন আমি তখন ওনার সঙ্গে ছিলাম। রান্নার জায়গা থেকে শুরু করে খাবারের জায়গা, দুটো প্রবেশ দ্বার থেকে শুরু করে গেস্ট হাউস, রাস্তা যা আপনারা বলেছেন ভোগ ঘর থেকে সবই মুখ্যমন্ত্রী করেছেন।“
“ কিছুদিন দিঘায় জগন্নাথ মন্দির যখন উদ্বোধন করেন সেখানেও তাঁর সঙ্গে আমি ছিলাম। দক্ষিণেশ্বর, কালীঘাটে স্কাইওয়াক থেকে শুরু করে তারকেশ্বর সহ অনেক কিছুই তিনি করেছেন। “এ রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী নেতৃত্বাধীন যে সরকার চলছে তার ক্যাবিনেটের সদস্য আমি। আমি বলছি যে মন্দির দর্শন করে খুবই ভাল লাগল। আপনারা বলেছেন কিছু প্রস্তাবের কথা। আমি নিশ্চয়ই যথাস্থানে পৌঁছে দেব। আমি এখানে কোনও রাজনৈতিক বক্তব্য রাক্লহব না। এখানে সবাই আসেন। আমরা মনে করি ধর্ম যার যার উৎসব সবার। আমরা ধর্ম নিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করি। এখানে জেলা পরিষদের সদস্য বিদেশ সহ বিধায়ক রহিমা বিবি পুজোর সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছেন। এটাই হওয়া উচিত। বাংলার সংস্কৃতি এমনই।“ বলেন সুজিত বসু।
চাকলা লোকনাথ মন্দির নিয়ে আরও পরিকল্পনার কথা শোনালেন প্রাক্তন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক
এদিন একেবারে শেষে মন্দিরে আসেন হাবড়ার বিধায়ক প্রাক্তন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তিনিও এদিন মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা পৌঁছে দেন। এখানে পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি বিদেশ অতন্দ্র প্রহরীর মতো পাহারা দিয়ে থাকে।য়াজ আমার ক্ষেত্রে এখানে আসার কথাই ছিল না। সু’দিন আগে মুখ্যমন্ত্রী ফোনে বললেন তুমি চাকলায় যাবে বাবা লোকনাথের তিরোধান দিবসে। সেখানে উপস্থিত থাকবে। বাবার গলায় মালা দিয়ে অন্তত আমার হয়ে বাবার কাছে প্রার্থণা জানাবে। আপনার জন্য তো সব ঠাকুরের কাছেই প্ররথণা করি। সব জায়গায় একটা প্ররথণা করি যে ঠাকুর যেন আপনাকে সুস্থ রাখে। আপনি তো লোকনাথ ধামের জন্য। প্রচুর করেছেন। আমার বেশ মনে আছে, একবার মুখ্যমন্ত্রী বললেন- লোকনাথ ধামের উন্নয়নের কাজ করতে হবে। নবদা, স্বপনদা মাঝে মাঝে আমাকে খোঁচা দেয় যে একাজটা হচ্ছে না। এখানে কাজ সম্পূর্ণ হয়নি, অনেক কাজ বাকি আছে। অনেকটা জায়গা আমরা নেব। এখানে প্রার্থণা সভার জায়গা হবে। খাবার জায়গাটা একটু বড় করে করব। লোকনাথ বাবার জীবনী আমি বলেছি, ছোট্ট বই হোক। ইতিমধ্যে আমাদের কলকাতার এক পাবলিশার্সের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি বইটি প্রকাশের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এরকম অনেক কাজ করব। বাবার জীবনী সেখানে জন্ম থেকে তিরোধান পর্যন্ত সব্টাই থাকবে সেই মিউজিয়ামে, সেটা সেভাবেই সাজানো হবে। “
মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ চাকলার প্রধান উপদেষ্টা নবকুমার দাসের
চাকলা লোকনাথ মন্দিরের প্রধান উপদেষ্টা নবকুমার দাস এদিন বলেন, আজ যে বাবা লোকনাথের নাম সকলের ঘরে পৌঁছে গিয়েছে তার অবদান পুরোপুরি আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর। আমাদের এখানে যে ৫০ বছরের উৎসব করেছি সেখানে তিনি এসেছেন। এর চেয়ে আমাদের আর কিছু পাওনা নেই। বাবা লোকনাথ বলেছিলেন- আমার তরোধানের ১০০ বছর পরে আমার নাম মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে। ২০ শতাংশ বাকি ছিল। সেটা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করে দিয়েছেন। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী যে চাকলার প্রতি খেয়াল রাখেন তার জন্য আবারও ওনার প্রতি কৃজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমরকা চাই মমমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী থাকুক। অনেক সময় উনি সনাতন ধর্ম নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে জড়িয়ে নানা ধরনের কথা বলা হয়। আমি বলছি- আমাদের মুখ্যমন্ত্রী সনাতন ধর্মকে খুবই ভালবাসেন। সব ধর্মকেই উনি ভালবাসে্ন। শ্রদ্ধা করেন। এদিন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এসে কতগুলি ভাল কথা শুনিয়ে গেলেন। আমরা এজন্য গর্বিত। একই সঙ্গে তিনি এদিন বলেছেন বাবা লোকনাথের জীবনী নিয়ে একটা মিউজিয়াম গড়ে তুলবেন। এটা আমাদের কাছে একতা বড় প্রাপ্তি। বাবার জীবনী প্রকাশের কথাও এদিন তিনি উল্লেখ করেছেন। আসলে বাবার লোকনাথ শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়ে সারা ভারত জুড়েই একটা আবেগে পরিণত হয়েছে। “
চাকলা মন্দিরের একজন সদস্য গঙ্গাদাস বসাক বলেন- “আমি চাকলায় এসে সব থেকে যে বড় জিনিসটা পেয়েছে তা হল-সবাই এখানে বাবার ভক্ত। এখানে যে নবদা, স্বপনদা, অশোকদা সবাই বাবার ভক্ত। সবাই মিলেমিশে ট্রাস্টিতে একটা মেল্বন্ধন তৈরি হয়। মুখ্যমন্ত্রীর একটা টান আছে চাকলার প্রতি। তাই নবদা মুখ্যমন্ত্রীকে আবেদন জানানো মাত্রই মুখ্যমন্ত্রী তিনজনকে পাঠিয়েছেন। যাতে এদিনের অনুষ্ঠানে সফল হয়।“
স্থানীয় যুবক রহিম মন্ডল নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন- “এখানে নবকাকু প্রতিবারই ডাকেন। ওনাকে শ্রদ্ধা করি। প্রথম কথা হল, মানুষের কাছে থাকা বাবা মানুষের পাশে থাকে। মানে উদ্দেশ্যটা পবিত্র। এই স্থানে এসে মনের মধ্যে অপবিত্রতা কাজ করছেন না। সকলের মনের মধ্যে একটা পবিত্র মানসিককতা কাজ করছে। একটা ভালবাসা কাজ করছে। একটা ভক্তি কাজ করছে। এই স্থানে এখন একটা পজিটিভ এনার্জি আছে। যেটার ভিতর থেকে মনের অনেক অশুভ শক্তি নাশ হয়। আমাদের মধেয়ে সর্বদা নেগেটিভ এনার্জিগুলি অ্যাটাক করে। ভিতরের যে শুভ সত্তা আছে সেতার হানি করার চেষ্টা করে। যারা অতিথিরা এলেন সবাই শুভ কথা বললেন। যেখানে পরিবেশন হচ্ছে সেখানে আপ্যায়ন ভক্তির সাথে হচ্ছে।“
এদিন চাকলা লোকনাথ সেবাশ্রম সঙ্ঘের উদ্যোগে এক স্বাস্থ্য ও চক্ষু পরীক্ষা শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল। এসআরএমবি-র ব্যবস্থাপনায় এই শিবিরটি করা হয়েছিল বারাসত নারায়নী হাসপাতাল এবং অ্যাপেলো-র সহযোগিতায়। চাকলা মন্দিরের প্রধান উপদেষ্টা নবকুমার দাস বলেন, এদিনের শিবিরে স্থানীয় মানুষ সহ মন্দিরের আগত দর্শনার্থীদের স্বতঃপ্রণোদিত অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। চক্ষু পরীক্ষা শিবিওরে মোট ১০০ জনের মতো অংশ নিয়েছিল। দুইদিন ধরে এই শিবির চলে।
Published on: জুন ৩, ২০২৫ at ২৩:৪৭