রোগ নিরাময়ে প্রকৃতির অবদানের কথা তুলে ধরেন ডা. অরুণ সিং

Main কোভিড-১৯ দেশ রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: আগ ৯, ২০২৪ at ০১:০২
Reporter: Dr. Soumitra Pandit

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ৮ আগস্ট : শুক্রবার ২ আগস্ট পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবেক ভবনে অনুষ্ঠিত হল এক বিজ্ঞান ভিত্তিক আলোচনা সভা। উদ্যোক্তা পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সর্ব বৃহত্তর সংগঠন টিচার্স ফোরাম। তাদের মহতী উদ্যোগে বেলগাছিয়া ক্যাম্পাসের বিবেক ভবনে একটি সেমিনার ও আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়। ২ আগস্ট দিনটি বিখ্যাত রসায়নবিদ দার্শনিক ও বাংলার গর্ব আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের  জন্মদিন উপলক্ষে এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতেই এই সেমিনারের আয়োজন।

অধ্যাপক অরুণ কুমার সেনকে পুষ্পস্তবক দিয়ে বরণ করেন সংগঠনের দুই কনভেনার অধ্যাপক অরুন কুমার মন্ডল ও অধ্যাপক শক্তিপদ প্রধান। তারপর প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন সেমিনারে মুখ্য বক্তা অধ্যাপক অরুণ কুমার সিং। উদ্বোধনী বক্তব্যে সংগঠনের কনভেনার অধ্যাপক অরুণ কুমার মন্ডল সংগঠনের কাজকর্ম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বাঙ্গীর উন্নতির লক্ষ্যে শিক্ষকদের নানান কর্মকান্ড ও বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন এবং আগামী দিনে যাতে করে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে ভারতবর্ষ নয় সারা বিশ্বের দরবারে বিশেষ নজির রাখার জন্য যা করার সেই ভাবে কাজ করার অঙ্গীকার করেন।

সেমিনার হলে উপস্থিত সকল শিক্ষক শিক্ষিকা ছাত্র শিক্ষা কর্মী এবং সর্বস্তরের মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। অধ্যাপক  মন্ডল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে কেবল শিক্ষক নয় সকল স্তরের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আগামী দিনের এই বিশ্ববিদ্যালয়কে সর্বাঙ্গে সুন্দর করার  অঙ্গীকার করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে সেমিনার উপলক্ষে প্রায় দুশোরও বেশি অংশগ্রহণকারীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। উদ্দেশ্য একটাই গত কোভিডের সময় যে মানুষটির বক্তব্য সবার মনের সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন তিনি আর কেউ নয় স্বনামধন্য ডক্টর যোধপুর এইমসের নিওনেটোলজি অরুণ কুমার সিং। তিনি চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক বিষয়ের উপর বিষদে আলোকপাত করেন। বিজ্ঞানের সাথে প্রকৃতির আত্মিক সম্পর্ক এবং বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে প্রকৃতির অবদান খুব সুন্দর ভাবে সবার সামনে তুলে ধরেন।

তিনি বিশেষভাবে জানান কিছু সতর্কতা অবশ্যই মেনে চলতে হবে ছোটবেলা থেকেই। যেমন শিশুকে অতিরিক্ত চিনি বা লবণ দেওয়া যাবে না অন্নপ্রাশনে পায়েস না দেওয়াই ভালো। তিনি আরও বলেন, মোজা পড়া বা টাই বাধা এটা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক কিংবা বাড়িতে ফলস সিলিং করবেন কি করবেন না। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ফলস সিলিং হল ব্যাকটেরিয়া্র আতুর ঘর। তাই বর্তমান যে ফ্ল্যাট কালচার শুরু হয়েছে তাতে করে মানুষের ঘরের উচ্চতা কম এবং রিলেশন না থাকার জন্য মানুষের রোগব্যাধির পরিমাণ বেড়ে গেছে।

ডক্টর সিং বলেন যে কোভিডের সময় যারা খোলামেলা জায়গায় অর্থাৎ গ্রামীন পরিবেশে ছিলেন তাদের সংখ্যা এবং যারা বদ্ধ ঘরে কোথাও না বেরিয়ে জানলা দরজা বন্ধ করে তার মধ্যে ছিলেন তাদের সংক্রমণের হার অনেক বেশি ছিল। তাই তিনি বলেন যে খোলামেলা পরিবেশের সঙ্গে একান্ত হয়ে যদি বসবাস করেন এবং পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে যদি আপনি চলতে পারেন তাহলে আপনার রোগব্যাধি কমে যাবে। বর্তমানে যে হারের যক্ষা রোগের সংখ্যা বাড়ছে এবং সেই সঙ্গে মৃত্যুর হার পাল্লা দিয়ে চলছে। এটাকে কমাতে গেলে আগে দরকার বসবাসের উন্নতি অর্থাৎ যে জায়গায় মানুষ বসবাস করে তার ভেন্টিলেশন যেন খুব ভালো হয়। সঙ্গে উপযুক্ত খাদ্যা অবদান সাথে ওষুধ এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নভাবে যদি থাকা যায় তাহলে কিন্তু এই যক্ষা রোগের মৃত্যুর হার প্রায় ৫০ শতাংশ কমে যাবে।

অধ্যাপক অরুণ কুমার সিং তার আলোচনায় মূল বক্তব্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন- এ শিশু জন্মাবার অনেক আগে যখন শিশু মাতৃগর্ভে থাকে সেই সময় কোনরূপ আঘাত বা খারাপ ব্যবহার মায়ের সঙ্গে করা যাবে না, যার ফলস্বরূপ মাতৃগর্ভে থাকা শিশুর উপর ভীষণভাবে ক্ষতি করে। তাই মাতৃত্বকালীন সময় গর্ভবতী মায়ের সঙ্গে ভালো ব্যবহার, খাদ্য উপাদান এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থা যেন সবসময় ভালো হয়। তা না হলে গর্ভের শিশুর উপর এবং শিশু জন্মের পরও তার প্রভাব দেখা দিতে পারে। তিনি আরো বলেন শিশুকে মিষ্টি কিংবা লবণ এই দুটির উপর যেন আসক্তি তৈরি করা না হয়।

বর্তমানে স্মার্টফোনের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন- এটি মানুষকে অলস করে দিয়েছে। শুধু দৈহিক নয় মানসিকভাবেও মানুষ কর্ম ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে এটির প্রতি আসক্তির ফলে মানুষ এই মুঠোফোনের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। তুই কোন কিছুর প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি এবং পরিবেশের সঙ্গে মানানসই না হলে তার প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে বাধ্য। বর্তমানে যে হারে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে সেই হারে বৃক্ষরোপণ না হওয়ার দরুন বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ কমছে।

অধ্যাপক সিং আরও  জানান যে শিশু থেকে বৃদ্ধ সবারই প্রয়োজন গ্রামে ঘুরতে যাওয়া। গ্রামের পরিবেশ থেকে গিয়ে গাছের সঙ্গে মাছের সাথে এবং গ্রামীণ পরিবেশে সূর্য ওঠা আকাশ দেখা এইগুলো যদি মানুষ শুরু করেন তাহলে তাদের রোগ ব্যাধি ট্রেস এগুলো থেকে এবং হাইপারটেনশন সুগার থেকে কিন্তু তারা সহজেই মুক্তি পাওয়ার উপায় খুঁজে পাবেন।

প্রায় তিন ঘন্টার উপর এই আলোচনায় প্রায় সবাই মুগ্ধ শুনছিলেন ডক্টর সিংহের কথা এবং সবাই খুশি মনে অনেক কিছু শি শিখলাম জানলাম এবং নিজের শিশুর বিকাশের জন্য আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে আমাদের এ কি কি করনীয় সেগুলো ডক্টর সিঙ জানালেন। পরিশেষে সংগঠনের আরেক কনভেনার ডক্টর শক্তিপদ প্রধান সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং আগামী দিনে এইরূপ আরো সেমিনার যদি করা যায় সে কোথাও জানান সর্বোপরি সংগঠনের কার্যকলাপ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সাথে সবাইকে নিয়ে চলা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বাঙ্গীণ উন্নতির কথা বলেন।

দুইশতাধিক ছাত্র-ছাত্রী, গবেষক, শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মীবৃন্দ সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠান শেষ হয়  কনভেনর অধ্যাপক শক্তিপদ প্রধানের ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে। পরিশেষে অধ্যাপক সিংকে টিচার্স ফোরাম এর পক্ষ থেকে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়।

Published on: আগ ৯, ২০২৪ at ০১:০২


শেয়ার করুন