হাতির তাণ্ডব থেকে রক্ষা করতে এবারেও ব্যর্থ বন দফতর, দুই শিশুকে নিয়ে নিয়ে পালিয়ে বাঁচল দম্পতি

Main দেশ বন্যপ্রাণ রাজ্য
শেয়ার করুন

Reporter: Biswajit Pande

Published on: আগ ২১, ২০২০ @ ২২:০২

এসপিটি নিউজ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ আগস্ট:  একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। সংবাদ প্রভাকর টাইমস লাগাতর একই ধরনের খবর করে চলেছে বাধ্য হয়ে। হাতির তাণ্ডব, দাঁতালের তাণ্ডব, গজরাজের হানা। প্রতিবারই ক্ষতির মুখোমুখি হয়ে চলেছে পশ্চিম মেদিনীপুর কিংবা ঝাড়গ্রামের মানুষ। ফের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বনদফতরের অধীন গোয়ালতোড় রেঞ্জের শাঁখাভাঙাতে হাতি তাণ্ডব চালাল।বাড়ি ভেঙে সেখানে মজুত করে রাখা চাল খেয়ে ছড়িয়ে তছনছ করে দিল৷ কোনওরকমে দুই নাবালক শিশুকে নিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে প্রাণে বাঁচল এক দম্পতি৷কিন্তু এভাবে আর কতদিন এমনটা সহ্য করতে হবে নিরীহ গ্রামবাসীদের? নিরুত্তর বন দফতর।

উঠছে এই প্রশ্নগুলি

প্রতি বছর এই এলাকায় হাতি হানা দেয় কিংবা হাতির হানায় ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে তা ভারতের অন্য কোনও অঞ্চলে হয় কিনা আমাদের জানা নেই। তবে, এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেভাবে হয়ে চলেছে, তা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠছে- যেখানে এত হাতির সমাগম আছে সেখানে বা সেই এলাকার আশপাশের এলাকাজুড়ে কি হাতির করিডর করা সম্ভব নয়? জেলা বন দফতরের যারা দায়িত্বে আছে তাদের কাজ কি শুধু গ্রামের মানুষের ভরসায় থেকে হাতি তাড়ানোর ভাবনাচিন্তা করা? এই প্রশ্নগুলি এখন উঠতে শুরু করেছে।

যেভাবে হাতি তাণ্ডব চালাল

স্থানীয় সুত্রে জানা গিয়েছে শাঁখাভাঙা গ্রামের হতদরিদ্র কৃষক শীতল মুর্মু ও তার স্ত্রী বেলমনি মুর্মু তাদের দুই নাবালক দুই শিশুকে নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন বাড়ির মধ্যেই। নিম্নচাপের জেরে সারা রা্ত ধরেই বৃষ্টি হতে থাকায় প্রতিবেশীরাও তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ে৷ এরই মধ্যে জঙ্গল থেকে খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে আসে একটি হাতি। প্রথমেই হাতিটির নজরে পড়ে রাস্তার ধারে শীতলের নতুন কাঁচা বাড়িতে। সেখানে ঢুকে মাটির দেওয়াল ভেঙে বাড়িতে মজুত প্রায় ৫০ কেজি চাল খেয়ে ছড়িয়ে তছনছ করে দেয়।সেইসময় শীতল আর তাঁর স্ত্রী বেলমনি নাবালক দুই শিশুকে নিয়ে বাড়ির মধ্যেই ঘুমোচ্ছিলেন। হাতির তাণ্ডবে তাদের ঘুম ভেঙে যায়। নাবালক দুই শিশু ভয় পেয়ে চিৎকার করতে থাকে। হাতির অমন তাণ্ডব দেখে কোনওরকমে তারা দুই নাবালক শিশুকে নিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে বাঁচে। পরে গ্রামবাসীরা হাতিটিকে তাড়িয়ে জঙ্গলে ফেরৎ পাঠায়৷

হাতির হানায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির গৃহবধূ প্রশ্ন করলেন-এখন কি খাব, কোথায় থাকব

শীতলের স্ত্রী বেলমনি মুর্মু জানান, দিনমজুরী করে কোনওরকমে সংসার চালাই৷ লকডাউনের মাঝেই অতি কষ্টে এই মাটির বাড়িটি তৈরি করে অ্যাসবেস্টসের ছাউনি দিয়েছিলাম। আর হাতি এসে বাড়ি ভেঙে দিয়ে চাল খেয়ে চলে গেল৷ এখন এই লকডাউনের মাঝে আমরা কি খাবো আর কোথায় থাকবো সেটাই বড়ো চিন্তার বিষয়।

রেঞ্জার বললেন ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করুন

হাতি তাণ্ডব চালাচ্ছে। আর বন দফতরের লোকজন এসেছে খালি বুলি আওড়াচ্ছে। আক্রান্তদের কি করে খাওয়া জুটবে, কোথায় থাকবে তার কোনও ঠিক নেই, রেঞ্জার এসে বলছেন- আবেদন করুন। আবেদনের ভিত্তিতে সরকারি নিয়মানুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। আর কি বললেন রেঞ্জার হাতিটির ব্যাপারে জানেন?

তিনি বললেন- “গোয়ালতোড়ের ধরমপুরের জঙ্গলে একটি হাতি বেশ কিছুদিন হল আস্তানা গেড়েছে। সেই হাতিটিই খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে লোকালয়ে গিয়ে উপদ্রব করছে৷ আমরা হাতিটিকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু হাতিটি অন্যত্র সরে পড়লেও ফের এই জঙ্গলেই চলে আসছে আর তাতেই এই বিপত্তি ঘটছে।”

এরপর তিনি গ্রামবাসীদের পরামর্শ দিয়ে বললেন-“রাতে একা কেউ ঘোরাঘুরি করবেন না,  হাতিটি গ্রামে এলে প্রয়োজনে একত্রিত হয়ে হুলা-পটকা সহযোগে জঙ্গলের দিকে পাঠানোর ব্যাবস্থা করবেন৷ হাতি তাড়ানোর প্রয়োজনীয় সামগ্রী বনদফতরের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে৷”

বন্যপ্রাণ সংস্থাগুলি তুলেছে একাধিক প্রশ্ন

এমনভাবেই চলছে হাতির বিচরনের লাগোয়া গ্রামগুলির মানুষগুলির জীবনযাত্রা। কিভাবে এরা হাতির হাত থেকে নিস্তার পাবে তা বছরের পর বছর ঘুরে যাচ্ছে, এক রেঞ্জার থেকে আর রেঞ্জার বদলি হয়ে আসছে- কিন্তু অপদার্থতা একই রকম থেকে যাচ্ছে। বন দফতর নামে একটি বিভাগ এখানে থাকলেও তাদের এমন ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ইতিপূর্বেই একাধিক হাতি বিশেষজ্ঞ থেকে বন্যপ্রাণ নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলি। তাদের প্রশ্ন- সারা দেশে যেখানে বন দফতর হাতি নিয়ে এত ভাল কাজ করছে, হাতির বিচরণ ক্ষেত্রেগুলিতে থাকা গ্রামের মানুষজনকে নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে এবং হাতিরও খাবারের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করেছে সেখানে পশ্চিম মেদিনীপুর কিংবা ঝাড়গ্রাম সংলগ্ন বন দফতরের এমন অপদার্থতা কেন বছরের পর বছর চলে আসছে? কেন এরা হাতি নিয়ন্ত্রণে চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়ে চলেছে?

Published on: আগ ২১, ২০২০ @ ২২:০২


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

− 2 = 1