সাবধান চীন: লাদাখে হাজির বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ট্যাঙ্ক- ভারতের ‘T-90 ভীষ্ম’ স্বমহিমায়

Main দেশ প্রতিরক্ষা
শেয়ার করুন

পূর্ব লাদাখে হাজির হয়ে গিয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ট্যাঙ্ক T-90 ভীষ্ম।
T90 হল তৃতীয় প্রজন্মের রাশিয়ান যুদ্ধের ট্যাঙ্ক যা 1993 সালে প্রতিরক্ষার পরিষেবাতে প্রবেশ করে।
T90Sল রাশিয়ান ট্যাঙ্কগুলির টি-সিরিজের সর্বশেষতম বিকাশ এবং এই ট্যাঙ্ক অগ্নিশক্তি, গতিশীলতা এবং সুরক্ষা বৃদ্ধি করে।
Published on: জুন ২৪, ২০২০ @ ২৩:৫৬
Reporter: Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ, ২৪ জুন:  বর্তমান ভারত এক উন্নত ভারত। শক্তিশালী ভারত। ভারত সব সময় শান্তির পক্ষে। কিন্তু কেউ যদি আমাদের ভারত মায়ের দিকে চোখ তুলে চায় তবে সেই শত্রু পক্ষ যত শক্তিশালীই হোক না কেন তাদের সমুচিত জবাব দিতে ছাড়বে না আমাদের সেনারা।মাত্র কয়েকদিন আগে লাদাখের গালওয়ানে চীনা সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষে শহীদ হন ভারতের ২০জন বীর জওয়ান।তার পরিপ্রেক্ষিতে কথাগুলি বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি একই সঙ্গে এও জানিয়েছিলেন যে আমাদের দেশের সেনাদের দেশের সুরক্ষার কাজে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। আর তারপরেই আজ দেখা গেল – পূর্ব লাদাখে হাজির হয়ে গিয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ট্যাঙ্ক T-90 ভীষ্ম। রীতিমতো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সে লাদাখের জমিতে। চীনের কোনওরকম অন্যায় কাজকর্ম ভারত যে বরদাস্ত করবে সেটা বুঝিয়ে দিতেই ভারতীয় সেনাবাহিনী এই ভূমিকা নিয়েছে।

চীনকে জবাব দিতে তৈরি ভারত

চীন মনে করে তারাই শক্তিশালী। কিন্তু সেটা যে ভুল সেকথা এতদিনে চীন ভাল মতো বুঝে গিয়েছে। গালওয়ানে শহীদ হওয়ার আগে ভারতের বীর পুত্ররা যেভাবে চীনকে সবক শিখিয়েছে তা থেকে চীন একটা শিক্ষা পেয়েছে যে এই ভারত আর যাই হোক দক্ষিণ কিংবা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, তাইওয়ান কিংবা নেপাল অথবা ভুটান নয়।এই ভারত এখন কোনও কোনও ক্ষেত্রে চীনের থেকেও শক্তিশালী। এই ভারতের দিকে তাকালে তার চোখ উপড়ে নেওয়ার ক্ষমতা রাখে ভারতের বীর সেনারা। আগেও ছিল। কিন্তু তখন তাদের পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হত না। আজ সেনারা পূর্ণ স্বাধীনতা পাওয়ায় লড়াই অন্য মাত্রা পাচ্ছে শত্রুর সঙ্গে।

গালওয়ানের ঘটনার পর থেকে লাদাখে একটা চাপা উত্তেজনা

গালওয়ানের ঘটনার পর থেকে লাদাখে একটা চাপা উত্তেজনা আছে। চীনের ছলচাতুরিকে ভারত যে মোটেও হালকা করে দেখছে না সেটা পরিষ্কার হয়ে গেছে পূর্ব লাদাখে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ট্যাঙ্ক পৌঁছে যাওয়ায়। T-90 ভীষ্ম ট্যাঙ্ক এখন তৈরি হয়ে আছে। চীন যদি ফের বাড়াবাড়ি করার চেষ্টা করে তাহলে ভারত যে সমুচিত জবাব দেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে সেটা ভারতীয় সেনা পরিষ্কার করে দিয়েছে ভীষ্ম-কে লাদাখে হাজির করে।

বাড়াবাড়ি করলে চীনকে সমুচিত জবাব দিতে তৈরি ভারতীয় সেনাবাহিনী

সংবাদ প্রভাকর টাইমস সব সময় ভারতের ঐক্য ও সাবভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে দেশের পক্ষে ইতিবাচক খবর পরিবেশন করে এসেছে। সেই মতো এবারেও আমরা সেই খবরের ধারা পাঠকের সামনে তুলে ধরছি। চীন যতই হাতের তালু হিসেবে তিব্বতের উপর তার কর্তৃত্ব দখল করার পর হাতের পাঁচটা আঙুল হিসেবে যেভাবে ভারতের লাদাখ, সিকিম, অরুণাচল প্রদেশ ও প্রতিবেশী দেশ নেপাল ও ভুটানের দিকে নজর দিতে শুরু করেছে তা যে ভারত হতে দেবে না সেটা ভারতীয় সেনারা নিশ্চিত করে দিয়েছে। এমনকী, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই বিষয়ে পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে ভারতের কোনও চৌকি কিংবা ঘাঁটি বিদেশি শক্তির দখলে নেই। আমরা কাউকে আমাদের জমির একাংশ দখল করা তো দূরের কথা ঘেঁষতে দেব না।

আজ দেখা গিয়েছে পূর্ব লাদাখের জমিতে বিশ্বের শক্তিশালী ট্যাঙ্ক T-90 ভীষ্ম হাজির হয়ে গিয়েছে। ভারত এই শক্তিশালী ট্যাঙ্ক সেখানে পাঠিয়ে চীনকে বার্তা দিয়েছে যে বেশি বাড়াবাড়ি করতে যেও না। তাতে বিপাকে পড়ে যাবে।

T90 কি

T-90 হল তৃতীয় প্রজন্মের রাশিয়ান যুদ্ধের ট্যাঙ্ক যা 1993 সালে প্রতিরক্ষার পরিষেবাতে প্রবেশ করে। এই ট্যাঙ্কটি T-72B এর একটি আধুনিক প্রকরণ এবং এতে T-80ইউতে পাওয়া অনেকগুলি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। মূলত এই ট্যাঙ্কটি T-72BU নামে পরিচিত, তবে পরে এটির T-90 নামকরণ করা হয়, এটি রাশিয়ান গ্রাউন্ড ফোর্সেস এবং নেভাল ইনফ্যান্ট্রি-এর সহায়তায় একটি উন্নত ট্যাঙ্ক। T-90 তে 125 মিমি 2A46 স্মুথবোর মূল বন্দুক, 1A45T ফায়ার-কন্ট্রোল সিস্টেম, একটি আপগ্রেড ইঞ্জিন এবং গনারের তাপীয় দর্শন ব্যবহার করে থাকে।

T-90S হ’ল রাশিয়ান ট্যাঙ্কগুলির টি-সিরিজের সর্বশেষতম বিকাশ এবং এই ট্যাঙ্ক অগ্নিশক্তি, গতিশীলতা এবং সুরক্ষা বৃদ্ধি করে। এটি রাশিয়ার নিজনি তাগিলের উড়ালভ্যাগনজ্যাভোড তৈরি করেছেন।

T90S এর স্ব-সুরক্ষা

T-90 ট্যাঙ্কটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে শত্রুর যে কোনও আক্রমণ এ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রাখবে। এই ট্যাঙ্কটিকে প্রচলিত বর্ম-ধাতুপট্টাবৃত এবং বিস্ফোরক প্রতিক্রিয়াশীল বর্ম দ্বারা সুরক্ষিত করা হয়েছে, যার ফলে এই ট্যাঙ্ক লক্ষ্য করে শত্রু শক্তিশালী কোনও আগ্নেয়াস্ত্র ছুঁড়লেও তা প্রতিহত করে দেবে এই ট্যাঙ্ক।সেই সঙ্গে সে পালটা আঘাত হানবে শত্রু পক্ষের ডেরায়।

এই ট্যাঙ্কটিকে বলা হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ট্যাঙ্ক। এটি এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে যাতে এটি আরও বেশি মজবুত  ও শক্তিশালী হয়েছে। Shtora-1 ডিফেন্সিভ এইডস স্যুট লাগানো হয়েছে, যা রাশিয়ার ইলেক্ট্রনিন্টরগ তৈরি করেছে। এই সিস্টেমে ইনফ্রারেড জ্যামার লাগানো হয়েছে।  চারটি লেজার সতর্কতা রিসিভার সহ একটি লেজার সতর্কতা ব্যবস্থা আছে। একটি গ্রেনেড ডিসচার্জিং সিস্টেম রয়েছে যা একটি অ্যারোসোল স্ক্রিন এবং কম্পিউটারাইজড কন্ট্রোল সিস্টেম তৈরি করে।এর মাধ্যমে শত্রুপক্ষের অবস্থান অনায়াসে জানা ও অনুধাবন করা যাবে।এটিতে পারমাণবিক, জৈবিক এবং রাসায়নিক (এনবিসি) সুরক্ষা সরঞ্জামগুলিও লাগানো হয়েছে।

কবে ভারতে আসে

এটি 1992 সালে রাশিয়ান সেনাবাহিনীর সাথে কাজে যোগ দেয়। ফেব্রুয়ারি 2001 সালে, ভারতীয় সেনাবাহিনী 310টি  T-90 ট্যাঙ্কের জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে: 124 টি রাশিয়ায় সম্পন্ন হয়েছিল এবং বাকিগুলি ভারতে চূড়ান্ত রূপদানের জন্য বিতরণ করা হয়েছিল।

প্রথম T-90S MBT 2004 সালের জানুয়ারিতে ভারতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল। স্থানীয়ভাবে একত্রিত ট্যাঙ্কগুলির নামকরণ করা হয়েছিল ‘ভীষ্ম’। T-90 ভীষ্ম ট্যাঙ্কগুলিতে শোটোরা স্ব-সুরক্ষা ব্যবস্থা এবং ফ্রান্সের থ্যালাসের ক্যাথরিন থার্মাল ইমেজার এবং বেলারুশের পেলেং লাগানো রয়েছে। প্রথম দশ ভীষ্ম ট্যাঙ্ক আগস্ট 2009 এ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। 2020 সালের মধ্যে ভারত 1,680 T-90 ট্যাংককে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা করেছে।

T90 এস ভীষ্ম -এর নকশা

T-90S ট্যাঙ্কটি 9.63 মিটার লম্বা এবং 3.73 মিটার চওড়া এবং 2.22 মিটার উঁচু I এটির ওজন প্রায় 46 টন। ট্যাঙ্কটি স্বয়ংক্রিয় লোডার দ্বারা খালি করা হয় যা ট্যাঙ্কের একটি ম্যানুয়াল লোডারের প্রয়োজনীয়তা সরিয়ে দেয় এবং ক্রু থাকে 3জন, যার মধ্যে কমান্ডার, গনার এবং ড্রাইভার থাকে।

এই ট্যাঙ্কটির ক্ষমতা

  • এটির ওজন মাত্র 48 টন এবং এর ক্রু 3 জন, যারা 125 মিমি স্মুথবোর বন্দুকের জন্য অটোলোডার ব্যবহারের মাধ্যমে সম্ভব করে। এই ট্যাঙ্কটির অন্যান্য বৈশিষ্ট্য হ’ল- এর ব্যারেল থেকে ইনভার-অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক ক্ষেপণাস্ত্র চালানোর ক্ষমতা আছে।
  • অন্যান্য বিশেষ বৈশিষ্ট্য হ’ল- যদিও বুড়ীতে লাগানো 12.7 মিমি মেশিনগানটি ম্যানুয়ালি পরিচালিত হয়েছে, তবে এটি কমান্ডার দ্বারা বুরুজের অভ্যন্তর থেকেও দূরবর্তীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
  • ভারতীয় রূপগুলিতে দেশীয় কাঞ্চন সিরামিক আর্মার রয়েছে যা বিস্ফোরক প্রতিক্রিয়াশীল আর্মারের (ইআরএ) একটি স্তর দ্বারা শীর্ষে রয়েছে। এটি একটি ডিজেল ইঞ্জিন দ্বারা চালিত যা রক্ষণাবেক্ষণকে সহজ করে তোলে এবং T-80 এর গ্যাস টারবাইনগুলির তুলনায় জ্বালানী খরচ হ্রাস করে।
  • বলা হয়ে থাকে যে ভারতীয় T-90S রাশিয়ান T-90A-এর নিম্নোক্ত রূপগুলি রয়েছে তবে ভারতীয়রা এটিকে ইজরায়েলি, ফরাসী এবং সুইডিশ উপ-সিস্টেমগুলির সাথে ফিট করে এবং এটি সম্ভবত রাশিয়ান বৈকল্পিকের চেয়ে ভাল কাজ করেছে।
  • এটি সাব LEDS-150 অ্যাক্টিভ প্রোটেকশন সিস্টেমের (এপিএস) সঙ্গে লাগানো হবে যা এটি শত্রুবিরোধী অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক হামলাগুলির বিরুদ্ধে 3-স্তরযুক্ত প্রতিরক্ষা দেবে। প্রথম স্তরটি এপিএস, দ্বিতীয় স্তরটি ইআরএ এবং তৃতীয় স্তরটি সিরামিক আর্মার। T-90S সহজেই যেকোন জায়গায় মোতায়েন করা যেতে পারে কারণ এটি IAF-এর II-76 এবং C-17 পরিবহনের মাধ্যমে পরিবহন করা যায়।
  • ভারত প্রায় 600 T-90S পরিচালনা করে এবং 2020 সালের মধ্যে ট্যাঙ্কের শেষ সংখ্যাটি প্রায় 1500 তে পৌঁছনোর কথা।

আর কি আছে

বর্মক্ষেত্রের সুরক্ষা স্তরটি T-72 এর শক্ত ইস্পাত ট্যুরেটের সামনের অংশে মিশ্রিত সংযোজন এবং ইরা ইটগুলির একটি স্তর (কন্টাক্ট ৫) বিস্ফোরক বর্মের উপর নির্ভর করে। গৌণ অস্ত্রাগারের একটি ছাদে মাউন্ট করা 12.7 মিমি এবং কোক্সিয়াল 7.92 মিমি মেশিনগান রয়েছে। গতিশীলতা ট্রান্সমিশনের জন্য দুটি গ্রহগত গিয়ার বাক্স এবং দুটি চূড়ান্ত ড্রাইভ, এবং একটি স্নোর্কেলে 20 মিনিটের সাথে 5m নিমজ্জন করার অনুমতি দেয়। এই ট্যাঙ্কের সীমিত ওজন 45 টন, এই ট্যাঙ্কটি ভারতের বেশিরভাগ সেতুর সাথে বায়ু-পরিবহন এবং সামঞ্জস্য করে চলতে পারে।

Published on: জুন ২৪, ২০২০ @ ২৩:৫৬


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

− 3 = 2