সাজদা আহমেদকে ৪ লাখেরও বেশি ভোটে জিতিয়ে উলুবেড়িয়াবাসী বুঝিয়ে দিলেন মোদী নয়, তারা আছেন মমতার পাশেই

রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: ফেব্রু ১, ২০১৮ @ ২১:৪৪

এসপিটি নিউজ, উলুবেড়িযা, ১ ফেব্রুয়ারিঃ  জাত-পাত আর ধর্ম নিয়ে রাজনীতির কি ফল হতে পারে আরও একবার দেখল বিজেপি। হিন্দি বলয়ের রাজ্যগুলির মতো পশ্চিমবঙ্গে যে এধরনের রাজনীতি মানুষ গ্রহণ করে না সেটাও বুঝিয়ে দিলেন উলুবেড়িয়ার ভোটাররা। একই সঙ্গে তারা বুঝিয়ে দিলেন তারা আছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের পাশেই।তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী সাজদা আহমেদকে ৪ লক্ষ ৭৪ হাজার ৫১০ ভোটের রেকর্ড ব্যবধানে জিতিয়ে উলুবেড়িয়াবাসী তারই প্রমান দিলেন।

এবার উলুবেড়িয়া লোকসভার উপ-নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ১২ লক্ষ ৫৭ হাজার ৯০৫। তৃণমূল প্রার্থী সাজদা আহমেদের প্রাপ্ত ভোট ৭ লক্ষ ৬৭ হাজার ৫৫৬। বিজেপি প্রার্থী অনুপম মল্লিক পেয়েছেন ২ লক্ষ ৯৩ হাজার ৪৬ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছেন। সেখানে বাম-কংগ্রেসের হাল আরও খারাপ হয়েছে।

২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে যেখানে বামফ্রণ্ট মনোনীত সিপিএম প্রার্থী ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৫৬৩ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থান পেয়েছিলেন সেই প্রার্থী এবার সেই ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮৯২ ভোট পেয়ে নেমে গেছেন তৃতীয় স্থানে। আর কংগ্রেসের হাল যত কম বলা যায় ততই ভাল। গতবারের চেয়ে ৬৭ হাজার ৮২৬ ভোট কমে হয়েছে ২৩ হাজার ১০৯।

শতাংশের হিসেবে গত লোকসভা নির্বাচনের থেকে তৃণমুলের ভোট বেড়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ সেখানে বিজেপির ভোট বেড়েছে প্রায় ১২ শতাংশ। অন্যদিকে এবারের নির্বাচনে বামেদের ভোট প্রায় ২০ শতাংশ কমে গেছে এবং একইভাবে কংগ্রেসের ভোটও কমেছে। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, বিজেপি মূলত বাম ও কংগ্রেসের ভোট টেনেছে।

এদিন সকাল থেকেই জাতীয় সড়কের ধারে শাসক বিজেপি ও বামেদের শিবির চোখে পড়লেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঐ শিবিরগুলি উঠে যায়। তারা বুঝতে পেরতে যায় আর কোনও সম্ভাবনা নেই। এদিন তৃণমূল প্রার্থীর জয়ের পরে উলুবেড়িয়া সিআইপিরি কলেজে প্রার্থী সাজদা আহমেদকে সঙ্গে নিয়ে আসেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। সঙ্গেঞ্ছিলেন বিধায়ক পুলক রায়,বিধায়ক সমীর পাঁজা,বিধায়ক অরুণাভ সেন,বিধায়ক গুলশান মল্লিক,বিধায়ক ইকবাল আহমেদ,বিধায়ক ডা মির্মল মাজি সহ সুলতান আহমেদের দুই পুত্র। পরে সাজদা আহমেদ জয়ের সার্টিফিকেট গ্রহণ করেন।

এই জয়কে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয় বলে অভিহিত করেন সাজদা আহমেদ। তিনি বলেন উলুবেড়িয়ার মানুষ উন্নয়নের পক্ষেই রায় দিয়েছেন। পাশাপাশি তাঁর স্বামী সুলতান আহমেদের কথা স্মরণ করে বলেন,তিনি যেভাবে উলুবেড়িয়ার মানুষের পাশে ছিলেন মানুষ সুদ সমেত সেটা ফেরত দিয়েছেন।

অন্যদিকে বিজেপির এই ফলের জন্য পরোক্ষভাবে সিপিএমকেই দায়ী করেন পুর মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন ৩৪ বছর বাম রাজত্বের পরে সিপিএমের গড় তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়েছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বিজেপির এই ফল নিয়ে তৃণমুল মাথা ঘামাচ্ছে না বলেও সাফ জানিয়ে দেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।

তবে এই পরাজয়কে মেনে নিতে পারছেন না দুই বিরোধী প্রার্থী বিজেপির অনুপম মল্লিক ও সিপিএমের সাবিরুদ্দিন মোল্লা। দু’জনের গলাতেই শোনা গেল একই সুর। দু’জনেই মুলত এই পরাজয়ের পিছনে ধর্মীয় মেরুকরনকেই দায়ী করেছেন। বিজেপি প্রার্থী যেমন বলেই ফেললেন-ধর্মীয় মেরুকরণ না হলে ফল আরও ভাল হত।

থিক তেমনটাই শোনা গেল সিপিএম প্রার্থীর গলাতেও। তিনিও স্বীকার করে নিলেন-ধর্ম নিরপেক্ষতাকে মানুষ ভালোভাবে মেনে মনে নেয়নি।তার জন্যই এই ফল।

তাহলে একটা বিষয়ে কিন্তু পরিষ্কার হয়ে গেল-এই রাজ্যে মানুষ ধর্ম নয় চায় উন্নয়ন। সার্বভৌমত্ব, সংহতি, ঐক্য। যা নিয়ে রাজ্যের দ্বিতীয় বিরোধী দলকে ভাবতেই হবে।

Published on: ফেব্রু ১, ২০১৮ @ ২১:৪৪


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

69 − 63 =