রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার সাঁতার কেটে চলে যাচ্ছে গভীর জঙ্গলের দিকে, লঞ্চ দাঁড় করিয়ে চলল ফটোশ্যুট

দেশ বন্যপ্রাণ বাংলাদেশ ভ্রমণ
শেয়ার করুন

সংবাদদাতা-সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

Published on: জানু ২৫, ২০১৮ @ ২৩:৪৭

এসপিটি নিউজ, ক্যানিং, ২৫ জানুয়ারিঃ আবার বাঘের দর্শন-সত্যি, সুন্দরবনে এবার দক্ষিণরায় বোধহয় এবার একটু বেশি সদ্য হয়েছে। তাই বারেবারে সে চলে আসছে মানুষের সামনে। কাকদ্বীপ, গোসাবার পর সুন্দরকাঠি নদী। তবে এ যাত্রায় বাঘ কাউকে আক্রমন করেনি বরং আনন্দ দান করে জঙ্গলের ভিতর চলে গেছে। ভ্রমনপিপাসু মানুষ সেই বিরল দৃশ্য লঞ্চ দাঁড় করিয়ে ক্যামেরাবন্দি করলেন। সুন্দরবনের মানুষ বলছেন, সাম্প্রতিককালে সুন্দরবনে এত ঘন ঘন বাঘের দেখা পাওয়াটা সত্যিই এক বিরল ঘটনা।

চলতি মাসের শুরুতেই সজনেখালিতে বাঘ গণনার প্রশিক্ষণ হয়ে গেছে। যেখানে ভারত-বাংলাদেশের বনাধিকারিক ছাড়াও ছিলেন ভুটান, নেপালের বনাধিকারিকরাও। সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়েছে বলেও মনে করছে কেউ কেউ। বর্তমানে ভারত-বাংলাদেশ মিলিয়ে গোটা সুন্দরবন এলাকায় বাঘের সংখ্যা ১৯২টি। যেখানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে বাঘের সংখ্যা ৮৬টি। মনে করা হচ্ছে আগের চেয়ে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলেই এত কম সময়ের ব্যবধানে বাঘের দেখা পাওয়ার সৌভাগ্য লাভ করছে মানুষ।

আগামিকাল থেকেই বাঘ গণনার কাজ শুরু হওয়ার কথা। সেই মতো প্রস্তুতিও সম্পূর্ণ। তার মধ্যে এভাবে বাঘের দর্শন বাঘ গণনাকারীদের উৎসাহিত করে তুলেছে।এবারই প্রথম ভারত-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে বাঘ গণনার কাজ শুরু হতে চলেছে। এই কাজ সম্পূর্ণ হলে গোটা সুন্দরবনের বাঘের চিত্রটা পরিষ্কার হয়ে যাবে বলে মনে করছেন দুই দেশের বনাধিকারিকরা।

তবে যেভাবে বৃহস্পতিবার দুপুরে পর্যটকরা বাঘের দর্শন পেলেন তা সত্যিই অভাবনীয়।আপ্লুত পর্যটকরা তো রীতিমতো খুশি। সকলের মুখেই এক কথা-“আজ যা দেখলাম, চোখ সার্থক হয়ে গেল। এভাবে এত কাছ থেকে তাও আবার সুন্দরবনের বাঘের দর্শন, না ভাবাই যায় না-আমরা সত্যিই অভিভূত। আমাদের জীবন ধন্য হল।” বোঝা যাচ্ছিল তাদের কথায়, তাঁরা কতটা আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছিলেন। বন্যপ্রাণীপ্রেমীরা পয়সা খরচ করে বান্ধবগড়, রণথম্বোর, মানস ব্যাঘ্র প্রকল্পে বাঘ দেখতে যায়। সেখানকার বাঘ এক রকম। আর সুন্দরবনের বাঘ আর এক রকমের। ঐসব জঙ্গলে সময় হাতে নিয়ে ভিতরে ঘুরলে বাঘের দেখা পাওয়া সম্ভব। কিন্তু সুন্দরবনে বাঘের দেখা পাওয়াটা এক প্রকার ভাগ্যের ব্যাপার।

যা এবারের শীতের মরশুমে দক্ষিণরায় সশরীরে হাজির হওয়ার ‘ব্রত’ নিয়েছে।তাই ঘন ঘন এত বাঘের দেখা পাওয়া যাচ্ছে। আর তাই এবারের মরশুমে মাতলা রেঞ্জের ঝড়খালি হেড়োডাঙা, বনিক্যাম্প, কলস, দো-বাঁকি, সজনেখালি, সুধন্যখালি, নেতিধোপানি সহ আশপাশের এলাকগুলিতে পর্যটকদের ভিড় বিগত কয়েকটি বছরকে ছাপিয়ে গেছে।

জানা গেছে, গত ২৩ জানুয়ারি ২৮ জনের পর্যটকদের একটি দল সুন্দরবন ভ্রমনের জন্য ঝড়খালি থেকে লঞ্চে উঠেছিলেন। তাদের তিনদিনের ঘোরার পরিকল্পনা ছিল। এদিন তাদের বনিক্যাম্প হয়ে ঝড়খালি আসার পরিকল্পনা ছিল। সেই মতো তারা যখন বনিক্যাম্পের দিকে আসছিলেন ঠিক সেইসময় ওই লঞ্চের কয়েকজনের চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়-যখন তারা দেখেন বিশালাকার এক পূর্ণবয়স্ক বাঘ সুন্দরকাঠি নদী সাঁতরে আজমলমারি জঙ্গলের দিকে চলে যাচ্ছে। ঐ দৃশ্য দেখা মাত্রই লঞ্চের সারেং মোতর বন্ধ করে দিয়ে দাঁড়িয়ে যান। লঞ্চের স্মস্ত পর্যটকরা তখন চোখ ভরে সেই বিরল দৃশ্য উপভোগ করতে থাকেন। কেউ কেউ ক্যামেরা বার করে ফটোশ্যুট করতে শুরু করে দেন। সেই ছবি আমাদের কাছে পৌঁছায়। যা আমরা আপনাদের দেখাতে পারছি। বাঘটি যতক্ষন সাঁতার কেটে আজমলমারির জঙ্গলের ভিতরে না ঢুকেছে ততক্ষণ পর্যটক্রা সেই দৃশ্য উপভোগ করেছেন। বাঘটি জঙ্গলের ভিতর অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার পর ফের পর্যটকদের নিয়ে লঞ্চটি ঝড়খালির উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যায়।

Published on: জানু ২৫, ২০১৮ @ ২৩:৪৭


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

86 + = 93