বাঘ এখনও অধরা, শুরু দাঁতাল হাতির দৌরাত্ম্য, নাজেহাল অবস্থা বনাধিকারিক থেকে থানার অফিসারদের

বন্যপ্রাণ রাজ্য
শেয়ার করুন

সংবাদদাত-বাপ্পা মণ্ডল                             ছবি-রামপ্রসাদ সাউ

Published on: মার্চ ৪, ২০১৮ @ ১৬:০৬

এসপিটি নিউজ, লালগড়, ৪ মার্চঃ মেদিনীপুরের ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহা কোনওদিন কি ভেবেছিলেন এমন দিন আসবে তাঁর জীবনে। বন দফতরের যে কোনও আধিকারিক জানেন একমাত্র সুন্দরবন কিংবা ডুয়ার্সের দায়িত্ব পেলে তাকে বাঘ কিংবা হাতির দৌরাত্ম সামলাতে হবে। কিন্তু সেটা যদি মেদিনীপুর হয় তাহলে কি অবস্থা হবে! এখন তিনি তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। এক রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার তাঁর রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। বহু চেষ্টা করেও বাঘটিকে এখনও খাঁচা বন্দি করা যায়নি। এর মধ্যে নতুন করে শুরু হয়েছে হাতির উৎপাত। প্রায় ৯০টি হাতি এখন দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে মেদিনীপুর সদর, শালবনী, ঝাড়গ্রাম, লালগড় এলাকায়। নাজেহাল থানার অফিসারও। একদিকে বাঘের আতঙ্ক আর এক দিকে হাতির দৌরাত্ম্য।

কি সাংঘাতিক সমস্যাতেই না পড়েছেন মেদিনীপুর-ঝাড়গ্রাম জেলার বন ও পুলিশ আধিকারিকরা। তাদের এখন শ্যাম রাখি না কুল রাখি অবস্থা। অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, মাওবাদীদের দৌরাত্ম্য যখন চলছিল তখনও অফিসারদের এতটা অসহায় লাগেনি। কারণ, তাদের একটাই লক্ষ্য ছিল আগে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করতে হবে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। কারণ, মাওবাদীদের এনকাউন্টারে মারার নির্দেশ থাকলেও এই রয়্যাল বেঙ্গ, কিংবা দাঁতাল হাতিকে মারার কোনও নির্দেশ নেই। অর্থাৎ বন্যপ্রাণকেও রক্ষা করতে হবে আবার সাধারণ মানুষকেও বাঁচাতে হবে। যা খুব কঠিন হয়ে পড়ছে বন আধিকারিকদের কাছে।

শুক্রবার ভোরে ফাঁদ ক্যামেরায় রয়্যাল বেঙ্গলের ছবি ধরা পড়ার পর থেকে নাওয়া-খাওয়া ভুলে দফতরের কর্মীদের নিয়ে লালগড়ের জঙ্গলেই আস্তানা গেঁড়েছেন মেদিনীপুরের ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহা। এখনও বাঘের হদিশ মেলেনি। দ্বিটিয়বারের জন্য ফাঁদ ক্যামেরাতেও ধরা পড়েনি বাঘটির ছবিও। যত সময় এগোচ্ছে তার চিন্তা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। কারণ, বাঘটিকে ধরতে না পারলেও তার অবস্থান জানাটাও জরুরি। সেটা জানলেও অনেকটা নিশ্চিন্ত থাকতে পারবেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের নিশ্চয়তা দিতে পারবেন। কিন্তু সেটাও যে সম্ভব হচ্ছে না বাঘটির জন্য। তার মধ্যা জানা গেছে, কাছেই গোয়ালতোড়ের জঙ্গল। যেখানে আছে বাঘের প্রিয় খাবার হরিণ। যে জঙ্গলের ভিতর দিয়ে চলে গেছে অনেক দূরের জঙ্গলের পথ। বাঘটি সেই পথেই আছে কিনা তা জানার চেষ্টা চালাচ্ছে বন দফতর।

আর এর মধ্যেই নতুন করে জুটেছে প্রায় ৮০ থেকে ৯০টি দাঁতাল হাতির উৎপাত। যেগুলি এখন মেদিনীপুর সদর, শালবনী, ঝাড়গ্রাম, লালগড় থানা এলাকায় ঢুকে পড়েছে। বাঘের আতঙ্কে যখন লালগড়ের মানুষ তটস্থ ঠিক তখন রবিবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে হাতির উৎপাত। শালবনী ব্লকের গরমাল, জগন্নাথপুর, দহ, বাগ্মারিএলাকায় ৩০টি দাঁতাল হাতি দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে। সন্ধ্যার পর থেকে গ্রামবাসীরা ঘর থেকে না বেরোনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দল বেঁধে গ্রাম পাহারা দেওয়া শুরু করেছে গ্রামবাসীরা।

মেদিনীপুর সদরের গুড়গুড়িপাল থানার গুড়গুড়িপাল, চানদ্রা, এনায়েতপুর, মণিদহ, বাঘেরপুকুর, ভেড়ুয়া এলাকায় কয়েকটি হাতি দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে। লালগড়ের ঝিটকার জঙ্গলে যেখানে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারটি রয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে সেখানেই জড়ো হয়েছে প্রায় ৩৫টি হাতি। এর মধ্যে দুটি হাতি আবার দলছুট হয়ে পড়ে। তার মধ্যে একটি হাতি আবার রাতেই লালগড়ের ধরমপুর গ্রামে ঢুকে পড়ে। যার ফলে পার্শ্ববর্তী গ্রামে হাতির আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রবিবার ভোরে সুর্যের আলো ফোটার আগেই একটি পূর্ণ বয়স্ক দাঁতাল হাতি ঢুকে পড়ে। এদিন ঐ হাতির গর্জনেই ঘুম ভাঙে লালগড়বাসীর। লালগড় থানার আইসি অরুন খান জানান, হাতিটি ভোরে আচমকা ঢুকে পড়ে। হাতির আওয়াজে তারাও জেগে যায়।

বন দফতর যখন বাঘ ধরা নিয়ে ব্যস্ত থখন গ্রামবাসীদের শুধু নয় থানা বাঁচাতেও তৎপর হয়ে পড়েছেন পুলিশ অফিসাররা।বনাধিকারিকদের মতো তাদেরও নাজেহাল অবস্থা।

Published on: মার্চ ৪, ২০১৮ @ ১৬:০৬


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

7 + 3 =