রিও-র ব্যার্থতা কাটিয়ে কীভাবে টোকিও ২০২০-তে রূপো জিতলেন মীরাবাই চানু, জানালেন তাঁর দাদা

Main খেলা দেশ বিদেশ
শেয়ার করুন

Published on: জুলা ২৪, ২০২১ @ ১৭:৫৪
Reporter: Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ: ব্যর্থতার পরেই আসে সাফল্য-এ কথা ফের প্রমাণিত হল টোকিও ২০২০ অলিম্পিকে মীরাবাই চানুর ভারত্তোলনে রূপোর পদক জয়ের মধ্য দিয়ে। ব্যর্থতাই যে সাফল্যের রাস্তা চিনিয়ে দেয় তা দেখিয়ে দিলেন চানু। রিও অলিম্পিকে খুবই খারাপ ফলাফল করে প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে যেতে হয়েছিল। সেদিন শুধু চোখের জলই সহায় ছিল। সেদিনের সেই ব্যর্থতাকে মনের ভিতর গেঁথে ফেলেছিলেন। তারপর একটু একটু করে নিজেকে টোকিও অলিম্পিকের জন্য তৈরি করেছিলেন। তাঁর একটাই লক্ষ্য ছিল যে টোকিও থেকে পদক তিনি আনবেনই। আর সেই পদক হল সোনা। যদিও সোনা হাতছাড়া হলেও রূপো যে বোন পেয়েছে তাতেই খুশি দাদা সাইখোম সানাতোম্বা মাইতেই। অলিম্পিকের সংবাদ বিভাগকে জানিয়েছেন বোনের এই সাফল্যের পিছনে থাকা দীর্ঘ লড়াইয়ের রহস্যের কথা।

ছুটি নিয়েছিলেন বোনের ইভেন্ট দেখার জন্য

বোনের ইভেন্টটি দেখার জন্য আজ ছুটি নিয়েছিলেন মীবাই চানুর দাদা সাইখোম।যিনি নিজে একজন সেনা কর্মী। বোনের সাফল্যে তিনি আজ সত্যিই খুশি। আনন্দিত বটে। বেঙ্গালুরুতে বসেই তিনি জানালেন বোনের দীর্ঘ লড়াইয়ের ইতিহাস। যে লড়াইয়ে আছে অনেক কষ্ট। তবু পরিবার তাঁর পাশে থেকেছে। পাশে পেয়েছে চানু।

দাদা সাইখোম বলেন- “আমি এই মুহূর্তে বাকরুদ্ধ। এই মুহূর্তে এই আবেগ প্রকাশ করা যায় না। বোন সোনা জিতবেন এই বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন,  আজ ওর একটি রূপোও আমাদের খুব গর্বিত করে তুলেছে। এখনও তা আরও উজ্জ্বল”, বলছিলেন সাইখোম।

“চানু ১৫ বছর বয়স থেকেই ভারোত্তোলন করছিলেন। অলিম্পিক পদক জয়ের লক্ষ্য ছিল শুধু। কিন্তু কিছুক্ষণ আগে তিনি আহত হয়েছিলেন। এটি সত্যিই ভীতিজনক ছিল। আবার খেলতে পারবেন কিনা তা আমরা জানতাম না। তবে এখন এই জয়ের পরে আমার মন খুশিতে ভরে গেছে।”

পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা ছিল না

একটি পদক জয়ের লক্ষ্য যা অধ্যবসায় এবং ঘাত-প্রতিঘাতের দ্বারা জন্ম নেয়।

চানুর দাদার কথায়- “তখন আমাদের অবস্থা ভালো ছিল না। আমি এবং মীরাবাই কাছাকাছি পাহাড় থেকে কাঠ সংগ্রহ করতে যেতাম। একদিন আমি কাঠ তুলতে পারিনি, মীরাবাই, তখন বেশ ছোট ছিলেন, বয়স কতই বা হবে ১২ বছর- বলেছি্ল যে সে কাঠ তুলে নিয়ে আসবে। এবং সে সত্যি তা বাড়িতে নিয়ে আসে। এটি ঈশ্বরের দেওয়া শারীরিক শক্তি তার মধ্যে ছিল। আমিই তাকেই ভারোত্তোলনে উত্সাহিত করেছি।”

বাড়ি থেকে প্রায় ৩০ কিমি দূরে ছিল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

তিনি উল্লেখ করেন যে মীরাবাই খুব মনোযোগী ছিলেন। “প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি আমাদের বাড়ি থেকে ২০-৩০ কিলোমিটার দূরে ছিল। আমাদের বাবা-মা তাকে তার ভ্রমণের জন্য ১০-২০ টাকা দিতেন। গ্রামটি আয়তনে খুব ছোট এবং প্রায় সবাই সবাইকে চেনে। ভোরবেলা ট্রাকগুলি বাজার চত্বর থেকে ছেড়ে যেত। আমরা জানতাম যে তাদের মধ্যে কোনটি তার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের দিকে যাচ্ছে এবং তাকে তাদের সাথে পাঠানো যাবে। সে এ নিয়ে কখনও অভিযোগ করেনি। তিনি প্রতিদিন একা যেতেন এবং খুব পরিশ্রমী ছিলেন। ” মীরাবাইয়ের দাদা, যিনি বয়সে চার বছরের বড়, তিনি স্মরণ করছিলেন সেই কথা।

প্রতিকূলতাকে সামনে রেখেই এগিয়ে গেছে মীরাবাই

আরও একটি দিক তিনি উল্লেখ করে বলেন- একজন অ্যাথলিটের বিকাশের একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ দিক হল তার  পুষ্টির বৃদ্ধি। মীরাবাই কোনও স্বচ্ছল পরিবার থেকে আসে নি এবং তাই তার বাবা-মা যা স্বল্প কিছু দিতে পারে তাই নিয়েই তাকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল এবং অলিম্পিক পদক জয়ের স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রেখে অগ্রগতির পথে এগিয়ে যেতে হয়েছিল।

“মীরাবাই যখন প্রশিক্ষণ শুরু করেছিলেন এবং আমার বাবা-মা বুঝতে পেরেছিলেন যে আমার বোন ভারোত্তোলনে আগ্রহী, তখন তাদের একমাত্র উদ্বেগ ছিল যে তারা তাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার এবং পুষ্টি সরবরাহ করতে সক্ষম হবেন কি না। সামান্য ফলের ব্যবস্থা ছিল। আমাদের পরিবারের বেশি টাকাপয়সা ছিল না বলে চেষ্টা করতাম সেভাবেই দিন যাপন করতে- বলছিলেন চানুর দাদা সাইখোম।

পরিবার মীরাবাইয়ের প্রশিক্ষণ এবং পুষ্টির দিকে যাতে ভালোভাবে মন দিতে পারে তার জন্য দাদাকে নিজের স্বপ্নগুলি ত্যাগ করতে হয়েছিল।

“আমি ২০০২-২০০৭ সাল পর্যন্ত ফুটবল খেলেছি কিন্তু পরিবার আর্থিকভাবে দুর্বল ছিল তাই আমি এটা ছেড়ে দিয়েছিলাম। আমি পরিবারকে সাহায্য করার জন্য যখন আমি ১৭ বছর বয়সে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলাম, ” বলছিলেন তিনি।

রিও অলিম্পিকের হতাশা থেকে শিক্ষা, নিয়েছে পদক জয়ের সঙ্কল্প

রিও ২০১৬ অলিম্পিকে, মীরাবাইয়ের একটি হতাশাজনক অভিযান ছিল। তিনিই একমাত্র ভারোত্তোলক যিনি প্রতিযোগিতাটি শেষ করতে পারেননি।  কিন্তু সেই ব্যর্থতা কেবল তাকে হেলিয়ে দেয়নি বরং আরও দৃঢ় করেছিল, দৃঢ় সংকল্প নিয়ে টোকিও ২০২০ এ গিয়েছিল।

“আমি মনে করি এবার মীরাবাই অলিম্পিকের জন্য মানসিকভাবে আরও ভালভাবে প্রস্তুত ছিলেন।” ভারতীয় ভারোত্তোলকটি ২০২ কেজি (৮৭ কেজি স্ন্যাচে এবং নক্লিন অ্যান্ড জার্কে ১১৫ কেজি) সম্মিলিত লিফট নিয়ে অলিম্পিক পদক জিততে পেরেছেন – সংগ্রামের ভিত্তিতে নির্মিত ক্যারিয়ারের এটা তাঁর শ্রেষ্ঠ শিরোপা নিঃসন্দেহে।

Published on: জুলা ২৪, ২০২১ @ ১৭:৫৪


শেয়ার করুন