রাশিয়া ফিফা বিশ্বকাপঃ BBC-র সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে এবার নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নকে দেখা যাবে

খেলা বিদেশ
শেয়ার করুন

Published on: জুন ২০, ২০১৮ @ ১৮:০৭

এসপিটি স্পোর্টস ডেস্কঃ জমে উঠেছে বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপের আগে যে দলগুলিকে ফেবারিট ধরা হয়েছিল তারা সেভাবে নিজেদের প্রথম ম্যাচে মেলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। তুলনামূলকভাবে যাদের নিয়ে খুব বেশি লেখালেখি হয়নি সেই দেশগুলি কিন্তু কামাল করে দিয়েছে। যার মধ্যে আছে এবারের বিশ্বকাপে অভিষেক হওয়া আইসল্যান্ড, সেনেগাল, মেক্সিকোর মতো দেশগুলি।

তবে বিবিসির বিচারে এই দেশগুলি ফেবারিটের তালিকায় নেই।বিবিসি মূলতঃ ইতিহাস, পরিসংখ্যান, ট্রেন্ড আর অতীতের বিশ্বকাপের ধরন বিশ্লেষণ করেই চ্যাম্পিয়নকে বেছে নিয়েছে।

এবারের বিশ্বকাপে খেলছে মোট ৩২টি দেশ। এর মধ্যে কয়েকটি ধাপে বিশ্লেষণ প্রক্রিয়া চালিয়েছে। ফেবারিট বাছার ক্ষেত্রে তারা যে বিষয়গুলির উপর জোর দিয়েছে তা হল-

১)সেই দলকে সেরা দলের তালিকায় অবশ্যই থাকতে হবে,

২)দেশটিকে আয়োজক দেশ হলে চলবে না,

৩)কম গোল খেতে হবে,

৪)সেই দলে সেরা গোলরক্ষক থাকতে হবে,

৫)অভিজ্ঞতা থাকতে হবে,

৬)বর্তমান চ্যাম্পিয়ন থাকা যাবে না

এই ছটি গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলিকে বিবিসি সেরাদল নির্বাচনের চাবিকাঠি হিসেবে ধরে সমীক্ষাটি চালিয়েছে।

এবারের বিশ্বকাপে বিবিসি মোট আটটি দলকে সেরা বেছে নিয়েছে।১৯৯৮সাল থেকে বিশ্বকাপে ৩২টি দল খেলতে শুরু করেছে। আর সেবার থেকে যে দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সেই দলটি বিশ্বকাপের সেরা দলের তালিকায় ছিল। তবে এর ব্যতিক্রম যে ঘটেনি তা নয়, ১৯৮৬সালে আর্জেন্টিনাকে শীর্ষে নিয়ে গেছিল দিয়েগো মারাদোনা ও তাঁর ‘ঈশ্বরের হাত’ দিয়ে করা গোল। এই দিকটি বিবেচনা করে সেরা দলের তালিকা থেকে বাকি ২৪টি দলকে বিবিসি বাদ দিয়েছে। বাকি আটটি দল হল-ফ্রান্স, জার্মানি, ব্রাজিল, পর্তুগাল, আর্জেন্টিনা, বেলজিয়াম, পোল্যান্ড, রাশিয়া।

তবে এখানেই শেষ নয়। এই আটটি দলের থেকে এবার চ্যাম্পিয়ন দলকে বেছে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে বিবিসি। এবার তারা বিচারধারা যে বিষয়টির উপর বিশেষভাবে জোর দেয় তা হল-চ্যাম্পিয়ন যে দল হবে সেই দল যেন আয়োজক দেশ না হয়। যদিও বিশ্বকাপের শুরুতে অর্থাৎ সেই ১৯৩০ সাল থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত টানা ১১টি বিশ্বকাপে যে পাঁচটি দেশ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তারা সকলেই ছিল আয়োজক দেশ।কিন্তু এর পর যে ন’টি বিশ্বকাপ হয়েছে সেখানে আয়োজক দেশের ভাগ্যে কিন্তু সুফল লাভ ঘটেনি। মাত্র একবার অর্থাৎ সেই ১৯৯৮ সালের যেবার ফ্রান্স বিশ্বকাপের আয়োজন করেছিল তারা সেবার বিশ্বচ্যাম্পিয়নের সম্মান লাভ করতে পেরেছিল। এ থেকে বিবিসি-র সমীক্ষা রিপোর্ট আয়োজক দেশের পক্ষে যাচ্ছে না। সেই ক্ষেত্রে তালিকা থেকে এবারের আয়োজক দেশ রাশিয়াকে বাদ দিয়েছে।ফলে পড়ে রইল সাতটি দেশ-ফ্রান্স, জার্মানি, ব্রাজিল, পর্তুগাল, আর্জেন্টিনা, বেলজিয়াম, পোল্যান্ড।

এই সাতটি দেশের মধ্যে থেকে বিবিসি যে সেরা দল বেছেছে সেখানে তারা কম গোল খাওয়ার বিষটিকে মাত্রা হিসেবে ধরে বিচারধারাকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। সেই সমীক্ষা চালাতে গিয়ে বিবিসি দেখেছে যেবার থেকে ৩২টি দল বিশ্বকাপে খেলতে শুরু করেছে তারপর থেকে যে পাঁচটি দেশ বিশ্বসেরা হয়েছে তাদের কেউই সাতটি ম্যাচে চারটির বেশি গোল খায়নি। এই তালিকায় সবচেয়ে দুর্বল রক্ষনভাগ হল পোল্যান্ডের।তারা বছাই পর্বের খেলা থেকে প্রতি ম্যাচে ১.৪টি করে গোল খেয়েছে। জার্মানি ও পর্তুগাল খেয়েছে ম্যাচ পিছু ০.৪ গোল, বেলজিয়াম ও ফ্রান্স ০.৬ গোল, ব্রাজিল০.৬১ গোল, আর্জেন্টিনা ০.৮৮গোল। স্বাভাবিকভাবে বিবিসির সেরার তালিকা থেকে এবার বাদ গেল পোল্যান্ড।পড়ে রইল বাকি ছ’টি দেশ।

বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন দলের তালিকায় আমেরিকা ও ইউরোপের জয়জয়কার। তবে প্রাধান্য বেশি ইউরোপের দেশগুলির। ইউরোপে আয়োজিত ১০টি বিশ্বকাপে একবারই মাত্র ইউরোপের বাইরের দেশ জয়ী হয়েছিল। ১৯৫৮ সালে সেবার সুইডেনে অনুশঠিত বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ব্রাজিল। সাম্প্রতিকালের পরিসংখ্যান বলছে ইউরোপের বাইরে অর্থাৎ দক্ষিণ আফ্রিকাতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল স্পেন। আবার ব্রাজিলের বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয় জার্মানি। তাই সেই দিক বিবেচনা করে সেরার তালিকা থেকে বিবিসি বাদ দিয়েছে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনাকে।

পড়ে রইল চারটি দেশ।

এরপর বিবিসি-র সমীক্ষায় উঠে এসেছে সেরা দলগুলির অভিজ্ঞতার বিষয়টি। কারণ অতীতে যে দেশগুলি চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তাতে দেখা গেছে অভিজ্ঞতায় ভরপুর দলই শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। অনেকের মনেই ধারনা আছে গোলদাতারাই বিশ্বকাপ জিতিয়ে দেয়। এই তথ্য সম্পূর্ণভাবে ঠিক নয়, অন্তত পরিসংখ্যান তাই বলছে। ১৯৮২ সালের পর মাত্র দু’বার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলের খেলোয়াড় সেরা গোলদাতার পুরস্কার জিতে নিয়েছিল। ২০০২ সালে ব্রাজিলের রোনাল্ডো এবং ২০১০ সালে স্পেনের ডাভিড ভিয়া। বরং সেরা গোলরক্ষকের একটা বড় ভূমিকা থাকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ক্ষেত্রে। সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে গত পাঁচটি বিশ্বকাপের চারটিতেই কিন্তু সেরা গোলরক্ষকের গোল্ডেন গ্লাভস পেয়েছেন চ্যাম্পিয়ন দলের গোলরক্ষকরাই।সেই দিক বিবেচনা করে দেখা গেছে বর্তমানে সেরা গোলরক্ষক হলেন জার্মানির মানুয়েল ন্যয়ার, ফ্রান্সের উগো লরিস এবন বেলজিয়ামের থিবাত কোর্তোয়া। স্বাভাবিক ভাবেই বাদ যাচ্ছে পর্তুগাল। রইল মাত্র তিনটি দেশ-ফ্রান্স,জার্মানি ও বেলজিয়াম।

বিশ্বকাপ জেতার খহেত্রে অভিজ্ঞতা একটা বড় দিক। ১৯৯৮সালের পর থেক যে দলগুলি চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তাদের অভিজ্ঞতা অন্য দলের চেয়ে বেশি ছিল। সেবার চ্যাম্পিয়ন হওয়া ফ্রান্সের খেলোয়াড়দের অভিজ্ঞতা সবচেয়ে বেশি ছিল। তাদের খেলোয়াড়রা গড়ে ২২.৭৭টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন। ব্রাজিলে চার বছর আগে জার্মানি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সময় দেখা গেছে তাদের খেলোয়াড়দের গড়ে ৪২.২১টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলের অভিজ্ঞতা ছিল। সেই হিসেবে ২০০২ সালে চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের খেলোয়াড়দের ২৮.০৪ট, ২০০৬সালে ইতালির ৩২.৯১, ২০১০ সালে স্পেনের এই হার ছিল ৩৮.৩০। এই নিরিখে ফ্রান্সের খেলোয়াড়দের অভিজ্ঞতা সবচয়ে কম। তাদের একজন খেলোয়াড় আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন ২৪.৫৬টি। এই পরিসংখ্যানে জার্মানি ৪৩.২৬ ও বেলজিয়াম সবচেয়ে এগিয়ে তদের খেলোয়াড়রা গড়ে ৪৫.১৩টি ম্যাচ খেলেছেন।ফলে তালিকা থেকে ফ্রান্স বাদ গেল। রইল জার্মানি ও বেলজিয়াম।

শেষ বিচারে দেখা গেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দল চ্যাম্পিয়ন হচ্ছে না।গত চারটি বিশ্বকাপের তিনটিতেই কিন্তু আগের বারের চ্যাম্পিয়নরা বাদ গেছে। একমাত্র ব্রাজিল ১৯৫৮ ও ১৯৫২ দু’বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক বিশ্বকাপ গুলিতে জার্মানির রেকর্ড খুব ভালো। তারা গত ন’টি বিশ্বকাপে দু’বার জিতেছে। তিনটি বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেছে। দু’বার তৃতীয় হয়েছে। যদিও রাশিয়া বিশ্বকাপে তাদের জয়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ। ইতিহাস ও পরিসনহখ্যান বলছে এবার জার্মানি হবে না। তাহলে এবার নতুন সম্ভাব্য বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হিসেবে বেলজিয়ামকে বেছে নিয়েছে বিবিসি।

এখন এই সমীক্ষা কতটা মেলে তার জন্য আগামী ১৫জুলাই পর্যন্ত অপেক্ষা করে থাকতে হবে আমাদের সকলকে।

Published on: জুন ২০, ২০১৮ @ ১৮:০৭


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

− 2 = 5