মিলানে ক্ষতি 350 মিলিয়ন- ধ্বংস আর নির্জনতা কাটিয়ে চলছে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই

Main কোভিড-১৯ বিদেশ ভ্রমণ
শেয়ার করুন

মুখ থুবড়ে পড়েছে পর্যটন শিল্প। সারা বিশ্বে করোনা ভাইরাস যেভাবে মহামারীর আকার নিয়েছে তাতে এক গভীর সংকটের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত সকলেই।কি অবস্থায় আছে তারা, কত টাকা ক্ষতি হয়েছে তাদের এই সমস্ত বিষয় নিয়ে সংবাদ প্রভাকর টাইমস শুরু করতে চলেছে এক বিশেষ সিরিজ। আজ ইতালির মিলান শহর  নিয়ে আমাদের তৃতীয় কিস্তি।
  • মার্চের শেষ 10 দিনে খাবারের পার্সেলের অনুরোধের সংখ্যা বেড়েছে 30 শতাংশ।
  • ইতিমধ্যে শুধুশমাত্র এই শহরেই মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে 1,300জন।
  • ব্যবসায়ী সমিতিগুলি স্লোগান তুলেছে- “আসুন আমরা সবাই মিলে শহরের পুনর্গঠনের কাজে হাত মেলাই।”
  • মিলানবাসীর একটাই কথা- “আমরা থামার জন্য তৈরি হইনি। আমাদের এগোতেই হবে। যত বাধাই আসুক না কেন ঘুরে আমরা দাঁড়াবোই।”

 Published on: এপ্রি ৫, ২০২০ @ ২৩:১৭

Reporter: Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ, ৫ এপ্রিল:  করোনা ভাইরাস সারা পৃথিবীতে কতটা ভয়াবহ প্রভাব ফেলেছে তা নিয়ে ইতিপূর্বেই আমরা এভারেস্ট এবং বিশ্ব ভ্রমণ ও পর্যটন শিল্পের পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা করেছি। এবার আমরা তুলে ধরছি ইতালির ঐতিহাসিক ঐতিহ্যমন্ডিত মিলান শহরের করুণ দৃশ্যের কথা। যারা আজ ধ্বংসের হাত থেকে নতুন করে নিজেদের গড়ে তোলার লড়াই শুরু করার কথা ভাবছে। আসুন আমরা দেখে নি একদা প্রাণচঞ্চল, শিল্প-সংস্কৃতির এই শহর এখন কি অবস্থায় আছে।

এমন হতশ্রী চেহারা বিশ্বের কখনো হয়েছে কিনা জানা নেই

আমাদের জীবদ্দশায় তো বটেই গত একশো বছরে কিংবা তারও আগে এমন হতশ্রী চেহারা বিশ্বের কখনো হয়েছে কিনা জানা নেই। গোটা বিশ্বে করোনা ভাইরাস এমনভাবে থাবা বসিয়েছে যে তা থেকে পৃথিবীর শক্তিশালী দেশগুলি তো বটেই অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলিও ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে মারাত্মকভাবে।ইতালির মিলান শহরের অবস্থা খুবই খারাপ। যে শহর সারা বিশ্বের মধ্যে প্রথম সারির শহরের মধ্যে পড়ে। ফ্যাশন, ডিজাইন, অর্থ ও পর্যটন নির্ভর এই শহর আজ যে অবস্থায় আছে তা দেখলে যে কেউ আঁতকে উঠবে।চারিদিকে তাকালে শুধু নির্জনতা আর ধ্বংসের ছবি। কোথায় সেই চেনা প্রসিদ্ধ মিলান শহর। ফ্যাশনের শহর? চারিদিকে শুধুই হাহাকার, আর্তনাদ আর কান্নার আওয়াজ। স্বজন হারানোর দুঃখ। খাবার জন্য তীব্র আকুতি। মার্চের শেষ 10 দিনে খাবারের পার্সেলের অনুরোধের সংখ্যা বেড়েছে 30 শতাংশ। ইতিমধ্যে শুধুশমাত্র এই শহরেই মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে 1,300জন। ব্যবসায়ী সমিতিগুলি স্লোগান তুলেছে- “আসুন আমরা সবাই মিলে শহরের পুনর্গঠনের কাজে হাত মেলাই।”

ইতালির এক সংবাদ পত্র তুলে ধরেছে সেই চিত্র

ইতালির এক সংবাদ পত্র তুলে ধরেছে সেই চিত্র। সংবাদ পভাকর টাইমস-এর পাঠকদের কাছে তা তুলে ধরার চেষ্টা করছি। “রাত দশটায় পোর্টা জেনোভা স্টেশনের প্লাটফর্ম একেবারে জনশূন্য। শহরে মানুষের আনাগোনা বেশ কমে গেছে। পাতাল রেলের বগিগুলি প্রায় যাত্রীহীন। প্রতিদিন যেখানে 70 হাজার যাত্রীর হিসেবে 1.4 মিলিয়ন যাত্রী যাতায়াত করে সেখানে সেই সংখ্যাটা অস্বাভাবিকভাবেই নেমে এসেছে মাইনাস 95 শতাংশে। এক সপ্তাহে প্রাদেশিক রাজধানী এবং বার্গামো প্রদেশের মধ্যে 2,800 টি করোনাভাইরাস মামলার সন্ধান মিলেছিল। শত শত মৃত্যুর খবর এসেছিল। অথচ মার্চ মাসের শেষে এসে সেখানে মৃতের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে গেল।

ইউনিক্রেডিট টাওয়ারটি প্রায় নির্জন অবস্থায় আছে

শহরে প্রতীকী পার্ক খালি করে দেওয়া হয়েছে। ইউনিক্রেডিট টাওয়ারটি প্রায় নির্জন অবস্থায় আছে। “পুরোপুরি চালু হলে এখানে 4 হাজারের বেশি কর্মচারী ফের কাজে যোগ দেবেন। উপস্থিতি্র হার এখন 10 শতাংশের নীচে নেমে এসেছে। ব্যাঙ্কের কয়েকটি শাখা খোলা – 55 টির মধ্যে 33 টি বন্ধ আছে। খাবারের জন্য চলছে চরম হাহুতাশ।পেন কোটিডিয়ানোয় কয়েকশো দরিদ্র মানুষ খাবারের জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছে। অপেরা সান ফ্রান্সেস্কো কর্সো কনকর্ডিয়ার ক্যান্টিন বন্ধ। অন্য কোথাও খাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে সেখানে একটি ব্যাগে প্রায় 2,400 খাবার বিতরণ করা হয়েছে। শহরে সমস্ত বিজ্ঞাপন আর ঘড়িগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনের শব্দ আর দেখা যাচ্ছে ছড়িয়েছিটিয়ে থাকা ট্রাম আর কার্মাইন গির্জার মার্বেলগুলিতে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার হাতে চলে যাওয়া মহিলাকে।

সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছে শহরের ব্র্যান্ডেড পোশাক ব্যবসায়ীরা

সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছে শহরের ব্র্যান্ডেড পোশাক ব্যবসায়ীরা।বড় ব্র্যান্ডগুলি ইতিমধ্যে প্রায় বহু পোশাক শোকেস বন্দী করেছে, যার মধ্যে  বেশিরভাগ মার্জোলিনি এবং প্রথম বসন্তের পোশাক। চেম্বার অফ ফ্যাশনের প্রেসিডেন্ট কার্লো ক্যাপাসা ইতালির ওই সংবাদ পত্রটিকে জানিয়েছেন-, “শহরে 3,000 ব্র্যান্ডের প্রতিনিধিত্বকারী 800 টি শোরুম রয়েছে।” “আমরা দ্বিতীয় ইতালিয়ান শিল্পের কথা বলছি, যারা একাই ইউরোপীয়         উৎপাদনের 41% দিয়ে থাকে।এবার আমরা এই পরিস্থিতিতে পূর্বের দেশগুলিতে পণ্যগুলি পাঠাতে পারিনি, যেখানে বাজার আবার শুরু হতে চলেছে।এটা আমাদের কাছে এক অপূরনীয় ক্ষতি।”

মিলানের ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ

মিলানের ব্যবসায়ীরা উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান যে তাদের 350 মিলিয়ন ক্ষতি হয়ে গেছে ক্যাটারিং এবং অন্যান্য ক্ষেত্র থেকে। এই টাকা পুনরুদ্ধার সম্ভব নয় বলেই তারা মনে করছেন। তাহলে তাদের চলবে কী ভাবে? এটাই এখন তাদের কাছে প্রশ্ন। করোনা ভাইরাস এখন জুলাই পর্যন্ত তাদের নাকাল করাবে। তাদের আশা – সেপ্টেম্বরের পর থেকে তাদের সুদিন ফিরবে। তারা ঘুরে দাঁড়াবে। এটাই এখন তাদের ভরসা। তাদের একটাই কথা- আমরা থামার জন্য তৈরি হইনি। আমাদের এগোতেই হবে। যত বাধাই আসুক না কেন ঘুরে আমরা দাঁড়াবোই। এখন আমাদের সামনে একটাই লক্ষ্য- মিলান শহরকে আবার তার আগের জায়গায় নিয়ে যাওয়া। 1917 সালেও একবার এখানে আগুন লেগে গিয়েছিল, পুড়ে গিয়েছিল শহরের একাংশ। আমরা সেবারেও ঘুরে দাঁড়িয়েছিলাম। এবারেও আমরা তা করে দেখাবো। মিলানের রাস্তা জুড়ে এখন শুধু সৈন্যদের বুটের পদধ্বনি আর ক্যাথিড্রালের মাথার উপর দিয়ে উড়ে যাওয়া পায়রার ডানার ঝাপটার শব্দ নির্জনতাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে সমানে।ছবি ও সূত্রঃ ইলফাত্তোকোশিদিয়ানো

Published on: এপ্রি ৫, ২০২০ @ ২৩:১৭


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

45 − = 42