মায়ের জন্মতিথিতে প্রকাশিত হল ‘স্বামী সারদানন্দঃ এক অনন্য জীবন’ – মহারাজরা বললেন কত অজানা কথা

দেশ ধর্ম রাজ্য
শেয়ার করুন

সংবাদতাতা-অনিরুদ্ধ পাল

Published on: ডিসে ২৮, ২০১৮ @ ২০:৩৭

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ২৮ ডিসেম্বরঃ যে কাজটি অনেক আগে করা উচিত ছিল সেই কাজটি দেরীতে হলেও সম্পন্ন হল। আর তা হল বাগবাজার রামকৃষ্ণ মঠ, মায়ের বাড়ি, উদ্বোধন কার্যালয় ও উদ্বোধন পত্রিকার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়। মায়ের ১৬৬তম জন্মতিথিতে উদ্বোধন কার্যালয়ে শুক্রবার প্রকাশিত হল মায়ের ‘ভারী’ শরৎ মহারাজকে নিয়ে এক মহাগ্রন্থ-স্বামী সারদানন্দঃ এক অনন্য জীবন।বইটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বেলুড় রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুবীরানন্দজী। উপস্থিত ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দের পৈতৃক ভিটা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সম্পাদক স্বামী পূর্ণাত্মানন্দজী। দু’জনেই এজন্য সর্বাগ্রে বাগবাজারে মায়ের বাড়ি ও উদ্বোধন কার্যালয়ের অধ্যক্ষ স্বামী নিত্যমুক্তানন্দজী ও উদ্বোধন পত্রিকার সম্পাদক স্বামী চৈতন্যানন্দজীকে ধন্যবাদ জানান।এই দুই প্রবীণ সন্ন্যাসী এদিন বলেন- স্বামী সারদানন্দজী ছাড়া রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন কখনো ভাবাই যায় না।তাই এতদিনে তাঁর উপর এমন একটি মহাগ্রন্থ প্রকাশ করে এক মহান কাজ সম্পন্ন করল উদ্বোধন কার্যালয়।

মায়ের বাড়ির নির্মাতা

বই প্রকাশের পর বাগবাজার মায়ের বাড়ি ও উদ্বোধন কার্যালয়ের অধ্যক্ষ স্বামী নিত্যমুক্তানন্দ এই বাড়ি ও স্বামী সারদানন্দজী সম্পর্কে আলোকপাত করতে গিয়ে বলেন-” শ্রীশ্রী মা বাগবাজারে এই বাড়িতে আসেন ১৯০৯ সালে। স্বামী সারদাননন্দজী এই বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন। মায়ের জন্য একটি স্থায়ী আবাসের প্রয়োজন ছিল। তা পূর্ণ করা্র জন্যই এটি নির্মিত হয়েছিল। এছাড়া আরও একটি দিক রয়েছে- শ্রীরামকৃষ্ণের যে উক্তি – ‘তুমি কলকাতার লোকগুলিকে দেখো।’ সেটি দেখার জন্যই হয়তো এই বাড়িটি ছিল। মহাসমাধি পর্যন্ত ১১ বছর মা এখানে অবস্থান করে অগনিত মানুষকে আশীর্বাদ করেছেন। তাঁর স্নেহচ্ছায়ায় ধন্য করেছেন। বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি স্বাধীনতা সংগ্রামীরা এই বাড়িতে এসেছেন। মায়ের সান্নিধ্য এবং কৃপালাভ করেছেন।”

তিনি ছিলেন সাক্ষাৎ ‘চলমান শাস্ত্র’

এরপর স্বামী সারদানন্দের উপর প্রকাশিত এই মহাগ্রন্ত্রের সম্পাদনা যিনি করেছেন অর্থাৎ উদ্বোধন পত্রিকার বর্তমান সম্পাদক স্বামী চৈতন্যানন্দ জানালেন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা। এই বইটি সম্পাদনা করতে গিয়ে যা উপলব্ধি হয়েছে সেই দিকগুলির কথা তুলে ধরলেন অত্যন্ত সহজ-সরল ভাষায়। তিনি স্বামী সারদানন্দের ভিতর হিন্দু শাস্ত্রের চার যোগের ধারা উপলব্ধি করতে পেরেছেন।এই সম্পর্কে তাঁর ব্যাখ্যা-“হিন্দু শাস্ত্রে চার যোগের কথা বলা হয়েছে। এই চার যোগে কিভাবে আচরন হতে হয় সেই আচরন কিন্তু আমরা সাধারণত দেখতে পাই না। অনেক সময় একটা যোগের সিদ্ধিলাভ করলেন সারা জীবন তপস্যা করে- তার আচার-আচরন ভাবধারা অনেক সময় পরিবর্তন করতে পারি অনেক সময় দেখতে পারেন কিন্তু চার যোগের সমান একটা আদর্শ চরিত্র এরকম হতে পারে পৃথিবীর ইতিহাসে এরকম আছে কিনা আমার সন্দেহ আছে। এটা করতে গিয়ে কিভাবে বিচরন করবেন কিভাবে কথা বলবে্ন কিভাবে তিনি থাকবেন না থাকবেন সেটা শরৎ মহারাজের জীবন না দেখলে শাস্ত্রের কথাগুলো ঠিক মনে নাড়া দিত না। সেজন্য শরৎ মহারাজকে বলা যেতে পারে ‘চলমান শাস্ত্র’।”

শরৎ মহারাজকে চৈতন্যানন্দজী এক অসাধারণ মাপের মানুষ বলেও এদিন বর্ণনা করে তারও ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন- একদিকে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের গুরু দায়িত্বভার সামলানো, গুরুভাইদের সেবা করা, উদ্বোধন পত্রিকার সম্পাদনা করা, আবার লীলাপ্রসঙ্গের মতো বই লেখা-এতকিছুর মধ্যেও তার মধ্যে কিন্তু বিরাট এক পান্ডিত্য ছিল সেই পান্ডিত্য নয় কিন্তু নতুন দিগন্ত তিনি বিদেশে যে বক্তৃতা করেছিলেন সেই বক্তৃতা যখন আমরা অনুবাদ করতে গিয়েছি পড়ে দেখেছি অসাধারণ সব বক্তব্য প্রাচীন শাস্ত্র গ্রন্থ সম্পর্কে- যেটা এখনকার যুগে বিরল। আবার তিনি মজা করতে রসিকতা করতে সাঙ্ঘাতিক পারতেন। সব দিকেই তাঁর এক অসাধারণ জীবন।” এরকম জীবন আলোচনা করার সুযোগ পাওয়ায় তিনি উদ্বোধন কার্যালয়ের অধ্যক্ষ স্বামী নিত্যমুক্তানন্দের কাছে তিনি চির কৃতজ্ঞ বলে জানান।

‘উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক’ ও ‘সেকেন্ড স্বামীজী’

স্বামী সারদানন্দজীকে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক বলে বর্ণনা করেন স্বামী সুবীরানন্দজী।এরপর তিনি মি্স ম্যাকলাউডের সারদানন্দজী সম্পর্কে উক্তির কথা উল্ল্যেখ করে বলেন-“মিস ম্যাকলাউড সারদাননন্দজীকে সেকেন্ড স্বামীজী বলতেন। যখন কিনা স্বামী ব্রহ্মানন্দ বেঁচে আছেন।” এরপর তিনি রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে স্বামী সারদানন্দের অসামান্য দায়িত্বভারের বর্ণনা দিতে গিয়ে এক পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। তিনি বলেন-” আজ যে মঠ ও মিশন আমরা দেখতে পাই সেটা স্বামী সারদানন্দের অবদান। আপনারা শুনলে বিস্মিত হবেন- ১৮৯৭ সাল থেকে ১৯২৭ সাল পর্যন্ত ৩০ বছর সম্পাদকের দায়িত্ব সামলেছেন তিনি রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের।তাঁর সময়কালে ৭২টি রামকৃষ্ণ মঠ মিশন হয়েছে। আমরা যদি ২০০২ সালের রিপোর্ট দেখি তাহলে দেখতে পাব এই সময় রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের কেন্দ্র ছিল ১৪২। অর্থাৎ ১৯২৭ থেকে ২০০২ সালের মধ্যে আরও ৭০টি কেন্দ্র শুধু হয়েছে। আর স্বামী সারদানন্দের কার্যকালে ৩০ বছরে ৭২টি কেন্দ্র হয়েছে। কি মহাপুরুষ কত বড় কর্মযোগী ছিলেন স্বামী সারদানন্দ। কাজেই এধরনের একটি বই সারদানন্দকে নিয়ে খুব দরকার ছিল। তাঁকে ছাড়া রামকৃষ্ণ মিশনের বিস্তৃতি আমরা দেখতে পেতাম না।”

Published on: ডিসে ২৮, ২০১৮ @ ২০:৩৭


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

− 7 = 3