মায়াপুর ও নবদ্বীপ ধাম বেড়িয়ে আসুন, সম্পূর্ণ দূষণমুক্ত পরিবেশে শান্তির ভ্রমণ

Main দেশ ভ্রমণ রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: অক্টো ১৮, ২০২২ @ ২৩:৩৬
লেখকঃ রসিক গৌরাঙ্গ দাস

এসপিটি বিশেষ প্রতিবেদন: দীপাবলীর আলোয় আলোকিত হতে চলেছে সর্বত্র। চারিদিকেই একটা উৎসবের আমেজ। ভ্রমণপ্রেমী মানুষ বেড়িয়ে পড়েছে পছন্দের গন্তব্যে। আপনিও কি কোথাও বেড়ানোর পরিকল্পনা করছেন, তাহলে অবশ্যই চলুন শহরের কোলাহল থেকে দূরে, সম্পূর্ণ দূষণমুক্ত পরিবেশ, মানুষের হাতে গড়া মন্দিরময় শ্রীমায়াপুর ধাম।

জায়গার মাহাত্ম্য

পশ্চিমবঙ্গের অভ্যন্তরে, কলকাতা থেকে মাত্র ১৩৭ কিলোমিটার দূরে। রাস্তার ধারে ধারে গাছের ছায়ায় আলপনা আঁকা। গঙ্গার তীরে মুক্ত বাতাসের হিন্দোলে মন উদাস হয়ে যায়। সীমাহীন সবুজের সমারোহ- যা আপনাকে দিতে পারে অন্য অনুভূতি। এমন অনিন্দ্যসুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ যেকোন মানুষকে বেঁধে ফেলতে পারে যখন তখন। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড, যেখানে পতিত পাবন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর প্রচারিত কৃষ্ণনাম সমগ্র বিশ্বকে এক সূত্রে গাঁথতে পেরেছে।

এখানে ভাগীরথী-কুলকুল ধ্বনিতে বয়ে চলেছে মহাসাগরের দিকে, অপরপ্রান্তে জলঙ্গী-নদী অফুরন্ত জলরাশি নিয়ে মিলেছে এখানে। দুই নদীর সঙ্গম স্থলে চাঁদনী রাতে নৌকা বিহার আপনাকে দিতে পারে অনাবিল আনন্দ। দুই নদীর জলধারার রঙ-ই আলাদা।

কি কি দেখা যাবে

মায়াপুর-নবদ্বীপের প্রধান আকর্ষণ ইসকন-শ্রীমায়াপুর চন্দ্রোদয় মন্দির। যেখানে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড়-পঞ্চতত্ত্ব-বিগ্রহ-বিগ্রহ। (শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু, শ্রীনিত্যানন্দ প্রভু, শ্রীঅদ্বৈত আচার্য, শ্রীগদাধর পন্ডিত এবং শ্রীবাস পন্ডিত) এই পাঁচ বিগ্রহের মিলিত ওজন ১৭,০০০ কেজি। উচ্চতা বেদি সমেত ৯ ফুট সম্পুর্ণ নিখাদ অষ্টধাতু দ্বারা নির্মিত হয়েছে তামিলনাড়ুর কুম্ভকোনমে । ২০০৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি  বিগ্রহগুলি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখন ওয়ার্ল্ড গিনেস বুকে নাম ওঠার অপেক্ষায়। এছাড়া রয়েছে রাধাকৃষ্ণ, অষ্টসখী ও নৃসিংহ দেবের বিগ্রহ এবং ইসকনের প্রতিষ্ঠাতা আচার্য এ সি ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদের অপূর্ব সুন্দর বিগ্রহ। সারা বিশ্বের শ্রদ্ধালু ভক্তি ভাবনার মানুষ ছুটে আসেন এখানে শান্তির সন্ধানে, অমৃতের সন্ধানে। মায়াপুর পরিনত হয়  মিনি ওয়ার্ল্ডে। সকলের মুখেই উচ্চারিত হয় হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র। এ যেন এক অন্য জগত।

দর্শনীয় স্থান: প্রভুপাদের পুস্প সমাধি মন্দির, পশ্চিমবঙ্গের মন্দির সমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড়ো জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত। এ মন্দির এশিয়া মহাদেশের মধ্যে মর্মর আস্তরণে বর্ণাঢ্য বৃহত্তম গম্বুজ অভ্যন্তরের জন্য বিখ্যাত। মন্দিরের দোতলায় আছে প্রভুপাদের জীবন ও কর্মকাণ্ডের উপর আধারিত এক অনিন্দ্য সুন্দর প্রদর্শনী।

গুরুকূল : বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ছাত্ররা এখানে বৈদিক পদ্ধতিতে পড়াশোনা করে।

গোশালা : বিভিন্ন জাতের ৪০০ টি গোরু আছে। এখানে গো সংরক্ষণ করা হয়। প্রতিটি গরুকে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এখানে সযত্নে পালন করা হয়।

ভজন কুটির : ইসকনের প্রতিষ্ঠাতা আচার্য প্রভুপাদ প্রথম এই কুটিরেই  থাকতেন। এখানে সারা বছর ধরে এক নাগারে হরিনাম সংকীর্ত্তন চলছে বিশ্ব কল্যানের জন্য এবং শ্রীশ্রী গৌরনিতাই বিগ্রহের নিত্য পুজো হচ্ছে।

এছাড়া রয়েছে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর জীবনী ও শিক্ষা সম্বন্ধীয় প্রদর্শনী। প্রভুপাদের আবাস গৃহ। পুস্তক প্রকাশন বিভাগ। ইসকন মন্দিরের আরতি, দর্শন, সন্ধ্যারতি, পূজার্চ্চনা -অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর এবং নয়নাভিরাম। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ভক্তবৃন্দের সংকীর্ত্তন আপনাকে দেবে অনাবিল আধ্যাত্মিক আনন্দ।

গড়ে উঠতে চলেছে বৈদিক প্ল্যানেটরিয়াম : পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলায় ইসকনের প্রধান কেন্দ্র মায়াপুরে গড়ে উঠতে চলেছে বিশ্বের দ্বিতীয় উচ্চতম হিন্দু মন্দির (Vedic Planetarium) । ২০১০ সালের ১৪  ফেব্রুয়ারি এই মন্দিরের নির্মাণকাজ শুরু হয়। এই মন্দিরের উচ্চতা ১১৩ মিটার। এই মন্দিরটিতে রয়েছে ৩ টি গম্বুজ। এই প্ল্যানেটরিয়ামের প্রধান গম্বুজটি বিশ্বের যেকোনো ধর্মীয় কাঠামোর দীর্ঘতম এবং প্রশস্ত গম্বুজ। এই প্ল্যানেটরিয়ামে ভগবদ গীতার বিবরন অনুসারে মহাবিশ্বের সৃষ্টি তত্ত্বকে চিত্রিত করবে। ২০২৪ সালের মধ্যে এই মন্দিরটি সম্পূর্ণ তৈরি হয়ে যাবে।

রাত্রি যাপনের সুন্দর ও নিরাপদ সুব্যবস্থা

বহিরাগত দর্শনার্থীদের রাত্রি যাপনের সুন্দর ও নিরাপদ সুব্যবস্থা রয়েছে, অতিথি ভবন ও ধর্ম্মশালায়। প্রায় তিন হাজার অতিথি থাকতে পারেন মন্দির চত্বরে। অতিথিদের জন্য সুস্বাদু-উত্তম নিরামিষ ভোগ প্রসাদের ব্যবস্থা আছে। তাছাড়া মন্দির চত্বরে রয়েছে দেশ-বিদেশের খাবার সমৃদ্ধ গোবিন্দ রেস্টুরেন্ট সকল ৭ টা হইতে রাত ৯ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। শ্রীধাম মায়াপুর মন্দিরময় পরিবেশে থেকে দু-পা হেঁটে গেলে গ্রামের মনোমুগ্ধকর পরিবেশে দেখতে পাবেন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মস্থান, মাসির বাড়ি, শ্রীবাস অঙ্গন, ভক্ত চাঁদকাজীর সমাধি, ঐতিহাসিক ব্ল্লাল সেনের ঢিপি, রাজাপুরের প্রসিদ্ধ জগন্নাথ মন্দির ইত্যাদি। গঙ্গার অপর পারে রয়েছে সোনার গৌরাঙ্গ, মহাপ্রভু মঠ, বিষ্ণুপ্রিয়ার জন্মস্থান ইত্যাদি।

রসনার তৃপ্তি

কৃষ্ণনগরে রয়েছে রাজবাড়ি, মৃৎশিল্পের পীঠস্থান ঘূর্ণি, রসনা তৃপ্তির জন্য পরখ করে দেখতে পারেন কৃষ্ণনগরের সরভাজা,সরপুরিয়া এবং নবদ্বীপের ক্ষীর দই।

এবার পুজোয় আসুন মায়াপুরে। শহরের কোলাহল থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত, নিখাদ শান্ত, নির্মল পরিবেশে ইসকন মন্দির সেজে উঠেছে অতিথিকে স্বাগত জানাতে। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন, নিখুঁত সাজানো ফুলের বাগান, ফোয়ারা কেয়ারি, মোহময় কৃষ্ণনাম পৌঁছে দেবে শান্তির সম্রাজ্যে। মন্দিরে অবস্থান কালিন প্রতিটি মুহূর্ত অতিথিদের মনের মণিকোঠায় উজ্জ্বল হয়ে থাকবে চিরদিন।

পথ নির্দেশিকা :

১) কলকাতা ধর্মতলা থেকে মায়াপুর আসার সোজাসুজি বাস চালু হয়েছে।

       ২) শিয়ালদহ স্টেশন থেকে কৃষ্ণনগর বা নবদ্বীপ ট্রেনে আসতে পারেন।

       ৩) হাওড়া ও ব্যান্ডেল স্টেশন থেকে নবদ্বীপ ট্রেনে আসতে পারেন।

       ৪) কৃষ্ণনগর থেকে বাসে মায়াপুর এবং নবদ্বীপ আসা যায়।

       ৫) নবদ্বীপ ও মায়াপুরে নৌকায় যাতায়াতের ব্যবস্থা আছে।

       ৬) আর সমস্ত মন্দির ও স্থানীয় স্থান ভ্রমণের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিতে পারেন- রিক্সা, টোটো অথবা ভ্যান গাড়ি।

সুতরাং নিশ্চিন্তে বেড়িয়ে পড়তে পারেন আর  করে নিতে পারেন নিজের ভ্রমণের সাধ পূরন।

(লেখক পরিচতিঃ লেখক রসিক গৌরাঙ্গ দাস হলেন শ্রী মায়াপুর ইসকনের জনসংযোগ আধিকারিক)

Published on: অক্টো ১৮, ২০২২ @ ২৩:৩৬


শেয়ার করুন