মাত্র ১ টাকায় মায়াপুর ঘাটে যাত্রী পারাপারে আছে শুধুই বিপদের ঝুঁকি

এসপিটি এক্সক্লুসিভ রাজ্য
শেয়ার করুন

অনিরুদ্ধ পাল

Published on: মে ১, ২০১৮ @ ১৫:২২

এসপিটি নিউজ, মায়াপুরঃ গত কয়েক বছর ধরে নদিয়া জেলার স্বরূপগঞ্জ পঞ্চায়েতের মায়াপুর ঘাট দিয়ে নৌকায় পার হয়ে মায়াপুর পৌঁছই। বাঁশের পাটাতনের উপর দিয়ে রীতিমতো ঝুঁকি নিয়েই মোটর লাগানো নৌকোয় চলে এই পারাপার। একদিকে যেমন সাধারণ যাত্রী থাকে ঠিক তেমনি সাইকেল, বাইক নিয়েও চলে পারাপার। শ্রীশ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মস্থানে যেতে হলে মানুষকে আজও বিপদের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে পৌঁছতে হয়। আরও একটি পঞ্চায়েত ভোট চলে এল কিন্তু মায়াপুর ঘাট পড়ে রইল সেই অতীতেই।

ট্রেনে কৃষ্ণনগরে নেমে অটোয় চেপে পৌঁছতে হয় মায়াপুর ঘাটে। ভগবান নৃসিংহদেবের শুভ আবির্ভাব তিথি উৎসব উপলক্ষ্যে মায়াপুর ইসকনে আমি সংবাদ সংগ্রহের কাজে সেখানে যাত্রা করেছিলাম। এর আগেও একাধিকবার আমি সেখানে গেছি। শ্রীকৃষ্ণ ও মহাপ্রভুর ভক্তদের কাছে বৃন্দাবনের পাশাপাশি মায়াপুর-নবদ্বীপের স্থান সমানভাবেই গুরুত্বপূর্ণ। সারা বছর ধরেই চলে নানা উৎসব। সেই উপলক্ষ্যে ভক্তদের ভিড় লেগেই থাকে। যারা গাড়ি নিয়ে যায় তাদের কথা আলাদা। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই কিন্তু মায়াপুর ঘাট দিয়েই যাতায়াত করে থাকেন। এবারও দেখলাম, ঘাটের অবস্থা মোটেই ভালো নয়।

এই ঘাটের গুরুত্ব ভক্ত ও স্থানীয় মানুষজনের কাছে অনেক। তার কারণ, অত্যন্ত কম খরচে কৃষ্ণনগর স্টেশন থেকে মাত্র ১৭ টাকা অটো ভাড়া দিয়ে চলে যাওয়া যায় এই মায়াপুর ঘাটে। স্বরূপগঞ্জ পঞ্চায়েতের আগে যে জায়গায় ঘাট ছিল সেই ঘাটে জল সরে আসায় ঘাটটিকে আরও কিছুটা দূরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যে অটোতে চেপে আমি মায়াপুর ঘাটে যেচ্ছিলাম সেই অটো চালক বলছিলেন, “এই ঘাট নিয়ে রাজনীতির কথা। আগে যেমন সিপিএম করেছে এখন তা করে চলেছে শাসক দল। তারা জানিয়ে দিয়েছে যে ভোটে এখান থেকে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীকে জেতাতে না পারলে ঘাট আর পুরনো জায়গায় ফারানো হবে না।” বিপদের আঁচ বুঝে সেই অটো চালক নিজের নাম গোপন রাখেন।

এখন যেখানে ঘাটটি হয়েছে সেটিও অস্থায়ী। নদীর ঘাটের কাছে বাঁশের খুঁটি পুঁতে তার উপর অস্থায়ী ছাউনি দিয়ে সেখানে বসে টিকিট বিলি করছে এক ব্যক্তি। দাম মাত্র এক টাকা।যাত্রীদের নৌকায় উঠতে হচ্ছে বাঁশের অস্থায়ী পাটাতনের উপর হেঁটেই। আবার সেই পাটাতনের উপর দিয়েই টেনে তোলা হচ্ছে ভারী বাইকও। থাকছে সাইকেলও। উৎসবের দিনে পরিস্থিতি তো খুবই ভয়াবহ হয়ে যায়। যেমন আমি যেদিন গেছিলাম সেদিন হয়েছিল। নৌকায় এত বেশি লোকজন হয়ে গেছিল যে নৌকা একদিকে হেলে গেছিল। নৌকার মাঝিকে বলেছিলাম, আপনারা বুঝে লোক ওঠাতে পারেন না? জবাবে তিনি বলেন, এখানে বোঝাবুঝির কোনও ব্যাপার নেই। নৌকায় যতোটা জায়গা থাকবে লোক ততই উঠবে। বুঝতে পারলাম, এদের সঙ্গে এসব নিয়ে কথা বলা বৃথা। চুপ করে ঘাটে নোঙর করার অপেক্ষা করতে থাকলাম। কোনওরকমে ঘাটে নেমে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।

কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে বুঝলাম, তাঁরাও এই বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত থাকলেও তা নিয়ে মাথা ঘামাতে রাজী নন। তাদের কথায়, “আমাদের সারা বছর এখান দিয়ে যাতায়াত করতে হয়, বেশি কথা বাড়িয়ে তো আমাদের বিপদ আও বাড়বে।” কিন্তু বাইরে থেকে আসা বেশ কয়েকজন ভক্তদের মধ্যে দেখা গেল আতঙ্কের ছাপ। অনেকেই মুখেই শোনা গেল উদ্বেগের কথা।

ভিন রাজ্য থেকে আসা ভক্তদের একাংশ বলছিলেন, মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যের জন্মস্থানকে ঘিরে কি কোনও পর্যটন কেন্দ্র করা যায় না? এভাবে যাতায়াত তো পশ্চিমবঙ্গের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। তাছাড়া, যেভাবে বিপদের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হয়ে চলেছে তা তো খুবই বিপদজনক।

সত্যিই তাই। দেখা গেল, এখানে লাইফ জ্যাকেটের কোনও ব্যবস্থাই নেই। তাছাড়া যেভাবে মোটর চালিত নৌকায় চাপিয়ে যাত্রীদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাও নিরাপদ নয়।কালীঘাট, দক্ষিণেশ্বর, তারাপীঠ নিয়ে যদি রাজ্য সরকার উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড চালাতে পারে তাহলে, মহাপ্রভুর জন্মস্থান সংলগ্ন এলাকা কেন তার বাইরে থাকবে? এর কি কোনও জবাব আছে?

Published on: মে ১, ২০১৮ @ ১৫:২২


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

41 + = 42