মহাসংকটে ভ্রমণ ও পর্যটন শিল্প, বিশ্বে ৫০ মিলিয়ন মানুষ চাকরি হারাতে পারেন

Main কোভিড-১৯ বিদেশ ভ্রমণ
শেয়ার করুন

মুখ থুবড়ে পড়েছে পর্যটন শিল্প। সারা বিশ্বে করোনা ভাইরাস যেভাবে মহামারীর আকার নিয়েছে তাতে এক গভীর সংকটের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত সকলেই।কি অবস্থায় আছে তারা, কত টাকা ক্ষতি হয়েছে তাদের এই সমস্ত বিষয় নিয়ে সংবাদ প্রভাকর টাইমস শুরু করতে চলেছে এক বিশেষ সিরিজ। আজ বিশ্ব ভ্রমণ ও পর্যটন শিল্প নিয়ে আমাদের দ্বিতীয় কিস্তি।

  • ওয়ার্ল্ড ট্র্যাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিল হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে COVID-19 মহামারী ভ্রমণ ও পর্যটন শিল্পে বিশ্বব্যাপী 50 মিলিয়ন মানুষের চাকরি হ্রাস করতে পারে।এশিয়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
  • একবার প্রকোপ পড়লে, শিল্পটি পুনরুদ্ধারে 10 মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
  • বর্তমানে বিশ্বব্যাপী জিডিপির 10 শতাংশ আসে পর্যটন শিল্প থেকে।

Published on: এপ্রি ৩, ২০২০ @ ০০:১৩

Reporter: Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ, ২ এপ্রিল:  ইউরোপজুড়ে শুরু হয়েছে মৃত্যুর মিছিল। দেশগুলি এই ভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে দিনরাত এক করে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবু কোনওকিছুতেই এখন আর কাজ হচ্ছে না। প্রতিদিনই সংখ্যা বেড়েই চলেছে। যেভাবে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তাতে বিশ্ব ভ্রমণ ও পর্যটন শিল্প মারাত্মকভাবেই আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। করোনা ভাইরাস কী সাঙ্ঘাতিকভাবে আজ এই শিল্পের উপর আঘাত হেনেছে তা কিন্তু পরিষ্কার করে দিয়েছে ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল এন্ড ট্যুরিজম কাউন্সিল। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম এই বিষয়টি পরিষ্কার করে দিয়েছে। তারা পরিসংখ্যান দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে ঠিক কতটা ক্ষতির মুখোমুখি হতে চলেছে বিশ্ব ভ্রমণ ও পর্যটন শিল্প।

ভ্রমণ ছাড়া কিন্তু এই বিশ্বের জনজীবন একেবারে অচল

একটা কথা পরিষ্কার করে দেওয়া ভালো যে ভ্রমণ ছাড়া কিন্তু এই বিশ্বের জনজীবন একেবারে অচল। চিকিৎসা, শিক্ষা আর ব্যবসা এবং অবশ্যই কূটনৈতিক কাজকর্মের জন্য ভ্রমণ খুবই আবশ্যক। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই ভ্রমণের উপরেই নেমে এসেছে কিন্তু কালো মেঘের ছায়া। তা এতটাই ভয়াবহ আকার নিয়েছে যে বিশ্বজুড়ে ভ্রমণ ও পর্যটন শিল্পে জড়িত ৫০ মিলিয়ন মানুষের চাকরিকে বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। যেখানে এশিয়ায় ৩০ মিলিয়ন, ইউরোপে সাত মিলিয়ন, আমেরিকায় পাঁচ মিলিয়ন এবং বাকি আট মিলিয়ন মানুষ বাকি মহাদেশগুলিতে চাকরি খোয়াতে পারে। এখানেই শেষ নয়, চলতি বছর এক তৃতীয়াংশ ভ্রমণ কমে যাওয়ারও প্রবল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সব চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে চলেছে এশিয়ার দেশগুলি- এমনটাই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল এন্ড ট্যুরিজম কাউন্সিল।

ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল এন্ড ট্যুরিজম কাউন্সিল-এর ব্যাখ্যা

ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল এন্ড ট্যুরিজম কাউন্সিল শুধু আশঙ্কা প্রকাশ করেই চুপ করে থাকেনি তারা বিষয়টিকে তথ্য ও স্বচ্ছ ব্যাখ্যা দিয়ে আসন্ন সংকটজনক পরিস্থিতিকে বর্ণনা করেছেন সুন্দরভাবে। কাউন্সিলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ভার্জিনিয়া মেসিনা রয়টার্সকে দিয়েছেন তার ব্যাখ্যা। তিনি বলেন- “করোনা ভাইরাসের প্রভাব কতটা পড়বে তা নির্ভর করবে মহামারীটি স্থায়ী হবে কতদিন, ঠিক তার উপর। ইতিমধ্যে ইউরোপ ভ্রমণে আমেরিকা কিছু কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে কিছু ব্যবস্থা এক্ষেত্রে সহায়তা করছে না এবং তা অর্থনৈতিক প্রভাবকে আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলতে পারে।”

প্রতি মাসে প্রায় 8,50,000 মানুষ ইউরোপ থেকে আমেরিকায় ভ্রমণ করে

মেসিনা আমেরিকার এই ব্যবস্থা গ্রহণের সঙ্গে পুরোপুরি যে একমত নন সেটাও কিন্তু তাঁর কথার মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে। যুক্তি দিয়ে তিনি তা ব্যাখ্যাও করেছেন। বলেন- ” তাদের এই জাতীয় নীতিগুলি খুব জেনেরিক এবং ভাইরাস ধারণে কার্যকর হিসাবে প্রমাণিত নয়। তাছাড়া এই ধরনের বিধিনিষেধ চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের ভ্রমণ এবং চিকিৎসার সরঞ্জামের সরবরাহকে জটিল করে তুলতে পারে।” ” কারণ, প্রতি মাসে প্রায় 8,50,000 মানুষ ইউরোপ থেকে আমেরিকায় ভ্রমণ করে, যা আমেরিকার অর্থনীতিতে 3.4 বিলিয়ন ডলারের সমান।” বলছিলেন মেসিনা।

ডব্লিউটিটিসির প্রস্তাব

2020 সালে তিন মাসের বৈশ্বিক ভ্রমণে লোকসানের পরিমাণ সমান হওয়ায় 12 থেকে 14 শতাংশের মধ্যে কাজের তুলনামূলকভাবে হ্রাস হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ডব্লিউটিটিসি। আর সেইদিকে লক্ষ্য রেখে তারা  সরকারের কাছে এক আবেদনে জানিয়েছে যে মহামারীটি নিয়ন্ত্রণের পরে ভ্রমণ বিষয়ে উৎসাহ দিতে যেখানেই সম্ভব তারা যেন ভিসা অপসারণ বা সরল করার বিষয়টিতে নজর দেয়। একই সঙ্গে তারা যেন  ভ্রমণ করকে হ্রাস ও তা চালু রাখে।ডব্লিউটিটিসি-র ওই কর্তা এই বিষয়ে পরিষ্কার করে দিয়ে বলেন যে যদি সরকার এই দিকগুলিতে নমনীয়তা দেখাতে পারে তাহলে ভ্রমণকারীরা তাদের পরিকল্পনা স্থগিত এবং বাতিল নাও করতে পারেন।

কিভাবে ভ্রমণ ও পর্যটন শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা যায়

আসলে এখন একটাই লক্ষ্য- তা হল, বর্তমান ভয়াবহ পরিস্থিতিতে কিভাবে ভ্রমণ ও পর্যটন শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা যায়। এই শিল্পের সঙ্গে সারা বিশ্বে কয়েক কোটি লোক যুক্ত আছে। আজ তাদের রুটি-রুজি প্রবল সংকটের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। এই সময় বিশ্বের সমস্ত দেশকে অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে এই মানুষগুলির পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সমস্যার সমাধান করতে হবে। ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল এন্ড ট্যুরিজম কাউন্সিল তাই তাদের আশঙ্কা প্রকাশ করে নিজেদের মতামত জানিয়েছেন। তারা আরও বলেছে যে এই পরিস্থিতিতে হোটেলগুলির চেয়ে সরাকারিভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিমান সংস্থা ও ক্রুজ জাহাজগুলি। তারা এক পরিসংখ্যান দিয়ে বলেছে যে বিশ্বের মোট জিডিপি এবং চাকরির ১০ শতাংশ আসে পর্যটন শিল্প থেকে।

মেসিনা তাই উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, ” একবার এই প্রকোপ পড়লে পর্যটন খাতকে তার স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসতে 10 মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।”

সূত্রঃ ওয়ার্ল্ড ইকোনমি ফোরাম

Published on: এপ্রি ৩, ২০২০ @ ০০:১৩

 

 


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

+ 34 = 35