বিপর্যয় কিভাবে সব স্তব্ধ করে দিতে পারে তা চাক্ষুষ করল সংবাদ প্রভাকর টাইমস

Main দেশ রাজ্য
শেয়ার করুন

বিপর্যয়ের পর নৈহাটিতে একটি এলাকায় পুনরায় বিদ্যুৎ সংযোগ হল প্রায় 50 ঘণ্টা বাদে।
এই পরিস্থিতিতে আপনাদের কাছে খবর দিতে না পারার জন্য সংবাদ প্রভাকর টাইমস তার পাঠকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।

Published on: মে ২২, ২০২০ @ ২২:৩২ 

Reporter: Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ, ২২ মে: সাম্প্রতিককালে এভাবে সংবাদ মাধ্যমের কাজ টানা দু’দিন কবে বন্ধ রাখা হয়েছে তা আমার জানা নেই। কিন্তু সুপার সাইক্লোন ‘অ্যামফান’ যেভাবে তার তান্ডব চালিয়ে পশ্চিমবঙ্গ বিশেষ করে দক্ষিণবঙ্গের কিছু জেলাকে সর্বশ্বান্ত করে দিল তা ইদানীংকালে তো বটেই গত 100 বছরে হয়েছে কিনা জানা নেই। আর এই ভয়াবহ বিপর্যয় কিভাবে সমস্ত কিছু স্তব্ধ করে দিতে পারে তখন আমরা যে সত্যিই কতটা অসহায় হয়ে পড়ি সেটাও চাক্ষুষ করলাম আমরা। সংবাদ প্রভাকর টাইমস তাদের নৈহাটির অফিস থেকে সেই বিভীষিকাময় মুহূর্তের সাক্ষী রইল।

সময়ের সাথে সাথে শুরু হয়ে যায় বিপর্যয়ের তান্ডব

আবহাওয়া দফতর আগে থেকেই পূর্বাভাষ দিয়ে রেখেছিল যে ঘূর্ণিঝড় ‘অ্যামফান’ পশ্চিমবঙ্গের উপর আঁছড়ে পড়বে বুধবার বিকেলের দিকে। সেই মতো প্রশাসনের নির্দেশ মতো আমরা সকলেই সতর্ক ছিলাম। ঝড় শুরু হয়ে যায় বিকেল থেকে। সময় যত গড়াতে থাকে ততই ঝড়ের গতিবেগ বাড়তে থাকে। এরই মধ্যে বিকেল পোনে পাঁচটা নাগাদ বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়। মোবাইলের নেটওয়ার্ক বন্ধ হয়ে যায়। তার আগে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই পরিস্থিতিতে সংবাদ প্রভাকর টাইমস কার্যত অসহায় হয়ে পড়ে। বিদ্যুৎ সংযোগের আলাদা ব্যবস্থা করে যাওয় বা কাজ চালানোর চেষ্টা শুরু করা হয় তখন দেখা যায় ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ হয়ে আছে। ফলে ইচ্ছা থাকলেও আমরা কাজ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হই। বুধবার সন্ধ্যা থেকে সংবাদ প্রভাকর টাইমস-এর কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায়।

নৈহাটিতেও বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎ থেকে মোবাইল ফোন পরিষেবা

যে এলাকায় আমাদের অফিস সেই নৈহাটি রাজ্যের অন্যান্য জায়গার মতো অন্ধকার হয়ে যায়। মোবাইলের নেটওয়ার্ক সংযোগ চলে যায়। ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখন একজন সংবাদ মাধ্যমের কর্মী হিসেবে নিজেকে বড়ই অসহায় মনে হচ্ছিল। কারও সঙ্গে যোগাযোগ করার উপায় ছিল না।এভাবে রাত কাটতে থাকে।বাইরে তখন ‘অ্যামফান তার তান্ডবলীলা শুরু করে দিয়েছে।একের পর এক গাছ পড়ার শব্দ কানে আসছে। আমাদের কাচের জানালাগুলি খুলে পড়ার উপক্রম হয়েছে। কয়েকটি জানালার কাচ ভেঙেও গিয়েছে।ঘরের ভিতর জল চলে আসছে। ঝড়ের সঙ্গে তখন পাল্লা দিয়ে চলেছে ভারী বৃষ্টি।কুকুরের বাচ্চাগুলি মায়ের খোঁজে সমানে চিৎকার করে চলেছে। আর মা কুকুরটি বাচ্চাগুলিকে না দেখতে পেয়ে কেঁদে চলেছে। প্রকৃতি উন্মাদ হয়ে গেলে যে কতটা ভয়ানক রূপ ধারণ করতে পারে তখন সেটা দেখছি। শুধু মনে হচ্ছে – এ যাত্রায় রক্ষা পাওয়া যাবে তো?

ভোর হতেই দেখা গেল ধ্বংসের ছবি

এভাবেই কেটে গেল ঝড়ের বিভীষিকাময় রাত। ভোর হতেই দেখা গেল অন্য ছবি। চারিদিকে শান্ত। কিন্তু একেবারে ছন্নছাড়া বিধ্বস্ত এক চেহারা। কার ও বাড়ির চাল উড়ে গিয়েছে। নৈহাটি মাদের অফিস যেখানে সেখানে বহু বাড়িতেই আম, কাঁঠাল,পেয়ারা, নারকেল গাছ আছে। বিধ্বংসী ঝড়ে বহু বাড়তেই এই সমস্ত গাছ মাটি থেকে উপড়ে পড়েছে। ফলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।এরই মধ্যে দেখা গেল এলাকায় সমস্ত গলিতেই এক হাঁটু জল জমে আছে। সেই জলের ভিতর দেখা গেল পাখির বাচ্চা মৃত অবস্থায় ভেসে চলেছে। মা পাখিটিও মৃত অবস্থায় জলে ভাসছে। মা কুকুরটি তখনও পর্যন্ত তার বাচ্চাদের খোঁজে সমানে চিৎকার করে চলেছে। বহু বাড়ি ভেঙে তছনছ হয়ে গিয়েছে। অনেক বাড়ির ভিতর জল ঢুকে তাদের অসহায় করে তুলেছে।

ক্ষমাপ্রার্থী আমরা

এর মধ্যে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোদের দেখা মিললেও বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কোনও লক্ষণ কিন্তু দেখা গেল না। এদিকে মোবাইলের ব্যাটারিতে চার্জ শেষ হয়ে যাওয়ায় তা খোলাও যাচ্ছিল না। পরে অন্যভাবে চার্জ দিয়ে যাও বা মোবাইলের সুইচ অন করা হল তাও দেখা গেল নেট ওয়ার্ক নেই। নেট বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে তখন খুবই অসহায় লাগছিল নিজেকে। সংবাদ প্রভাকর টাইমস তার পাঠকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছে যে এই পরিস্থিতিতে আমরা আপনাদের কাছে খবর তুলে ধরতে পারিনি। চেষ্টার ত্রুটি আমরা রাখিনি। কিন্তু পরিস্থি আমাদের কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য করেছে।

জলের কষ্ট

এরপর দেখা গেল জলের কষ্ট। বিদ্যুৎ না থাকায় জল সরবরাহ বন্ধ থাকায় অনেকেই পরদিন জল পাইনি। যাদের সামর্থ্য রয়েছে তারা জল কিনে খেয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই এদিন স্নান না করে এমনকী খাবারের কষ্ট সহ্য করে দিন কাটাতে বাধ্য হয়েছে। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি যে বিদ্যুৎ সংযোগ এলে মোবাইল চার্জ দিতে পারব। তখন অনেক কাজই করা যাবে। কিন্তু কোথায় কী! না আছে নেটওয়ার্ক, না আছে নেট সংযোগ।সে এক দুঃসহ অবস্থা। আমরা বুঝেছি প্রকৃতির বিধ্বংসী রূপের কাছে আমরা এখনও কতটা অসহায়।

বিপর্যয়ের মধ্যেও চলেছে অনলাইন ক্লাস

দুর্ভাগ্যের বিষয় এত বড় বিপর্যয়ের মধ্যেও কিন্তু কিছু স্কুল তাদের অনলাইন ক্লাস চালিয়ে গিয়েছে। ফলে নৈহাটি কিছু এলাকার ছাত্রছাত্রীরা তার সুযোগ নিতে পারেনি। স্কুল কর্তৃপক্ষ এমন পরিস্থিতি ক্লাস বাতিল করেনি।এ সত্যই এক ভয়াবহ বিপর্যয়। বিদ্যুৎ নেই, নেট নেই, নেটওয়ার্ক নেই, খাওয়ার জল নেই। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল- টানা প্র্যায় ৫০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ নেই। মাঝে কিছু সময়ের জন্য এসেছিল ঠিকই কিন্তু তা নাম কা ওয়াস্তে। আমার জন্মের গত পঞ্চাশ বছরে এমন ভয়াবহ বিপর্যয় দেখিনি। সব দিক থেকেই পঙ্গু হয়ে যেতে হয়েছে। শুধু আমরা কেন অনেক বড় বড় সংবাদ মাধ্যমকেও এই পরস্থিতির মোকাবিলা করতে হয়েছে।

অবশেষে বিদ্যুৎ এল

অবশেষে কিন্তু প্রায় ৫০ ঘণ্টা বাদে বিদ্যুৎ এসেছে। আর তাই আপনাদের সামনে এই কথাগুলি লিখতে পারছি। আমি যখন এই খবর বলতে পারেন ভয়াবহ ঘটনার স্মৃতিচারণা করছি তখন কিন্তু বিধ্বস্ত এলাকায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যৌথ পরিদর্শন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে। আমরাও চাই কেন্দ্র-রাজ্যের এই সমন্বয় জারি থাকুক সাধারণ মানুষের স্বার্থে।এত ঘণ্টা পর অবশেষে বিদ্যুৎ এল । আমরা আবার আকজ শুরু করতে পেরেছি। আমরা আশা করছি বহু মানুষ এই বিপর্যয়ের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বহু পরিবার তাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছেন। আমরা প্রত্যেককেই আমাদের সমবেদনা জানাই। বাকিরাও সকলে ভালো থাকুন। আর রাজনীতিবিদদের উদ্দেশেয়ে একটা কথাই বলচতে চাই- দয়া করে আপনারা এই ইস্যু নিয়ে অসহায় হয়ে পড়া গৃহহীন হয়ে পড়া, স্বজন হারানো মানুষগুলির কথা ভেবে মুখ বন্ধ রাখার চেষ্টা করুন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের বাংলা আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠুক। সকলেই ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। সংবাদ প্রভাকর টাইমস আপনাদের পাশে আছে।


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

33 + = 42