বিজয় দিবসে বেড়াতে গিয়ে বাংলাদেশবাসীর হৃদয় জয় করে এলেন ভারতীয় সঙ্গীত শিল্পী সংহতি

দেশ বাংলাদেশ বিনোদন
শেয়ার করুন

বিনা প্রস্তুতিতে একদিনে মাত্র চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার ব্যবধানে প্রায় ৪০-৫০ কিলোমিটার রাস্তা সফর করে পরপর চারটি অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করে সংহতি কিন্তু একটা রেকর্ডও গড়ে ফেললেন।

 ঢাকা থেকে ফিরে

অনিরুদ্ধ পালের বিশেষ রিপোর্ট

Published on: জানু ৫, ২০২০ @ ২০:১৩

এসপিটি নিউজঃ শুধু মাত্র বেড়াতে গিয়ে বিনা প্রস্তুতিতে সংগীত পরিবেশন করে এত বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী ভাই-বোনের হৃদয় যে জয় করে আসা যায় তা দেখালেন ভারতীয় সংগীত শিল্পী সংহতি দাস। সত্যিই এ এক অভূতপূর্ব ঘটনা। কলকাতার নবীন শিল্পীদের তালিকায় সংহতি এখন বেশ সম্মানজনক স্থানেই রয়েছেন। কলকাতা সহ গোটা পশ্চিমবঙ্গই নয় আসামেও সংহতি একজন জনপ্রিয় শিল্পী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এবার সংহতি বাংলাদেশে বেড়াতে গিয়ে সেদেশের বিজয় দিবসে গান গেয়ে সেদেশের মানুষকে সংহতির বন্ধনে আবদ্ধ করে এলেন।গোটা কর্মকান্ডের সাক্ষী থেকেছি আমরা সংবাদ প্রভাকর টাইমস।

গত মাসের ১৪ ডিসেম্বর আমরা পৌঁছই বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস যাকে সেদেশের মানুষ বিজয় দিবস হিসেবে জানে- সেই দিনটিকে কাছ থেকে সেদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে দেখা। আর এজন্য আমরা কৃতজ্ঞ বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা-র সিনিয়র সাংবাদিক আতাউর রহমানের কাছে। তাঁর আন্তরিকতা আর সহযোগিতা ছাড়া আমাদের এই সফর সম্পূর্ণ হত না।

কেমন হয় বাংলাদেশের বিজয় দিবস

১৬ ডিসেম্বর ছিল বাংলাদেশের বিজয় দিবস। একজন সংগীত শিল্পী হিসেবে সংহতি চেয়েছিল আমাদের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের বিজয় দিবস চাক্ষুষ করা। ঠিক সেরকমি একজন সাংবাদিক হিসেবেও আমার লক্ষ্য ছিল এই দিনটি বাংলাদেশে কিভাবে পালিত হয় সেদেশের মানুষ ওইদিন কেমনভাবে কাটায় সেটা নিজের চোখে একবার সেখানে গিয়ে দেখে আসা। সত্যি কথা বলতে কী- এক কথায় অভূতপূর্ব। আমি অভিভূত। গোটা বাংলাদেশের ছবি বা বেশির ভাগ জায়গায় যাওয়ার সৌভাগ্য না হলেও অন্তত ঢাকা শহরে ঘুরে যা দেখলাম তা লিখে বোঝানো সম্ভব নয়।

বিজয় দিবসের সকাল থেকেই গোটা বাংলাদেশ যেন জেগে উঠেছিল এক নতুন উদ্যমে। সমস্ত টিভি চ্যানেল থেকে শুরু করে সমস্ত এলাকাতে মানুষ বিজয় দিবসের আনন্দ উপভোগ করেছে। ঢাকা জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজন করা হয়েছিল এক অনুষ্ঠানের যেখানে বিশেষভাবে ছিল দুপুরের আহারের ব্যবস্থা। আমরা সেখানে আমন্ত্রিত হয়েছিলাম।

রবীন্দ্র সরোবরের মুক্ত মঞ্চে সংহতির সংগীত পরিবেশন

এখান থেকেই শুরু হয় সংহতির সংগীত সফর। সেটাও হয়ে যায় আচমকা। আগের দিন অর্থাৎ ১৫ ডিসেম্বর আমরা মানে সংহতির বাবা-মা সহ চারজন বিকেলে গেছিলাম বাংলাদেশ চিত্রকলা অ্যাকাডেমিতে। সেখানে আমাদের নিয়ে গেছিলেন বাংলাদেশের এক সাংবাদিক বন্ধু বাবলু ভাই। আমাদের গোটা সফরে এই মানুষ্টার অবদান কিন্তু আমাদের কাছে অম্লান হয়ে থাকবে। আতাউর রহমানের মতো বাবলু ভাই হলেন আমার বিশেষ বন্ধু। তিনিই আমাদের নিয়ে যান বাংলাদেশ শিল্পকলা অ্যাকাডেমিতে। সেখানে আমাদের সঙ্গে পরিচয় হয় আশরাফুল আলম পপলুর সঙ্গে। তিনিই সংহতির গানের কথা শুনে বিজয় দিবসে বাংলাদেশে রবীন্দ্র সরোবর মুক্ত মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দুটি গানের সুযোগ করে দেন। সনহতি কিন্তু একেবারে নিরাশ করেননি।ছবিঃ ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে সম্পাদিকা, সভাপতি, সহ-সভাপতির সঙ্গে সংহতি দাস

বাংলাদেশ রবীন্দ্র সরোবর মুক্ত মঞ্চে পৌঁছে দেখলাম সে এক সাজো সাজো রব। বিশাল আয়োজন। মুক্ত মঞ্চের চারপাশে কংক্রীটের গ্যালারি।জনস্রোতের ঢল।তিল ধারণের জায়গা নেই। আমি করতে পারছিলাম না,কবে আমাদের দেশের স্বাধীনতা দিবসে এমন খোলা জায়গায় অনামী শিল্পীদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এত বিপুল সংখ্যক মানুষ তাদের পরিবার নিয়ে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অনুশঠান শুনছে এবং করতালি দিয়ে শিল্পীদের উৎসাহ দিয়ে চলেছে। সংহতির সংগীত সফর শুরু এখান থেকেই। বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ ‘ও আমার দেশের মাটি…’ গান গেয়ে হাজার হাজার বাংলাদেশী মানুষের হৃদর জয় করে নিলেন। এরপর গাইলেন আরও একটি রবীন্দ্র সঙ্গীত।গান থামতেই শুরু করতালিতে ভেসে গেলেন ভারতের এই নবীন সংগীত শিল্পী সংহতি দাস।

ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাব হয়ে সোজা ওয়াসা

এখান থেকে বেরিয়ে আমাদের গন্তব্য ছিল ঢাকা জাতীয় প্রেস ক্লাব। সেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশনের সুযোগ করে দিয়েছিলেন আতাউর রহমান। এখানে অবশ্য একটি গান গাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। দর্শকদের মধ্য থেকে আরও একটি গানের অনুরোধ জানানো হলেও সময় কম থাকার জন্য তা রাখা সম্ভব হয়নি। এখান থেকে বেরিয়ে আমাদের তৃতীয় গন্তব্য ছিল ওয়াশা। যেখানে এক মনোজ্ঞ বিচিত্রানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল এবং সেখানে হঠাৎ করেই সংহতিকে গান গাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। আর সেটা জানিয়েছছিলেন বাংলাদেশের সঙ্গীতশিল্পী জাকির মাহমুদ নানা। যার ব্যবস্থাপনায় সংহতি এক অসাধারণ পারফরম্যান্স উপস্থাপন করেন।কয়েকটি লোকসঙ্গীত পরিবেশন করে সংহতি বাংলাদেশের বিজয় দিবসে বাংলাদেশের মানুষের মন জয় করে নেন। আট থেকে আশি বয়সের মানুষ সংহতির গানের তালে নাচতে থাকেন। আমরা যখন সেখান থেকে আরও একটি জায়গায় যাচ্ছি তখন ওয়াসায় মানুষের চোখে আনন্দাশ্রু। সকলে সংহতির উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে বলছে- ‘আবার আইবেন আপা, আবার আইবেন।’ সত্যি এ এক অসাধারণ মুহূর্ত।

ঢাকায় সম্বর্ধিত হলেন সংগীত শিল্পী সংহতি

সংহতির জন্য এদিন আরও বড় কিছু অপেক্ষা করেছিল। ওয়াশা থেকে বেরিয়ে আমরা পৌঁছেছিলাম ঢাকা শহর থেকে খানিক দূরে কাউলার বলে একটি অঞ্চলে। যেখানে বিজয় দিবসে এক বিচিত্রা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। এদিনই এখানে স্বাধীন বাংলা আউটসোর্সিং লিমিটেডের শুভ দ্বারোদ্ঘাটন হয়। এখানকার অনুষ্ঠানে সংহতি যখন গান গাইতে ওঠে ঘড়িতে তখন রাত সাড়ে ন’টা। গান গাওয়া শুরু করতেই আশপাশ থেকে ঘর থেকে বহু মহিলারা চলে আসেন। মাত্র কয়েকটা গান গাইতেই মানুষের মধ্যে উৎসাহ দানা বাধে।তারা অনুরোধ জানাতে থাকেন আরও কয়েকটী গান গাওয়ার। কিন্তু এখানেও অনুরোধ রাখা সম্ভব হয়নি। এখানকার মানুষও সংহতিকে আবারও বাংলাদেশে এসে গান গাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে রাখলেন।

এখানে সংহতিকে বিশেষ স্মারক দিয়ে সম্বর্ধিত করা হয়। তবে এভাবে বিনা প্রস্তুতিতে একদিনে মাত্র চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার ব্যবধানে প্রায় ৪০-৫০ কিলোমিটার রাস্তা সফর করে পরপর চারটি অনুষ্ঠানে পৌঁছে সংগীত পরিবেশন করে সংহতি কিন্তু একটা রেকর্ডও গড়ে ফেললেন। এর আগে কোনও ভারতীয় বিশেষ করে কোনও বাঙালি সংগীত শিল্পী এ ধরনের পারফরম্যান্স করেছেন কিনা আমাদের জানা নেই। সেদিক থেকে বিজয় দিবসে বেড়াতে গিয়ে সংহতি কিন্তু সংহতি স্থাপন করে ফিরে এলেন।

Published on: জানু ৫, ২০২০ @ ২০:১৩


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

29 − 24 =