বাবা কেদারনাথের দরজা খুলল আজ, মন্দির সাজানো হল ১০ কুইন্টাল ফুল দিয়ে

Main দেশ ধর্ম ভ্রমণ
শেয়ার করুন

Published on: মে ৬, ২০২২ @ ১৬:২১

এসপিটি নিউজ, দেরাদুন, ৬ মে: ছ’মাস পর বাবা কেদারনাথের দরজা খুলে দেওয়া হল। প্রতি বছরই নিয়ম করে মন্দিরের দরজা বন্ধ হয় আবার খোলাও হয়।শুক্রবার সকাল ৬টা ২৫মিনিটে বৈদিক মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে মন্দিরের দরজা খুলে দেওয়া হয়, তারপরে রাওয়াল (প্রধান পুরোহিত) বাবার ডুলি নিয়ে মন্দিরে প্রবেশ করেন। প্রায় ২০ হাজার ভক্তের সঙ্গে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামিও।

এদিন মন্দির প্রাঙ্গনটি ১০ কুইন্টাল ফুল দিয়ে সাজানো হয়। মন্দিরের দরজা খোলার আগেই বৃহস্পতিবারই ভক্তরা জমায়েত করতে শুরু করে। ২০২০ সালে করোনা মহামারী শুরুর পর থেকেই এখানে ভক্তদের দর্শন করতে দেওয়া হয়নি। যদিও গত বছর অনেক পরে ভক্তদের কিছু বিধিনিষেধ মেনে নির্দিষ্ট সংখ্যক ভক্তদের কেদারনাথ মন্দির প্রাঙনে প্রবেসের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।

দরজা খোলার সাথে সাথে শীতল রাতের প্রকোপ মিলিয়ে গেল

প্রচণ্ড শীতের মধ্যেও ভোর ৪টা থেকে ভক্তরা বাবা কেদারের দর্শন পেতে সারিবদ্ধ হতে শুরু করেন। দরজা খোলার সাথে সাথে কেদারনাথ ধাম হর হর মহাদেবের উল্লাসে ধ্বনিত হল। বাবার দর্শনে নারী-শিশু, বৃদ্ধ ও যুবকরা কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ লাইনে সামিল হন। বিপুল সংখ্যক তরুণ দম্পতিও বাবাকে দেখতে আসেন। তামিলনাড়ু, কেরালা থেকে পশ্চিমবঙ্গ এবং আসাম থেকে মানুষ কেদারনাথে পৌঁছেছে। হাজার হাজার মানুষকে প্রচণ্ড ঠান্ডায় বাইরে রাত কাটাতে হলেও তাদের উৎসাহে বিন্দুমাত্র ভাটা পড়েনি। ভক্তরা জানান, বাবার দর্শনে তপস্যায় এটা আমাদের শেষ পরীক্ষা।

তীর্থযাত্রীরা গৌরীকুন্ড থেকে কেদারনাথ যাওয়ার অনুমতি পেয়েছেন

বৃহস্পতিবারের তুলনায় শুক্রবার কেদারনাথ ধামের আয়োজন অনেক ভালো লাগছিল। মানুষ যখন দর্শন করে ফিরছিল, তখন গৌরীকুন্ড থেকে হাজার হাজার ভক্তকে কেদারনাথ ধামের দিকে পাঠানো শুরু হয়। ভক্তরা এখান থেকে পায়ে হেঁটে, ঘোড়া বা পিঠুতে করে প্রায় ২১ কিমি দূরত্ব অতিক্রম করেন।

ব্যবস্থা পরিচালনাকারী কর্মকর্তারা আরও বলেন, এখন সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে গেছে। ভক্তরাও তাদের পালা এলে বাবাকে আরামে দেখতে পান। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি ভক্তের আগমনের কারণে ধামে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হয়, পরে হাজার হাজার ভক্ত গৌরীকুণ্ডে থেমে যায়। তবে মোবাইল নেটওয়ার্কের সমস্যা এখনো রয়ে গেছে। মানুষ তার প্রিয়জনের সাথে ফোনে কথা বলতে পারছে না। কেদারনাথ ধাম থেকে ফেরার পর গৌরীকুন্ড বা সোনপ্রয়াগে ইন্টারনেটের গতিও কিছুটা বেড়েছে।

বাবা সমাধি থেকে বেরিয়ে এলেন

মনে করা হয়, জগতের কল্যাণের জন্য বাবা কেদারনাথ ৬ মাস সমাধিতে থাকেন। মন্দিরের দরজা বন্ধের শেষ দিনে নৈবেদ্য শেষে দেড় কুইন্টাল বিভূতি নিবেদন করা হয়। দরজা খোলার সাথে সাথে বাবা কেদার সমাধি থেকে জেগে ওঠেন। এরপর তিনি ভক্তদের দর্শন দেন।

শৈব লিঙ্গায়ত পদ্ধতিতে বাবার পূজা হবে

বাবা কেদারনাথের মন্দির শুধুমাত্র ভারতীয়দের শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসের কেন্দ্র নয়, উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের ধর্মীয় সংস্কৃতির সঙ্গমও। উত্তর ভারতে পূজা পদ্ধতি ভিন্ন, কিন্তু বাবা কেদারনাথের পূজা দক্ষিণের বীর শৈব লিঙ্গায়ত পদ্ধতিতে করা হয়। মন্দিরের সিংহাসন রাওয়ালদের দখলে, যাদেরকে পুরোহিতও বলা হয়। রাওয়ালের শিষ্যরা মন্দিরে পূজা করেন। রাওয়াল মানে পুরোহিত, যারা কর্ণাটকের অন্তর্গত।

মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন আদিগুরু শঙ্করাচার্য

উত্তরাখণ্ডের চর ধামের মধ্যে কেদারনাথ রয়েছে তিন নম্বরে। এই মন্দিরটি ১২টি জ্যোতির্লিঙ্গের একটি। মহাভারতের সময়, শিব এখানে পাণ্ডবদের কাছে ঘণ্টা রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন। এই মন্দিরটি আদিগুরু শঙ্করাচার্য নির্মাণ করেছিলেন। মন্দিরটি প্রায় ৩,৫৮১বর্গ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এবং গৌরীকুন্ড থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটা বিশ্বাস করা হয় যে এই মন্দিরটি আদিগুরু শঙ্করাচার্য ৮-৯ম শতাব্দীতে তৈরি করেছিলেন।

কেদারনাথ ধামের ওপর নির্ভরশীল ৩ লাখ পরিবার

উত্তরাখণ্ডের প্রায় ৩ লক্ষ পরিবার বাবা কেদারনাথের উপর নির্ভরশীল। তাদের কর্মসংস্থান তীর্থযাত্রী এবং ভ্রমণকারীদের উপর নির্ভরশীল। করোনার সময় ধামের দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখানকার স্থানীয় মানুষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখন মানুষ আশাবাদী যে ধীরে ধীরে সবকিছু য়াবার আগের মতো জায়গায় ফিরে আসবে।

Published on: মে ৬, ২০২২ @ ১৬:২১


শেয়ার করুন