বনসহায়কের চাকরিতে কারসাজিঃ মুখ্যমন্ত্রীর তোপের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক রাজীব

Main দেশ রাজ্য
শেয়ার করুন

“আমি নাম নিয়ে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীকে সম্মান জানিয়ে বলছি- জেনে রাখুন, এই বনসহায়কের নিয়োগ আমি বোর্ডের হাতে তুলে দিয়েছিলাম। ৮ অক্টোবর সকাল দশটার সময় আমি যখন আপনাকে মেসেজ করেছিলাম যে বীরভূমের কোনও একজন বড় নেতা আমাকে ধমকি দিয়ে বলছে বনসহায়কের সব চাকরি তাকে দিতে হবে। আপনি তার পালটা ফোন করে বলেছিলেন – সব জেলায় জেলায় তৃণমূলের কিছু কিছু কোটা তুমি দিয়ে দাও।” বলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।

Published on: ফেব্রু ৩, ২০২১ @ ২০:২৪

এসপিটি নিউজ, হুগলি, ৩ ফেব্রুয়ারি: আজ আলিপুরদুয়ারে তৃণমূলের জনসভায় দাঁড়িয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাম না করে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তোপ দাগেন। বলেন- যে ছেলেটা দল থেকে চলে গেছে সে বনসহায়কের চাকরিতে কারসাজি করেছে। আমি তার তদন্ত করছি।সেই প্রসঙ্গে হুগলি জেলাইয় বিজেপির জনসভায় দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীর এই তোপের বিরুদ্ধে কার্ত বিস্ফোরক তথ্য তুলে ধরেন রাজীব। তিনি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কয়েকটি প্রশ্ন তুলে বলেন- আপনাকে আমি আজও সম্মান করি। কিন্তু আপনি যখন সব কিছু ঝেনেও এসব বলছেন তখন আমাকেও তো মুখ খুলতেই হবে। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী- আপনি কেঁচো খুঁড়তে খুঁড়তে কেউটে সাপ বার করছেন।

‘আপনি ভয় পেয়ে গেছেন, আপনার পায়ের তলার থেকে জমি আলগা হয়ে গেছে’

শুরুতে এদিন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় খুব খোশ মেজাজে বলা শুরু করেন। বলেন- “খেলা তো সবে শুরু হয়েছে। খেলা এখনও অনেক বাকি।আমরা ভালো খেলতে জানি বলেই দেখবেন বর্তমান শাসক দলের অনেকের দেখবেন ভুরু কুঁচকে গেছে। গলায় কাঁপা কাঁপা স্বর। এত ভয় পেয়েছে যে চারিদিকে ব্যক্তি আক্রমণ ছাড়া তারা আর কিছু করতে পারছে না। এত ভয় কিসের? বট গাছের ঝরা পাতা আর সমুদ্রের দুই ঘটি জল- তাহলে এত কুরুচিকর আক্রমন করার তো দরকার নেই। করছেন মানে, আপনি ভয় পেয়ে গেছেন, আপনার পায়ের তলার থেকে জমি আলগা হয়ে গেছে এটাই প্রমাণ করে দিচ্ছে আজকের শাসক দলের অবস্থা।”

বীরভূমের কোনও এক বড় নেতা আমাকে ধমকি দিয়ে বলে বনসহায়কের সব চাকরি তাকে দিতে হবে-রাজীব

এরপরই রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি আলিপুরদুয়ারে মুখ্যমন্ত্রীর তোলা মন্তব্যের বিষয়ে চলে যান। শুরু হয় রাজীবের বিস্ফোরক ভাষণ। যেখানে তিনি তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত সরকারের ভিতরকার অবস্থার কিছু তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরেন জনগণের সামনে। রাজীব বলতে থাকেন- “”আমি ওনাকে সম্মান জানিয়েই বলি – আজকে আলিপুরদুয়ারে একটা সভা ছিল। সেই সভা থেকের নাম না করে তিনি আজ বলেছেন বনসহায়কের চাকরিতে কারসাজি হয়েছে। উনি তদন্ত করুন। আর আমি এ মঞ্চ থেকে দায়িত্ব নিয়ে বলে গেলাম উনি নাম নেননি আমি নাম নিয়ে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীকে সম্মান জানিয়ে বলছি- জেনে রাখুন, এই বনসহায়কের নিয়োগ আমি বোর্ডের হাতে তুলে দিয়েছিলাম। ৮ অক্টোবর সকাল দশটার সময় আমি যখন আপনাকে মেসেজ করেছিলাম যে বীরভূমের কোনও একজন বড় নেতা আমাকে ধমকি দিয়ে বলছে বনসহায়কের সব চাকরি তাকে দিতে হবে। আপনি তার পালটা ফোন করে বলেছিলেন – সব জেলায় জেলায় তৃণমূলের কিছু কিছু কোটা তুমি দিয়ে দাও।”

আটই অক্টোবর ন’টা আটান্নয় আপনার সাথে আমার কথা হয়েছিল-রাজীব

না থেমে রাজীব বলে চলেন- “আজকে আমায় বলছেন কারসাজি করেছেন। আমি এতদিন মুখ খুলিনি। আমি আপনার কথার পরিপ্রেক্ষিতে মুখ খুলতে বাধ্য হলাম। আমার কাছে সেই মেসেজের কপি আছে। আটই অক্টোবর ন’টা আটান্নয় আপনার সাথে আমার কথা হয়েছিল। আর আমি নিরপেক্ষভাবে কাজটা করতে চেয়েছিলাম বলে একটা বোর্ডকে দিয়েছিলাম।”

আলিপুরদুয়ারের সভাপতির সুপারিশ আমার কাছে আছে-রাজীব

“আমি মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়ে দিতে চাই – জেনে রাখবেন, আমার কাছে সমস্ত কপি আছে। কোথা কোথা থেকে সুপারিশ এসছে আপনার কোন নেতা-মন্ত্রীরা সুপারিশ দিয়েছে, কোন বিধায়ক সুপারিশ দিয়েছ্‌ কোন উচ্চ নেতৃত্ব সুপারিশ দিয়েছে, কালীঘাট থেকে কি সুপারিশ এসছ্‌ কার তালিকা এসছে তা সব আমি যত্ন করে রেখে দিয়েছি। কেঁচো খুড়তে খুঁড়তে কেউটে সাপ আপনি বার করছেন। সব তথ্য আমার কাছে রয়েছে। আপনি আজ আলিপুরদুয়ারে আছেন। সেখানে আলিপুরদুয়ারের সভাপতির সুপারিশ আমার কাছে আছে। আপনি জেনে নিন তার সুপারিশ কি ছিল।” বলেন রাজীব।

রাজীব এরপর নিজের স্বচ্ছতার কথা তুলে ধরে একের পর এক তথ্য তুলে ধরেন। মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে রাজীব বলেন-

১) “জেনে রেখে দেবেন, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এমনই একজন রাজনীতিবিদ আমার অন্তর আমার কাজ এতটাই মানুষের জন্য করা তাই আপনি যত প্রশ্ন করবেন তার উত্তর আমি দিয়ে দেব। আপনাকে কোনও চিন্তা করতে হবে না।”

২) “আমি শুধু আপনাকে একটা প্রশ্ন করতে চাই- কোনও তদন্ত করতে হবে না। ওই বনসহায়কের প্যানেল আপনি বাতিল করে দিন। তাহলে দুধ কি দুধ পানি কি পানি বুঝে যাবেন। আমার কিচ্ছু যায় আসবে না। আমি এতটাই স্বচ্ছতার সঙ্গে বলছি- আপনি বনসহায়কের প্যানেলটা বাতিল করে দিন তাহলেই প্রমাণ হয়ে যাবে।”

৩) “আর আপনি যখন মুখ খুলিয়েছেন- তখন আর একটা প্রশ্ন আপনাকে করে গেলাম, এই প্রশ্নের উত্তর চাই। বিগত দিনে যত চুক্তিভিত্তিক চাকরি হয়েছে বিভিন্ন দফতরে এমনকি আগেও যে দফতরে চুক্তি ভিত্তিক চাকরি আপনি দিয়েছেন সেই তালিকা কোথা থেকে এসছে, কীভাবে নিয়োগ হয়েছে, কারা কারা চাকরি পেয়েছে তার তদন্ত মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী দয়া করে করুন। তার কাগজও আমার কাছে মজুত আছে। কিভাবে আপনি দিয়েছিলেন, কোথা কোথা থেকে সুপারিশ এসছে, কত জায়গা থেকে সুপারিশ এসছে তার সমস্ত কপি আমি দিয়ে দেব আপনাকে।”

৪) “একটা মন্ত্রকের দায়িত্ব নেওয়ার সময় শপথ নিয়েছিলাম। আমি চাই নি এসব ভিতরকার কথা বলতে। কিন্তু আপনি যেহেতু কথার অবমাননা করেছেন তাই আমি এর যোগ্য জবাব দিয়ে গেলাম। পারলে যত চুক্তি ভিত্তিক চাকরি হয়েছে তার সব কটার তদন্ত হোক। সবার তদন্তের দাবি আমি করে গেলাম। পারবেন তো সামলাতে?”

৫) “আমি তো মুখ খুলছিলাম না। আমি তো রাজ্যের মানুষকে জানাই নি এজন্য। আমি বলেছিলাম আমার অসন্তোষ। কেন অসন্তোষ। গত আড়াই-তিন বছর ধরে কি কি কারণে অসন্তোষ। আমি যদি মুখ খুলি, তাহলে নিশ্চিতভাবে জানবেন- শুধু বট গাছের পাতা নড়বে না সমুদ্রের দু’ঘটি জল যাবে না বট গাছও নড়ে যেতে পারে সমুদ্র আতাল-পাতাল হয়ে যেতে পারে। সেই ক্ষমতা আমার রয়েছে।”

৬) “খারাপ লাগে, বাংলার মানুষকে আমরা মনে করি যে তারা অনেক অভাবে আছে। রাজনীতিটা একেবারে কলুষিত হয়ে গেছে। একটা সময় আমার পরিবারের মুখ দিয়ে শুনতাম যে রাজনীতি হচ্ছে নীতির রাজা। মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। আমার বাবা ছোট থেকে একটা শিক্ষা দিতেন- রাজনীতির বিভিন্ন সময় দল আসবে যাবে। কিন্তু মনে রেখে দিবি, মানুষের জন্য কাজ করলে যে আনন্দ পাওয়া যায়, তার থেকে বড় আনন্দ আর কিছু হতে পারে না। আর সেই মানুষের জন্য কাজ করব বলে সব সময় চেষ্টা করেছি। আমি তো আগেও বলেছি, যারা কাজ করতে চায় তাদের পিছনের সারিতে সরিয়ে দেওয়া হয়।”

৭) “আর মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীকে আমি এটাও জানিয়ে দি যে বনসহায়ক আপনি নিয়োগ করেছেন নভেম্বরে। আপনার অর্থ দফতরের অনুমোদন নিয়ে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আপনি নিয়োগ করেছেন। আমি দলে ছিলাম ৩০ জানুয়ারি অবধি। আপনার তখন মনে হয় নি এখানে সমস্যা হয়েছে। আর যদি মনে করে থাকেন আমি কোনও কারসাজি করেছি তাহলে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে ৩১ জানুয়ারি অবধি এই সময় আপনি কেন আমাকে তাড়িয়ে দেননি? আমি এই প্রশ্ন আপনাকে করছি। আমি তো ছেড়ে দিয়েছি আপনি তো তাড়াননি আমায়।”

8) “আর আমাকে ধরার জন্য এই দলের এমন কোনও শীর্ষ নেতৃত্ব আমি জানি মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী আমি সব রেকর্ড করে রেখেছি। কোন কোন নেতা ফোন করেছিল কি কি বলেছিল এবং কি করতে চেয়েছিল। ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগ দেওয়ার তিন দিন আগেও আপনি কতজনকে দিয়ে আমায় ফোন করিয়েছেন আবার কার কার সঙ্গে বসতে বলেছেন আবার এটাও বলেছেন যে একে দল থেকে ছাড়া যাবে না। সেই কথাও আমার কাছে রেকর্ড করা আছে। তাহলে আজকে যদি আমি খারাপ হই আজকে যদি আমি চোর হই আজকে যদি আপনি দুর্নীতিবাজ বলেন আমি কারসাজি করেছি তাহলে আমাকে দলে রাখার জন্য এত কষ্ট আপনি কেন করলেন? মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী, আপনাকে প্রশ্ন করতে চাই।

৯) “আমরা চাইছিলাম না বলতে। আপনি বাক্স খুলে দিয়েছেন। আমাদেরও এখন বলতে হবে।”

Published on: ফেব্রু ৩, ২০২১ @ ২০:২৪


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

− 3 = 4