প্রভুপাদর স্বপ্নপূরণে কৃষ্ণভক্ত অ্যালফ্রেড ফোর্ডঃ বিশ্বের সর্বোচ্চ বৈদিক প্ল্যানেটোরিয়াম মায়াপুরে-তোলা হল চক্র

এসপিটি এক্সক্লুসিভ ভ্রমণ রাজ্য
শেয়ার করুন

 

আমরা এই বস্তুগত বিশ্বের মধ্যে গ্রহাণু বৈদিক ধারণা দেখবো। আমরা সারা পৃথিবীতে বৈদিক সংস্কৃতি প্রদর্শন করতে যাচ্ছি এবং তারা এখানে আসবেন। তারা যেমন তাজমহল-এর স্থাপত্যিক সংস্কৃতি দেখতে আসছে, তেমনই তারা সভ্যতার সংস্কৃতি, দার্শনিক সংস্কৃতির সঙ্গে পুতুল ও অন্যান্য জিনিসের সাথে ব্যবহারিক প্রদর্শনী দ্বারা ধর্মীয় সংস্কৃতিও দেখতে আসবেন। বাস্তবিকই এটি সারা বিশ্বের মধ্যে এক অনন্য কীর্তি হতে পারে। সারা বিশ্ব জুড়ে এমন কোন জিনিস নেই যে আমরা কি করবো।”

—ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ

 

অনিরুদ্ধ পাল

Published on: ফেব্রু ৬, ২০১৮ @ ১৯:০৫

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও মহাপ্রভু শ্রীশ্রী চৈতন্যময় ছিলেন তিনি। সারা জীবন তিনি মানুষের মধ্যে কৃষ্ণ নাম বিলিয়ে গেছেন।ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ।দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আজ বিদেশেও কৃষ্ণ ভক্তদের সংখ্যা বেড়েছে তাঁরই চেষ্টায়।তাঁর স্বপ্ন ছিল মায়াপুরে তৈরি হোক এক সুবিশাল বৈদিক মন্দির। যা হবে বিশ্বের মধ্যে দর্শনীয়। বিখ্যাত অ্যালফ্রেড ফোর্ড আজ তাঁর সেই স্বপ্নপূরণের দায়িত্বভার নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। মায়াপুরেই গড়ে উঠছে সেই সুবিশাল বৈদিক প্ল্যানেটোরিয়াম মন্দির। বুধবার সেই মন্দিরের মাথায় গম্বুজের উপর তোলা হল চক্র।গোটা কর্মকাণ্ড ঘিরে এখন মায়াপুর ইসকন চত্বর এক মহা-উৎসবে মেতে উঠেছে।

ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত পশ্চিমবঙ্গের মায়াপুরে অবস্থিত ইসকনের সদর কার্যালয়। যেখানে বিশ্বের সর্বোচ্চ ও সর্ব্বৃহৎ বৈদিক প্ল্যানেটোরিয়াম মন্দির নির্মাণের কাজ চলছে।আগামিকাল ৭ ফেব্রুয়ারি এই মন্দিরের একেবারে শীর্ষে অবশিষ্ট দুটি চক্র স্থাপন করা হবে। যা নিয়ে প্রস্তুতি এখন সম্পূর্ণ।গত এক সপ্তাহ ধরে ইসকনে থেকে গোটা কর্মকাণ্ড তদারকি করছেন আমেরিকার বিখ্যাত শিল্পপতি হেনরি ফোর্ডের নাতি অ্যালফ্রেড ফোর্ড যার বর্তমান নাম হয়েছে অম্বরীশ দাস। গোটা কর্মকাণ্ড ঘিরে এখন মায়াপুর ইসকন চত্বর এক মহা-উৎসবে মেতে উঠেছে।

বৈদিক প্ল্যানেটোরিয়াম মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল ২০০৯ সালে।ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদর স্বপ্ন ছিল মহাপ্রভুর দেশে মায়াপুরে এমন এক বৈদিক প্যানেটোরিয়াম মন্দির গড়ে উঠুক যেখানে সে মানুষ এসে কৃষ্ণের নামগান করতে পারবেন। দেখবেন-ঘুরবেন-আনন্দ করবেন আর কৃষ্ণ ভজনায় মেতে উঠবেন।যা হবে সারা বিশ্বের মধ্যে এক অনন্য কীর্তি। আজ তাঁর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে চলেছে।মায়াপুর ইসকনের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রসিক গৌরাঙ্গ দাস সেকথাই বলছিলেন।

ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস বা ইসকন কতৃপক্ষ বলছেন-আধুনিক ইতিহাসে ভারতের মধ্যে সর্ববৃহৎ বৈদিক মন্দির হিসেবে এটি গড়ে উঠবে। গিজা পিরামিড আকারের এই মন্দির বিশ্বের ধর্মীয় কাঠামোয় সবচেয়ে লম্বা ও চওড়া বলে মনে করা হচ্ছে। মন্দিরে একসঙ্গে ১০ হাজার মানুষ কৃষ্ণ ভজনা করতে পারবে।

এই বৈদিক মন্দিরের মাথায় যে প্রধান গম্বুজ আছে তার উচ্চতা ১১৪ফুট। গম্বুজের ব্যাসার্ধ ১৭৭ফুট।এর মাথায় যে কলসি বসানো হয়েছে তার উচ্চতা ৬৮ ফুট।আর মাথায় যে চক্র বসতে চলেছে সেটি চওড়া ১০ ফুট। বহু মাইল দূর থেকে দেখা যাবে।গম্বুজটার রঙ নীল ও সোনালী।বলা হচ্ছে এটি সারা পৃথিবীর মধ্যে সর্বোচ্চ।আর প্ল্যানেটোরিয়াম ও নৃসিংহদেবের মন্দিরের গম্বুজের উচ্চতা ৫৮ ফুট। তার মাথায় থাকা কলসির উচ্চতা ৩১ ফুট। চক্রটি ৭ফুট।

গম্বুজের ভিতরটা এক অনিন্দ্য সুন্দরভাবে সাজিয়ে তোলার কাজ চলছে। ভিতরে ঢুকলে আপনার এক অপূর্ব অনুভূতি ঘটবে। মনে হবে আপনি এক বহির্জগতের কোথাও এসেছেন। যেখানে উপরে তাকালে দেখতে পাবেন এক ঐশ্বরিক আকাশ। দেখা যাবে ব্রহ্মজ্যোতি। এছাড়াও ব্রোঞ্জের আলোয় আপনাকে দেবে এক অসাধারণ অনুভূতি।

মূল মন্দিরটি করা হচ্ছে ভারতীয় ঐতিহ্য ও ধ্রুপদী স্থাপত্যের আদলে। যেখানে থাকছে কীর্তন, ভজন ও উল্ল্যেখযোগ্য বক্তৃতা।মন্দিরের মূল কেন্দ্রে থাকছে সাদা, নিল মার্বেল ও সোনালি পাতায় মোড়ানো।যেখানে দেখা যাবে শ্রীশ্রী রাধামাধব, শ্রীপঞ্চতত্ত্ব এবং মহান বৈষ্ণব আচার্যদের মূর্তি। বিগত ৫০০ বছরের সেইসব আচার্যের মধ্যে থাকছেন বৃন্দাবনের গোস্বামী থেকে শুরু করে ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ।

মন্দিরের হলের মেঝে করা হচ্ছে কাল-চক্রের আদলে। ৩০ ফুট লম্বা এই নকশায় ১২টি জোডিয়াক চিহ্ন থাকবে। গোটাটাই হবে পাথরে নির্মিত। রঙ হবে সবুজ আর সাদা। দেখা যাবে অনেক নক্ষত্র ও গ্রহ।

মন্দিরের পুজারি মেঝে ৯৩ হাজার১৭৩বর্গ ফুট। যা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। যেখানে একসঙ্গে বিরেজ করবেন রাধা-মাধব তাঁর অষ্টসখির সঙ্গে। চৈতন্য মহাপ্রভু থাকবে তাঁর চার সহচরদের সঙ্গে।

মন্দিরের শুভ উদ্বোধনের সময়সীমা অবশ্য ২০২২সাল ধরা হয়েছে। মন্দিরের নির্মাণ কার্যে অতিরিক্ত টাকা দান করেছেন অ্যালফ্রেড ফোর্ড।

মন্দিরে চক্র উত্তোলন ঘিরে শুরু হয়েছে মহা কর্মকাণ্ড। ইসকন চত্বরেই হয়েছে সুদৃশ্য মঞ্চ। আয়োজন করা হয়েছে ধর্মীয় প্রদর্শনীরও।

Published on: ফেব্রু ৬, ২০১৮ @ ১৯:০৫


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

69 + = 72