প্রবাদপ্রতিম সঙ্গীতশিল্পী ওস্তাদ রশিদ খানের জন্মদিনে তাঁর চতুর্মুখী লক্ষ্যের কথা শোনালেন সহধর্মিনী জয়িতা

Main এসপিটি এক্সক্লুসিভ দেশ বিনোদন রাজ্য
শেয়ার করুন

আজ পয়লা জুলাই প্রবাদপ্রতিম সঙ্গীতশিল্পী ওস্তাদ রশিদ খানের জন্মদিন। এই বিশেষ দিনে সংবাদ প্রভাকর টাইমস-এর পক্ষ থেকে আমরা জানাই আমাদের অন্তরের শুভেচ্ছা ও ভালবাসা। শিল্পীর কাছে আমাদের চাহিদা অপরিসীম। আজকের এই বিশেষ দিনে আমরা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম, বেশ কিছুটা সময় তাঁর কথা আমরা কিছুটা শুনেছি।আসুন শোনা যাক তাঁর সহধর্মিনী জয়িতা বসু খান।

 

Published on: জুলা ১, ২০২০ @ ২২:০৩

Reporter: Jayanta bandopadhyay

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ১ জুলাই:  মহান যিনি হন তিনি তাঁর কাজের মধ্যেই নিজেকে মহান করে তোলেন। এমনই একজন হলেন বিশ্বখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী ওস্তাদ রশিদ খান। যেমন তাঁর কণ্ঠের জাদু ঠিক তেমনই তাঁর সুদূরপ্রসারী ভাবনাচিন্তা। যিনি নিজের জন্মদিনেও দেশের অবহেলিত সঙ্গীতশিল্পীদের কথা ভুলে যাননি। ভুলে যাননি সেই সমস্ত শিল্পীদের কথা, যারা অর্থাভাবে সেইভাবে চিকিৎসা করাতে গিয়ে সমস্যার মুখে পড়েন। ভুলে যাননি সেইসমস্ত ছাত্রছাত্রীদের কথা যাদের সঙ্গীত শিক্ষার ক্লাসকে অনলাইনে নিয়মিত ও সহজ করে তোলার কথা। ভুলে যাননি সেরা সঙ্গীতশিল্পীদের খুঁজে বার করার জন্য বিশেষ প্রয়াস নেওয়ার কথাও। এইসব নিয়েই ওস্তাদজী নিজের জন্মদিনে নিয়েছেন চতুর্মুখী লক্ষ্য। ১)রুটি-রুজি, ২)স্বাস্থ্য, ৩)শিক্ষা এবং ৪)কর্ম- এই বিষয়গুলি নিয়ে শিল্পীর মহান চিন্তাভাবনার কথাই বিস্তারিতভাবে সংবাদ প্রভাকর টাইমসকে জানালেন শিল্পীর সহধর্মিনী জয়িতা বসু খান।

১) রুটি-রুজিঃ দেশের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে থাকা সংগীতজগতের অসংখ্য শিক্ষকরা আজ বিপন্ন। তাঁদের নিয়ে ওস্তাদজীর ভাবনা-চিন্তা কি?

জয়িতা বসু খানঃ সংগীতজগতের শিক্ষকরা আজ চরম সংকটে। প্রায় নিরন্ন অবস্থায় আছেন। তাদের জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা করা, তাদের পাশে দাঁড়ানোর বিষয়ে ওস্তাদজী সচেষ্ট হয়েছেন। একইসঙ্গে এই বিপুল সংখ্যক সঙ্গীত শিক্ষকদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তিনি নিজে শুধু নন ওনার সমসাময়িক যে সমস্ত শিল্পীরা আছেন তাঁদের কাছেও অনুরোধ জানিয়েছেন।এই মানুষগুলির পাশে দাঁড়ানোর জন্য আর্জি জানিয়েছেন বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থাকে। আমরা আশা করছি খুব শীঘ্রই এই কাজ শুরু হয়ে যাবে।

শাখরী বেগম মেমোরিয়াল ট্রাস্টের অন্যতম ট্রাস্টি ও ওস্তাদ রশিদ খান এর সহধর্মিনী জয়িতা বসু খান বলছিলেন ওস্তাদজীর চতুর্মুখী লক্ষ্যের কথা।ওস্তাদজী জন্মদিনে স্থির করেছেন যে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তিক এলাকায় সংগীত জগতের পেশার সঙ্গে নিযুক্ত বিশেষ করে যারা গান-বাজনার শিক্ষকতা করেন সেইসমস্ত মানুষগুলিকে কিভাবে রক্ষা করা যায়। আর এই কাজে সহযোগিতা করতে পারেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা আমাদের ছাত্র-ছাত্রী ও বেশ কিছু বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পীরা।

প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন বিশিষ্ট তবলা বাদক আকরাম খানের কথা , যিনি ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করেছেন এমন কিছু শিক্ষক যারা এখন খুব সংকটে আছেন। তাদের কাছ থেকে বহু নামী দামী শিল্পী তৈরি হয়েছে। সেরকমই ওস্তাদজির জন্মস্থান উত্তরপ্রদেশের বদায়ুন জেলায় সেখানেও এই ধরনের বহু মিউজিক টিচার আছেন যারা বর্তমানে খুব কষ্টে আছেন। মাত্র চার বছর বয়সে নিজের মাকে হারিয়েছেন, ওস্তাদ রাশিদ খান তাই তাঁর মায়ের নামে নামাঙ্কিত তাঁর শাখরী বেগম মেমোরিয়াল ট্রাস্ট। তাঁরা বিশ্বাস করেন- যে কাজে ওস্তাদজী হাত দিয়েছেন বা ভাবছেন বিভিন্ন মহল ও ব্যবসায়িক সংগঠন ,কর্পোরেট সেই কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন।

২) স্বাস্থ্যঃ দুঃস্থ সঙ্গীতশিল্পীদের স্বাস্থ্য কিংবা চিকিৎসা নিয়ে ওস্তাদজীর কি ভাবনা-চিন্তা?

জয়িতা বসু খানঃ একাডেমি দা ফিফট নোট গ্লোবাল সেন্টার অব এক্সেলেন্স এর সমস্ত ফ্যাকাল্টিদের নিয়ে তারা বেশ কিছু বেনিফিশিয়ারি ভাবনাচিন্তা নিয়েছেন। এই একাডেমির সহযোগী টাটা ক্যাপিটাল তাদের সারা ভারত জুড়ে বহু হাসপাতাল আছে। আমরা এই প্রস্তাব তাদের কাছে রাখব।

৩) কর্মঃ আগামী প্রজন্ম সম্পর্কে কি ভাবনা?

জয়িতা বসু খানঃ সম্প্রতি “সেতু বন্ধনম্ “নামে একটি অনুষ্ঠান ডিজিটালি আমরা করেছি, যার মাধ্যমে ভারত তথা ভারতের বাইরে থেকে মোট পাঁচটি দেশের 21 জন বাডিং মিউজিশিয়ানকে তারা চিহ্নিত করেছেন। আমেরিকা, কানাডা, দুবাই বাংলাদেশ প্রমুখ জায়গায় ইতিমধ্যেই এই প্রজেক্ট খুবই সাড়া ফেলেছে।

আমরা প্রশ্ন রেখেছিলাম ওস্তাদজী একাডেমি ইতিমধ্যেই তিন জায়গায় অবস্থিত, তার ভবিষ্যতে পরিকল্পনা কি? উত্তরে মিসেস খান বলেন- বিভিন্ন জায়গা থেকে আমাদের কাছে প্রস্তাব আসছে শাখা খোলার জন্য, কিন্তু খুললেই তো হবে না দরকার যোগ্য পরিকাঠামো, সে জায়গাটা আমরা পেলে আমরা অবশ্যই সম্প্রসারণ করব। বিদেশের বহু সংস্থা আমাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছে তাদের ওখানে একটি উন্নত মানের সংগীত শিক্ষা কেন্দ্র চালু করার জন্য আমাদের ভাবনা আছে দেখা যাক ভবিষ্যতে কি হয়। এখন তো কোভিড-১৯ নিয়ে আমরা যুদ্ধ করছি।

৪) শিক্ষাঃ গান-বাজনা কে কিভাবে পেশা করা যায় এ বিষয়ে ওস্তাদজীর কি ভাবনা বা দ্য ফিফথ নোট সেন্টার অব এক্সিলেন্স-এ কি চিন্তাধারা?

জয়িয়া বসু খানঃ গান বাজনার পাশাপাশি যেটা দরকার সেটা হল- অত্যন্ত পেশাদারিত্ব, ডিজিটাল নলেজ, ওভারঅল প্রেজেন্টেশন ইত্যাদি। ইতিমধ্যেই একাডেমিতে শুরু হয়ে গেছে তার তালিম কি করে একটা উপস্থাপনা খুব সুন্দরভাবে করা যায়, যেটার গুণগত মান অত্যন্ত উন্নত মানের। এ বিষয়ে একাডেমির বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষক নিয়মিতভাবে ক্লাস করছে্‌ যেমন- স্টেজ পারফরম্যান্স, সাউন্ড ব্যালেন্সিং, ইমেজ বিল্ডিং ইত্যাদি।

ত্রিপুরা সরকার ওস্তাদজিকে জমি দিয়েছেন সেখানেকার সংস্কৃতিকে উন্নত করবার জন্য এবং সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে ওস্তাদজি সেটা এগিয়ে নিয়ে চলেছেন।পশ্চিমবঙ্গের সরকারের কাছে কেন উনি জমি চাইছেন না?

জয়িতা বসু খানঃ  জমি হয়তো পেয়ে যাবেন কিন্তু পরিকাঠামো তৈরি করতে বিশেষ করে গ্লোবাল প্যাটার্নে ,সেটা অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ যেখানে গান-বাজনা ডিগ্রি থেকে পারফর্মার তৈরি করা হবে। তার লক্ষ্য ট্রিনিটি কলেজের মতো শিক্ষা পদ্ধতি। খুব দুঃখের সঙ্গে বলছি যে ভারতে সব মিলিয়ে ১৫৪টি মিউজিক কলেজ, ইউনিভার্সিটি আছে এখানে যেখানে শুধুমাত্র ডিগ্রির উপরে জোর দেওয়া হয় কিন্তু পারফর্মার কোথায়? এই বিষয়টা ওস্তাদজীকেও ভাবায়। আমাদের একাডেমির প্রাক্তনরা তারা বিভিন্ন জায়গায় পারফরম্যান্স করে অর্থ উপার্জন করছে। ভবিষ্যতে যদি সুযোগ আসে নিশ্চয়ই তারা পশ্চিমবঙ্গেও কিছু করার কথা ভাববেন কিন্তু তার জন্য দরকার প্রচুর অর্থ।

বলিউডে কিভাবে নিজেকে মেলে ধরলেন ওস্তাদজী?

জয়িতা বসু খানঃ ইতিহাস যদি দেখি এর আগেও বহু উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিল্পী বিভিন্ন সিনেমায় সুরারোপ করেছেন গান করেছেন উল্লেখ্য ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলি খান, পণ্ডিত রবিশঙ্কর, শিব কুমার শর্মা পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া প্রমুখ। বিষয়টা হলো যেটা ভালো করে রপ্ত করা যাবে সেটা অবশ্যই যে কোন দিকে তার প্রতিফলন ঘটবে সেটা উচ্চাঙ্গসংগীতই হোক এটা রবীন্দ্র সংগীতই হোক বলিউড নিষ্ঠা ভরে যা করা যাবে সেটা অবশ্যই একটা মাত্রা পাবে।

Published on: জুলা ১, ২০২০ @ ২২:০৩


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

− 1 = 8