পুলওয়ামা জঙ্গি হামলা মামলায় ১৩,৮০০ পৃষ্ঠার চার্জশিট দাখিল করল এনআইএ, নাম আছে মাসুদ আজাহার সহ সাত পাকিস্তানির

Main দেশ
শেয়ার করুন

মাসুদ আজহার সমেত সাত পাকিস্তানি সমেত মট ১৯জন আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করল ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি।
৬জন পলাতক, সাতজন গ্রেফতার এবং বাকি ছয়জন নিহত বলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে।
গাড়িতে রাখা ২০০ কিলোগ্রামের বিস্ফোরক সমেত আত্মঘাতী গাড়ি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নাশকতা ঘটায় জঙ্গি আদিল আহমেদ দর।
শহীদ হন আমাদের দেশের ৪০জন জওয়ান।আহত হন আরও আটজন।
এই নাশকতার ঘটনায় দেশের সম্পত্তি ক্ষতির পরিমাণ ৩২লক্ষ ৯০ হাজার ৭১৯রুপি।
 Published on: আগ ২৫, ২০২০ @ ২৩:১২
Reporter: Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ:   মাত্র দেড় বছরের মাথায় ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি বা এনআইএ পুলওয়ামা জঙ্গি মামলায় ১৩,৮০০ পাতার চার্জশিট দাখিল করল। এই চার্জশিটে জৈশ-ই-মহম্মদ প্রধান পাকিস্তানি নাগরিক মাসুদ আজহার সহ মোট ১৯জন আসামির নাম আছে। যাদের মধ্যে সাতজন পাকিস্তানি নাগরিক আছে। এক্ষেত্রে একটা জিনিস প্রমাণ হয়ে গিয়েছে যে এই হামলার ঘটনাতেও পাকিস্তানের প্রচ্ছন্ন মদত ছিল, তা সে পাকিস্তান যতই অস্বীকার করুক না কেন। এনআইএ এক ট্যুইট করে এই খবর দিয়েছে। যেখানে তারা হামলায় ব্যবহৃত একটি গাড়ি এবং আইআইডি তৈরি করা জঙ্গিদের ছবিও তারা প্রকাশ করেছে।

এনআইএ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি জম্মু থেকে শ্রীনগরের উদেশ্যে রওনা হওয়া সিআরপিএফ-এর কনভয়ের উপর জঙ্গি হামলা চালায়। সেখানে গাড়ি বোমা বিস্ফোরণে মোট ৪০জন জওয়ান শহীদ হয়। এছাড়াও আরও আটজন আহত হয়।এই হামলার ঘটনার তদন্ত শুরু করে তারা ১৯জন আসামির নাম দিয়ে ১৩,৮০০ পৃষ্ঠার চার্জশিট দাখিল করেছে। যেখানে সাত জৈশ ই মহম্মদ প্রধান মাসুদ আজাহার সহ সাত পাকিস্তানি নাগরিকের নাম আছে। তালিকায় থাকা নামগুলির মধ্যে ৬জন পলাতক, সাতজন গ্রেফতার এবং বাকি ছয়জন নিহত বলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে।  তালিকায় থাকা আসামিরা হলেন-

১)মাসুদ আজহার,৫২বছর,পাকিস্তানি নাগরিক,(পলাতক),

২)রৌফ আজগর,৪৭বছর,পাকিস্তানি নাগরিক,(পলাতক),

৩)আম্মর আলভি,৪৬বছর,পাকিস্তানি নাগরিক,(পলাতক),

৪)শাকির বসির,২৪ বছর, কাকাপুরা, পুলওয়ামা,জম্মু ও কাশ্মীর(গ্রেফতার)

৫)ইনসা জান, ২২বছর, কাকাপুরা, পুলওয়ামা,জম্মু ও কাশ্মীর(গ্রেফতার)

৬)পীর তারিক আহমেদ শাহ, ৫৩বছর, কাকাপুরা, পুলওয়ামা,জম্মু ও কাশ্মীর(গ্রেফতার)

৭)ওয়াইজ-উল-ইসলাম, ২০ বছর, শ্রীনগর, জম্মু ও কাশ্মীর,(গ্রেফতার)

8)মহম্মদ আব্বাস রাথের, ৩১বছর, কাকাপুরা, পুলওয়ামা,জম্মু ও কাশ্মীর(গ্রেফতার)

৯)বিলাল আহমেদ কুচ্চে, ২৮ বছর্, হাজিবাল, লালহার, পুলওয়ামা, জম্মু ও কাশ্মীর (গ্রেফতার)

১০)মহম্মদ ইকবাল রাথের, ২৫বছর, ছরার-ই-শরীফ, বুদগাঁও,জম্মু ও কাশ্মীর(গ্রেফতার)

১১)মহম্মদ ইসমাইল, ২৫বছর, পাকিস্তানি নাগরিক(পলাতক)

১২)সমীর আহমেদ দর, ২২বছর, কাকাপুরা, পুলওয়ামা, কাশ্মীর (পলাতক)

১৩) আষাক আহমেদ নিনগ্রু, ৩৩ বছর, রাজপুরা, পুলওয়ামা, (পলাতক)

১৪)আদিল আহমেদ দর, ২১ বছর,কাকাপুরা, পুলওয়ামা, কাশ্মীর (নিহত)

১৫)মহম্মদ উমর ফারুক, ২৪বছর, পাকিস্তানি নাগরিক(নিহত)

১৬)মহম্মদ কামরান আলি, ২৫ বছর, পাকিস্তানি নাগরিক(নিহত)

১৭)সাজ্জাদ আহমেদ ভাট, ১৯ বছর, বিজবেহরা, অনন্তনাগ, (নিহত)

১৮)মুদাসির আহমেদ খান,২৪ বছর, অনন্তিপুরা, পুলওয়ামা, (নিহত)

১৯)কুয়ারি ইয়াসির, পাকিস্তানি নাগরিক(নিহত)।

তদন্তে বলা হয়েছে যে এই হামলা পাকিস্থানি মদতপুষ্ট জঙ্গি সংগঠন জৈশ-ই-মহম্মদ-এর সুপরিকল্পিত অপরাধের ষড়যন্ত্র। যেখানে তারা আল্কায়দা-তালিবান-জৈশই মহম্মদ এবং আফগানিস্তানের হাক্কানি-জৈশই মহম্মদের প্রশিক্ষণ শিবির থেকে জঙ্গিদের পাঠানো হয়েছিল এই নাশকতা ঘটানোর কাজে।

হামলার প্রধান আসামী পাকিস্তানি নাগরিক মহম্মদ ওমর ফারুক

আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে এই মামলার প্রধান আসামী পাকিস্তানি নাগরিক মহম্মদ ওমর ফারুক ২০১৬-১৭ সালে আফগানিস্তানে বিস্ফোরক প্রশিক্ষণের জন্য গিয়েছিল। সে ২০১৮ সালে জম্মু-সামবা আন্তর্জাতিক সীমান্ত দিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশ করেছিল এবং পুলওয়ামায় জৈশ ই মহম্মদের কম্যান্ডারের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিল। এরপর মহম্মদ ওমর ফারুক তার পাকিস্তানি সঙ্গী মহম্মদ কামরান, মহম্মদ ইসমাইল ওরফে সোইফুল্লা এবং কুয়ারি ইয়াসির এবং স্থানীয় সমীর দর ও আদিল আহমেদ দরের সঙ্গে বসে ইম্প্রোভাইজ এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস দিয়ে পুলওয়ামায় নাশকতা ঘটানোর ছক কষেছিল।

যেভাবে হামলার ছক কষেছিল পাকিস্তানি মদতপুষ্ট জঙ্গিরা

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে মহম্মদ ওমর ফারুক, সমীর আহমেদ দর, আদিল আহমেদ দর এবং শাকির বসির আরডিএক্স, ক্যালসিয়াম অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, জিলেটিন স্টিক্স, অ্যালুমিনিয়াম পাউডার, দু’টি কন্টেইনারের মধ্যে সেট করে। যার একটির ওজন ছিল ১৬০ কিলোগ্রাম এবং ওপরটির ওজন ছিল ৪০ কিলোগ্রাম।এরপর এই দুটি কন্টেইনারকে মারুতি ইইসিও গাড়িতে সেট করা হয়, ২০১৯ সালের ৬ ফেব্রুয়ারির জন্য। কিন্তু সেদিন প্রচন্ড তুষারপাতের ফলে জাতীয় সড়ক বন্ধ থাকায় তাদের অপারেশন বন্ধ থাকে।

২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সড়ক ফের খোলা হয়। শাকির বসির মারুতি গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যায়। সঙ্গে ছিল আদিল আহমেদ দর। পরে আদিল গাড়ির দায়িত্ব নেয়। সে নিজেই গাড়ি চালিয়ে জাতীয় সড়কে ঘটনাস্থলে নিয়ে যায়। আর গাড়িতে রাখা ২০০ কিলোগ্রামের বিস্ফোরক সমেত আত্মঘাতী গাড়ি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নাশকতা ঘটায় জঙ্গি আদিল আহমেদ দর এবং শহীদ হন আমাদের দেশের ৪০জন জওয়ান। এই নাশকতার ঘটনায় দেশের সম্পত্তি ক্ষতির পরিমাণ ৩২লক্ষ ৯০ হাজার ৭১৯রুপি।

আরও একটি আত্মঘাতী হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছিল জঙ্গিরা

তদন্তে জানা গেছে যে মাসুদ আজাহার, রউফ আজগর এবং আম্মার আলভী নিয়ে গঠিত পাকিস্তান ভিত্তিক জেএম নেতৃত্ব,  ছোটা মাসুদ হামলার আগে এবং পরে উভয়েই পাকিস্তানি জেএম জঙ্গিদের (যারা ভারতে অনুপ্রবেশ করেছিলেন)কে নিরন্তর নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছিলেন।তারা আরও একটি আত্মঘাতী হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছিল যা বালাকোটের কারণে এবং প্রধান ষড়যন্ত্রকারী মহম্মদ ওমর ফারুককে সুরক্ষা বাহিনী কর্তৃক হত্যার কারণে প্রতিহত করা হয়েছিল। তাছাড়া, আন্তর্জাতিক চাপের কারণে পাকিস্তান কম মিথ্যা বলেছিল।

Published on: আগ ২৫, ২০২০ @ ২৩:১২


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

63 + = 64