পুলওয়ামা কান্ডের মাস্টারমাইন্ড সহ ৩ জঙ্গি হত, এনকাউন্টার খতম-শহীদ ৫ জওয়ান

দেশ
শেয়ার করুন

Published on: ফেব্রু ১৮, ২০১৯ @ ১৬:৩৩

এসপিটি নিউজ, শ্রীনগর, ১৮ ফেব্রুয়ারিঃ কয়েকদিন আগেই সিআরপিএফ জানতে পেরেছিল জৈশ-ই-মহম্মদের জঙ্গিরা পুলওয়ামার আশপাশেই লুকিয়ে আছে। পরিস্থিতি যা তাতে তারা খুব বেশি দূর যেতে পারবে না। আর ঘটনার পর থেকেই পুলওয়ামার চারিদিকে ঘিরে ফেলেছিল ভারতীয় সেনা। সীমান্তের উপর কড়া নজর রাখা হয়েছিল। একই সঙ্গে সেনারা ছক কষে জানতে পেরেছিল জৈশ-ই-মহম্মদের জঙ্গিরা এই আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ঠিক কোন দিকে কতটা যেতে পারে পায়ে হেঁটে। সেই ছক ধরেই পৌঁছে যায় পুলওয়ামা আত্মঘাতী গাড়ি বিস্ফোরন কান্ডের মাস্টারমাইন্ড গাজি রশিদের ডেরায়। সেখানে চারিদিক দিয়ে ঘিরে ফেলে গুল চালাতে থাকে জওয়ানরা। কয়েক মিনিটের মুহূর্তেই গাজি খতম হয়।ঙ্খতম করা হয় আরও দুই জঙ্গিকে।তবে এই লড়াইয়ে ভারতীয় সেনার একজন মেজর সমেত পাঁচ জওয়ান শহীদ হয়েছেন।

এরপর সেনা এক বিল্ডিং উড়িয়ে দেয়। যেখানে ঘাঁটি গেড়েছিল জৈশের জঙ্গিরা। জঙ্গি কামরান ওরফে গাজি রশিদ সেনার গুলিতে নিহত হয়েছে। নিহত হয়েছে আরও দুই জঙ্গি। সূত্রের খবর, এই গাজীই ছিল পুলওয়ামা কান্ডের মাস্টারমাইন্ড। এই গোটা হত্যাকান্ডের ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করেছিল।এই ঘটনার পর জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন ডিজিপি বৈদ্য এক ট্যুইট করে লেখেন-নিরাপত্তারক্ষীদের ধন্যবাদ দিতে চাই এই কারণে যে তারা পুলওয়ামা কান্ডের মাস্টারমাইন্ডকে খতম করতে পেরেছে।

পুলওয়ামা কান্ডের পর থেকে গোটা দেশ ক্ষেপে আছে। ক্ষোভের আগুনে ফুঁসছে দেশবাসী। প্রধানমন্ত্রী সেনাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়ায় তারা এখন জঙ্গি নিধনে কোমর বেঁধে নেমেছে। গোটা এলাকা ঘিরে ফেলে সেনারা। সেনাদের এমন অতর্কিত অভিযানে জঙ্গিরা পালানোর পথ পায়নি। নিরাপত্তারক্ষীরা এগিয়ে যায় সেই বাড়িটির দিকে যেখানে ঘাঁটি গেড়েছিল মাস্টারমাইন্ড গাজী। সেনারা সুযোগ দেয়নি। সোজা গুলি চালায় গাজীর মাথা লক্ষ্য করে। সেখানেই লুটিয়ে পরে জৈশের এই জঙ্গি। এই সময় গোটা এলাকায় কার্ফু জারি করা হয়। তবে পরে তা তুলে নেওয়া হয়।সেনা প্রধান বিপিন রাওয়াত আজ প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের সঙ্গে দেখা করেন। সেখানে তিনি এদিনের এনকাউন্টার সম্পর্কে সব তথ্য তুলে ধরেন।

কামরান ওরফে গাজী জৈশ-ই-মহম্মদের একজন টপ কম্যান্ডার। তাকেও এদিন প্রথমে সেনা ঘিরে ফেলে চারিদিক থেকে। তিনিও পুলওয়ামা কান্ডের মূল ষড়যন্ত্রী ছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে। এদিকে দিল্লিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বড় ধরনের জরুরী বৈঠক শুরু হয়েছে।

সেনাদের প্রথম লক্ষ্য ছিল “অপারেশন-২৫”। অর্থাৎ পুলওয়ামা কান্ডে জড়িত জঙ্গিরা ঘটনার পর ২৫ কিলোমিটারের বেশি যেতে পারেনি। তাই এই স্থানের মধ্যেই তাদের পাওয়া যাবে। সত্যিই সেনারা ২৫ কিলোমিটারে মধ্যে তল্লাশি চালিয়ে প্রথম অপারেশনে খতম করে মাস্টারমাইন্ডকে। এরপর তাদের লক্ষ্য “অপারেশন-৬০”। এই সময় গ্রামের মানুষজনকে বের করে দিয়ে গুলির লড়াই চলতে থাকে।১৮ ঘণ্টা ধরে চলে এই এনকাউন্টার।

এই অপারেশনে 55RR, CRPF EBONG SOG-জওয়ানরা যৌথভাবে চালিয়েছে। তবে এই অপারেশনে যারা শহীদ হয়েছেন তারা হলেন মেজর ডিএস ডোন্ডিয়াল, হেড কনস্টেবল সেবা রাম, কনস্টেবল অজয় কুমার, কনস্টেবল হরি সিং ও গুলজর আহমেদ। এছাড়াও ১২ সেক্টর রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের ব্রিগেডিয়ার কম্যান্ডার জখম হয়েছেন। জখম হয়েছেন কাশ্মীর পুলিশের ডিয়াইজি অমিত কুমার। তাঁর পায়ে গুলি লেগেছে। তাঁকে শ্রীনগরে আর্মি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়াও দু’জন জওয়ান ও একজন লেফটন্যান্ট কর্নেল জখম হয়েছেন। এই এনকাউন্টারে একজন স্থানীয় নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। গোটা এলাকা ঘিরে ফেলা হয়। পুলওয়ামা জেলায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়।এই সময় স্থানীয় কিছু মানুষ সেনাকে লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়তে থাকে।

কে এই গাজী রশিদ

জৈশ-ই-মহম্মদ প্রধান মাসুদ আজহার তার ভাইপোকে দায়িত্ব দিয়ে জঙ্গি কাজকর্মা চালাচ্ছিল। কিন্তু গত বছর অপারেশন অলআউট-এর ফলে নিরাপত্তারক্ষীরা তাকে খতম করতে সফল হয়। এরপর থেকে মাসুদ আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। আর তখন সে কাশ্মীরের দায়িত্ব দেয় দলের টপ কম্যান্ডার এভনহ আইইডি এক্সপার্ট গাজী রশিদকে। মনে করা হচ্ছে গত ডেসেম্বর মাসে গাজী তার দুই সহযোগীকে নিয়ে ভারতে ঢুকে পড়ে। এরপর সে দক্ষিণ কাশ্মীরে লুকিয়ে জঙ্গি কার্যকলাপ চালাতে থাকে এর এই হামলার ছক কষতে থাকে। এও বলা হয় যে গাজী আসলে মাসুদ আজহারের খুব বিশ্বস্ত লোক।

২০০৮ সালে গাজী জৈ-ই-মহম্মদে যোগ দেয়। তালিবানে প্রশিক্ষণ নেয়। ২০১০ সালে গাজী ওয়াজিরিস্তানে চলে আসে। তারপর থেকেই সে জঙ্গিদের পরিবারের একজন সক্রিয় সদস্য হয়ে ওঠে। এরপর সে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর এলাকার যাদের প্রশিক্ষণ দিতে আরম্ভ করে।

Published on: ফেব্রু ১৮, ২০১৯ @ ১৬:৩৩

 

 

 


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

− 2 = 2