Published on: সেপ্টে ২, ২০১৮ @ ১৯:২২
এসপিটি নিউজ, নন্দীগ্রাম, ২ সেপ্টেম্বরঃ কয়েকদিন আগেও কথা হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। এত তাড়াতাড়ি যে এমন দুর্বিসহ হয়ে উঠবে তাদের জীবন, পরিবারে নেমে আসবে ঘোর অন্ধকার – তা কখনই ভাবতে পারেননি বুদ্ধদেবের বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান কেউই। কিন্তু সময় যে কার কাছে কখন কিভাবে আসে তা কেউ বলতে পারে না- আর তাই পুজোর মুখে গোটা পরিবার আজ ভয়াবহ সঙ্কটের মুখে এসে দাঁড়াল।পুজোর আগেই বাড়ি ফেরার কথা ছিল তাঁর। সেই এল-কিন্তু কফিনবন্দি দেহ। এভাবে ছেলেকে দেখতে হবে, তা ভাবতেই পারছিলেন না বীর সন্তানের মা প্রতিমা পন্ডা।
বাড়িতে তখন তিল ধারণের জায়গা নেই। নন্দীগ্রামের চিল্লগ্রামে তখন শোকের ছায়া। সকলের চোখেই জল। গোটা পরিবার নিথর। অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ঘন ঘন মূর্চ্ছা যাচ্ছিলেন।পাশে দাঁড়িয়ে বাবার মৃতদেহের দিকে নিষ্পলক দৃষ্টিতে চেয়েছিল ছোট্ট শিশুটি। তাকে সামলানোর তখন কেউ নেই। এমন মুহূর্ত যে কেউ কল্পনাও করেননি।
তেরঙা জাতীয় পতাকায় মোড়া বুদ্ধদেব পন্ডার কফিনবন্দি মৃতদেহ যখন গ্রামে ঢোকে তখন কান্নার রোল ওঠে। গোটা গ্রামে খুবই জনপ্রিয় ছিলেন বুদ্ধদেব। গ্রামে এলে সবাইকে মাতিয়ে রাখতেন। সদা হাসি-খুশি মনের এই তরতাজা যুবক ছিল চিল্লগ্রামের গর্ব। সবাই বলতেন- ‘আমাদের বুদ্ধদেব দেশের সেবার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছে। বুদ্ধ সেনাবাহিনীতে আছে।’
উচ্চমাধ্যমিক পাশের পর বছর ছয়েক আগে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন বুদ্ধদেব। সপ্তাহ দুয়েক আগেই বাড়ি থেকে কর্মস্থল লক্ষ্ণৌতে ফিরে গেছিলেন। বলে গিয়েছি্লেন- এবার পুজোয় আসবেন। বৃহস্পতিবার রাতে শেষবার কথা হয়েছিল স্ত্রীর সঙ্গে।
কিন্তু সব থেমে গেল। আর কখনও কোনোদিন গ্রামের কেউ বুদ্ধদেবের গলার আওয়াজ শুনতে পাবেন না। বন্ধুরা তাঁর সঙ্গ পাবেন না। কোনওদিন বুদ্ধদেবকে দেখা যাবে না গ্রামের পথে। সবাইকে ছেড়ে গ্রামের সকলের প্রিয় বড় আপন সদা হাস্যময় বুদ্ধদেব যে অনেক দূরের পথে পাড়ি দিয়েছেন। মাত্র ২৬ বছর বয়সেই নিভে গেছে চনমনে তরতাজা এই সাহসী বীর যুবকের প্রাণের জ্যোতি। ভারতমাতার বীর সন্তান বুদ্ধদেব পন্ডাকে এদিন গোটা গ্রাম জানাল তাদের অন্তরের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা আর আন্তরিকতা।
Published on: সেপ্টে ২, ২০১৮ @ ১৯:২২