পারিবারিক পরম্পরা মেনেই আজও উজ্জ্বল বেহালায় অরবিন্দ পল্লীর রায় পরিবারের জন্মাষ্টমী মহোৎসব

Main দেশ ধর্ম ভ্রমণ রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: আগ ৩০, ২০২১ @ ২৩:৫২
Reporter: Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ, বেহালা, ৩০ আগস্ট:   সারা বিশ্বেই আজ পালিত হয়েছে শ্রীকৃষ্ণের ৫২৪৮ তম জন্মোৎসব জন্মাষ্টমী মহোৎসব। দেশের একাধিক তীর্থভূমিতে পালিত হয়েছে এই উৎসব।সেই মতো নজর কেড়েছে বেহালায় অরবিন্দ পল্লীতে রায় পরিবারের জন্মাষ্টমী মহোৎসব উদযাপন। পারিবারিক পরম্পরা মেনেই দীর্ঘ ৫৫ বছর ধরে চলে আসছে এই উৎসব, যা আজও সমানভাবে উজ্জ্বল হয়ে আছে। পারিবারিক এই জন্মাষ্টমী মহোৎসব আজ পরিবারের গন্ডি ছাড়িয়ে এলাকার হাজার হাজার কৃষ্ণানুরাগীদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। তারা সকলেই আজ মেতেছেন এই মহান উৎসবে, যা সত্যিই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

রায় পরিবারের সদস্য সঞ্জয় রায় জানালেন ইতিহাস

রায় পরিবারের সদস্য ফার্মাকন ভেট প্রাইভেট লিমিটেডের কর্ণধার সঞ্জয় রায় সংবাদ প্রভাকর টাইমসকে জানালেন তাদের পরিবারের জন্মাষ্টমী মহোৎসব পালনের মাহাত্ম্য। “১৯৬৭ সালে আমার জন্মের পর জন্মাষ্টমীতে মুখে প্রসাদ দিয়ে মুখেভাত দিয়েছিলেন আমার ঠাকুরদা। কিন্তু ১৯৮০ সালের পর এই জন্মাষ্টমীর দিনই আমার ঠাকুরদা ও ঠাকুমা দু’জনেই ইহলোক ত্যাগ করেছিলেন। সেই থেকে আমার বাবা-কাকারা চারভাই তাঁরা ঠাকুরদা-ঠাকুরমার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে জন্মাষ্টমী উৎসব পালন করা শুরু করেন। সেই থেকে এখন পারিবারিক পরম্পরা মেনে আমরাও এই মহোৎসবকে মহাসমারোহে পালন করে চলেছি।”

জন্মাষ্টমী উৎসবের বিশেষত্ত্ব

“জন্মাষ্টমী উৎসবের বিশেষত্ব – এই অনুষ্ঠানকে অষ্টম প্রহর বলা হয়। আমরা যেহেতু বৈষ্ণব মন্ত্রে দীক্ষিত সেই অনুসারে আমাদের জন্মাষ্টমীতে দুটো করে তিথি পড়ে। প্রথম তিথিকে বলা হয় শাক্ত মত আর দ্বিতীয় তিথিকে বলা হয় বৈষ্ণব মত। সেই মতো এ বছরে অবশ্য একটা মতই পড়েছে বৈষ্ণব ও শাক্ত। আগে এই অনুষ্ঠান চার দিন ধরে চলত। এখন তিন দিন ধরে এই অনুষ্ঠানটা চলে। প্রথম দিন গীতা পাঠ দিয়ে সূচনা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টায় সন্ধ্যারতি হয়। পরে শ্রীমদ্ভাগবদ পাঠ পরিবেশিত হয়। এর পর সাড়ে আটটা নাগাদ লীলা কীর্তন শুরু হয়। এর পর আমাদের অষ্টাঙ্গ নামযজ্ঞ যাকে এক নাম বলা হয় সেটার অধিবাস শুরু হয়। হয় অখন্ড নামযজ্ঞ।”

অষ্ট প্রহরে কি হয়

“এই এক নাম অর্থাৎ হরে কৃষ্ণ হরে রাম একই সুরে ২৪ ঘণ্টা হয়। এটা আটটা প্রহর হয়। যখন যে প্রহরে গান চলে তখন সেই প্রহরের সুরের উপর ভিত্তি করে এই হরে কৃষ্ণ হরে রাম হয়। যেহেতু সারা দিনে চার ঘণ্টা অর্থাৎ আটটা প্রহর হয়। প্রত্যেক প্রহরে পুজো হয়। কৃষ্ণের উদ্দেশ্যে পুজো হয়। কাল সারা দিন হয়েছে। আজ ভোর সাড়ে পাঁচটায় শুরু হয়েছে। আগামীকাল ৩১শে আগস্ট সকাল ছ’টায় এই অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হবে। অখন্ড নামযজ্ঞ হয়। তারপর আমরা পাড়ার আশপাশে নগর সংকীর্তন করতে বের হই।দুপুরে আমাদের ভোগ নিবেদন হয়। এরপর আমাদের ভোগের প্রসাদ বিতরণ হয়। প্রায় দেড় থেকে দু’হাজার লোক বসিয়ে খাওয়ানো হত। কিন্তু এ বছর কোভিড-১৯ মহামারীর জন্য আমরা স্কলের হাতে প্রসাদ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি।”

খাবারের তালিকায় যা যা থাকে

“খাবারের তালিকায় থাকে- কচু শাক , একটা লাবড়া। রাখা হয় আলুর তরকারি , এছাড়া এখানে চাটনি পায়েস ও মিস্টি থাকে।। এছাড়া তালের বড়া, মালপোয়া করা হয়।” বলেন সঞ্জয়বাবু।

“তালের বড়া, মালপোয়া সবাইকে দেওয়া হয় কাউকে বাদ দেওয়া হয় না। জন্মাষ্টমীর পরদিন পালিত হয় নন্দ উৎসব। আগামিকাল সাড়ে বারোটায় ভোগের পর প্রসাদ বিতরণ করা হবে সর্বসাধারণের উদ্দেশ্যে। সন্ধ্যায় বাউল গানের আয়োজন করা হয়। যেটা রাত সাড়ে বারোটা পর্যন্ত চলে। আগামিকাল শিল্পী আছেন আরতি রায়। তাঁর গানের অনুষ্ঠানের পরই সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে।” জানান সঞ্জয় রায়।

Published on: আগ ৩০, ২০২১ @ ২৩:৫২


শেয়ার করুন