নৈহাটিতে মমতার শপথ- জীবন দিতে রাজী আছি, কিন্তু ডিটেনশন ক্যাম্প বিজেপি-কে করতে দেব না

দেশ রাজ্য
শেয়ার করুন

  • “যারা আজ বলছেন- নাগরিকের জন্য সার্টিফিকেট নিতে হবে।তারা কোন সার্টিফিকেটের জন্য ক্ষমতায় এসেছে। তারা এদেশের নাগরিক হয়েছে কি করে?”
  • “মানুষ কি চাকর-বাকর হয়েছে? প্রতিদিন লাইনে গিয়ে দাঁড়াবে।”
  • “আমরা জনগনকে সাহায্য করবো, তার কাছ থেকে অধিকার কেড়ে নেব কেন?”

 সাংবাদিক: অনিরুদ্ধ পাল

Published on: ডিসে ২৭, ২০১৯ @ ২৩:১৬

এসপিটি নিউজ, নৈহাটি, ২৭ ডিসেম্বর:  নৈহাটি উৎসবের উদ্বোধন করতে এসে ফের বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এনআরসি-সিএএ নিয়ে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে রাজ্যবাসীকে অভয় দিয়ে গেলেন।সাফ জানিয়ে দিলেন- জীবন দিতে রাজী আছি, কিন্তু ডিটেনশন ক্যাম্প বিজেপি-কে এ রাজ্যে কিছুতেই করতে দেব না। অর্থাৎ

মনীষীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন

মমতা বক্তব্যের শুরুতে বলেন- “সাধের নৈহাটি যা একজন মনীষীর জায়গা। আরেকজন মনীষী ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে এই মেলা উৎসর্গ করা হচ্ছে। আমরা সবাই জানি, বাংলায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দুটো গান লিখেছিলেন- ‘জনগণমনঅধিনায়ক জয় হে’- দেশের জাতীয় সঙ্গীত।আর একটা বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত- ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।’ বাংলার আর এক মনীষী সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়-যিনি আমাদের ন্যাশনাল অ্যান্থিম রচনা করেছিলেন। এই সমস্ত মনীষীদের জায়গায় আসতে পারলে নিজেদের কৃতার্থ বলে মনে করি।”

উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরেন মমতা

তিনি বলেন- “মেলাগুলো হল সভ্যতার জয়গান। আমরা নৈহাটিতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক তৈরি করেছি। এখানে আমরা ১৬ কোটি টাকা খরচ করে স্টেডিয়াম তৈরি করে দিয়েছি। হালিশহরে সোলিডওয়েস্টের কাজ চলছে।যেখানে ২৭৫ কোটি টাকা দিয়ে সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট তৈরি হচ্ছে। বারাকপুর, পানিহাটি, কামারহাটি, দমদম, কাঁচরাপাড়া, হালিশহরে সমস্ত ভাষাভাষির বসবাস আছে। আমি যেদিন যাদবপুর থেকে প্রথমবার সাংসদ হয়েছিলাম সেবার সেখানকার মানুষ বলেছিলেন যে উদ্বাস্তুরা যাতে নিঃশর্ত জমির দলিল পায় সেটা করে দেবেন, আমি সেটা করে দিয়েছিলাম।”

মমতার প্রশ্ন বিজেপিকে

“আমরা বাংলায় সমস্ত উদ্বাস্তু কলোনিকে সরকার অনুমোদন করে দিয়েছে। কোনও কোনও রাজনৈতিক দল মিথ্যা কথা বলছে। একটা কাগজ পাঠিয়ে বলছে তারা নাকি নাগরিকত্ব দেবে। কত নাগরিকত্ব দেবেন আপনারা? কাকে নাগরিকত্ব দেবেন? আমি নাগরিকত্ব পেয়েছি অফিসিয়াল? আমি এই দেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমাদের নাগরিকত্ব মানে কি? ভোটার তালিকায় আমার নাম আছে। আমি একটা স্কুলে পড়াশুনো করেছি। আমাদের ছেলে-মেয়েরা চাকরি-বাকরি করে। কারও একটা দোকান আছে। কারও একটা ব্যাঙ্কের লাইসেন্স আছে। তা আমাকে তো কেন্দ্রীয় সরকার থেকে নাগরিকত্ব নিতে হয়নি। আবার কিসের নাগরিক? ভোট দিয়ে সরকার বানাই। আবার নাগরিকত্ব নিতে হবে নতুন করে? কতগুলো সরকার আমরা তৈরি করেছি। এতগুলো প্রধানমন্ত্রী দেশে হয়েছে। যারা আজ বলছেন- নাগরিকের জন্য সার্টিফিকেট নিতে হবে।তারা কোন সার্টিফিকেটের জন্য ক্ষমতায় এসেছে। তারা এদেশের নাগরিক হয়েছে কি করে? তাদের যদি নাগরিক হওয়ার জন্য প্রয়োজন না হয়, তা হলে মানুষকে কি ভাবে ওরা? মানুষ কি চাকর-বাকর হয়েছে? প্রতিদিন লাইনে গিয়ে দাঁড়াবে। আজ বলবে- আধাঁর কার্ড করো। কখনো বলবে প্যান কার্ড করো। কখনো বলবে ইনকাম ট্যাক্স কার্ড করো। কখনো বলবে রেশন কার্ড করো। কখনো বলবে ভোটার কার্ড করো। কটা কার্ড করবে? মানুষকে যেন কলের পুতুল পেয়েছে। যখন যা ইচ্ছে তাই করে যাচ্ছে। সবাই কি এখন বিজেপির মাদুলি পরে বেড়াবে? মতুয়া সম্প্রদায় যারা আছে তাদের ভুল বোঝাচ্ছে। আবার বলে লাইন দাও। আমি সেই লাইন দেবো- যে লাইনে আমার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।আমি সেই লাইন দেবো না, যে লাইনে আমার কেড়ে নেওয়া হবে। এটা মাথায় রাখবেন।” বলেন মমতা।

‘জনতার অধিকার কেড়ে নেব না’

মমতা আরও বলেন- “এখানে রাজা কেউ নেই, সবাই প্রজা। সকলের সমান অধিকার। বলে বেড়াচ্ছে ডিটেনশন ক্যাম্প করবে, আরে ক্ষমতায় কারা আছে? আমরাই আছি। আমি আমার জীবন দিতে রাজী আছি, কিন্তু ডিটেনশন ক্যাম্প আমি বিজেপি-কে এখানে করতে দেব না। এটা মাথায় রাখবেন। আর সরকারে আমরা আছি। রাজ্য সরকার এগুলো করে। আসামে করতে পেরেছিল কেন, সেখানে বিজেপির সরকার আছে বলে। তোমার অধিকার দিল্লিতে আমার অধিকার এখানে। আমাকে এসব দেখিয়ে লাভ নেই, আমি মানুষের আশীর্বাদে সাতবার পার্লামেন্টে মেম্বার হয়েছি। আমিও পাঁচ-ছ’টা মিনিস্ট্রি সামলে এসছি দিল্লিতে। আমিও বাংলায় আপনাদের আশীর্বাদে ছোটবেলা থেকে মানুষ হয়েছি। আইনটা ভালো বুঝি। কনস্টিটিউশনও ভালো বুঝি। সব ভুল ব্যাখ্যা করে কোনও লাভ নেই। জনগন বিপদে পড়ে এমন কোনও কাজ আমার দ্বারা হবে না, এটা মাথায় রাখতে হবে। আমরা জনগনকে সাহায্য করবো, তার কাছ থেকে অধিকার কেড়ে নেব কেন?”

“আমরা দিল্লি কা লাড্ডুর কথায় চলি না”

“আমি এই দেশটাকে চিনি না। আমি এই দেশে জন্মায়নি। আমরা জন্মেছি বঙ্কিমচন্দের দেশ। সেটা রামমোহন রায়ের দেশ। সেটা ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের দেশ। গান্ধিজির দেশ। নেতাজীর দেশ, রবীন্দ্র-নজ্রুলের দেশ। নবাবা সাহেব আম্বেদকরে দেশ, বিরসা-মুন্ডার দেশ। মৌলানা আবুল কালাম আজাদের দেশ। ভগত সিং-এর দেশ। আমরা দিল্লি কা লাড্ডুর কথায় চলি না। আমরা বাংলার ঐতিহ্যে চলি।”

Published on: ডিসে ২৭, ২০১৯ @ ২৩:১৬


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

11 − = 6