দিদি, আপনি ভোটের ময়দানে আত্মঘাতী গোল করে ফেলেছেন-কোচবিহারে বললেন মোদি

Main দেশ ভোট সংবাদ রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: এপ্রি ৬, ২০২১ @ ১৮:৪৫

এসপিটি নিউজ, কোচবিহার, ৬ এপ্রিল:  ইতিমধ্যেই দুই দফায় ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। আজ চলছে তৃতীয় দফার ভোট। দু দফাতেই অনেকটা পরিষ্কার হয়ে গেছে। সেখানে মানুষ বেশির ভাগ ভোট বিজেপিকেই দিয়েছে। আর কথা নিয়ে দিদি, প্রশ্ন তুলেছেন যে বিজেপিকি কি ভগবান! তারা জেনে গেল কারা জিতছে? এ প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আজ কোচবিহারের জনসভায় দাঁড়িয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁর প্রশ্নের উত্তর দেন এবং বুঝিয়ে দেন -ঠিক কিসের উপর ভিত্তি করে তিনি বলেছেন আগের দুই দফায় সবচেয়ে বেশি ভোট বিজেপি পাচ্ছে। একই সঙ্গে মোদি জানিয়ে দেন- দিদি, আপনি ভোটের ময়দানে আত্মঘাতী গোল করে ফেলেছেন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আজ কোচবিহারের জনসভায় দাঁড়িয়ে অত্যন্ত জোরে সঙ্গে বলে চলেন- দিদি, আপনি হেরে গেছেন। আর এজন্য ভগবানকে জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন নেই। আর তার জন্য কিছু দিকের উপর নজর দিলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে দিদি, আপনি হেরে গেছেন।

আপনাদের ভালোবাসা আমি ব্যার্থ হতে দেবো না-মোদি

“আমি শুনেছি যে দিদি এক প্রশ্ন তুলেছে- বিজেপি কি ভগবান নাকি যে প্রথম দুই দফায় তাদের প্রচুর আসনে জয় আসতে চলেছে? দিদি! ও দিদি! আরে দিদি!আমরা তো খুব সাধারণ মানুষ। ঈশ্বরের আজ্ঞায় ঈশ্বরের আশীর্বাদে দেশ সেবায় নিয়োজিত আছি। আপনারা আমাকে আজ যে ভালোবাসা দিচ্ছে না ২ মে বিজেপির সরকার গঠনের পর সুদ সমেত ভালোবাসা দিয়ে এলাকায় উন্নয়ন করে আপনাদের ফেরত দেবো। আপনাদের ভালোবাসা আমি ব্যার্থ হতে দেবো না।” বলেন মোদি।

বাংলায় বিজেপির এমন ঢেউ চলছে-মোদি

প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন- “গত দু’দফার ভোটে দিদির যাওয়া স্থির হয়ে গেছে। গত দুই দফার ভোটে জনতা লাইন দিয়ে ভোট দিয়েছে। বিজেপির পক্ষে ভোট দিয়েছে। আজও খুব ভালো ভোট পড়ছে। বাংলায় বিজেপির এমন ঢেউ চলছে যেখানে দিদির গুন্ডা, দিদির ভয়কে তালা লাগিয়ে দিয়েছে।”

প্রধানমন্ত্রী মোদির নজরে এই দশ কারণ- যা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করলেন

আজ কোচবিহারের জনসভা থেকে মোট দশটি কারণ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। এই কারণ তুলে ধরে মোদি দাবি করেন যে এবারার বিধানসভা ভোটে দিদি হারছেন। কি সেই কারণ, আসুন তাহলে শুনে নেওয়া যাক প্রধানমন্ত্রী মোদির মুখ থেকেই।

১) “দিদি! ও দিদি! ভোটে কে জিতবে কে হারবে এ জানার জন্য ভগবানকে কষ্ট দেওয়ার প্রয়োজন নেই। এ তো জনতা-জনার্দন দেখছেন। এরাই তো ভগনবানের রূপ। আরে জনতা-জনার্দনের চেহারা দেখে জানা যায় যে হাওয়ার রূপ কেমন। এরাই তো ঈশ্বরের অবতার।”

২) “আর দ্বিতীয়- আদরনীয় দিদি- নির্বাচনের বিষয়ে কিভাবে জানা যায় অনুমান কিভাবে হয় ? এক তো আপনার রাগ, আপনার ক্ষোভ, আপনার ব্যবহার, আপনার বাণী এ সব কিছু দেখে একটি শিশুও বলে দিতে পারে দিদি আপনি ভোটে হেরে গেছেন। দিদি আপনি ময়দান ছেড়ে দিয়েছেন।”

৩)”আপনাকে রোজ বলতে হচ্ছে- আপনি নন্দীগ্রাম জিতছেন। নন্দীগ্রাম জিতছেন। আদরনীয় দিদি! ও দিদি! দিদি ভোটের দিন ভোট চলার সময় নন্দীগ্রামের ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে যে খেলা খেলেছেন যে কথা বলছেন সেই দিনই গোটা দেশ মেনে নিয়েছে আপনি হেরে গেছেন। এজন্য ভগবানকে জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন নেই দিদি! যখন আপনাদের প্রার্থী এই ঘোষণা করে যে দিদি আপনি বেনারস থেকে লোকসভা ভোট লড়বেন। তো খুব সহজেই বোঝা যায় যে বাংলায় টিএমসি মুছে যেতে বসেছে। বাংলায় টিএমসি আর টিকবে না। দিদিকে রাজনীতি করতে হলে বাংলার বাইরে যেতে হবে। এ আপনার পার্টি বলছে। এখন আপনারাই বলুন তো- এসব জানার জন্য ভগবানকে জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন আছে কিনা? আপনাদের কি মনে হচ্ছে না দিদি হারছেন।”

৪) “আদরনীয় দিদি, ও দিদি! এ এক মহত্বপূর্ণ কথা। আপনি বলছেন- সব মুসলমান এক হয়ে যাও। ভোট ভাগ হতে দিও না। দিদি, আপনি এটা বলতে চাইছেন যে আপনার মনে হয়েছে যে মুসলিম ভোটব্যাঙ্ককে যে শক্তি মানতেন সেই মুসলিম ভোটব্যাঙ্কও আপনার হাত থেকে ছিটকে গেছে। মুসলিমরাও আপনার থেকে দূরে চলে গেছে। আপনাকে জনসমক্ষে তাই এটাও বলতে হচ্ছে। আপনি ধরেই নিয়েছেন নির্বাচন হেরে বসে আছেন।”

৫)”আদরনীয় দিদি, ও দিদি! আপনি নির্বাচন কমিশনকে গালি দিয়ে চলেছেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একটাই কথা বলছেন- যে কথা আপনি বলছেন সেই কথা আমরা যদি বলতাম যে সারা হিন্দু একজোট হয়ে যাও। বিজেপিকে ভোট দাও। তাহলে নির্বাচন কমিশন আমাকে আট-দশদিন পর্যন্ত নোটিশ পাঠিয়ে দিত।প্রধানমন্ত্রীকে পর্যন্ত নোটিশ দিত। তখন সারা দেশের মিডিয়া প্রথম পাতায় খবর করতো। সারা বিশ্বে এই সংবাদ খোলসা করে প্রচার করতো। দিদি, আমি জানি না যে কমিশন আপনাকে কোনও নোটিশ পাঠিয়েছে কিনা। কিন্তুই আপনার এই কথা পরিষ্কার বলে দিচ্ছে যে আপনি যাদের ভরসায় ভোটের লড়াইয়ে ছিলেন তারা এখন আপনাকে ছেড়ে চলে গেছে। আর আপনি এখন জনসমক্ষে বলছেন- মুসলমান এক হয়ে যাও। মুসলমান এক হয়ে যাও। আমাকে বাঁচাও। আমাকে বাঁচাও।”

৬) “দিদি, এর উদ্দেশ্যই হল যে আপনি নির্বাচন হেরে গেছেন। দিদি, যে নির্বাচন কমিশন ভোট করিয়ে আপনাকে মুখ্যমন্ত্রী বানিয়েছে আজ আপনার সেই কমিশনের প্রতি আসক্তি এসে গেল। এটা প্রমাণ করেছে যে আপনি নির্বাচন হেরে গেছেন। যে ইভিএম বাম শাসনকে উপড়ে ফেলতে আপনাকে সাহায্য করেছিল।আজ সেই ইভিএম-এও সমস্যা শুরু হয়ে গেল আপনার। কখনও ইভিএমকে গালি দিচ্ছে , কখনও নির্বাচন কমিশনকে গালি দিচ্ছে তাহলে তো মামলা পরিষ্কার হয়ে গেছে যে আপনার খেলা শেষ। এটাই দেখাচ্ছে যে আপনি নির্বাচন হেরে গেছেন।”

৭) “যে ক্ষেত্রীয় শক্তির প্রতি আপনি নিজেই আওয়াজ তুলেছিলেন দিদি আজ তাদের উপর রাগ দেখাচ্ছেন। তাদের বদনাম করার জন্য ভাষা বলছেন। ষড়যন্ত্র করছেন।এটাই দেখাচ্ছে যে আপনি নির্বাচন হেরে গেছেন।”

৮) “দিদি, আপনি একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। দুই, ভোট ইতিমধ্যেই দুই দফা হয়ে গেছে। খুবই শান্তিপূর্ণভাবেই হয়েছে। ৮০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে। আমিও গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম। এত বেশি ভোট পড়লে শান্তিতে হলে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে আমি গর্বের সঙ্গে বলতাম যে দেখুন আমার রাজ্যে শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ হয়েছে। আমি গর্ব করতাম। দিদি, এখানে ৮০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে তবু আপনি অসন্তুষ্ট । আপনি গর্ব করছেন না। এসব দেখে জানা যায় যে দিদি আপনি হেরে গেছেন।”

৯) “বিজেপির র‍্যালিতে বিশাল সংখ্যক মানুষ আসছে। মা-বোন-মেয়েরা আসছে। কিন্তু দিদি বলছে – এই যে এত লোক এসেছে ও পয়সা নিয়ে এখানে এসেছে। আপনারা বলুন পয়সা নিয়ে এসেছেন কিনা? পয়সা পাবেন এই কথায় আশ্বস্ত হয়ে এসেছেন কি? এই দিদি আপনাদের উপর মিথ্যার আরোপ লাগাচ্ছে কিনা। এই দিদি আপনাদের বদনাম করছে কিনা। দিদি আপনাদের অপমান করেছে কিনা। দিদিকে শাস্তি দেবেন কি দেবেন না। এসব বলে দিচ্ছে যে দিদি আপনি ভোটে হেরে গেছেন।”

১০) “দিদির তো তিলক লাগানো পছন্দ করেন না। গেরুয়া বস্ত্র পরাটাও সহ্য করতে পারেন না -এসব দেখাচ্ছে যে দিদি আপনার পায়ের তলার মাটি সরে যেতে শুরু করেছে। আপনার হার একেবারে নিশ্চিত দিদি। দিদি লোকে বলে – আপনি নাকি ফুটবল খুব ভালো খেলেন। দিদি আমরা শুনেছি- ফুটবলে আত্মঘাতী গোল হয়ে থাকে। আপনি ভোটের ময়দানে আত্মঘাতী গোল করে ফেলেছেন। সময় এসেছে, আপনাকে নিজেকেই সত্যটা স্বীকার করতে হবে।”

চলো পাল্টাই-মোদি তুললেন আওয়াজ

“দিদি, আপনি শুধু তোষণ করে গেছেন। বাংলার সাধারণ মানুষ, বাংলার তরুণ, এখানকার কৃষকদের তাদের নিজেদের উপর ছেড়ে দিয়েছেন। দশ বছর ধরে আপনার তোলাবাজ বাংলাকে লুটে গেছে। এজন্য আজ বাংলার কোনে কোনে আওয়াজ উঠেছে- চলো পাল্টাই। মিথ্যার খেলা শেষ করতে চলো পাল্টাই।” বলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি।

Published on: এপ্রি ৬, ২০২১ @ ১৮:৪৫


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

43 + = 50