ডিএম-কে মুখ্যমন্ত্রীর ধমক-নুলিয়ারা জীবন দিয়ে লোকের প্রাণ বাঁচায়, তুমি তাদের মাইনে ফেলে রেখে দাও

Main রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: ডিসে ৬, ২০১৮ @ ২৩:১২

এসপিটি নিউজ, দিঘা, ৬ ডিসেম্বরঃ আগেও কোনওদিন হয়নি। আগামিদিনেও এমনটা হবে বলে মনে হয় না-যা মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পালন করে চলেছে। প্রশাসনের চেয়ারে বসে মানুষের জন্য প্রশাসনের আধিকারিকদের কাছে কৈফয়ত তলব করছেন। এমনটা আর যাই হোক সারা দেশে খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা তা বিতর্কের বিষয়। তবে বৃহস্পতিবার দিঘায় প্রশাসনিক বৈঠকে নুলিয়াদের বেতন না পাওয়া নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে প্রতিক্রিয়া জানালেন তা এককথায় সত্যি প্রশংসনীয়। চার মাস ধরে নুলিয়ারা বেতন পাচ্ছেন না-এই খবরে যারপরনাই অসন্তুষ্ট মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।সরাসরি ডিএম-কে ধমক দিয়ে বলে ওঠেন-নুলিয়ারা জীবন দিয়ে লোকের প্রাণ বাঁচায়, তুমি তাদের মাইনে ফেলে রেখে দাও!

গোটা কক্ষ তখন থম মেরে গেছে। তারা ভালমতোই জানেন যে মানুষের অসুবিধা মুখ্যমন্ত্রী কোনওভাবেই বরদাস্ত করবেন না। তাই নুলিয়াদের দীর্ঘ চার মাস ধরে বেতন না পাওয়াটা তিনি মেনে নিতে পারেননি। তাই প্রশাসনিক বৈঠকের শুরুতেই সিভিল ডিফেন্সের আধিকারিক-ডিএম-কে লক্ষ্য করে বলে ওঠেন-এখানে যারা নুলিয়া কেন তারা মাইনে পায় না, বলুন তো? তাঁরাই তো লোকের জীবন বাঁচায়। নিজেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লোকের জীবন বাঁচায়। তাদের বেতন পেতে চার মাস দেরী হবে কেন?প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর রীতিমতো ধমকের সুরে বলে ওঠেন-” দ্যাখো, তোমাদের একটা কথা বলি আমি- যাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজগুলো করে তুমি তাদের মাইনে ফেলে রেখে দাও? তিন মাস আমি মাইনে না পেলে কি হবে আমার সংসার। আমরা একবার ভেবে দেখেছি!”

পর মুহূর্তেই মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন ডিএম-কে- কতটুকু মাইনে পায়?

দিন প্রতি ৩০০টা করে পায়- বলেন ডিএম।

ক’দিন কাজ পায়?

মাসে ২৫দিন-বলেন ডিএম।এরপর কিছু সময় রাগে চুপ করে থেকে ডিএম-কে ফের প্রশ্ন করেন- “মাইনেটা টাইমলি দিচ্ছ না কেন?”

এরপর আধিকারিক বলে ওঠেন- ম্যাডাম, রিক্যুইজিশন না পাঠালে কি করে হবে?ফের এই কথায় রেগে যান মুখ্যমন্ত্রী। বলে ওঠেন- “কে কবে রিক্যুইজেশন পাঠাবে এটা আমার দেখার দরকার নেই। এটা একটা কনটিনিউয়াস প্রসেস। তারা ১ তারিখ মাইনে পেয়ে যাবে এটাই কনটিনিউয়াস প্রসেস। কেন বলতে হবে?”

এই সময় ডিএম বলে ওঠেন- “ম্যাডাম, যদি একটা স্ট্যান্ডিং ইনস্ট্রাকশন থাকে তালে…” তার মুখের কথা শেষ হতে না হতেই মুখ্যমন্ত্রী তৎক্ষনাৎ বলে ওঠেন- “হ্যাঁ, স্ট্যান্ডিং ইনস্ট্রাকশন।” এরপর সংশ্নিষ্ট বিষয়ের সচিবকে উদ্দেশ্য করে মুখ্যমন্ত্রী বলে ওঠেন- “ভাই, তোমাদের আর রিক্যুইজিশনের দরকার নেই। যা তোমার কাগজপত্র আছে তারপর কেন রিক্যুইজিশন লাগবে? এ তো মহা মুশকিল! তোমাদের এই বেঁধে রাখার প্রবণতায় অর্ধেক মানুষ সুবিধা পায় না।”

এরপর মুখ্যমন্ত্রী জেলাশাসকের কাছে জানতে চান- “পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় কতজন নুলিয়া আছে?” জেলাশাসক জানান- সংখ্যাটা ৫৫। এরপর মুখ্যমন্ত্রী সিভিল ডিফেন্সের প্রশাসনিক কর্তাকে নির্দেশ দেন- “প্রত্যেক জেলার সংখ্যাটা নিয়ে নাও।

তাঁকে বলেন- “নুলিয়ারা যেন প্রত্যেকে ১ তারিখে মাইনে পেয়ে যায়।” এরপর মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ- “ওদের সবাইকে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে যুক্ত করে দাও। জীবন বাঁচাবে আর মাইনের সময় রিক্যুইজিশন। প্রতি বছর রিক্যুইজিশন কেন?”

রীতিমতো ফুঁসতে থাকেন মুখ্যমন্ত্রী। বলতে থাকেন-“আমি কি প্রত্যেকদিন ঠিক করব আমি কি খাব? বাড়ির লোকেদের বলাই থাকে কোন দিন কি হয়। প্রতি মাসে রিক্যুইজিশন থেকে আমার টাকা আসবে। হাঁটতে হাঁটতে আসবে। চলতে চলতে আসবে। লোকগুলো মরে যাবে। এ আবার কি কথা। প্রতি বছর রিক্যুইজিশন দিতে হবে কেন, আমি তো ভেবে পাই না!”

Published on: ডিসে ৬, ২০১৮ @ ২৩:১২

 

 

 


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

14 + = 23