কুষ্ঠ রোগে শয্যাশায়ী বাবা, মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছেলের ভবিষ্যৎ গড়তে ভিক্ষার পাত্র হাতে রাস্তায় অভাগিনী মা

এসপিটি এক্সক্লুসিভ রাজ্য
শেয়ার করুন

সংবাদদাতা-বাপ্পা মন্ডল               ছবি-রামপ্রসাদ সাউ

Published on: মার্চ ১২, ২০১৮ @ ২২:২৮

এসপিটি নিউজ, মেদিনীপুর, ১২ মার্চঃ এ এক সত্যি অসহায় ছবি। বাড়িতে অসুস্থ হয়ে বিছানায় শয্যাশায়ী বাবা। চিকিৎসার খরচ যোগানোর পয়সা নেই। বড় ছেলে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা দিচ্ছে। সামান্য ডাল-ভাত ছাড়া তার মুখে তুলে দেওয়ার মতো সামর্থ নেই। এইটুকুর জন্যও রাস্তায় ভিক্ষের পাত্র হাতে নিয়ে দাঁড়াতে হয়েছে এক অভাগিনী মা-কে।

সোমবার থেকে শুরু হয়েছে মাধ্যমিক পরীক্ষা। আর মেদিনীপুর শহরের রাস্তায় ঘুরে ঘুরে ভিক্ষার পাত্র হাতে শুরু হয়েছে এক অভাগিনী মায়ের জীবনযুদ্ধের লড়াই। অনেকেই এই অভাগিনী মা-কে মেদিনীপুর শহরের রাস্তায় দেখে থাকবেন। কিন্তু তাদের অনেকেই হয়তো জানেন না, কি অসহনীয় মানসিক লড়াই না করে চলেছেন এই মহিলা।

মেদিনীপুর সদর ব্লকের অন্তর্গত গুড়গুড়িপাল থানার কনকাবতী অঞ্চলের লোহাটিকরি গ্রামে একচিলতে কুঁড়ে ঘরে কোনওরকমে দুই ছেলে আর অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে সংসার চুনকি সিং-এর। দীর্ঘদিন ধরে কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হয়ে বিছানায় শয্যাশায়ী স্বামী অজিত সিং। এর মধ্যে দুই ছেলে লালচাঁদ ও কাঞ্চনকে লেখাপড়া করিয়ে বড় মানুষ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন এই অভাগিনী মা।

কাজ যে করবেন তাও শরীরে সয় না। কারণ, শারীরিকভাবে তিনি নিজেও যে খুব অসুস্থ। সেটা কাউকে জানতে দেন না। অনেকেই ভাবে বেশ তো ভিক্ষে করে বেড়ায়, কাজ করে খেতে পারে না! এমন কথা প্রায় দিনই তাকে হজম করতে হয়। শুধু সন্তানদের কথা ভেবে এটুকু হজম করে নেয় এই অভাগিনী মা।

কি করে স্বামীর চিকিৎসার খরচ যোগাবে কিভাবে ছেলেদের বড় করে তুলবে সেই চিন্তায় ছটফট করেন চুনকি সিং। বড় ছেলে এইবার মাধ্যমিকে বসেছে। মায়ের আশা তার সন্তান পরীক্ষায় বেশ ভাল ফল করবে। তারপর তাকে আরও অনেক দূর পড়াবে। ছেলে দশ জনের একজন হবে। মায়ের কষ্ট দূর করবে। একদিন তার জীবন থেকে সব কষ্ট-যন্ত্রণা মুছে দেবে তাঁর এই সন্তানরা।

সোমবার বাড়িতে অসুস্থ বাবা-মা-কে প্রণাম করে তাদের আশীর্বাদ নিয়ে সামনের উঠোনে তুলসি মঞ্চে মাথা ঠেকিয়ে সহপাঠীদের সঙ্গে ভাড়া করা গাড়িতে চেপে পরীক্ষা দিতে চলে যেয় লালচাঁদ।ভাড়া গাড়িতে রোজ ৫০ টাকা করে দিতে হবে। ছেলের মুখে একটু মাছ-ভাত তুলে দিতে পারলে খুব ভাল লাগতো। কিন্তু তা যে হওয়ার নয়। তাই সামান্য আলু ভাতে আর ডাল মুখে তুলে দিতে পথে ভিক্ষে করতে বের হতে হয়েছে। না হলে এটুকুও জোটাতে পারব না, বাবা। চোখ মুছতে মুছতে ভিক্ষার পাত্র হাতে কথাগুলি বলছিলেন মেদিনীপুরের এই অভাগিনী মা।

তিনি স্বপ্ন দেখেন, ছেলেদের একদিন তিনি মানুষ করে তুলবেনই। তিনি মনে করেন, তাঁর ছেলেরা খুব মেধাবী। ওরা পড়াশুনোয় ভালো ফল করবেই। আমি ওদের জন্য যতদূর করতে পারি করে যাব, বাড়িতে অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসাও করাবো। আমি আমার সাধ্য মতো চেষ্টা করে যাব, যাতে আমার স্বামী-সন্তানরা ভালো থাকে। ওরা যদি ভালো থাকে, ওরা যদি সুস্থ থাকে, ওরা যদি মানুষের মতো মানুষ হয়-সেদিন আমার চেয়ে বেশি শান্তি কেউ পাবে না।

সত্যি, এ এক সত্যিকারের অভাগিনী মায়ের জীবনযুদ্ধের সংগ্রামের কাহিনি-যা অনেককে প্রেরণা যোগাবে।ধন্য তাঁর সন্তানরা, ধন্য তাঁর স্বামী। যিনি স্বামী-সন্তানদের জন্য পথে নেমেছেন ভিক্ষার পাত্র হাতে।

Published on: মার্চ ১২, ২০১৮ @ ২২:২৮

 


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 + 3 =