‘কাকা’ অনুব্রতর গলা জড়িয়ে ‘ভাইপো’ অনুপমঃ তৃণমূল-বিজেপির এমন সম্পর্ক নিয়ে সিপিএমের মুখপত্র তুলে দিল এই প্রশ্নগুলি

রাজ্য লোকসভা ভোট 2019
শেয়ার করুন

Published on: এপ্রি ৩০, ২০১৯ @ ১৬:২৩

এসপিটি নিউজ ডেস্ক: ভোট উৎসবের। ভোট গণতন্ত্রের। ভোট সবার। ইদানীং ভোট আবার হয়ে উঠেছে মজারও। একদিকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন-এবার ৪২-এ ৪২ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী মোদিও হুঙ্কার দিচ্ছে ২৩ তারিখের পর দিদির সরকারের পতনের কাউন্টডাউন শুরু হয়ে যাবে। আর এসবের মধ্যেই গতকাল চতুর্থ দফার ভোট নিয়ে সবার নজর যখন বীরভূম জেলার দিকে, যাকে নিয়ে সবার মাথাব্যাথা সেই জেলা তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মন্ডলের কাছে সটান হাজির যাদবপুরের বিজেপি প্রার্থী অনুপম হাজরা। একেবারে গলা জড়াজড়ি করে ক্যামেরার সামনে- বললেন, “কাকার সঙ্গে দেখা করতে এলাম।”সিপিএম মুখপত্র গণশক্তি আজকের সংবাদপত্রে এই খবর প্রকাশ করেছে। শিরোণাম দিয়েছে-“যাদবপুরের বিজেপি প্রার্থী অনুব্রতর ঘরে, তখন চলছে কেষ্টকাকুর ফোনে হুমকি।”

যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অনুপম হাজরা গত লোকসভা ভোটে বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হয়ে জয়ী হয়েছিলেন। এবার তিনি জার্সি বদল করে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। গতকাল তিনি বোলপুরে গিয়েছিলেন নিজের ভোট দিতে। আর এর মধ্যেই তিনি পৌঁছে যান তাঁর কেষ্টকাকার বাড়িতে। কাকার মা মারা গিয়েছেন তাই সৌজন্য দেখাতেই তিনি সেখানে কাকার সঙ্গে দেখা করতে যান।

একজন বিজেপি প্রার্থী তাও আবার গলায় বিজেপির প্রতীক দেওয়া উত্তরীয় চড়িয়ে সোজা ঢুকে যান বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অনুব্রত মন্ডলের ঘরে। তাঁর সামনে গিয়ে একেবারে সটান পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম সারেন। বলেন- “উনি তো আমার কাকা। কাকার কাছে কি ভাইপো আসতে পারে না।” এরপর কাকা ভাইপোতে বেশ আড্ডা হয়।

যখন যাদবপুর কেন্দ্রে তৃণমূলের সঙ্গে টক্কর হচ্ছে তখন একেবারে সটান তৃণমূলের ঘাঁটিতে এভাবে খোদ বিজেপি প্রার্থী অনুপম হাজরা হাজির হলেন শুধু নয় খোশ মেজাজে তৃণমূল নেতা অনুব্রত মন্ডলের সঙ্গে বসে গল্প করলেন। বিজেপি কর্মীদের একাংশ ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রশ্ন তুলেছেন- তিনি যদি ব্যক্তিগত ভাবে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাবেন তাহলে গলায় দলের প্রতীক দেওয়া উত্তরীয় কেন জড়াতে গেলেন?

এমন পরিস্থিতিকে বামেরা যে ছেড়ে দেবে না সেটা সকলেরই জানা। তারা তো প্রথম থেকেই বলে আসছে যে তৃণমূলকে ভোট দেওয়া মানে বিজেপিকে ভোট দেওয়া আর বিজেপিকে ভোট দেওয়া মানেই তৃণমূলের খাতে গিয়ে পড়া।

আর তাই সিপিএমের মুখপত্র গণশক্তি পত্রিকার প্রথম পাতায় স্থান পেয়েছে এই সংবাদ। সেখানে বিজেপি-তৃণমূল কংগ্রেসের এমন ‘সুন্দর’ সাক্ষাৎকে রসিয়ে লেখা হয়েছে। লেখা হয়েছে-“যাদবপুরের বিজেপি প্রার্থী বীরভূমের তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতির ‘ভাইপো’। রাজ্যে ‘ভাইপো’ ব্যাপারটি ইদানীং খুবই গোলমেলে হয়ে উঠেছে।”

এখানেই থেমে থাকেনি গণশক্তি। তারা বিজেপি প্রার্থীর খাড়া করা যুক্তিকে বিশ্বাস করতে পারেনি। তাই তারা প্রশ্ন তুলেছে-“কার নির্দেশে যাদবপুরের বিজেপি প্রার্থী হাজির হয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ তৃণমূল কংগ্রেস নেতার বাড়িতে? কোনও নতুন সমীকরণ, বোঝাপড়ার জন্যই অনুপম গিয়েছিলেন অনুব্রতর কাছে। এমনটাই মনে করছেন অনেকে। মুকুল রায়ের হাত ধরেই বিজেপিতে গেছেন অনুপম। প্রার্থীও হয়েছেন। সেক্ষেত্রে বিজেপি’র বর্তমান থিঙ্ক-ট্যাঙ্কের সবুজ সঙ্কেত ছাড়া অনুপম এ কাজ করেননি।”

বিজেপির প্রার্থীর ‘সৌজন্য’ বোধ নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছে সিপিএমের মুখপত্র গণশক্তি। তারা প্রশ্ন তুলেছে-“তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা হৃদয় ঘোষের পাড়ুইয়ের বাড়িও তো অনুপম হাজরা শান্তিনিকেতনের বাড়ির কাছে। সেই তৃণমূল কংগ্রেস নেতার বাবা সাগর ঘোষ খুন হয়েছিলেন। গত ছ’বছরে অনুপম হাজরা কি একদিনও হৃদয় ঘোষকে সমবেদনা জানাতে গেছেন? বীরভূমেই মারাত্মক আহত হয়েছিলেন প্রাক্তন সভাধিপতি ধীরেন লেট। সহজ, সরল, মাটির মানুষ সেই ব্যক্তি অনুপমের ‘কাকু’ না হোন, বীরভূমের সম্মানীয়, প্রবীন, সৎ। তাঁকে তৃণমূল কংগ্রেস জঘন্য অপমান করেছিল। কখনও ‘কেষ্টর ভাইপো’ গেছেন সেই প্রবীণকে সমবেদনা জানাতে? বিজেপি যখন যাচ্ছেতাই ভাবে বিশ্বভারতীর আশ্রমিক ড. অমর্ত্য সেনকে আক্রমন করছিল, তখন তৃণমূল কংগ্রেসে থাকাকালীনও কি অনুপম কখনও ‘সমবেদনা’ জানিয়ে কোনও কথা বলেছেন?”

Published on: এপ্রি ৩০, ২০১৯ @ ১৬:২৩


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

8 + 2 =