কলকাতা-ইউরোপ সরাসরি উড়ান: আশার কথা শোনালেন TAFI-র চেয়ারম্যান অনিল পাঞ্জাবি

দেশ ভ্রমণ
শেয়ার করুন

‘ আশা করছি ২০২০ সালের মধ্যে পুজোর সময় যাতে একটা ইউরোপিয়ান উড়ান নিয়ে আসা যায়, সেই চেষ্টায় আছি।’

‘ মুম্বই, দিল্লি ইউরোপ থেকে সামনে আছে পূর্ব ভারত আমরা ২ ঘণ্টা আরও পিছনে আছি।’

কলকাতায় ইন্ডিগো ১০০-র বেশি বিমান নিয়ে একটি এয়ারলাইন হাব করেছে।

সংবাদদাতা– অনিরুদ্ধ পাল

 Published on: আগ ৫, ২০১৯ @ ২৩:২০

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ৫ আগস্ট:  একটা সময় কলকাতার আকাশে দেখা যেত লুফথানসা কিংবা ব্রিটিশ এয়ারলাইন্সের বিমানকে। এখন তা অতীত। আজ দমদমে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গেলে আপনি ইউরোপ যাওয়ার সরাসরি একটি উড়ানও পাবেন না। এজন্য আপনাকে দুটো উপায় বেছে নিতে হবে-১)হয় আপনাকে কলকাতা থেকে সরাসরি দিল্লি কিংবা বম্বে চলে যেতে হবে। সেখান থেকে ইউরোপ যাওয়ার সরাসরি বিমান ধরে নিতে পারবেন অথবা ২) না হয় কলকাতা থেকে দুবাই, কাতারগামী কোনো বিমান ধরে ভায়া হয়ে ইউরোপ যেতে পারেন। আসলে কলকাতাবাসীর কাছে এ এক লজ্জার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে- যেখানে পুনা কিংবা ব্যাঙ্গালোর থেকে সরাসরি ইউরোপ যাওয়ার উড়ান পাওয়া যায় সেখানে মেট্রো সিটি কলকাতা থেকে নেই একটিও ইউরোপ যাওয়ার সরাসরি উড়ান।

ইউরোপিয়ান উড়ান নিয়ে আসার চেষ্টা চালাচ্ছেন টাফি’র চেয়ারম্যান

এসব ভেবেই ট্রাভেল এজেন্টস ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া’র চেয়রাম্যান অনিল পাঞ্জাবি নিজে উদ্যোগী হয়েছেন এই অপবাদ ঘোচাতে। তিনি নিজে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন যাতে করে আগামী 2020 সালে পুজোর সময় যদি একটি অন্তত ইউরোপগামী সরাসরি উড়ান কলকাতা থেকে চালু করা সম্ভব হয়- সেজন্য তিনি টাফি’র চেয়ারম্যান হিসেবে এয়ারলাইন কোম্পানিগুলির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। সেই সঙ্গে কোনওভাবে যদি একটি উড়ান নিয়ে আসা সম্ভব হয় সেদিকেও নজর দিয়েছেন শ্রীপাঞ্জাবি। সংবাদ প্রভাকর টাইমসকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে শোনালেন সেই আশার কথা।

পরিস্থিতি এখন যে জায়গায় দাঁড়িয়ে

তবে একথাও মনে রাখা দরকার যে দিল্লি-মুম্বইয়ের সঙ্গে কিন্তু কোনও তুলনাই চলে না কলকাতার। তাঁর সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পেরেছি যে সেখানে ইউরোপগামী উড়ানগুলি যে সুবিধা পায় সেটা এখানে কতটা সম্ভব তা নিয়ে বেশ সংশয় আছে। শুধু আবেগের বশে ‘উড়ান চাই’ বলে চেঁচালে কিছু হবে না। আর তাই TAFI-ড় চেয়ারম্যান অনিল পাঞ্জাবি বিষয়টিকে তাঁর মতো করে ব্যাখ্যা করেছেন। বলেন- “উড়ানের জন্য যাত্রী দরকার। যাত্রীদের জন্য একটা নির্দিষ্ট বিজনেস ক্লাসের আসন সংরক্ষন করতে হবে। ইকোনমি ক্লাসের জন্য করতে হবে। কিন্তু আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি যে ট্রাফিক যেভাবে বেড়ে চলেছে বিশেষ করে ইউরোপিয়ান ট্রাফিক অনেক বেড়েছে। ঠিক একই ভাবে যখন যে কোনও মুহূর্তে কোনও এয়ারলাইন্স আসবে – যারা দেখবে তাদের বিজনেস খুব ভালো হচ্ছে, তারা দেখবে যে আমাদের বিজনেস আছে। তখনই তারা আগ্রহ দেখাবে। সেই মতো অনেক আবেদন জানানো হয়েছে একাধিক এয়ারলাইন্সকে- ‘আপনারা আসুন। আমাদের এখানে সার্ভে করুন।’ সরকার একদম তৈরি হয়ে আছে। অনেকবার কথা হয়েছে। কিন্তু এয়ারলাইন কোম্পানিগুলির মধ্যে একটা অনিচ্ছার ভাব আছে। কেন আছে? না এ ব্যাপারে একটা অতীতের ইতিহাস আছে। অনেক উড়ান এসেছে আবার চলেও গেছে। অন্যদিকে আমি যদি মুম্বই, দিল্লি, ব্যাঙ্গালোর, চেন্নাই এসব জায়গায় আজ থেকে উড়ান নিয়ে আসি আজ থেকেই সেখানে ভালো বিজনেস দেবে। তা সেখানে তারা ভাল বিজনেস পাচ্ছে তাহলে এখানে কেন আসবে! এখানে আমরা প্রতিশ্রুতি দিতে পারছি না যে তোমরা আসো, আমরা তোমাদের ভালো বিজনেস দেব।”

সরকারকেও নিতে হবে বড় ভূমিকা

কলকাতায় ইউরোপিয়ান উড়ান নিয়ে আসতে গেলে সরকারকেও যে এগিয়ে আসতে হবে সেকথাও মনে করিয়ে দেন টাফি’র চেয়রাম্যান। সেই প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন-“তবে একটা বিষয়ে আমরা নিশ্চিত আছি যে একটা উড়ান যদি আসে তাহলে আমরা ভালো করতে পারবো। এখানে সরকারকে একটা বড় ভূমিকা পালন করতে হবে। তারা যদি একটা ছাড় দিয়ে দেয়, বিশেষ সুবিধা দিয়ে দেয় কর কিংবা জ্বালানির ক্ষেত্রে সেক্ষেত্রে কিন্তু বিমান কোম্পানিগুলি আগ্রহী হবে। একবার অন্তত তাদের নিয়ে আসা যাবে। তারাও ভাববে একবার তাহলে যাওয়া যাক। তারপর আমাদের সেই উড়ানের আসন পূরন করতে হবে।”

খরচ একটা বড় বিষয়

বিমান কোম্পানিগুলির কথাও মাথায় রাখতে হবে। কারণ, একটা বিমান চালাতে গেলে কি পরিমান খরচ হয় সেদিকে নজর দেওয়া আবশ্যক। সেই বিষয়ে আলোকপাত করতে গিয়ে টাফি’র চেয়ারম্যান শ্রীপাঞ্জাবী বলেন- “আপনাকে দেখতে হবে বিমান কিসে চলে- জলে না কি পেট্রলে? এর একটা খরচ আছে। পূর্ব ভারত ইউরোপ থেকে 2 ঘণ্টা আরও পিছনে আছে। মুম্বই, দিল্লি ইউরোপ থেকে সামনে আছে পূর্ব ভারত আমরা আরও পিছনে আছি। এই যে 2 ঘণ্টার পথ আসতে হবে এজন্য আরও বেশি জ্বালানির দরকার। আমার উড়ান পুরো ভর্তি করতে হবে। আসন আরও সস্তা হওয়া দরকার। এসব সব কিছু ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা সেটা দেখতে হবে।”

কলকাতায় এখনও সেই ভিড় দেখা যায় না

দিল্লি-মুম্বই বিমানবন্দর কত ব্যস্ততম বিমানবন্দর সেটা বোঝা যায় সেখানে গেলে। আর তা নিয়ে বলতে গিয়ে টাফি’র চেয়ারম্যান বলেন- “আমাদের কলকাতায় ইন্ডিগো ১০০-র বেশি বিমান নিয়ে একটি এয়ারলাইন হাব করেছে। আসলে এখানে ক্ষুদ্র পরিসরে অনেক কিছু আছে। এখানে মধ্য প্রাচ্য, দুবাই, সিঙ্গাপুর, হংকং এটার একটা পরিসর আছে। এসব জায়গার বিমান এখান থেকে ভালোই যাচ্ছে। তবে ইউরোপে ঘুরতে গেছে খুবই সীমিত সংখ্যক লোক। বিজনেস লোক দরকার। তার তো প্রতিদিনকার উড়ান একটু পূরন হতেই হবে। তা না হলে তো চলবে না। দিল্লি-মুম্বই থেকে দিনে দুটো -তিনটে উড়ান যাচ্ছে ইউরোপ। প্রতিটি এয়ারলাইন কোম্পানি উড়ান চালাচ্ছে। আপনি রাত তিনটের সময় দিল্লি এয়ারপোর্টে গেলে হাঁটতে পারবেন না। দিল্লিতে পাঞ্জাব, হরিয়ানার একটা সাপোর্ট আছে।সেখান থেকে লোক আসছে কাতারে কাতারে।”

এবার কি তবে নতুন কিছু আসছে

এত কিছুর পরেও কিন্তু হাল ছাড়তে রাজী নন টাফি’র চেয়ারম্যান অনিল পাঞ্জাবি। শোনালেন আশার কথা। তিনি জানালেন- “তবে আমরা প্ল্যানিং করছি। আমি হেড অফিসকে বলেছি। একই সঙ্গে আমি নিজেই করছি যাতে একটা ইউরোপিয়ান উড়ান নিয়ে আসা যায় কলকাতায়। আমার সঙ্গে কথা হয়েছে। এয়ারলাইনের সবার হেড অফিস বম্বে-দিল্লিতে। আমি রিপোর্ট বানিয়ে পাঠিয়েছি। মুম্বই-দিল্লিতে একটা ক্ষেত্র আছে যে এতগুলি উড়ান নিয়ে আসা যাবে। তাই আমি সেখানে জানিয়েছি; আমরা আশা করছি 2020 সালের মধ্যে পুজোর সময় যাতে একটা উড়ান নিয়ে আসা যায় সেই চেষ্টায় আছি। আশা করছি, আমাদের চেষ্টা সফল হবে। আমাকে অনেকেই বলে আপনার তো মেট্রো সিটি অথচ সেখানে একটাও ইউরোপের উড়ান নেই। আমরা তাই প্রমাণ করা চেষ্টা করছি যাতে এখানে একটা উড়ান নিয়ে আসা যায়।”

 Published on: আগ ৫, ২০১৯ @ ২৩:২০


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

37 − 28 =