কলকাতায় হয়ে গেল বিজ্ঞান মেলা ও প্রদর্শনী, দেওয়া হল বিজ্ঞানের বার্তা

Main দেশ রাজ্য স্বাস্থ্য ও বিজ্ঞান
শেয়ার করুন

Published on: মার্চ ১৯, ২০২৩ @ ১৯:১৮
Reporter: Dr. Soumitra Pandit

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ১৯ মার্চ: বিজ্ঞান মনস্কতার লক্ষ্য নিয়ে অনুষ্ঠিত বিজ্ঞান মেলা ও প্রদর্শনী শেষ হল গতকাল। মেলায় ছিল আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের উপর এক দুর্লভ প্রদর্শনী। ড. দেবী প্রসাদ দুয়ারির মহাকাশ নিয়ে অসাধারণ স্লাইডসহ আলোচনা সকলের প্রশংস আদায় করেছে।ইন্টারনেটের ভালো মন্দ নিয়ে আলোচনায় বহু মানুষ অংশগ্রহণ করেন।৭১ টি বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছিল এই মেলায়। পাশাপাশি ডগ শো’র আকর্ষণ ছিল চোখে পড়ার মতো।

পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিটি হলে আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের নামে এতাবৎকালের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান মেলা ও প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। গত ১৬ মার্চ এর উদ্বোধন করেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক অশোক নাথ বসু।তিনদিন ধরে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল ১৮ মার্চ শনিবার এই বিজ্ঞান মেলা ও প্রদর্শনীর আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি হয়।

ড. দেবী প্রসাদ দুয়ারীর মহাকাশ নিয়ে আলোচনা, প্রশ্নোত্তরপর্ব

মেলায় ছিল আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের উপর এক দুর্লভ প্রদর্শনী। ছিল ড. দেবী প্রসাদ দুয়ারীর মহাকাশ নিয়ে আসাধারণ স্লাইডসহ আলোচনা করেন। তার বক্তৃতা শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও বেশ কিছুক্ষণ ছাত্র ছাত্রীরা তাকে ঘিরে ধরে প্রশ্নোত্তর পর্ব চালিয়ে যায়। দ্বিতীয় দিন বিজ্ঞানীদের মুখোমুখি প্রশ্নোত্তরের অনুষ্ঠানেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। বিজ্ঞানীদের মুখোমুখি প্রশ্নোত্তরের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জীববিজ্ঞানী ও,পিউপিলস অ্যাসোসিয়েশন ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের সভাপতি ড. অশোক কান্তি স্যান্যাল,বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের প্রাক্তন সচিব ও বঙ্গবাসী কলেজের রসায়নের অধ্যাপক ড. অপরাজিত বসু, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. অনিরুদ্ধ মুখার্জি, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌতবিজ্ঞানের অধ্যাপক ও  বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের সচিব ড. গৌতম গঙ্গোপাধ্যায়, পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎ্স্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রো বায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. সিদ্ধার্থ নারায়ণ জোয়ারদার ও পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশের হাজি মহম্মদ দানেস বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রো বায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক মহম্মদ খালেদ হোসেন।

প্রতিবন্ধকতার মাঝেও আশার আলো

সমগ্র অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত মনোগ্রাহী ও সুচারুভাবে সঞ্চালনা করেন আকাশবানীর প্রোগ্রাম এক্সিকিউটিভ ড. মানস প্রতিম দাস। পরে স্বাধীনতার ৭৫ বছরে বিজ্ঞান প্রযুক্তির অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ শীর্ষক আলোচনায় অত্যন্ত তথ্যসমৃদ্ধ বক্তব্য স্লাইডের মাধ্যমে তুলে ধরেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক ড. পার্থিববসু ও এন.ডি.আর.আই.(পূর্বাঞ্চল), কল্যাণীর প্রধান ড. সিতাংশু মোহন দেব। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের অন্যতম সহসম্পাদক সৌরভ চক্রবর্তী অনেক প্রতিবন্ধকতার মাঝেও আশার দিকগুলি তুলে ধরেন। দ্বিতীয় দিনের শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের নাটক প্রতিযোগিতায় বহু উৎসাহী মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

শেষ দিন মানুষের ঢল

মেলার শেষ দিন মানুষের ঢল নামে। মানব সম্পদ উন্নয়নে জনস্বাস্থ্য ও মানসিক স্বাস্থ্যের ভূমিকা শীর্ষক আলোচনা সভাটি সঞ্চালনা করেন উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ডাঃ অনুপ রায় ও বক্তব্য রাখেন মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজের জনস্বাস্থ্য বিভাগের ডাঃ সুচরিতা মাজি ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ বাপ্পাদিত্য চৌধুরি। পরে ইন্টারনেটের ভালো মন্দ নিয়ে আলোচনায় বহু মানুষ অংশগ্রহণ করেন। আলোচনায় ছিলেন অধ্যাপক সাংখ্যায়ন চৌধুরি, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার বিভাগ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, অতুল বিশ্বনাথন, ডেপুটি কমিশনার, সাইবার ক্রাইম ব্রাঞ্চ, কলকাতা পুলিশ, শ্রী পার্থ প্রতিম রায়, মনোবিজ্ঞানী, স্টুডেন্ট হেলথ হোম, অভিভাবক প্রতিনিধি (মহিলা ও পুরুষ), ছাত্র প্রতিনিধি (মহিলা ও পুরুষ)। অনুষ্ঠান্টি সঞ্চালনা করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপ্লায়েড অপটিক্স অ্যান্ড ফোটোনিক্স বিভাগের অধ্যাপক কণিক পালধি।

সমাপ্তি অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের কলকাতা জেলার সভাপতি অধ্যাপক সিদ্ধার্থ দত্ত। উপস্থিত ছিলেন ভারত সরকারের শক্তি বিশেষজ্ঞ ড. শান্তিপদ গন চৌধুরী, তিনি পরিবেশ ও পৃথিবীকে বাঁচানোর জন্য অচিরাচরিত শক্তির ব্যবহারের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। বক্তব্য রাখেন পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক চন্দ্রশেখর চক্রবর্তী, ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ সায়েন্স মিউজিয়ামের অধিকর্তা ড. নটরাজ দাশগুপ্ত ।

বিজ্ঞান মেলা থেকে প্রাপ্তি

এই তিন দিনে এই বিজ্ঞান মেলার থেকে প্রাপ্তি, সকলের জন্য বিজ্ঞানকে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা ও আগামীদিনের পরিকল্পনা সম্পর্কে বলেন আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় স্মারক বিজ্ঞান মেলা ও প্রদর্শনীর ওয়ার্কিং চেয়ারম্যান ড. প্রদীপ দাস। শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান ও সংগীতের মাধ্যমে তিন দিনের এই বিজ্ঞান মেলার সমাপ্তি ঘটে।

কোনোরকম তুলনা ছাড়াই একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় এতাবৎকালের মধ্যে সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান মেলা হয়ে গেল এই তিনদিন। সকলেই নিজেদের বিজ্ঞানের বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। শুধু বেশির ভাগ সময় মেঘে ঢেকে থাকায় বহু আশা নিয়ে আসা ছাত্র ছাত্রী ও সাধারণ মানুষ দূরবীণে আকাশ দেখা থেকে বঞ্চিত হন।

Published on: মার্চ ১৯, ২০২৩ @ ১৯:১৮


শেয়ার করুন