- “আমি নৈহাটির প্লাটফর্মে দুধ বিক্রি করতাম। দুধওয়ালা অশোক বলে আমাকে অনেকে পরিচয় দেন।”
- “সেই জায়গা থেকে দাঁড়িয়ে ২০১৫ সালে লড়ে জিতে নৈহাটি পুরসভার পুরপ্রধান হই।”
- “আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি- আমি নৈহাটির ভূমিপুত্র নই। আমাকে যদি কোনও পুরনো দলিল দেখাতে বলা হয়, তা আমি দেখাতে পারব না।”
- “এনআরসি বিষয়ে আমাকে যদি জন্মের শংসাপত্র দেখাতে বলে আমি দেখাতে পারব না। তার মানে উড়ে এসে জুড়ে বসার মতো। সেই উড়ে খাই গোবিন্দায় নমঃ-র মতো।”
সংবাদদাতা- অনিরুদ্ধ পাল
Published on: জানু ১৯, ২০২০ @ ২৩:৫০
এসপিটি নিউজ, নৈহাটি, ১৯ জানুয়ারি: এমন কিছু মানুষ আছেন আমাদের এই পৃথিবীতে যারা সত্যি কথা বলতে পিছপা হয় না। যারা কারও বেয়াদপিকে ভয় পায় না। যারা পদের লোভে কাজ করে যায় না। যারা মানুষের মধ্যে থেকে মানুষের জন্য কাজ করে যেতে ভালোবাসেন। এমনই একজন মানুষ হলেন অশোক চ্যাটার্জি। যিনি রাজনৈতিকভাবে তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত নৈহাটি পুরসভার পুরপ্রধান। আজ যাকে ‘কর্মযোগী’ সম্মানে ভূষিত করল নৈহাটি নিউ লাইফ সোসাইটি। এই সম্মান লাভ করে আবেগ চেপে রাখতে পারেননি নৈহাটির মহানাগরিক। কোন জায়গা থেকে তিনি এখানে পৌঁছেছেন সেকথা তিনি অকপটে নির্ভিক কণ্ঠে শোনালেন সাহসী কথা।
কোথা থেকে কোথায় পৌঁছেছেন- মহানাগরিক শোনালেন সেই কথা
নৈহাটির মহানাগরিক পুরপ্রধান অশোক চ্যাটার্জির হাতে ‘কর্মযোগী’ সম্মানের মানপত্র তুলে দেওয়ার পরই আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন তিনি। মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বলেন- জানি না, আমি এই সম্মানের যোগ্য কিনা তবে আজ কটি কথা না বলে থাকতে পারছি না। 2011 সালে নৈহাটি বিধানসভার বিধায়ক হয়েছিলেন পার্থ ভৌমিক। যদিও কোনওদিনই ভাবিনি আমি অশোক চ্যাটার্জি নৈহাটি পুরসভার পুরপ্রধান হব। আমি নৈহাটির প্লাটফর্মে দুধ বিক্রি করতাম। দুধওয়ালা অশোক বলে আমাকে অনেকে পরিচয় দেন। সেই জায়গা থেকে দাঁড়িয়ে ২০১৫ সালে লড়ে জিতে নৈহাটি পুরসভার পুরপ্রধান হই।”
এখানে না থেমে অশোকবাবু বলতে থাকেন- “একটি সভায় আমার ছোট ভাই আপনাদের প্রিয় বিধায়ক পার্থ ভৌমিক মানুষের সামনে তুলে ধরেছিল-ধুতি-পাঞ্জাবি পরা অনেক শিক্ষক-ডাক্তাররা নৈহাটি পুরসভার পুরপ্রধান হয়েছে,আর আজ আমি পার্থ ভৌমিক অশোক চ্যাটার্জিকে নৈহাটি পুরসভার পুরপ্রধান করলাম। পাঁচ বছর পড়ে আপনারা কাজের হিসাবটা আমার থেকে বুঝে নেবেন। আমি জানি না নৈহাটি পুরসভায় কি করতে পেরেছি, কি করতে পারিনি।”
যাদের সাহায্যে তিনি এগিয়ে নিয়ে চলেছেন পুরসভার কর্মকান্ড
“একটা অর্ধশিক্ষিত মানুষকে পুরপ্রধান করেছিলেন পার্থ ভৌমিক। আমি আজ নির্দ্ধিদায়, নিঃসঙ্কোচে বলতে চাই- একটা সুন্দর প্লাটফর্ম, যেখানে স্বার্থ নেই, যেখানে কোনও কার্পণ্যতা নেই সেই পরিপ্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে একটা কথা বলতে চাই- যেখানে নৈহাটি পুরসভার পারিষদ, মানস পাল, সনৎ দে আছেন ঠিক তেমনই পিছনে সদা-সর্বদা পার্থ ভৌমিক আমাকে নানাভাবে সাহায্য করে চলেছেন। কোথা থেকে টাকা আনতে হবে কি করতে হবে সব দেখছেন। আমি কতটা করতে পেরেছি জানি না।” বলেন নৈহাটির মহানাগরিক।
এনআরসি নিয়ে সাহসী মন্তব্য করলেন নৈহাটির পুরপ্রধান
এরপরই অশোক চ্যাটার্জির গলা থেকে বেরিয়ে আসে সেই সাহসী মন্তব্য। যা অনেক আচ্ছা আচ্ছা মানুষ বলতে গিয়ে হোচট খাবে, তোতলাবে। নিউ লাইফ সোসাইটির অনুষ্ঠানে হাজির থেকে আজ দেখলাম একটা মানুষের ভিতর কত সাহস থাকলে সে নির্ভিক কণ্ঠে অকপটে বলে দিতে পারেন আসল সত্যটা। সেই মতো তিনি বলেন- “পার্থ ভৌমিক সেদিন যখন কথাটা বলেছিল আমার কথাটা মনে লেগেছিল।আমি নৈহাটির ভূমিপুত্র নই। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি- আমি নৈহাটির ভূমিপুত্র নই। আমাকে যদি কোনও পুরনো দলিল দেখাতে বলা হয়, তা আমি দেখাতে পারব না। এনআরসি বিষয়ে আমাকে যদি জন্মের শংসাপত্র দেখাতে বলে আমি দেখাতে পারব না। তার মানে উড়ে এসে জুড়ে বসার মতো। সেই উড়ে খাই গোবিন্দায় নমঃ-র মতো।”
রাজনীতি নিয়ে জানালেন নিজের কথা
“আমি নৈহাটির মানুষের মনের অন্তরে কতটা জায়গা করে নিতে পেরেছিলাম জানি না। তবে আমি একটা জিনিস বলতে চাই যে নামটা কোনওদিন মানুষ মুছে ফেলতে পারবে না আমি সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি। যখন গৈরিকরনের ক্ষমতা নিয়ে ২৩ মে-র পর নৈহাটিতে তান্ডব শুরু হল- তখন কি ভয়ানক পরিস্থিত হয়েছিল তা সকলেই জানেন। তাই সেদিন আমিও ঘর থেকে পালিয়েছিলাম। দেখুন রাজনীতি কেউ করবে, রাজনীতি যদি তার আদর্শ হয়- তা সে যে আদর্শই হোক না কেন সেক্ষেত্রে রাজনীতি করতে তার বাধা কোথায়? কিন্তু সমাজকে কলুষিত করে মানুষকে আতঙ্কিত করে মানুষকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে আমার মনে হয় রাজনীতির আঙিনায় জায়গা করা খুব কঠিন।” বলেন পুরপ্রধান অশোকবাবু।
নিউ লাইফ সোসাইটিকে জানালেন কুর্নিশ
তবে নিউ লাইফ সোসাইটি কাজল যে কর্মকান্ড চালিয়েছে তার সহকর্মীদের নিয়ে তার জন্য তাকে কুর্নিশ জানাই। আমি তাকে বলব- যদি কোনওদিন চেয়ারম্যান ছাড়াও যদি একটু জায়গা রাখেন আপনারা যদি কোথাও এই অধমকে প্রয়োজন হয় কাজলের (সোসাইটির কর্তা) তাহলে কাজলের সঙ্গে থাকবো এই অঙ্গীকার এই মঞ্চে দাঁড়িয়ে করে যাচ্ছি।
নৈহাটি নিউ লাইফ সোসাইটি গত কয়েক বছর ধরে চালিয়ে আসছে তাদের কর্মকান্ড
নৈহাটি নিউ লাইফ সোসাইটি গত কয়েক বছর ধরে তাদের কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে। গতকাল তাদের বঙ্গীয় সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল। নাচ, গান, আবৃত্তি, বসে আঁকো প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে এখানে। এদিনের অনুষ্ঠানে পুরসভার পুর-পারিষদ মানস পাল, সনৎ দে সহ অন্যান্য বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন।সনৎ দে তাঁর বক্তব্যে এই সংস্থার কর্মকান্ডের প্রশংসা করেন। তারা যেভাবে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও মুক্তধারা নামে একটি অনাথ আশ্রমের পাশপাশি নিরক্ষরতা দূরীকরণে আনন্দধারা ও বর্ণধারা পরিচালনা করেন তার জন্য সোসাইটির প্রতিটি সদস্যকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন তিনি।
Published on: জানু ১৯, ২০২০ @ ২৩:৫০