উপরে ড্রোন আর নীচে বাঘ, ‘ লুকোচুরি ‘ র এই খেলায় আতঙ্কে কাঁপছে গ্রামবাসীরা

বন্যপ্রাণ রাজ্য
শেয়ার করুন

সংবাদদাতা-বাপ্পা মণ্ডল                            ছবি রামপ্রসাদ সাউ

Published on: মার্চ ১০, ২০১৮ @ ২৩:৫১

এসপিটি, নিউজ, লালগড়, ১০ মার্চঃ রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার ধরা আর মাছ ধরা যে এক ব্যাপার নয় সেটা এখন বেশ বুঝতে পারছে বন দফতরের পোড় খাওয়া কর্মীরা। প্রথমে ট্র্যাপ ক্যামেরা, তারপর জঙ্গলের নানা জায়গায় খাঁচা পাতা, তারপর ড্রোন ক্যামেরা উড়ানো বাকি রইল না কিছুই। কিন্তু যাকে নিয়ে এত কাণ্ড তিনি কিন্তু আছেন বহাল তবিয়তে। তার নাগাল পাওয়া যা খুব কঠিন তা এতদিনে বন দফতরের কর্মীদের জানতে বাকি নেই।

সেই ২ মার্চ প্রথম ও শেষ বারের জন্য রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারটিকে দেখা গেছিল লালগড়ের মেলখেড়িয়ার জঙ্গলে। তারপর বাঘটি সমানে লুকোচুরি খেলা চালিয়ে যাচ্ছে বন দফতরের সঙ্গে। তাদের সব প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে সে তার নিজের তৈরি করা বিচরন ক্ষেত্রেই ঘুরে ফিরে বেড়াচ্ছে। যেখানে ড্রোন ক্যামেরাও তার নাগাল পেতে ব্যর্থ হচ্ছে।

এরপরও মেদিনীপুর রেঞ্জের ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহা জানিয়েছেন, বাঘটিকে ধরার সব আয়োজন সম্পূর্ণ, এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।কিন্তু তাই যদি হয় তাহলে সব চেয়ে খুশি হবেন লালাগড়, গুড়গুড়িপাল, শালবনী, গোয়ালতোড় থানা এলাকার গ্রামবাসীরা। তার লক্ষণ তো এখনও ধরা পড়েনি। একদিকে আকাশে যখন ড্রোন উড়ানো হচ্ছে তখন বাঘটি কিন্তু জঙ্গলে তার নিজের বিচরন ভূমিতে অবাধেই ঘুরে ফিরে বেড়াচ্ছে। চলছে এক লুকোচুরি খেলা। যা নিয়ে আতঙ্কে কাঁপছে গ্রামবাসীরা।

বন্যপ্রাণ বিশেষ করে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার নিয়ে চর্চা করা বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী, বন দফতর তাদের মতো করে বাঘটিকে ধরার যে প্রয়াস নিয়েছে তাকে সাধুবাদ না জানিয়ে উপায় নেই। তাদের কাছ থেকে এর চেয়ে বেশি আশা করা অন্যায়। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের মতো বন্যপ্রাণকে ধরতে গেলে যে ধরনের সাহস, ধৈর্য্য, সংযম দরকার তা এই মুহূর্তে সারা পৃথিবীতে খুব কম মানুষের মধ্যে আছে। দু-একজনের যাও বা আছে তাদের সব সময় পাওয়া যায় না। তাছাড়া, এই বাঘটি কিন্তু এখনও পর্যন্ত কারও সেভাবে ক্ষতি করেনি। কাজেই তার বিরুদ্ধে আক্রমনাত্মক হওয়াটাও কিন্তু ঠিক হবে না। সেক্ষেত্রে বন দফত্র যে পদ্ধতি অবলম্বন করে এগোচ্ছে বর্তমান পরিস্থিতিতে সেটাই উপযুক্ত মনে হয়।

রাজ্য বন দফত প্রথমে জানিয়েছিল, বাঘটি সম্ভবত উড়িষ্যার সিম্লিপালের জঙ্গল থেকে চলে আসতে পারে। তাই যদি হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে সেই জঙ্গলে একাধিক বাঘ আছে। অনেক সময় রয়্যাল বেঙ্গল তার নিজস্ব একটা এলাকা তোই করে নিতে পৃথক জঙ্গলের খোঁজে বেরিয়ে পড়ে। এক্ষেত্রেও তেমনটা হয়েছে কিনা সেটা জানা যায়নি। তাই যদি হয়ে থাকে সেটা কিন্তু আমাদের রাজ্যের পক্ষে একটা ভালো লক্ষণ। গোটা দেশে ২৫টির বেশি ব্যাঘ্র প্রকল্পের এলাকা আছে। এমনটা যদি হয় আর বাঘের সংখ্যা যদি আরও বাড়তে থাকে তাহলে ভবিষ্যতে এই মেদিনীপুর-ঝাড়গ্রামে যে আর একটা ব্যাঘ্র প্রকল্প গড়ে উঠবে না কে বলতে পারে!

তবে বাঘটি যদি তার আপন চারিত্রিক নিয়ম মেনে নিজের এলাকা তোইরি করে নিয়ে বসতি স্থাপন করে ফেলে তাহলে তখন বন দফতর কি ভূমিকা পালন করবে সেটা জানতেও কি সমানভাবে কৌতূহলী ব্যাঘ্র বিশেষজ্ঞ্রা। এজন্য সময়ের দিকেই তাকিয়ে থাকা ছাড়া দ্বিতীয় কোনও রাস্তা খোলা নেই।

Published on: মার্চ ১০, ২০১৮ @ ২৩:৫১


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

− 2 = 7