- অ্যাসিডে সুপ্রিয়ার পিঠ অল্প দগ্ধ হলেও অর্পিতার চোখ ও শরীর গুরুতর দগ্ধ হয়েছে|
- সরকারিভাবে সারা ভারতে প্রতি বছর আইন অনুযায়ী 350টি অ্যাসিড হানার মামলা নথিভুক্ত হয়ে থাকে।
- 2014 সালে ভারতে মাত্র 45টি অ্যাসিড হানার ঘটনা ঘটেছিল।
- 2015 সালে তা এক লাফে বেড়ে 215টি কেস রিপোর্ট হয়েছিল সারা ভারতে।
- অ্যাসিড হানায় আক্রান্তদের মধ্যে 50 শতাংশের বেশিরভাগের বয়স ৩০ বছরের নীচে।
সংবাদদাতা- বাপ্পা মন্ডল
Published on: সেপ্টে ১০, ২০১৯ @ ২৩:০৮
এসপিটি নিউজ, মেদিনীপুর, ১০ আগস্ট: ফের একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। টিউশন সেরে বাড়ি ফেরার পথে অ্যাসিড হানায় আক্রান্ত দুই ছাত্রী। ঘটনাটি ঘতে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুরের সুপা গ্রামে। বিগত 20 বছরেরও বেশি সময় ধরে এ ধরনের ঘৃণ্য অপরাধের শিকার হয়ে চলেছে বহু মানুষ। যার মধ্যে মেয়েদের সংখ্যাই সব চেয়ে বেশি। সরকারিভাবে সারা ভারতে প্রতি বছর আইন অনুযায়ী 350টি অ্যাসিড হানার মামলা নথিভুক্ত হয়ে থাকে। যদিও অর্গানাইজেশন অ্যাসিড সার্ভাইভার্স ইন্ডিয়ার তথ্য বলছে প্রতি বছর ভারতে 500-1000টি অ্যাসিড হানার ঘটনা সামনেই আসে না। কাজেই পরিস্থিতি যে কত ভয়ানক হয়ে উঠছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাস্পুরের সাম্প্রতিক ঘটনা কিন্তু এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ।
যেভাবে দুই ছাত্রী অ্যাসিড হানায় আক্রান্ত হয়েছে
সোমবার রাতে টিউশন সেরে বাড়ি ফিরছিল নবম শ্রেণীর দুই ছাত্রী। অর্পিতা খাঁ ও সুপ্রিয়া দোলই। সোমবার রাতে বাড়ি থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে প্রশান্ত রায় নামে এক গৃহশিক্ষকের বাড়িতে তারা পড়তে গিয়েছিল। রাত সাড়ে আটটা নাগাদ তারা একটি সাইকেলে চেপে বাড়ির পথে রওনা হয়েছিল। সুপা হাইস্কুলের সামনে আসতেই অন্ধকারে ঘাপটি মেরে থাকা এক যুবক তাদের লক্ষ্য করে অ্যাসিড ছোড়ে।সুপ্রিয়া জানায়, ‘ আমি সাইকেল চালাচ্ছিলাম। আমার সাইকেলের ক্যারিয়ারে অর্পিতা বসেছিল। তারই মাঝে অ্যাসিড ছোঁড়া হয়।” অ্যাসিডে সুপ্রিয়ার পিঠ অল্প দগ্ধ হলেও অর্পিতার চোখ ও শরীর গুরুতর দগ্ধ হয়েছে|
ফুঁসছে দাসপুরের সুপা গ্রাম
এই ঘটনার পর এলাকাবাসী ক্ষোভে ফুঁসছে।কারণ, সুপার মতো শান্তিপ্রিয় এলাকায় অ্যাসিড হানার মতো ঘটনা এর আগে কখনও ঘটেনি।তাঁরা দোষীদের দৃষ্ট্রান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছে| দু’জনকেই প্রথমে ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়| সুপ্রিয়াকে রাতেই হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হলেও অর্পিতাকে গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় | অর্পিতার বাড়ি গোয়ালতোড় থানার গোটগেড়িয়ায়। সে ছোটবেলা থেকেই সুপাতে মামার বাড়িতে থাকে। ঘটনার আকস্মিকতায় ভেঙে পড়েছেন তার দিদা। কেন ওই দুই ছাত্রীকে উদ্দেশ্য করে অ্যাসিড ছোঁড়া হয়েছিল তার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ|
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো যে তথ্য বলছে
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো-র তথ্য অনুযায়ী- 2014 সালে ভারতে মাত্র 45টি অ্যাসিড হানার ঘটনা ঘটেছিল। 2015 সালে তা এক লাফে বেড়ে 215টি কেস রিপোর্ট হয়েছিল সারা ভারতে। যার মধ্যে শুধুমাত্র ৬১টি ঘটনার অভিযোগ দায়ের হয়েছিল উত্তর প্রদেশে। এও বলা হয়েছে যে সারা বিশ্বের মধ্যে ভারত খুবই ঝুঁকিপূর্ণ দেশ যেখানে মহিলাদের অ্যসিড হানায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা আছে, যেখানে 72 শতাংশ মহিলাই অ্যাসিড হানায় আক্রান্ত হয়েছে বলে রিপোর্ট হয়েছে।এমনকি, 2012 সালের জুলাই মাস এবং 2017 সালের জুন মাসের মধ্যে অ্যাসিড হানায় আক্রান্ত ৫২জনকে প্লাস্টিক সার্জারি ডিপার্টমেন্টে ভর্তি ছিলেন।
অ্যাসিড হানায় কোন বয়সের মানুষ বেশি আক্রান্ত
এক তথ্য বলছে, অ্যাসিড হানায় আক্রান্তদের মধ্যে 50 শতাংশের বেশিরভাগের বয়স ৩০ বছরের নীচে। যাদের বয়স ১৮-২৮ বছরের মধ্যে। যেখানে দেখা গেছে, সম্পর্কজনিত কারণই এই ধরনের অ্যাসিড হানার মুখ্য কারণ। অ্যাসিড হানা থেকে বেঁচে যাওয়া সকলেরই মুখের বিকৃতি ঘটেছিল; 78.8 শতাংশ দৃষ্টিশক্তিহীন ছিল। আটটি ক্ষেত্রে দুটো চোখেই অন্ধত্ব দেখা দিয়েছে। ভুক্তভোগীদের মোট 65% শহরাঞ্চলের বাসিন্দা। 90% এরও বেশি ক্ষেত্রে মুখের উপরে 2% এর বেশি জ্বলন্ত সমস্যায় ভুগছিলেন। যতদূর সম্ভব কার্যকরী ও কসমেটিকালি উন্নতি করার জন্য সমস্ত ক্ষেত্রেই সার্জিকাল সংশোধন করা হয়েছিল।
Published on: সেপ্টে ১০, ২০১৯ @ ২৩:০৮