
সংবাদদাতা-সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
Published on: জানু ১১, ২০১৮ @ ২২:৩৬
এসপিটি নিউজ,বারুইপুর,১১ জানুয়ারিঃ এই ঘটনাটা স্বামী বিবেকানন্দের সন্ন্যাস জীবনের আগের ঘটনা। তখন তাঁর বাবা গত হয়েছেন। বাড়িতে প্রবল দুঃখ-কষ্ট। ছোট ভাই-মায়ের মুখে অন্ন তুলে দেওয়ার জন্য সেই সময়ের নরেন প্রাণপাত করে চলেছেন। কোনওরকমে বিদ্যাসাগর মশাইয়ের হাত ধরে তারই মেট্রোপলিটন স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি জোটে। চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগে সেদিন নরেন বিদ্যাসাগর মশাইকে বলেছিলেন, স্যার, ছেলেদের আগে মানুষ করতে হবে, তবে তো সে শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠবে।নরেনের মুখে এই কথা শুনে সেদিন বিদ্যাসাগর মশাই খুব খুশি হয়ে বলেছিলেন, হ্যাঁ, আমিও তো সেটাই চাই।
আরও একটি ঘটনা ত্রিকালদর্শী বাবা লোকনাথকে নিয়ে। তিনি তখন ঢাকায়। একবার তাঁর এক ভক্ত এসে তাঁর জীবনী ও বানী লেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। বাবা লোকনাথ তাতে তীব্র প্রতিবাদ করে বলেছিলেন, ওসব বই লিখে কি হবে!ওসব মানুষ পড়বে আবার পরক্ষনেই তা ভুলে যাবে। মানুষ যদি নিজেকে ঠিক না রাখতে না পারে তো ঐসব বই পড়ে কিছুই হবে না।তাই আমার বই লেখার দরকার নেই।
উপরের দুটো ঘটনার সঙ্গে এদিনের গোলপার্ক রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজ স্বামী সুপর্ণানন্দর বক্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বৃহস্পতিবার বিকেলে বারুইপুরের ২১৮ নম্বর বাসস্ট্যান্ডের পাশে বিবেক চেতনা দিবস উপলক্ষ্যে স্বামী বিবেকানন্দের আবক্ষ মূর্তির আবরণ উন্মোচন করা হয়। সেই অনুষ্ঠানে এসে স্বামী সুপর্ণানন্দ বলেন, “শুধু মনীষীদের মূর্তি বসালেই হবে না,তা সংরক্ষিত করতে হবে, মনীষীদের মূর্তি যেন নোংরায় জমে না থাকে তার দায়ভার নিয়ে হতে হবে পুরপ্রধান সহ পুরপিতা-মাতাদের।”তিনি আরও বলেছেন-মূর্তির গায়ে নোংরা দেখলে সাধারণ মানুষও যেন এগিয়ে গিয়ে তা পরিষ্কার করে দেন।তিনি তো যথার্থই বলেছেন। ঘুরে ফিরে সেই চলে আসছে কিন্তু সেদিনের নরেন কিংবা বাবা লোকনাথের কথা। আজ থেকে প্রায় ১০০ বছর আগে তারা যে বলে গেছিলেন আজও আমরা সেই জায়গা থেকে নিজেদের উন্নত করে তুলতে পারলাম না। একটা মেকি, লোক দেখানো মনীষী প্রীতি দেশ জুড়ে পালন করে চলেছি। না হতে পেরেছে প্রকৃত মানুষ, না মানুষ নিজেদের শোধরাতে পেরেছে।
রাস্তার মোড়ে মোড়ে এক একটা মূর্তি বসিয়ে মনীষী প্রীতি দেখানোর পালা চলছে গোটা দেশ জুড়ে। কিছুদিন ঠিক থাকে তারপর সেঈ মূর্তিতে পাখির মল-মূত্রে ভরে যায়।যদিও এদিন বারুইপুরের পুরপ্রধান শক্তি রায় চৌধুরী জানান, আগামিদিনে বারুইপুরের পদ্মপুকুরে,কাছারি বাজার সংলগ্ন এলাকায় নেতাজির মূর্তি,রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মূর্তি, নজরুল ইসলামের মূর্তি, বারুইপুর আদালতে মনীষীদের মূর্তি ,ঋষি অরবিন্দর মূর্তি,বঙ্কিম চন্দ্রর মূর্তি বসানো হবে, আদি গঙ্গার ধারে বসবে শ্রীচৈতন্যদেবের মূর্তিও।শুক্রবার রবীন্দ্রভবনে হবে অনুষ্ঠান,পদ্মপুকুর থেকে পুরাতন বাজার পর্যন্ত বিবেকানন্দর ছবিতে সাজিয়ে তোলা হবে।কোথায় কি হবে তা জানা না গেলেও মহারাজের পরামর্শ আগামিদিনে বারুইপুরবাসী কিংবা পুরপ্রধান কতটা মেনে চলেন সেদিকেই থাকবে সকলের নজর।
Published on: জানু ১১, ২০১৮ @ ২২:৩৬