
সংবাদদাতা-বাপ্পা মন্ডল ছবি-রামপ্রসাদ সাউ
Published on: মার্চ ৩০, ২০১৮ @ ২৩:৫৮
এসপিটি নিউজ, গাডরাশোল, ৩০ মার্চঃ বাঘের ভয়ে ঘরে বসে থাকলে তো আর পেট চলবে না। তাই ওঁরা ১৫জন গেছিলেন গাডরাশোলের গভীর জঙ্গলে। অনেক আশা নিয়ে গেছিলেন-ভালো শিকার জুটবে। কিন্তু পাশা গেল উলটে। নিজেরাই হয়ে গেলেন বাঘের শিকার। জঙ্গলের শকটি কালভার্টের ভিতর থেকে বেরিয়ে এসে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারটি ঝাঁপিয়ে পড়ল ওঁদের তিনজনের উপর। বাঘের থাবায় তখন কাবু সুদাম সোরেন (৩২), নন্দলাল সোরেন (৪০) ও পন্ডা মুর্মু (৩৫)। বাকিরা তখন হাতের অস্ত্র নিয়ে বাঘের দিকে ধেয়ে যায়। রক্ষা পায় তিনজন। শিকারকে নমস্কার জানিয়ে তারা জখম তিন সঙ্গীকে নিয়ে ফিরে আসেন সদরে।
মেদিনীপুর হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসা বাঘের থাবায় জখম তিন যুবকের চোখেমুখে তখনও লেগে আতঙ্ক। শিকারে গিয়ে তাদের যে এমন অভিজ্ঞতা হবে তা তারা ভাবতেই পারেননি। ঘটনার বিবরন দিতে গিয়ে গলা কাঁপছিল ওদের। বলছিলেন-“আমরা ১৫জন গাডরাশোলের জঙ্গলের ভিতরে ঢুকছি। শুনশান জঙ্গল। দিনের বেলাতেও সেখানে খুব নির্জন। আমরা খুব সাবধানে পা ফেলে এগোচ্ছি। কে জানে আমাদের জন্য সামনে বিপদ অপেক্ষা করে আছে। সামনেই রাস্তার ধারে জঙ্গল ঘেঁষে একটি কালভার্ট নীচে বড় সুড়ঙ্গ মতো। শোনা যায় এখানেই নাকি মাওবাদী নেতা কিষেণজি লুকিয়ে থাকতেন।আমরা তখন শিকারের খোঁজে এদিক-ওদিক লাকাচ্ছি। হঠাৎ দেখি এক বিশাল দেহী বাঘ আমাদের তিন সঙ্গীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। প্রথম ঝাঁপায় সুদামের উপর। সুদামকে বাঁচালে গিয়ে আক্রান্ত হয় নন্দ। এরপর পন্ডা। বাকিরা আমরা ভয়ে কি করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। দেখলাম আমরা যদি কিছু না করি বাঘটা আমাদের সঙ্গীকে টেনে নিয়ে চলে যাবে। হাতে লাঠি, বল্লম, বর্শা দিয়ে বাঘের দিকে এগিয়ে গেলাম। এবার বাঘটি রণে ভঙ্গ দিয়ে ফের ঐ কালভার্টের সুড়ঙ্গের ভিতর ঢুকে পড়ল।”
কথাগুলো বলার সময় ওদের গলা কাঁপছিল। এভাবে যে তারা ফিরে আসতে পারবে তা বিশ্বাস হচ্ছিল না তাদের। কারণ, তারা ভালো মতোই জানে-বিশালদেহী ঐ বাঘের শক্তির কাছে তাদের হাতের অস্ত্র কিছুই নয়। সুদামের বাড়ি ধেড়ুয়ার বক্সিবাঁধ গ্রামে, নন্দর বাড়ি কাঁকড়াদাড়া গ্রামে ও পন্ডার বাড়ি লালগড়ের ডুমুরকোটা গ্রামে।
চুয়াশোল গ্রামের তোতন মাহাত বলেন, যাভাবে গাডরাশোল জঙ্গলে শিকার করতে গিয়ে বাঘের মুখের সামনে পড়েছিলাম তাতে বেঁচে বাড়ি ফিরে আসব তা এখনও ভাবতে পারছি না। আমরা ১৫জন ঐ জঙ্গলে শিকারে গেছিলাম। তিনজন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। যেভাবে বাঘটি আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তাতে আমাদের বেঁচে ঘরে ফেরার কোনও আশাই ছিল না।
অনেকেই মনে করছে অনেক বড় দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে এই দলটি। না হলে এরাই আজ বাঘের শিকার হয়ে যেত।
Published on: মার্চ ৩০, ২০১৮ @ ২৩:৫৮